![সাকিবের নির্বাচনী আসন কোনটি](uploads/2023/11/23/1700716889.Sakib-Emection copy.jpg)
ভারতবাসীর হৃদয় ভেঙে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ত্রয়োদশ আসরের পর্দা নেমেছে। এর রেশও প্রায় শেষ। কিন্তু বাংলাদেশে এর রেশ এখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশ দলের ভয়াবহ ভরাডুবি কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিন্তু এই ব্যর্থতার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য বিসিবি এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তবে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, কানাঘুষা থেমে থাকেনি। এরই মাঝে চমক জাগানো ঘটনা ঘটে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করার জন্য সাকিব আল হাসানের মাগুরা-১, মাগুরা-২ ও ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি)- এই তিনটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র কেনা। তিনটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তিনি নির্দিষ্ট কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন?
গতবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাকিব আল হাসান নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বয়স (সে সময় বয়স ছিল ৩২) এবং খেলার কথা বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের অনুমতি পাননি। গতবার নির্বাচন করেছিলেন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। নড়াইল-২ আসন থেকে মাশরাফি যখন নির্বাচন করেন, তখনো তিনি বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। কিন্তু টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে তিনি তখন অবসর নিয়েছেন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছিল। কিন্তু সাকিব আল হাসান যখন তিন-তিনটি মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তখন তিনি ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেরই অধিনায়ক। বর্তমানে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে নিউজিল্যান্ড দল এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। দুই টেস্ট শেষ হওয়ার পর পরই বাংলাদেশ যাবে নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে। ইনজুরির কারণে সাকিব বর্তমানে আছেন ছুটিতে। সুস্থ হতে ৬ সপ্তাহ সময় লাগবে। যে কারণে তিনি খেলবেন না নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। নির্বাচনের কারণে তার এই ছুটি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
দেশে কিংবা নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সাকিব ক্রিকেট খেলবেন কি না, এর চেয়ে এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে তিনি কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন? সাকিবের জন্মস্থান কেশবমোড় মাগুরা-১ আসনে। বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামানব শেখর। মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি) আসনের সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এদিকে সাকিবের এভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করাটা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ভালোভাবে নিচ্ছেন না। আবার সাকিব আগে কখনো এলাকার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। স্থানীয় কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে তার ন্যূনতম কোনো যোগযোগ নেই। এদিকে সাকিবের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-১০ আসন থেকে সাকিব মনোনয়নপত্র কিনেছেন ওপরের মহলের নির্দেশে। ধারণা করা হচ্ছে, এই আসনে আওয়ামী লীগের সে রকম কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য শফিউল আলম মহিউদ্দিনও নির্বাচিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন না। আবার সাকিবের নিজ জেলার মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসনের বর্তমান দুই সংসদ সদস্যই খুব প্রভাবশালী। মাগুরার-২ আসনের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদার একাধিকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী। সাইফুজ্জামান শেখর ২০১৮ সালে প্রথমবার মাগুরা-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএসও ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া তার পিতা মাগুরা-২ আসনেরও সংসদ সদস্য ছিলেন। তার বোন কামরুল লায়লা জলিও সাবেক সংসদ সদস্য। এই দুজনকে বাদ দিয়ে সাকিবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়তো আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকের জন্য কঠিনই হয়ে যাবে। যে কারণে বিকল্প হিসেবে ঢাকা-১০ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে রাখতে বলা হয়েছে। তবে সাকিবের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, যে আসন থেকেই সাকিবকে মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, তিনি সেই আসন থেকেই নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত আছেন। তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন কিনলেও সাকিবের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাওয়া হলে তার ঘনিষ্ঠ সেই সূত্র খবরের কাগজকে জানায়, গ্রিন সিগন্যাল না পেলে কি আর মনোনয়নপত্র কিনেছেন?