ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার বাটলারে নির্বাচনি প্রচারের সমাবেশে একজন হত্যাকারী এই চেষ্টা করে। এতে একজন দর্শকের প্রাণহানি ঘটে এবং বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
হত্যাচেষ্টাকারীও মারা গেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডান কানে সামান্য আঘাত পেয়েছেন এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক সেবা দেওয়া হয়েছে। যদিও এখন হত্যাকারীকে শনাক্ত করা এবং তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা জায়নি। ঘটনাটি তীব্র রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়াবহ যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে আমরা বাস করছি।
আমেরিকার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা চলছে। ২০১১ সালে অ্যারিজোনায় একটি নির্বাচনি প্রচারে গুলিতে আহত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেস নারী গ্যাবি গিফোর্ডস। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড রিগানকে অভিনেতা জোডি ফস্টার নামে একজন গুপ্তহত্যাকারী দিয়ে হত্যা প্রচেষ্টাকালে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা ভোটাধিকার প্রয়োগের সময় সহিংস নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছেন। যেটি কয়েক দশক ধরে দেশের বেশির ভাগ অংশে শুধু আইনের মাধ্যমে নয়, বরং শক্তির প্রভাব খাটিয়ে শ্বেতাঙ্গদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছিল। ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতিতে রয়েছে ধর্মান্ধতা, উগ্র রাজনৈতিক উপজাতিবাদ এবং তার পছন্দকে বেশি প্রয়োগ করার অনুমতি দিতেন। ট্রাম্প তার বিপক্ষের লোকদের শারীরিক সহিংসতার মাধ্যমে শাস্তি দিতেন। ২০১৬ সালে তার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নির্বাচনি সমাবেশে প্রচারের সময় সহিংসতার শিকার হন। সমর্থকরা প্রায়ই প্রতিবাদকারী এবং গণমাধ্যমের সদস্যদের ওপর আক্রমণ করতেন।
ট্রাম্প-সমর্থকরা তার বিপক্ষের রাজনৈতিক নেতাদের ওপর সহিংসতা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। ২০১৮ সালে ফ্লোরিডাভিত্তিক ট্রাম্প-সমর্থক সিজার সায়োক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিচালনা করেন। তিনি বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন, জন ব্রেনান, রবার্ট ডি নিরো, আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ, জো বাইডেনসহ বিভিন্ন প্রেসিডেন্টদের ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। ২০২২ সালে ডেভিড ডিপেপ নামে একজন ট্রাম্প-সমর্থক হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সান ফ্রান্সিসকোর বাড়িতে ঢুকে পড়েন এবং তার স্বামী পল পেলোসিকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন।
আধিপত্যের নৃশংস ও হিংসাত্মক রাজনীতির জন্য ট্রাম্পের উৎসাহ সংক্রামক ব্যাধির মতো বলে মনে হয়। রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে এই ধরনের রাজনীতির অনেক অনুসারী রয়েছেন। ২০১৮ সালে মন্টানার প্রতিনিধি গ্রেগ জিয়ানফোর্ট তার কংগ্রেসনাল পুনর্নির্বাচন প্রচারের সময় হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। এর জন্য ট্রাম্প প্রশংসা করেছিলেন।
ট্রাম্প বলেছেন, ‘যেকোনো লোকই হোক না কেন, সে যদি আঘাত করতে পারে, সে আমার লোক’ জিয়ানফোর্ট যখন অপকর্মের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তখন থেকেই তিনি মন্টানার গভর্নর হয়েছেন। ট্রাম্পের ক্ষুব্ধ ও হিংস্র সমর্থকরা ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার প্রয়াসে কংগ্রেসে হামলা করেছিলেন। সেখানে তারা কংগ্রেস সদস্যদের অপহরণ ও আক্রমণ করার হুমকি দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের প্রভাব, তার স্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও তর্ক আমেরিকার রাজনৈতিক সহিংসতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ফলে দেশের কেন্দ্রীয় রাজনীতি আরও রক্তাক্ত রূপ ধারণ করে। ট্রাম্পের নির্বাচনি সমাবেশে এই প্রথম তাকে হত্যার প্রচেষ্টা করেছে। এখন মনে হয় সময় পরিবর্তন হয়েছে। এই ধরনের সহিংসতা এই প্রথম ছোড়া হলো।
পরবর্তী সময়ে যা ঘটবে তা আরও বিপজ্জনক হতে পারে। ট্রাম্প বুলেট এড়ানোর পর সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা তাকে ঘিরে ফেলেন। যারা তাকে মানবঢাল হিসেবে ঘনিষ্ঠভাবে ঘিরে রেখেছিলেন। ট্রাম্প মঞ্চে উঠেছিলেন এবং তাদের ইচ্ছাকে তুচ্ছভাবে অমান্য করলেন। তিনি মুখ উঁচিয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন ‘ফাইট’। ট্রাম্প তখন খুবই প্রতিবাদী ছিলেন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্প-সমর্থকদের সতর্ক হওয়া উচিত। তাদের ওপর সহিংসতার ঝুঁকি রয়েছে। এর অর্থ হলো, ট্রাম্পের নেতাদের প্রতি প্রতিশোধ নেওয়ার বা শাস্তি দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে। ট্রাম্প বা তার সহযোগীদের এই ধরনের হুমকি বা ঝুঁকি থেকে প্রতিরোধ করার কোনো প্রচেষ্টা নেই। এটা বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। তারা কেনই বা করবে? তারা আগেও কখনো করেনি।
হত্যাচেষ্টাকারী সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের আগে ট্রাম্পের সমর্থকরা হামলার জন্য বিডেনকে দোষারোপ করছিলেন। জো বাইডেনের নির্বাচনি প্রচারের মূল ভিত্তি হলো যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী, তাকে যেকোনো মূল্যে হলেও থামাতে হবে। জেডি ভ্যান্স, যিনি ওহাইও সিনেটর এবং ট্রাম্পের দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট টুইট করেছিলেন যে ট্রাম্পের উদ্ধত্যপূর্ণ বক্তৃতার কারণে তাকে হত্যার চেষ্টার প্রচেষ্টা হতে পারে।
জর্জিয়ার রিপাবলিকান মাইক কলিন্স প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, জো বাইডেন আদেশ পাঠিয়েছেন। গুপ্তহত্যার চেষ্টায় কোনো গাম্ভীর্য নেই। আমেরিকা কতটা নিচে নেমে গেছে, তা ভাবা যায় না। এর কোনো তেমন প্রতিফলন দেখা যায়নি। আছে শুধু নোংরা রাজনীতি এবং একক স্বার্থপরতা। যতটা সম্ভব সহিংসতা থেকে লাভবান হওয়ার রাজনীতি এখন আমেরিকায়।
এদিকে ডেমোক্র্যাটরা নতুনভাবে কোনো চিন্তা করছেন না। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা ট্রাম্পের নিরাপত্তার জন্য একটি বিবৃতি জারি করেছেন। তারা বলেছেন, আমাদের রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এটি ঠিক নয়। সহিংসতা এখন আমেরিকান রাজনৈতিক জীবনের একটি কেন্দ্রীয় অংশ। আমরা শিগগিরই এটি থেকে মুক্তি পাব না।
লেখক: গার্ডিয়ান কলামিস্ট
গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল