![অস্ট্রেলিয়ার টিনএজার](uploads/2024/05/17/a1-1715928300.jpg)
অস্ট্রেলিয়ার টিনএজারদের জীবন অন্যান্য উন্নত দেশের টিনএজারদের মতোই। অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়ায় ১২-১৭ পর্যন্ত বয়সী ছেলেমেয়েদের টিনএজার হিসেবে ধরা হয়। এই বয়সে তারা হাইস্কুলে যায়। এরপর তারা গ্র্যাজুয়েট হয় এবং ১৮ বছরে পড়লেই প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তখন সে ভোট দিতে পারে, মদ এবং সিগারেট কিনতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেক প্রদেশে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা বিদ্যমান।
তবে ছেলেমেয়েদের এক বছরের বাধ্যতামূলক প্রাক-বিদ্যালয় সময়সহ ১৩ বছরের স্কুল জীবন পার করতে হয়। ছয় বছর থেকে শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা, চলতে থাকে এর পরের সাত বছর। আট বছর বয়স থেকে শুরু হয় হাইস্কুল। এই পর্ব চলতে থাকে পরের চার বছর। অস্ট্রেলিয়ায় স্কুল জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর বা ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। সাধারণত একটি বছর বড়ো দুটি ভাগে বিভক্ত থাকে। এগুলোকে সেমিস্টার বলে। আবার বড়ো ভাগগুলো ছোট দুই ভাগে ভাগ হয়। ছোট ভাগের মধ্যে অল্প সময়ের ছুটি থাকে এবং বড় সেমিস্টারের মধ্যে বেশি সময়ের জন্য ছুটি দিয়ে ভাগ করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত দেয় একজন ছাত্র কয়টা বিষয় পড়তে পারবে। তবে এই সংখ্যা পাঁচ থেকে সাতের মধ্যে হয়। ইংরেজি এবং অঙ্ক সব প্রদেশেই স্কুলপর্যায়ে ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক। একটা সুযোগ আছে, স্কুল যদি পড়তে না দেয় তবে কোনো ছাত্র নিজের ইচ্ছামতো কোনো বিষয় দূর-শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পড়তে পারে। দেখা গেছে, শতকরা ৮০ ভাগ অস্ট্রেলিয়ান সাগরপাড়ের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। তাই সাগরপাড়ে বেড়াতে যাওয়ার বিষয়টি খুবই উপভোগ করে। সাগরপাড়ে বেড়াতে যাওয়া মানেই প্রচুর আনন্দ। সেখানে প্রাইমারি পর্যায় থেকে হাইস্কুল অবধি ছেলেমেয়েদের সাঁতার শেখার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কেউ কেউ সাঁতারে দুরন্ত হয়ে ওঠে প্রতিযোগিতার জন্য আবার কেউ শুধু জলে পড়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য সাঁতারটা শিখে রাখে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষই বাধ্যতামূরকভাবে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে।
গ্রামের দিকের স্কুলগুলো সাধারণত ছোট আকারের হয়ে থাকে। এক কি দুই রুমের। শিক্ষকও হয়তো দুই কী একজন। এসব স্কুলে শিক্ষক পাওয়া খুব মুশকিল হয়। কারণ শিক্ষকরা গ্রামের দিকে মাস্টারি করতে আসতে চান না। গ্রামে কে থাকবে শহরের বিলাসী জীবন ছেড়ে?
