দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে মিথ্যা ঘোষণায় অস্ত্র, গোলাবারুদসহ এ জাতীয় ক্ষতিকর পণ্য বিভিন্ন বন্দর দিয়ে প্রবেশ বন্ধ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নজরদারি বাড়িয়েছে।
এরই মধ্যে এনবিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি বন্দরকে সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরাও সতর্কতা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের দিকে বেনাপোল, সোনা মসজিদ, আখাউড়া ও হিলি স্থলবন্দরে নজরদারি বেশি বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব জানা যায়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলার সময় থেকেই বিগত সরকারের সুবিধাভোগী প্রভাবশালীদের অনেকে দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যান। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ওই সব ব্যক্তিরা কে কোথায় আছেন তার খোঁজ শুরু করে। বিশেষভাবে ভারত, নেপালসহ অন্য প্রতিবেশী দেশে কেউ আত্মগোপনে আছেন কি না তা জানার চেষ্টা করছে এসব সংস্থা।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এনবিআরকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি করার কথা জানাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে অস্ত্র, গোলাবারুদ বা এই জাতীয় পণ্য ব্যবহারের আশঙ্কা করছে। তারা বলছে, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পণ্য দেশের মধ্যে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হতে পারে। এতে দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে। কোনোভাবেই অস্ত্র, গোলাবারুদ বা এ জাতীয় কিছু কেউ যাতে দেশে আনতে না পারে তার জন্য প্রতিটা বন্দরে সতর্কতা বাড়াতেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে।
এনবিআর সদস্য (শুল্ক নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে কেউ যেন কোনো ধরনের অস্ত্র, গোলাবারুদ বা এ জাতীয় কিছু মিথ্যা ঘোষণায় আনতে না পারে তার জন্য আমরা সতর্কতা বাড়িয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে কোনো ঘটনা ঘটলে কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করলেও যেন ব্যর্থ হয় সে চেষ্টাই করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভেতরে কী আছে তা জানতে আমরা কার্টন, প্যাকেট বেশি করে স্ক্যানিংয়ে দিয়ে দেখার চেষ্টা করতে নির্দেশ দিয়েছি। কোনো প্যাকেট বা কার্টন নিয়ে সামান্য সন্দেহ হলেও তা খুলে দেখা হচ্ছে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার গঠন করা হয়েছে। আমি এই সরকারের সময়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মিথ্যা ঘোষণার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কেউ কোনো অসাধু উদ্দেশ্যে দেশের মধ্যে কোনো কিছু প্রবেশের চেষ্টা করলে তা রোধ করা হবে। এনবিআর সতর্ক আছে।’
বিভিন্ন বন্দরে পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। বন্দরের কর্মকর্তাদের প্রতিজনের কম্পিউটারের জন্য নির্দিষ্ট একটি পাসওয়ার্ড থাকে। এসব পাসওয়ার্ড কোনোভাবেই যেন হ্যাকিং করা না যায় তাতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড চুরি করে বিশেষ কৌশলে পণ্য খালাসের চেষ্টা করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শুল্ক শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সম্প্রতি সংখ্যালঘু ইস্যুতে এবং এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার নিয়ে প্রতিবেশী এক দেশের সঙ্গে সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা এসব করছে তাদের উদ্দেশ্য ভালো না। কোনোভাবেই যেন দেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু দেশের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে বা কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে তার জন্য এনবিআর সতর্ক রয়েছে।’
এনবিআরে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরুরি ওষুধ ও তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল দেশের নামিদামি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও বড় মাপের কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে অস্ত্র, গোলাবারুদ, গোলাবারুদ বানানোর পাউডারসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পণ্য দেশের মধ্যে মিথ্যা ঘোষণায় আনার চেষ্টা করা হতে পারে। এরই মধ্যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, চিকিৎসাকাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামের নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে মদ, মাদক, রাসায়নিক, বিস্ফোরকের একাধিক চালান আটক করেছে বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা।
এনবিআর থেকে বিভিন্ন বন্দরে পাঠানো নির্দশে বলা হয়েছে, অনেক সময় কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে পণ্য প্রবেশকালে প্যাকেটের বা কার্টনের বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় থাকে না ভেতরে কী আছে। ছোট-বড় কার্টন, কন্টেইনার, প্যাকেটের ব্যাপারে ন্যূনতম সন্দেহ হলে খুলে দেখে যাচাই করে ছাড় করাতে হবে।
প্রসঙ্গত, সমুদ্র ও স্থলবন্দরে লোকবলের অভাবে এবং সব বন্দরে অটোমেশন না থাকায় পণ্য ভর্তি কার্টন, কন্টেইনার, প্যাকেটসহ বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক খুলে ভেতরে প্রকৃতপক্ষে কোন জাতীয় পণ্য আনা-নেওয়া হচ্ছে তা যাচাই করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শুল্ক কর্তৃপক্ষ পণ্যের সঙ্গে থাকা কাগজপত্র দেখে পণ্য ছাড় করে।