![বিশ্বখ্যাত পাঁচ তরুণ উদ্যোক্তা](uploads/2024/06/28/a2-1719560088.jpg)
কিছু কিছু উদ্যোগের শুরু জমকালোভাবে হয় না। বাড়ির গ্যারেজ, কলেজের ডরমেটরি, এমনকি স্কুলের ক্লাসরুমেও অনেক বড় বড় ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়েছে। কিছু তরুণ উদ্যোক্তা জীবনের শুরু থেকেই ব্যবসার ধাঁচটা বুঝে নিয়ে ধীরে ধীরে নিজেদের উন্নত করে পৌঁছে গেছেন সফলতার চূড়ায়। আমরা শুধু মার্ক জুকারবার্গের নামটা বেশি জানি। জুকারবার্গ ছাড়াও অনেকেই তরুণ বয়সে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাদের অনেকেই এখন শিক্ষাজীবন শেষ করে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। জেনে নিই পাঁচজন তরুণ সফল উদ্যোক্তার কথা।
সিমোন হুফানা
সিমোন মেয়েটি দারুণ একটা কাজ করেছে। কলেজে পড়া অবস্থাতেই সিমোনের মনে একটা সুন্দর ভাবনা দোল খায়। মেয়েদের জন্য, নারীদের জন্য ও কিছু করতে চাচ্ছিল। ও তৈরি করে কালারিং বুক; যেখানে তরুণী থেকে শুরু করে বয়স্কা নারীদের স্কেচ থাকে, সেই সঙ্গে গল্প। রং-পেনসিল বা তুলি দিয়ে স্কেচটা রঙিন করে নেওয়ার সুযোগ থাকে। ওর ব্র্যান্ডের নাম ‘কালার হারস্টোরি’। ২০১৭ সালে ওর প্রতিষ্ঠানের শুরু। সে বছর ও ‘শপিফাই’ থেকে পুরস্কারও পায় এই দারুণ বিজনেস আইডিয়ার জন্য। ওর দুটো ছোট বোন আছে। ওদের মতো আরও হাজারো মেয়ের উদ্বুদ্ধ করতে, নিজের ভেতরের শক্তিকে চিনে জীবনকে রাঙাতে ওর উদ্যোগ। স্কুল-কলেজে যা হয় না, মিডিয়াতেও যা আসে না, মেয়েদের সে বিষয়গুলো রঙিন করে তুলে আনতে সিমোনের প্রয়াস।
ইয়েলিস্তা জিন্স চার্লস
দুনিয়ায় বর্ণবাদকে একটা অভিশাপ বললে খুব কম বলা হবে। একজন মানুষকে শুধু তাঁর গায়ের রঙের জন্য নিগ্রহের শিকার হতে হবে এটা খুব বাজে ব্যাপার। নিগ্রো শিশু ইয়েলিস্তা টিভিতে, পত্রিকায়, বিলবোর্ডে সবখানেই দেখত গায়ের ফরসা রং, সোনালি চুল আর নীল চোখের মেয়েদেরই শুধু ‘সুন্দর’ বলা হচ্ছে। এই ধারণাটা ওর ভেতরে বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল; নিজেকে সবকিছু থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করত সে। কিন্তু রোড আইল্যান্ড স্কুল অব ডিজাইনে পড়ার সময় ওর ধারণা পাল্টে দিল ছোট একটা ক্লাস প্রোজেক্ট। আর্ট ক্লাসের অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে ইয়েলিস্তা বানিয়েছিল খুব সুন্দর একটা মেয়ে পুতুল, নিগ্রো মেয়ে, ওর মতোই দেখতে। এই বিষয়টা হঠাৎ করে ওর মনে গেঁথে যাওয়ায় একটুও দেরি করেনি সে। ২০১৪ সালে শুরু করে নিগ্রো মেয়ে পুতুর বানানোর কোম্পানি ‘হেলদি রুটস ডলস’। দেখতে খুবই মিষ্টি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওকে। বর্তমানে প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার বাজারমূল্যের কোম্পানি এটি। বিশ্বের নামিদামি বিভিন্ন সুপারশপে দেখা মেলে হেলদি রুটস ডলসের পুতুল।
রায়ান ট্রাহান
মার্কিন তরুণ রায়ান ট্রাহান ২০১৭ সালে টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় একজন স্টুডেন্ট অ্যাথলেট হিসেবে ছিল। এর পাশাপাশি সে নিজস্ব একটা পানির বোতলের ব্র্যান্ড বাজারজাতকরণ শুরু করেছিল; সেই সঙ্গে অ্যাথলেটিংয়ের ওপর ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও বানাত আর নিজের পানির বোতলের ব্র্যান্ডটাকে পরিচিত করত। কাজটা চলছিল ভালোই। কিন্তু কিছুদিন পরে ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেট অ্যাসেশিয়েশন থেকে কাজে বাধা দেয়; সাফ জানিয়ে দেয়, হয় ভার্সিটিতে পড় নয়তো পড়ালেখা ছেড়ে পুরোপুরি ইউটিউবার হয়ে যাও। রায়ান দ্বিতীয়টাই বেছে নেয়। নিজের ব্র্যান্ডটাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে। ওর ইউটিউব চ্যানেলের ফলোয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ১১ মিলিয়নে পৌঁছে যায়। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওকে।
ম্যাটিও গালভেজ
বর্তমানে কলেজ গ্র্যাজুয়েট; সেই সঙ্গ একজন পেশাদার সফল উদ্যোক্তা। ওর নিজে গড়ে তুলেছে একটা বিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘লোটা ওয়ার্ল্ডওয়াইড। বিখ্যাত অনলাইন শপিং কোম্পানি শপিফাইয়ের একটা ফ্যাশন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জেতার পর ওর ভেতর আরও ভালো কিছু করার উদ্দীপনা তৈরি হয়। সীমিত আয়ে ওর পরিবার কীভাবে দিন কাটাত সেগুলো দেখে নিজের কাজকে প্রতিদিন আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস চালাত ম্যাটিও গালভেজ। বর্তমানে লোটা ওয়ার্ল্ডওয়াইড আমেরিকার তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড।
কেটি কারসন
হাইস্কুলে পড়া অবস্থাতেই কেটি কারসন তার নিজের ব্যবসা শুরু করে। সাবান বানানোর ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর কেটি নিজে সাবান বানিয়ে ওর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন কন্টেন্ট বানাত; খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওর কমিউনিটিতে সাবানের ব্র্যান্ডটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথম ভিডিওতে কেটি কারসন অন্য সাবান নির্মাতাদের ওপর ভিডিও বানালেও এরপর থেকে নিজে কীভাবে সাবান বানায় সেগুলো দেখাত। এর ফলে ওর ইউটিউব চ্যানেল অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক বেশি নতুন সদস্য পেতে শুরু করে। জনপ্রিয়তা দেখে কেটি নিজেই অবাক হয়ে যায়; ওর কাজ যে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে সেটা আশা করেনি। কাজটায় বেশি আনন্দ পায় সে। ওর সাবানের ব্র্যান্ডের নাম ‘রয়েলটি সোপস’।
জাহ্নবী