অস্ট্রেলিয়ার টিনএজাররা টাকা-পয়সার জন্য বাবা-মায়ের ওপর নির্ভর করা অপছন্দ করে। এজন্য তারা স্থানীয় সুপারমার্কেট অথবা রেস্তোরাঁয় কাজ করে পয়সাপাতি উপার্জন করে। ১৬ বছরের নিচে হলে সপ্তাহে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করা নিষেধ এবং কাজ করতে হলে বাবা-মায়ের অনুমতি নিতে হয়। ১৬ বছর বয়স হলেই একজন টিনএজার নিজের ইনকাম ট্যাক্স ফাইল খুলতে পারে, তার নিজের চিকিৎসা কার্ড করাতে পারে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার টিনএজাররা বাস করে ফুটবল, ক্রিকেট আর সাঁতার নিয়ে। স্কুলের পর বেশির ভাগ টিনএজার ক্রিকেট বা কোনো খেলা খেলতে নেমে যায়। ছেলেদের প্রিয় হলো ক্রিকেট ও রাগবি এবং মেয়েদের প্রিয় খেলা হলো নেটবল, যা বাস্কেটবলেরই ক্ষুদ্র সংস্করণ। প্রদেশ বা শহরের মধ্যে প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি অস্ট্রেলিয়ায় খুবই বেশি। এজন্য খেলার সময় দলের পতাকা বা ক্লাব বা দলের জন্য কোনো নির্দিষ্ট গান স্টেডিয়ামে গাওয়া নিষেধ। দেখা গেছে, এতে দলীয় টান এতই বেড়ে যায় যে শেষতক হাতাহাতি থেকে মারামারিতে গড়ায়।
অস্ট্রেলিয়ার টিনএজারদের জীবন অন্যান্য উন্নত দেশের টিনএজারদের মতোই। তারা এখন বেশির ভাগ সময় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে চ্যাটিং করে কাটাতে পছন্দ করে। এখন তাদের কাছে পরিবারটা আসে বাইরের জগতের পরে। এতে পরিবারের সঙ্গে টিনএজারদের ব্যবধানও বাড়ছে। সময় কাটানোর জন্য আছে অনেক ব্যবস্থা। যেমন বাইকারদের জন্য আছে ভিন্ন রোড ট্র্যাক। আছে স্কেটিং বাউল, শপিং সেন্টার, বলঅ্যালি, মুভি থিয়েটার, লেজার ট্যাগ ইত্যাদি। এসব স্থানে টিনএজাররা সহজেই সময় কাটাতে পারে। তবে শতকরা ১০ ভাগ টিনএজার কিন্তু শনি ও রবিবার ছুটির আগের রাত শুক্রবার থেকেই পার্টি করা শুরু করে। মদ পান করে ও গাঁজা সেবন করে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার সঙ্গে জড়িত ছেলেমেয়ের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ! অস্ট্রেলিয়ার টিনএজাররা মোটামুটি ১৫ বছর বয়সেই যৌনতার স্বাদ পেয়ে যায়। যদিও অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের নিচে কারও সঙ্গে সম্মতি থাকলেও যৌন সম্পর্কে জড়িত হওয়া আইনের দৃষ্টিতে গর্হিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। উচ্চ আয়ের দেশ হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ার টিনএজারদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই ডাকাতি, গাড়ি চুরি, ছিনতাই ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী যেখানে ২০১৯ সালে এই অপরাধগুলো সংগঠিত হয়েছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেখানে গত বছর এই হার ১৫ শতাংশেরর ওপর। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় এ ধরনের অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে ১০- ১৭ বছর বয়সী টিনএজাররা! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অপরাধ থেকে টিনএজারদের ফিরিয়ে আনার জন্য এখনই দরকার কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া। আবার কেউ বলছেন, টিনএজারদের লালন-পালন করার জন্য আমাদের উচিত পুরনো দিনের নিয়মকানুনগুলো ফিরিয়ে আনা। নিয়মকানুন মানে ল্যাঠ্যাষৌধের কথা বলছেন কি না কে জানে!
তবে যারা অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আসে সেই সব টিনএজারের জন্য নতুন পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোটা খুব শক্ত। কারণ নতুন পড়ালেখার পদ্ধতি, নতুন বন্ধু জোটানো এবং পরিবারকে বাইরের অনেক কিছুকে বোঝানো। ফেলে আসা নিজের সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন সংস্কৃতিকে মেলানো, এসবই অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আসা টিনএজারদের জন্য সমস্যাবহুল।
এতসবের পরও অস্ট্রেলিয়ানরা বলে থাকে পরিবার হচ্ছে পরিবার, এর সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। এখনো তারা অনুগত পরিবার ও আত্মীয়-পরিজনদের নিয়েই ভবিষ্যতের দিকে এগোতে চায়।
জাহ্নবী