ঢাকা ৯ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪

কোটা আন্দোলন হামলা-পাল্টাহামলা সংঘর্ষ আহত ৩০০

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৬ এএম
আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৯ এএম
হামলা-পাল্টাহামলা সংঘর্ষ আহত ৩০০
ছবি : খবরের কাগজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হামলা-পাল্টাহামলা, সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল দুপুরের পর থেকে দফায় দফায় হামলা, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায়। সেখানে উভয় পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলি নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। 

গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। মাঝে কিছুটা বিরতি দিয়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশে ও চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষকালে গুলি করতেও দেখা গেছে। তবে অস্ত্রধারীদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি। তাদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা করছে পুলিশ। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ২২০ জন আহত হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী’ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সংঘর্ষে আমাদের ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।’ আহতদের অধিকাংশ ইট-সুরকি, লাঠিসোঁটায় আহত হয়েছেন। কেউ কেউ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন। আহতরা বেশির ভাগই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে অন্যান্য হাসপাতালেও গেছেন। 

এদিকে সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আজ মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন কোটা আন্দোলনকারীরা। গতকাল রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাবি শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল হবে। তিনি সারা দেশের মানুষের কাছে আহ্বান করে বলেন, আপনারা নেমে আসুন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বলব, আপনারা নেমে আসুন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সফল করুন। এই হামলার বিচার আদায় করুন। আগামীকালের মিছিলকে আরও দীর্ঘায়িত করুন।

এদিকে সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে একাধিক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবরের কাগজের সিনিয়র ফটোসাংবাদিক মাসুদ পারভেজ মিলনের ক্যামেরা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। 

এদিকে সংঘর্ষের সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্যাম্পাসের ভেতর দেখা যায়নি। পুলিশের পিওএমকে (দাঙ্গা দমন বিভাগ) সদস্যদের শাহবাগ মোড় ও দোয়েল চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। উভয় পক্ষের সংঘর্ষ থামার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।

এ বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পুলিশি কার্যক্রম কিংবা অ্যাকশন নিতে গেলে উপাচার্যের অনুমতি প্রয়োজন হয়। যদি কর্তৃপক্ষ পুলিশের কোনো সহযোগিতা চায়, তবেই তাদের সহযোগিতা করা হবে। 

ঘটনা যেখান থেকে শুরু: গতকাল দুপুর ১২টায় টিএসসিতে কোটা বাতিলের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। অন্যদিকে বেলা ৩টায় একই স্থানে সমাবেশ ডাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। 

সে অনুসারে দুপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি সমাবেশ চলছিল। ওই সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মধুর ক্যানটিনসহ আশপাশে অবস্থান করছিলেন। সমাবেশ শেষে বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি দল বিজয় একাত্তর হলে প্রবেশ করতে গেলে সেখানে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বাধা দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা টিএসসিতে থাকা আরও শিক্ষার্থীদের বিজয় একাত্তর হলে আসতে অনুরোধ করেন। এ সময় উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিজয় একাত্তর হলে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের সহযোগীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে অন্য সব নেতা-কর্মীকে জানান। আর তখনই শুরু হয় সংঘর্ষ। 

মধুর ক্যানটিনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিজয় একাত্তর হলে এলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। মল চত্বর দিয়ে যাওয়া কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলে। দুই পক্ষের লোকজন যেখানে যাকে পেয়েছেন, সেখানেই পিটিয়ে আহত করেছেন। কোনো কোনো স্থানে সুযোগমতো পেয়ে কোটা আন্দোলনের পক্ষের নেতা-কর্মীরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধর করেন। তবে ছাত্রলীগের হামলা থেকে বাদ যাননি নারীরাও। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার সময় কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীকে সড়কে পড়ে যেতে দেখা যায়। পরে কোটা আন্দোলনকারীদের একটি অংশ নীলক্ষেতে, আরেকটি অংশ শহীদুল্লাহ হলের দিকে চলে যান।

এদিকে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে মহড়া দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এতে চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যেসব শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন, তাদের সেখান থেকে ছাত্রলীগ বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এদিকে কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যোগ দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ইডেন কলেজের ছাত্রীরাও। আহত কয়েকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। 

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ঢাবি ক্যাম্পাসে এনে আমাদের ওপর হামলা করছে। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশের জন্য জড়ো হই। সেখানেও তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। হামলায় আমাদের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।’ 

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোটাবিরোধীরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছেন। আমরা তাদের প্রতিরোধ করেছি।’ 

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের তারা বেধড়ক পিটিয়েছে। এই হামলায় অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’ 

শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, তারা বিএনপির ইশরাকের কর্মী। আপনারা গণমাধ্যম অন্ধ হয়ে গেছেন। এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ১০ থেকে ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ শিবির-ছাত্রদলের অ্যাকটিভিস্ট।’

এদিকে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের সচেতন তরুণ সমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজাকারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘শিবির এবং ছাত্রদলের চিহ্নিত ক্যাডাররা হলে ঢুকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। এই হামলার বিচার না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর কড়া জবাব দেবেন।’

রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রলীগের অবস্থান
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও হামলার ঘটনার পর রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। গতকাল রাত ১১টার পরে বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা, রাজাকারদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার প্রতিবাদে আজ (সোমবার) দুপুরে ছাত্রলীগের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো পূর্বঘাষিত কর্মসূচি ছিল না, ভোরে তারা কর্মসূচি ঘোষণা করে।’

সাদ্দাম বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চলছে। শাহবাগ অবরুদ্ধ করা হয়েছে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। দাবি পূরণ হওয়ার পরও ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন যখন পুনর্বহাল করা হলো, তার পরও আন্দোলনকারীরা মাঠে থেকে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সুরাহা যেমন করবে, একই সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রেতাত্মা, যারা রাজাকারদের পুনর্বাসন করার কথা বলছে এবং যারা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে জবাব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রস্তুত রয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২৫ শিক্ষার্থী আহত:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। 

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক জবি শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা রাজু ভাস্কর্যে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলাম। একপর্যায়ে সূর্যসেন হলে আমাদের আন্দোলনকারীরা আটকে থাকার খবর এলে আমরা হলের দিকে যেতে থাকি। কিন্তু ঢাবির ভিসি চত্বরের সামনে এলে হেলমেট পরিহিত এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।’

জবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূরনবী সিদ্দিক বলেন, ‘মেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা সামনে কয়েকজন ছেলে দাঁড়িয়ে গেলে এলোপাতাড়ি বাঁশ দিয়ে পেটানো শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। আমরা হামলা থেকে বাঁচার জন্য বাসের মধ্যে আশ্রয় নিলে নামার সময় এক এক করে মারতে শুরু করেন।’

যুক্ত হলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা: নতুন বাজার মোড় অবরোধ
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পর এবার চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানের নতুন বাজার মোড়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শতাধিক শিক্ষার্থী মূল সড়কে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যোগ দেন পার্শ্ববর্তী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কানাডিয়ান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। ফলে এয়ারপোর্ট ও রামপুরাগামী সব যানবাহন আটকা পড়ে।

এ সময় তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে কোটা বাতিলে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আহনাফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার বেশি আমরা কর্মসূচি পালন করেছি। মঙ্গলবারও আমাদের কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।’

ঢাবি প্রভোস্ট কমিটির বৈঠক, শিক্ষার্থীদের পাঁচ নির্দেশনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরতসহ পাঁচ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। গতকাল সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির এক বৈঠকে ওই নিয়মগুলো মানতে বলা হয়। নির্দেশনাগুলো হলো, শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন; প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন; হলসমূহে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না; যেকোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হচ্ছে; সবাইকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা যাচ্ছে। কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জরুরি সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের ব্যুরো, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

চবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
চবি: কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করার সময় তাদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে জানান কোটা আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। 

জাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ তিনজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার পদত্যাগ করেছেন। 

কুবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কুবি: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ৩টায় ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকে শুরু হয়ে মূল ফটক হয়ে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান চেয়ে রাবিতে বিক্ষোভ 
রাবি: কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্যারিস রোডে রাবি, রুয়েট, রামেক, রাজশাহী কলেজ ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করেন। বেলা ২টা পর্যন্ত একযোগে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে। এদিকে কোটা সংস্কারের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগ এবং জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। গতকাল পৃথক কর্মসূচি থেকে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়।

শাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা
শাবি: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির আহত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ 
দিনাজপুর: কোটা সংস্কারের দাবিতে মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে উপস্থিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল করেন। এরপর প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে স্লোগান দেন তারা। পরে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

খুবি ও কুয়েট শিক্ষার্থীদের অবরোধ
খুলনা: খুলনায় জিরোপয়েন্টে সড়ক অবরোধ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি সংস্কার, আন্দোলনকারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি ও ঢাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় জিরোপয়েন্ট মোড়ে অবস্থান নেন তারা।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
ববি: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং এক দফা দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

তৃতীয় টার্মিনালের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ, দ্রুত শেষ করার নির্দেশ বেবিচক চেয়ারম্যানের

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৩৯ পিএম
তৃতীয় টার্মিনালের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ, দ্রুত শেষ করার নির্দেশ বেবিচক চেয়ারম্যানের
ছবি: সংগৃহীত

৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

শনিবার (২৪ আগস্ট) সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিদর্শনের সময় এসব কথা বলেন তিনি। 

এসময় তিনি তৃতীয় টার্মিনালে নবনির্মিত চেক ইন কাউন্টার, ইমিগ্রেশন, স্ক্যানার, বোর্ডিং ব্রিজ, এরাইভাল, ডিপার্চার এবং এয়ারক্রাফ্ট পার্কিং এপ্রোন ও রোড নেটওয়ার্কসহ এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত অন্যান্য স্থাপনাসমূহ পরিদর্শন করেন। টার্মিনালের কাজের অগ্রগতি, কাজের মান এবং সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। 

ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান যে, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক যোগাযোগের গেটওয়ে হিসেবে এই টার্মিনালের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অতঃপর তিনি তৃতীয় টার্মিনালের অবশিষ্ট কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া বেবিচক চেয়ারম্যান সার্বিক কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। 

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৃতীয় টার্মিনালের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশি প্রতিনিধিরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকসহ বেবিচক এর বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। 

অন্যদিকে আনসার সদস্যদের কর্মবিরতির পরবর্তী পরিস্থিতি দেখতে গত শুক্রবার রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন বেবিচক চেয়ারম্যান। এ সময় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় আকাশ পথে যাত্রীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বেবিচক চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে কোন বাড়তি ভাড়া আদায় না করার বিষয়েও আহ্বান জানান। এছাড়া এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোকে বাড়তি ফ্লাইট দিয়ে যাত্রীসেবা বৃদ্ধির ব্যাপারে অনুরোধ করেন এবং সে অনুযায়ী কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলেও জানান তিনি।  

বেবিচক চেয়ারম্যান আরও বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা কর্মবিরতিতে চলে যাওয়ার পর বেবিচক কর্তৃপক্ষ বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। এভিয়েশন সিকিউরিটি এবং বিমান বাহিনীর সহায়তায় পুরো কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন রাখা সক্ষম হয়। বিমান বাহিনীর এই সহায়তার জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বিমান বাহিনী প্রধানকে।  

তিথি/এমএ/

কৃষির ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত নির্ধারণ করে পুনর্বাসনের আহ্বান কৃষি উপদেষ্টার

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম
কৃষির ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত নির্ধারণ করে পুনর্বাসনের আহ্বান কৃষি উপদেষ্টার
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। ছবি: সংগৃহীত

বন্যাদুর্গত এলাকায় কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ দ্রুত নির্ধারণপূর্বক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।

উপদেষ্টা শনিবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রধান ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ আহ্বান জানান। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এসময় উপস্থিত ছিলেন। 

কৃষি উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে বন্যাদুর্গত এলাকায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমন ধানের উৎপাদন নিশ্চিত করা। তা সম্ভব না হলে শাকসবজিসহ উপযোগী রবিশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো কৃষি উৎপাদন যথাসম্ভব বৃদ্ধি করা। সেজন্য আবাদযোগ্য সকল জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। উপদেষ্টা এসময় বীজ ও সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের যোগান নিশ্চিতকরণ, বীজতলা তৈরি এবং সার্বিক প্রস্তুতি ও করণীয় নির্ধারণ করতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনকালে কৃষি উৎপাদন নিশ্চিতকরণে কৃষি কর্মকর্তাদের সক্রিয়ভাবে মাঠে থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করে যেতে হবে। তিনি এ সময় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। 

কৃষি উপদেষ্টা বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামোর জন্য কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে তা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দপ্তর/বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে সাময়িকভাবে রাস্তা কেটে বা সুবিধাজনক উপায়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

সভায় কৃষি সচিব দেশের বন্যাকবলিত মানুষদের সহায়তায় সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ জমা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। উপদেষ্টা এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন ও সকলকে নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী এ দুর্যোগকালীন সময়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

সভায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় করণীয়/প্রস্তুতি বিষয়ে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়:

ক) বন্যা কবলিত এলাকার কৃষি ফসলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার অব্যবহিত পরে রোপা আমনের বীজতলা, রোপিত আমন এবং দণ্ডয়মান আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান ফসল ধান চাষকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ধান পুনর্বাসন কর্মসূচি প্রদানের পর প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পুনর্বাসনের জন্য আগাম শীতকালীন সবজি কর্মসূচিও দেয়া হবে;
খ) বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নিজস্ব উঁচু জমিতে রোপা আমন ধানের বীজ তলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
গ) বন্যায় কৃষির ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের কার্যক্রমের অব্যাহত রাখতে হবে;
ঘ) কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার নিকট রোপা আমন ধানের বীজের স্টক সংক্রান্ত তথ্যাবলি সংগ্রহ করতে হবে এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কৃষি পুনর্বাসন/সহায়তা কার্যক্রমের তথ্যাবলি সংগ্রহ করতে হবে;
ঙ) বিএডিসি/বিনাসহ অন্যান্য সকল সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমন বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা প্রস্তুতকরণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর/সংস্থার নিকট অবিলম্বে সরবরাহ করবে;
চ) যথাসম্ভব বন্যা কবলিত এলাকার নিকটতম এলাকায় বীজতলা প্রস্তুত করতে হবে;
ছ) মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণকে বন্যাত্তোর কৃষি পুনর্বাসনের কার্যক্রম দ্রুততার সাথে শুরু করার জন্য এখন হতে সক্রিয় রাখতে হবে;
জ) বন্যা কবলিত এলাকায় ব্লক এবং উপজেলা ভিত্তিক পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে;
ঝ) বন্যায় কৃষির ক্ষয়ক্ষতির তথ্যাদি এবং মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের সচেতন করার জন্য কৃষি তথ্য সার্ভিসকে সামগ্রিক কৃষি পুর্নবাসন কার্যক্রমের বিষয়ে তথ্য চিত্র প্রস্তুত করতে হবে;
ঞ) সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ অনুবিভাগ) সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

জয়ন্ত সাহা/এমএ/

ফেনীতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে জেনারেটরের ডিজেল ফ্রি করার নির্দেশ

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
ফেনীতে মোবাইল নেটওয়ার্ক সচল রাখতে জেনারেটরের ডিজেল ফ্রি করার নির্দেশ
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম

ফেনী জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে মোবাইল অপারেটর কর্তৃক জেলায় নিয়োজিত জেনারেটরগুলোর ডিজেল ফ্রি করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।

শনিবার (২৪ আগস্ট) বিটিআরসিকে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ না থাকায় ফেনী জেলার ৭৮টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে প্রচুর ডিজেলের প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলো সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাই তিনি বিটিআরসিকে ৭৮টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে মোবাইল অপারেটর কর্তৃক জেলায় নিয়োজিত জেনারেটরগুলোর প্রয়োজনীয় ডিজেল বিনামূল্যে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। 

প্রতি ঘন্টায় পোর্টেবল জেনারেটরে (পিজি) (৭৫ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ২ দশমিক ৩ লিটার এবং জেনারেটর (ডিজি) (৩০ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ৪ দশমিক ৪ লিটার। এই হিসেবে ৭৮টি জেনারেটরে প্রতিদিন ৬ হাজার ৫৫২ লিটার ডিজেল ব্যবহৃত হয়। যার মূল্য ৭ লাখ ১৪ হাজার ১৬৮ টাকা এবং ৭ দিনে ৪৫ হাজার ৮৬৪ লিটার যার মূল্য ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৬ টাকা। 

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার নির্দেশনায় বিটিআরসির ফান্ড থেকে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে।

অমিয়/

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে সিআরপি

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫৭ পিএম
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে সিআরপি
ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র গঠনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে সারাদেশে আহত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবে সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি)।

তাছাড়া, এই আন্দোলনে আহত সাধারণ মানুষদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে ভর্তুকির মাধ্যমে সেবা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে আহত ব্যক্তিদের নিবন্ধন ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রদান করে সিআরপিকে সহায়তা দিবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাএইড’।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সাভারে সিআরপির প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন সেবা কার্যক্রম’ শীর্ষক আলোচনাসভা থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল টিম, সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট ও বাংলাএইড-এর প্রতিনিধি এবং সিআরপির জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুরুতে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, থেরাপি ও পুনর্বাসন সেবা দেওয়ার ঘোষণা দেন সিআরপির নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন।

পুনর্বাসন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া হলেও, সিআরপি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে এই সেবা চালিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে অন্যান্য দাতা ও অংশীদারদের প্রতিও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। 

আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ণ করে ভর্তুকির মাধ্যমে সিআরপি থেকে সেবা নিতে পারবেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত সাধারণ মানুষও।
 
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সারাদেশে আহত ব্যক্তিদের সেবাদানের ক্ষেত্রে সিআরপিকে এরইমধ্যে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্ট। 

সভায় উপস্থিত হয়ে, এই সেবাদান প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করতে শিক্ষার্থীদের কাছে সহযোগিতা চান সেন্টার ফর যাকাত ম্যানেজমেন্টের হেড অব অপারেশনস কাজী আহমদ ফারুক। 

শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে সেবা প্রদানের আশ্বাস দেওয়ায় সিআরপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল টিমের সদস্য মাহমুদুল হাসান মিলহান বলেন, আন্দোলনে আহত, নিহত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ‘রেড জুলাই’ নামে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এটি ডেটাবেইজ হিসেবে সংরক্ষণ করছেন তারা। 

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাএইড’-এর অন্যতম উদ্যোক্তা মো. আনিসুল হক জানান, এরইমধ্যে বাংলাএইড অ্যাপের মাধ্যমে আহত ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন চালু হয়েছে। গুগল প্লেস্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিকটস্থ সিআরপির কেন্দ্রে এপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন আহত ব্যক্তিরা। 

সিআরপির এই কার্যক্রমের বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সবাইকে অবগত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ, জেলা সিভিল সার্জনসহ যেখানে যেখানে প্রয়োজন যোগাযোগ করা হবে বলে জানান সিআরপির একাডেমিক প্রধান ও বিএইচপিআই প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ডা. ওমর আলী সরকার।

১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ ফিজিওথেরাপিস্ট ভ্যালেরি অ্যান টেইলর সিআরপি প্রতিষ্ঠা করেন; যা বর্তমানে ট্রাস্ট ফর দি রিহ্যাবিলিটশন অব দি প্যারালাইজড (টিআরপি) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। এটি অলাভজনক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধনী-গরীব নির্বিশেষে মেরুরজ্জুতে আঘাত, স্নায়বিক ও অস্থিহাড়-সংক্রান্ত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করে থাকে। 

ঢাকার মিরপুর, সাভার ও মানিকগঞ্জ; সিলেট ও মৌলভীবাজার এবং চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও ময়মনসিংহে অবস্থিত ৯টি কেন্দ্র্রে স্বাস্থ্য সেবাসহ মেডিকেল কেয়ার, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপির পাশাপাশি প্রস্থেটিকস ও অর্থোটিক্স বিভাগের মাধ্যমে কৃত্রিম হাত-পা তৈরি ও সংযোজন সেবা দেয়া হয়।

বাংলাএইড অ্যাপ ডাউনলোড লিংক: https://play.google.com/store/apps/details?id=ttit.com.shuvo.bijoyaid

অমিয়/

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনেক অনিয়ম হয়েছে: জ্বালানি উপদেষ্টা

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৫৮ পিএম
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০৫:১৭ পিএম
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনেক অনিয়ম হয়েছে: জ্বালানি উপদেষ্টা
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টার পাটুরিয়ার সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিদর্শনের সময় তোলা; খবরের কাগজ

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিগত বছরগুলোতে অনেক অনিয়ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
 
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়ায় স্পেকট্রা সোলার পার্ক লিমিটেডের ৩৫ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
 
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির বলেন, ‘২০১০ সালে  বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন করা হয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে কোনো প্রতিযোগিতা ছাড়াই আগের সরকারের খাতিরের লোককে প্রকল্পগুলো দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বেশি মূল্যে এই  বিদ্যুৎ কেনাও হয়েছে। বর্তমানে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে বকেয়া টাকাগুলো আমরা দিতে পারছি না।’
 
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আগে কোনো রকম বিবেচনা না করে বিদ্যুৎ বা জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হতো। কিন্তু আপনারা জানেন এই সরকার জনপ্রত্যাশার সরকার। তাই বিবেচনা না করে আমরা বিদ্যুৎ বা জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করব না। এজন্য আমি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই ২০১০ সালের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের ভবিষ্যত প্রয়োগ বন্ধ করে দিয়েছি। সামনে প্রতিযোগিতা ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না।’
 
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বেশি জোর দেওয়া হবে। কারণ এর সুবিধাতো আপনারা বুঝতেই পারছেন, একবার এটা স্থাপন করা হলে আর কোনো জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। সূর্যের আলো থেকেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রতিবছর এই খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ইতোপূর্বে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনায় এই সমস্যা হয়েছে। কম দামে বিদ্যুৎ না কেনা পর্যন্ত আমাদের সবাইকে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আমাদের কাছে আলাদিনের জাদুর চেরাগ নেই। ১৬ বছরের অনিয়ম-দূর্নীতি ১৬ দিনেই অপসারণ করা সম্ভব নয়। তবে আমরা সব খাতে বৈষ্যম নিরসনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো।’

বন্যাকবলিত এলাকায় কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনার জানেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, জ্বলোচ্ছাস, বন্যা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে তখন সেখানকার মানুষ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। এর জন্য বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্যার পানি যখন নেমে যাবে তখন দ্রুত সময়ের মধ্যে সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।’

এ সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
আসাদ জামান/ইসরাত চৈতী/অমিয়/