ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ভাঙড়ে বাগজোলা খাল থেকে হাড়গোড় উদ্ধার করেছে কলকাতার সিআইডি পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এই হাড়গোড়গুলো ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের।
আনন্দবাজার জানায়, রবিবার (৯ জুন) সকালে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে নামে সিআইডি। তল্লাশির পর একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়। হাড়গুলো প্রাথমিক ভাবে দেখে অনুমান, সেগুলো মানুষেরই। যদিও তা আনোয়ারুল আজিমেরই কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ জন্য করতে হবে ফরেনসিক পরীক্ষা।
এর আগে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা সিয়াম হোসেনকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয় কলকাতা সিআইডি। শনিবার (৮ জুন) দুপুরে তাকে বারাসতের আদালতে পেশ করা হলে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
আদালতে সিআইডি জানায়, গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া এমপি আনারের দেহ কোথায় ফেলা হয়েছে, খুনে ব্যবহার করা অস্ত্রশস্ত্র কোথায় লোপাট করা হয়েছে সেসব জানার চেষ্টা করা হবে সিয়ামের কাছে। সে কারণেই সিয়ামকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে রাখা প্রয়োজন। সিয়ামের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ২০১, ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় মামলা করা হয়েছে।
সিয়ামকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণপ্রান্ত বনগাঁ সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে রাজ্য সিআইডি। এমপি আনারকে হত্যা এবং তার দেহ লোপাটের কাজ সেরেই তিনি কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বিহার হয়ে নেপাল পালিয়েছিলেন। নেপাল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকেই যৌথভাবে তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল। জুন মাসের শুরুতে সিয়ামকে ধরতে নেপাল গিয়েছিলেন দুই দেশের তদন্তকারীরাই।
এদিকে অভিযুক্ত সিয়ামকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল কলকাতা পুলিশও। সেই মতোই সিয়ামকে ভারতের কাছেই হস্তান্তর করে নেপাল পুলিশ। তবে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে এখনো একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা ও কলকাতা।
গ্রেপ্তার আসামি সিয়াম এবং কসাই জিহাদকে কয়েক মাস ধরে কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউনের চিনার পার্কের ফ্ল্যাটেই রাখা হয়েছিল। ফ্ল্যাটটি ২০১৮ সালে ভাড়া নিয়েছিলেন শাহীন। আনার খুনের পরিকল্পনা কার্যকর করার বিভিন্ন ধাপে সিয়ামের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
এই হাড়গোড় উদ্ধারে মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সাংসদ খুনে বড় সূত্র পেতে চলেছে সিআইডি।
এর আগে নিউ টাউনের অভিজাত আবাসনে সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে প্রায় পাঁচ কেজি ছোট ছোট মাংসের টুকরো উদ্ধার করেছিল সিআইডি। সেই মাংস কি আনোয়ারুলেরই, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত ১৩ মে আনোয়ারুলকে খুনের পরে নিউ টাউনের অভিজাত আবাসন থেকে সাংসদের দেহের অংশ ট্রলি সুটকেসে পুরে কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে ফেলে দিয়েছিল সিয়াম। সঙ্গে ছিল খুনের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার। জিহাদকে আগেই গ্রেপ্তার করে সিআইডি। খালে দেহ ফেলে আবার নিউ টাউনের অভিজাত আবাসনেই সিয়াম ফিরে এসেছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। গত ১৬ মে বিহার হয়ে নেপালে পালিয়ে যায় সিয়াম।
অমিয়/