![যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগী হবে বাংলাদেশ](uploads/2024/05/14/Humayun-Kabir-1715665080.jpg)
ডোনাল্ড লু যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করবেন ডোনাল্ট লু। ডোনাল্ড লু প্রথমে ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে ঢাকায় পৌঁছবেন। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ডোনাল্ড লু যে দায়িত্বে আছে বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে, সেই দায়িত্বের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তার সফল বাস্তবায়ন করবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে তার একটা প্রাধান্য রয়েছে। তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়ের আলোকেই তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবেন। সেদিক থেকে দুই দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিকভাবেই দেখছি। বাংলাদেশে আমরা দুটি প্রবণতা দেখছি। বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কেমন ছিল, তা আমরা জানি। বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের অবস্থান রয়েছে। আমাদের দেশের যে সাম্প্রতিক রিপোর্ট হিউমান রাইটসের কাছে আছে, সে ক্ষেত্রে দেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, নাগরিক অধিকার, স্বাধীনতা, সামগ্রিক অর্থনৈতিক গভর্ন্যান্স হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অবস্থান রয়েছে।
ডোনাল্ট লু বাংলাদেশে এসে দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার কথাবার্তা ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করবেন। সেখানে তিনি তার অবস্থান তুলে ধরবেন এবং আমাদের অবস্থান জানতে চাইবেন। আমরা মনে করি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টেকসই হওয়ার ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকা রাখতে পারবে সেই বিষয়গুলোই আলোকপাত করা হবে। তার মধ্যে অন্যতম আলোচনার বিষয় হবে বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের ক্ষেত্রেই এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু দুই দিক থেকেই সম্পর্কটি উপাদেয়, সেহেতু দুই দিক থেকেই সম্পর্কটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমরা জানি, বাংলাদেশের নির্বাচনের পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী একটি দল বাংলাদেশে এসেছিল। সে আগমনটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের নেতৃত্বাধীন হয়েছিল। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। তখন কিন্তু তারা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বড় বাজার মনে করছে। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি সম্ভাব্য দেশ হিসেবে চিন্তা করেছে। সেই কথা মাথায় রেখেই কিন্তু তারা বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বিবেচনায় দুই দেশের অবস্থানগত পার্থক্য থাকলেও নৈতিক বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সবাই সহনশীল ও সহমত পোষণ করবে। পারস্পরিকভাবে দুই দেশেরই ইতিবাচক ধারণা রয়েছে। বৈদেশিক সম্পর্কটা সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশেরই সহমত আছে।
কিছু আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি অনেক মনোযোগ দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কীভাবে ইতিবাচক অবস্থান ধরে রাখতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত আমাদের আগ্রহ নৈতিক বিষয়ের অগ্রগতি এবং অপ্রচলিত নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে। আমরা নন ট্রাডিশনাল সিকিউরিটি বিষয় যেমন; জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ-ভারত, বাংলাদেশ-চীন, বাংলাদেশ-ইউরোপ, বাংলাদেশ-মধ্যপ্রাচ্যর চলমান বিষয়গুলো নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা হবে বলে মনে হয়। সে ক্ষেত্রে দুই পক্ষই তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। সে ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান তুলে ধরবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো কোনো বিষয়ে হয়তো আমাদের মতভেদ আছে। যেমন: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ও রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। অন্যান্য বিষয় যেমন: অপ্রচলিত নিরাপত্তা, মুক্ত অঞ্চল ও বাণিজ্য অঞ্চল এসব বিষয়ে আমরা সহমত আছি।
আরেকটি বিষয় হলো বাংলাদেশের জলবায়ুসংক্রান্ত বিষয়। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন বড় ধরনের একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যেহেতু ভুক্তভোগীর শিকার, সে ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে সেই ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করতে হবে।
বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ব্যাপারেও দুই পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক আলাপ-আলোচনা হবে। বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করছে। সে ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কীভাবে আমরা সহযোগিতা পেতে পারি, তা আলোচনায় আনতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের অবস্থানটা তাদের কাছে তুলে ধরতে পারি যে, আমরা তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেতে পারি। জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়টি জলবায়ুর সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত।
সেই আলোকেও আমরা আলাপ-আলোচনা করতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তনে যত আলোচনা করুক না কেন, বাংলাদেশের জ্বালানি জলবায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে আছে, সে ক্ষেত্রে আমেরিকার যে বৈশ্বিক জলবায়ু বিষয়ে পরিকল্পনা আছে, তার মধ্যে আমরা কীভাবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি তা দেখতে হবে। বাংলাদেশ সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সামনে এগিয়ে যাবে বলে আশা করি। দুই দেশের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও এখন ইতিবাচকভাবেই সামনে এগিয়ে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সম্পর্ক ও অবস্থান এবং আগামী দিনের ইতিবাচক অবস্থানগুলো আলোচনা করে একে অপরকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে সে ব্যাপারে বিশদ আলোচনা হবে বলে আশা করি।
লেখক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত