ঢাকা ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

বিশ্বরাজনীতিতে শক্তিশালী তুরস্কের সামরিক অবস্থান সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ পিএম
বিশ্বরাজনীতিতে শক্তিশালী তুরস্কের সামরিক অবস্থান সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
তুরস্কের সামরিক বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

সমসাময়িক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর তালিকায় নজর দিলে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায় তা হলো, প্রায় প্রতিটি দেশেরই সামরিক শক্তি অভাবনীয়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অথবা কথিত সেই দুঃস্বপ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বিশ্ব মোড়লরা কীভাবে তাদের সামরিক শক্তির ঝুলি দিন দিন আরও ভারী করছে। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় অদৃশ্য এক কোণে বসে বৃহত্তর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দিকে কিছুটা অর্থপূর্ণ দৃষ্টি রাখার প্রচেষ্টাই ‘সামরিক শক্তির আদ্যোপান্ত’ সিরিজ। এই সিরিজে আজ থাকছে তুরস্কের সামরিক শক্তির বিস্তারিত-

ইউরেশিয়া অঞ্চলের দেশ তুরস্কের সামরিক শক্তি বেশ কিছু সংস্কার ও পরিমার্জনের পর বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহাসিক পটভূমি ও কৌশলগত সুবিধা বাস্তবায়ন এই বিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইন্ডেক্সের (জিএফপিআই) তথ্য অনুয়ায়ী সামরিক শক্তিতে ১৪৫টি দেশের মধ্যে তুরস্কের অবস্থান অষ্টম। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমীহ আদায় করে নিয়েছে কয়েক শতাব্দীর পুরোনো এই শক্তি। তৎপর প্রতিরক্ষাখাত ও আধুনিক পররাষ্ট্রনীতির ওপর ভর করে নিজেদের অবস্থান ক্রমেই দৃঢ় করে তুলছে দেশটি।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

তুরস্কের সামরিক ইতিহাস জানতে অটোমান সাম্রাজ্যের কাছে যেতে হয়। বহুস্তরবিশিষ্ট সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে ঐতিহাসিক এই পরাশক্তি কয়েক শতক ধরে বিশ্বে নিজেদের শক্তি বজায় রেখেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুর্কি সাম্রাজ্যের পতনের পর দেশটির সামরিক খাত উল্লেখযোগ্য রদবদলের সাক্ষী হয়।

১৯২৩ সালে প্রজাতন্ত্র গঠনের পর মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক সরকার ধর্মনিরপেক্ষতা ও আধুনিকায়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে তুরস্কের রাষ্ট্রনীতিতে সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করে।

স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৫২ সালে পশ্চিমা রাষ্ট্রজোট ন্যাটোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থানে যায় তুরস্ক।

১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সালে সংঘটিত কোরিয়ার যুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সামরিক সহাবস্থানে যায় তুরস্ক। ইউরেশিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব কমাতে এটা তুরস্কের কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল বলে মত বিশ্লেষকদের। 

তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কট ও সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে তুরস্কের জনগণের কাছে সামরিক বাহিনীর অবস্থান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

দেশটির সাম্প্রতিক টানাপোড়েন মূলত কুর্দি বিদ্রোহীগোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ারকার্স পার্টি (পিকেকে) ঘিরে। এ ছাড়া আরব বসন্তের পর থেকে উদ্ভূত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধও তুরস্কের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কূটনৈতিক কৌশল আধুনিকায়নের চেষ্টা করছে বর্তমান এরদোগান সরকার।

সামরিক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি:

২০২৪ সালে এসে তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে (টিএএফ) প্রায় আট লাখ ৯০ হাজার সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে চার লাখ ২৫ হাজার সৈন্য সরাসরি কর্মরত। বাকিদের রাখা হয়েছে সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায়।

সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী - এই তিন শাখা নিয়ে তুরস্কের সামরিক বাহিনী গঠিত।

দেশের বার্ষিক জিডিপির প্রায় এক দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয় দেশটির সরকার। এই বরাদ্দের পরিমান অর্থের হিসাবে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া দেশের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ কিছু সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক সরকার। 

প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বৃদ্ধি:

প্রতিরক্ষা খাতে বিদেশ নির্ভরতা কমাতে দেশেই অস্ত্র উৎপাদন শুরু করেছে আঙ্কারা। বেরাক্তার টিবি২-এর মতো অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে তারা। এ ছাড়া শক্তিশালী নৌঘাটি ও সাঁজোয়াযান তৈরির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে তুরস্ক।

প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: 

তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরত্বারোপ করায় দেশেই আনম্যান্ড অ্যারিয়াল ভেহিকলসের (ইউএভি) মতো আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি সম্ভব হয়েছে। এদিকে প্রথমবারের মতো দেশের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান কান ফাইটার উদ্ভাবনে প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে তুরস্ক।

আঞ্চলিক সামরিক অবস্থান: 

মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তুরস্কের সামরিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্ববহ। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া ও কাতারে দেশটির সামরিক সদস্যের কৌশলগত অবস্থান রয়েছে। আঞ্চলিক কূটনীতিতে তুরস্কের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। সিরিয়ার সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের পেছনে তুরস্ক সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) ভূমিকা এই বক্তব্যকেই প্রমাণ করে। 

তুরস্কের সামরিক জোট: 

ন্যাটোর সঙ্গে মিলে নিয়মিত সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তুরস্ক। এ ছাড়া মুসলিম বিশ্বে কূটনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করতে পাকিস্তান ও আজারবাইজানের মতো ন্যাটো-বহির্ভূত দেশে সঙ্গেও ইতিবাচক সামরিক জোট গঠন করেছে দেশটি।
তুরস্কের পরমাণুনীতি।

বর্তমানে কোনো পারমাণবিক গবেষণা কার্যক্রম না থাকলেও এই খাতে উন্নতির প্রত্যাশা করছে তুরস্ক সরকার। মূলত জলবায়ুসহায়ক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্দেশ্যেই পরমাণু খাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি।  

১৯৭৯ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিষ্ক্রিয়করণ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরের মাধ্যমে পারমাণবিক বোমা উৎপাদন বাতিল করেছে দেশটি। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তি কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী এই খাতের শান্তিপূর্ণ ও জনহিতকর ব্যবহার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর তুরস্ক।

এ বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সাম্প্রতিক বক্তব্য বিশ্বমহলে কিছুটা অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। ‘তুরস্ক পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারলে বিরোধীতার এখতিয়ার নেই পশ্চিমা বিশ্বের’ - প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের পর সমালোচনা করছেন অনেকেই।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিগত খামতি ও আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তুরস্ক চাইলেও সহসাই পারমাণবিক খাতে দুরূহ শক্তি হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারবে না। 

এদিকে ন্যাটোর গোষ্ঠীগত প্রতিরক্ষা অনুবন্ধের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পারমাণবিক ঘাঁটি স্থাপনে সম্মত হয়েছে তুরস্ক। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক বাণিজ্যে জড়িত হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে আঙ্কারার কূটনৈতিক বিশ্বস্ততা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। 

আধুনিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভবিষ্যতে তুরস্কের সামরিক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-

আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে তৎপরতা বৃদ্ধি: 

সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান দ্বন্দ্বে তুরস্কের সক্রিয় অবস্থান থাকবে বলেই ধারণা করা যায়। ইরাক ও সিরিয়ায় কুর্দি বিদ্রোহ দমনে দেশটির সচেষ্ট ভূমিকা প্রত্যাশা করলে ভুল হবে না।

প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি:

কূটনৈতিক অবস্থান আরও শক্ত করতে প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত অস্ত্রের বহরে দেশে উৎপাদিত আধুনিক অস্ত্রই বেশি রাখতে চাইবে তুরস্ক। গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশটি প্রতিরক্ষা খাতে সমূহ উন্নতির পরিকল্পনা করছে।

পরমাণু খাতে আগ্রহ:

এনপিটি চুক্তির কারণে পারমাণবিক বোমা উৎপাদনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র আকার ধারণ করলে আঙ্কারা এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি: 

রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০’র মতো আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র কেনায় ন্যাটোর সঙ্গে কিছুটা বিরোধপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। তবে ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রেখে ন্যাটো-বহির্ভূত দেশগুলোর সঙ্গে সহাবস্থান টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী এরদোয়ান সরকার।

তুরস্কের সামরিক অবস্থান এক বিশাল সাম্রাজ্যবাদ থেকে আধুনিক যুদ্ধশাস্ত্রের পাঠ দেয়। সিরিয়ার গোলান মালভূমি থেকে গাজার শরণার্থী শিবির - সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আঙ্কারার অবস্থারের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সার্বিক বিবেচনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট নিরসনে দেশটি শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা।

সূত্র: কার্নেগি এনডাওমেন্ট, ‘চেসিং দ্য রেড অ্যাপল: টার্কিশ কোয়েস্ট ফর স্ট্র্যাটেজিক অটোনিমি’, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইন্ডেক্স (জিএফপিআই) , আইরিস- ‘এ লুক আপন টার্কিশ ফিউচার নিউক্লিয়ার ওয়েপনস পলিসি’

নাইমুর/অমিয়/

ভারতের সামরিক সক্ষমতার বিস্তারিত

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম
আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম
ভারতের সামরিক সক্ষমতার বিস্তারিত
ভারতের সামরিক বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

সমসাময়িক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর তালিকায় নজর দিলে একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায় তা হলো, প্রায় প্রতিটি দেশেরই সামরিক শক্তি অভাবনীয়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অথবা কথিত সেই দুঃস্বপ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, বিশ্ব মোড়লরা কীভাবে তাদের সামরিক শক্তির ঝুলি দিন দিন আরও ভারী করছে। তৃতীয় বিশ্বের প্রায় অদৃশ্য এক কোণে বসে বৃহত্তর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দিকে কিছুটা অর্থপূর্ণ দৃষ্টি রাখার প্রচেষ্টাই ‘সামরিক শক্তির আদ্যোপান্ত’ সিরিজ। এই সিরিজে আজ থাকছে ভারতের সামরিক শক্তির বিস্তারিত-

ভারতের সামরিক খাত সূচনালগ্ন থেকে বেশকিছু সংস্কার-পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে গেছে। বর্তমানে ভারতীয় সামরিক বাহিনী বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমীহ অর্জন করেছে। তাদের বন্ধুর ইতিহাস, বর্তমান সক্ষমতা, পরমাণুনীতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়েই এই লেখা।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ভারতের সামরিক বাহিনী বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রাচীনকালে ফিরে যেতে হয়। সুগঠিত সেনাদল ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে বেশ উন্নত অস্ত্রের মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টি করেছিল দেশটি।

তবে বর্তমান সামরিক শক্তির গোড়াপত্তন হয় ব্রিট্রিশ আমলে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারত শাসনের সময় বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক সেনাবাহিনী গঠন করে। এই আঞ্চলিক সেনাদলগুলোর মাধ্যমে তারা সমগ্র ভারতে কোম্পানির শাসন কায়েম করেছিল।

১৮৫৭ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ভারতের কর্তৃত্ব গ্রহণের পর এই আঞ্চলিক বাহিনীগুলোকে কেন্দ্রীভূত করে ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মি গঠন করা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বিদ্যমান সামরিক গঠন ও নীতি বর্তমানের শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মভিত্তিক দাঙ্গা ও অবকাঠামোগত বাধার কারণে সুগঠিত হতে বেগ পেতে হয় এই সামরিক বাহিনীর।

দেশভাগের পর বাড়তে থাকা সহিংসতা ও কাশ্মীর ইস্যুতে ১৯৪৭-৪৮ সালে সংঘটিত প্রথম ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে উঠেপড়ে লাগে দিল্লি।

বর্তমান সক্ষমতা
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইন্ডেক্সের মতে, ১৪৫টি দেশের মধ্যে ভারতের সামরিক অবস্থান চতুর্থ। এই তথ্য প্রমাণ করে দেশটির সামরিক বাহিনী বেশ এগিয়ে।

সেনাবাহিনী:
ভারতীয় সামরিক খাতের সবচেয়ে বড় অংশ সেনাবাহিনী। বিপুল সংখ্যক সেনা সরাসরি কর্মরত। রয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের বহরও। ভারী সাঁজোয়া যান ও শক্তিশালী গোলাবারুদের ওপর ভর করে প্রতিপক্ষের ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। বর্তমানে তারা সংকটাপন্ন যুদ্ধপরিস্থিতি মোকাবিলায় অস্ত্রের আধুনিকায়নে মনোনিবেশ করেছে।

নৌবাহিনী
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশটির নৌবাহিনী তৎপর। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা বাড়াতে সম্প্রতি একটি আধুনিক সাবমেরিন, একটি ফ্রিগেট ও একটি শক্তিশালী টর্পেডো নিক্ষেপকারী ‘ডেস্ট্রয়ার’ কিনেছে।

বিমানবাহিনী
দ্য ইন্ডিয়ান অ্যায়ার ফোর্সের (আইএএফ) বিমানের বহরে রয়েছে বেশকিছু আধুনিক যুদ্ধবিমান। এমআইজি-২৯ ও বোয়িং সি-৭ গ্লোবমাস্টার-৩-এর মতো শক্তিশালী বিমানের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকার পাশাপাশি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে আইএএফ। এ ছাড়া দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর অভিযানেও উল্লেখযোগ্য সহায়তা থাকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর।

পরমাণুনীতি
ভারতের অস্ত্রের বহরে পারমাণবিক বোমা রয়েছে। নিউক্লিয়ার ট্রায়াডের মাধ্যমে সমতলের পাশাপাশি বিমান ও নৌযান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব। তবে দেশটির পরমাণুনীতি ‘নো ফার্স্ট ইউজ (এনএফইউ)’ মেনে চলে। অর্থাৎ দ্বন্দ্বে উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও প্রতিপক্ষকে ভারত আগে পারমাণবিক আঘাত করতে পারবে না।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ভারতীয় সামরিক বাহিনী আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মোকাবিলা করতে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গঠিত কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ জোটের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা করছে দিল্লি।

প্রতিরক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন
প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহৃত যন্ত্রের আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশেই আধুনিক গোলাবারুদ উৎপাদন করেছে ভারত। এদিকে নতুন অস্ত্র উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে সমানতালে।

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
পর্যাপ্ত অর্থের জোগান থাকায় প্রতিরক্ষা খাতের উন্নতিতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে না ভারতের সামরিক খাত। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে অস্ত্র উৎপাদনের সামঞ্জস্য রেখে বেশ শক্ত অবস্থানে আছে ভারত। তবে ভবিষ্যতে ভারত এই ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খাবে বলে ধারণা করছেন অনেক বিশ্লেষক। এ পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সমস্যা দিল্লি মোকাবিলা করতে পারে কি না- এটাই দেখার বিষয়।

কূটনৈতিক সম্পর্ক
প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে ভারতের সামরিক বাহিনী শক্ত অবস্থান টিকিয়ে রাখবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে সূক্ষ্ম কূটনৈতিক দরকষাকষিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় বেশ ভালো অবস্থানেই আছে ভারতের সামরিক খাত। 

তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আগ্রাসী সামরিক নীতি অবলম্বন ভারতকে ভোগাবে বলে মত একপক্ষের। বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান- কারোর সঙ্গেই খুব একটা স্বস্তির সম্পর্ক নেই ভারতের। 

এ পরিস্থিতিতে ভারতের সামরিক বাহিনী বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখবে নাকি দ্বন্দ্বের দিকে অগ্রসর হবে- এর ওপরই নির্ভর করবে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ভারতের অবস্থান ভবিষ্যতে কেমন হবে।   

প্রাচীন বর্শা থেকে সহস্রাব্দীর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পথচলা নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণীয়। তবে আঞ্চলিক রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে না ফিরলে অঞ্চলের সব দেশেই কূটনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এ পরিস্থিতি আরেকটি যুদ্ধের সূত্রপাত না হোক, ভারতীয় উপমহাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের অনুকরণ না করুক- এই প্রত্যাশাই করছেন সবাই। 

সূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইন্ডেক্স, ন্যাশনাল আর্মি মিউজিয়াম, ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান আর্মি-পোস্ট ইন্ডিপেন্ডেন্স’, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, ফাইনানশিয়াল টাইমস। 

নাইমুর/অমিয়/

হিটলারের দেশ জার্মানির সামরিক শক্তির বিস্তারিত

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
হিটলারের দেশ জার্মানির সামরিক শক্তির বিস্তারিত
ছবি : সংগৃহীত

জার্মানির সামরিক বাহিনী বেশ কয়েক যুগের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ থেকে শুরু করে দুটো বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছে এই প্রভাবশালী দেশের সেনারা। জার্মানির সামরিক শক্তির ঐতিহাসিক বিবর্তন, বর্তমান সক্ষমতা, দেশটির পরমাণুনীতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিস্তারিত নিয়ে এই লেখা।

ইতিহাসের পাতায় জার্মানির সামরিক শক্তি
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষাংশে ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জার্মানির সামরিক শক্তি ইউরোপের ত্রাস ছিল। দেশটির প্রুশান সাম্রাজ্যের কাইজার দ্বিতীয় উইলহেমের আমলে শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও তৎপর নৌবাহিনীর কল্যাণে জার্মানির সামরিক শক্তি সমীহের জায়গা দখল করে নেয়।

এদিকে কঠোর সামরিক নীতি ও আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির কারণে প্রথম যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটানোয় জার্মানিকে দায়ী করেন বিশ্লেষকরা।

তবে ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে দেশটির সামরিক খাতকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে বিরোধী রাষ্ট্রের জোট।

১৯৩০-এর দশকে অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনী গঠনের মাধ্যমে গোপনে অস্ত্রের বহর শক্তিশালী করে বার্লিন। এর ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া পড়ে পৃথিবীতে। 

এই যুদ্ধের পর জার্মানির সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি দেশটিও বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৫৫ সালে দ্য ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি (ওয়েস্ট জার্মানি) বুন্দেসওয়ের নামে সামরিক বাহিনী গঠন করে। অন্যদিকে জার্মান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক (ইস্ট জার্মানি) গঠন করে সোভিয়েত ঘরানার ন্যাশনাল পিপলস আর্মি। 

১৯৯০ সালে জার্মানি পুনরায় একত্রিত হওয়ার পর ন্যাশনাল পিপলস আর্মি ভেঙে বুন্দেসওয়েরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আধুনিক পৃথিবীতে জার্মানির সামরিক সক্ষমতা
বর্তমানে জার্মানির সামরিক বাহিনী স্বয়ংসম্পূর্ণ। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইন্ডেক্সের তথ্যমতে, ১৪৫টি দেশের মধ্যে জার্মানির অবস্থান ১৯। দেশটির সামরিক বাহিনীতে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার সামরিক সদস্য সরাসরি কর্মরত। সাম্প্রতিক বিশ্বের নিরাপত্তা হুমকি ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের কথা বিবেচনা করে এই সংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজারে পরিণত করতে চায় বার্লিন।

সামরিক গঠন
● সেনাবাহিনী: জার্মানি সেনাবাহিনীর রয়েছে শক্তিশালী লেপার্ড-টু ট্যাংক। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই ট্যাংক দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া ‘পুমা সাঁজোয়া যান’ ও অত্যাধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা জাহির করেছে দেশটি।

● নৌবাহিনী (মেরিন): জার্মানির নৌবাহিনী আধুনিক যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন ও সাপোর্ট ভেসেলের মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরে কর্তৃত্ব কায়েম করেছে। জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে জার্মান নৌবাহিনীর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।

● বিমান বাহিনী: বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্রবহরসংবলিত বিমানবাহিনীগুলোর তালিকা করা হলে জার্মানির নাম শুরুর দিকেই থাকবে। ইউরোফাইটার টাইফুন, মাল্টিরোল ফাইটারস্ টর্নেডো এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে আকাশপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে জার্মান বিমানবাহিনী। এ ছাড়া প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও হামলার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই খাতের আধুনিকায়নে মনোযোগ দিয়েছে দেশটি। 

প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ও আধুনিকায়ন
ন্যাটো সম্প্রতি জোটের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে বাজেটের অন্তত দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বার্লিন সরকার। এই প্রচেষ্টায় দেশের সামরিক বাহিনীতে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ইউরো ব্যায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আধুনিক অস্ত্রসরঞ্জাম মজুদের পাশাপাশি সংকটাপন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। 

আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা অভিযানে জার্মানির সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন সামরিক অভিযানের পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়মিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করে দেশটি।

জার্মানির পরমাণুনীতি
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরের কারণে বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র সংরক্ষণে জার্মানি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে। তবে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে জোটে পারমাণবিক কার্যক্রমে দেশটি সহায়তা করে।

এরই প্রেক্ষিতে দেশটির সার্বভৌম অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু ঘাঁটি রয়েছে। তবে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু ঘাঁটি থাকায় পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিতর্কের সম্মুখীন হচ্ছে দেশটির প্রশাসন। 

সমালোচনা সত্ত্বেও ন্যাটোর পরমাণু কার্যক্রমে জার্মানির পূর্ণ সহায়তা থাকবে বলে জানিয়েছে বার্লিন প্রশাসন। 

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও কৌশলগত বাধা
বর্তামানে জার্মানির সামরিক বাহিনী বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে জটিল কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব, সাইবারস্পেসে নিরাপত্তার অভাব ও প্রতিরক্ষা বাস্তবায়নে জলবায়ু-সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মতো বেশ কিছু সমস্যা ভোগাচ্ছে জার্মানিকে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে জোট গঠন করছে দেশটি।

প্রতিরক্ষা খাতে উদ্ভাবন
সম্প্রতি জার্মানির সরকার প্রতিরক্ষা খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও অস্ত্রের বহর শক্তিশালী করায় মনোযোগ দিয়েছে। দেশেই আধুনিক অস্ত্র তৈরি মাধ্যমে ব্যয় কমিয়ে আরও উন্নতি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে অর্থ বরাদ্দ দিতে পারছে বার্লিন সরকার।

এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, সামরিক খাতে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগের পাশাপাশি ইউরোপীয় জোটের সহায়তায় প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নতির দিকেই যাচ্ছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

ইউরোপের সহায়তা
ইউরোপের সহায়তা হারাতে চাইবে না জার্মানি। প্রতিরক্ষা খাতে ইউরোপীয় সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দেশটি মহাদেশীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতেও স্থিতাবস্থা কায়েম করবে বার্লিন।

প্রতিরক্ষা নীতিতে জনগণের অসন্তোষ
প্রতিরক্ষা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু ঘাঁটি স্থাপনের  অনুমতি দেওয়ায় বিতর্কের মুখে পড়েছে জার্মানি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রত্যাশার বোঝাপড়া বার্লিন সফলভাবে করতে পারে কি না- এর ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যতে দেশটির প্রতিরক্ষানীতি কোন দিকে যাবে।

ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার দাগ গায়ে লেগে থাকা জার্মানির সামরিক বাহিনী সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে ঈর্ষণীয় উন্নতি করেছে। আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে দেশটির প্রতিরক্ষা খাত সাফল্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
 
সূত্র: আইরিস ফ্রান্স, ক্লিন এনার্জি ওয়ার, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইন্ডেক্স, রয়টার্স

নাইমুর/অমিয়/

মেজর ডালিম কোন দেশে থাকেন, জানেন না অনেকেই

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৭ পিএম
আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
মেজর ডালিম কোন দেশে থাকেন, জানেন না অনেকেই
শরিফুল হক ডালিম

মেজর শরিফুল হক ডালিম। দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রকাশ্যে এসেছেন। তবে তা ছিল লাইভে। ৫০ বছরের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এই ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি’।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ডালিম। শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর মেজর ডালিম (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) সেটি বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা দেন।

পাঁচ দশক পর মেজর ডালিমকে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। কারণ তিনি বেচে আছেন সেটিও অনেকেই জানতেন না। তাছাড়া মেজর ডালিম এখন কোথায় আছেন তা-ও স্পষ্ট নয়।

২০২১ সালের ১৫ আগস্টের ঠিক আগে পুলিশ সদরদপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশি একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মেজর ডালিম পাকিস্তান কিংবা লিবিয়ার অবস্থান করছেন।

তবে বাংলাদেশের একই ইংরেজি দৈনিক ২০০৯ সালে কূটনেতিক ও গোয়েন্দা সূত্রে জানিয়েছিল, মেজর ডালিম পাকিস্তানে বসবাস করেন। তিনি প্রায়ই লিবিয়া যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে দেশটির বেনগাজি শহরে যান তিনি। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের মেয়াদকালে (২০০১-২০০৬ সাল) মেজর ডালিম একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে স্বপরিবারে নিহত হন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন ভোরের ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তা মেজর ডালিম। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। এর মূল অ্যাজেন্ডা ছিল ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন এবং দেশ ছেড়েছেন, তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তি করা। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সেই টাস্কফোর্সের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালি-উর-রেহমান।

সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমকে ওই সময় বলেন, মেজর ডালিমের কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ব্যবসা রয়েছে। এছাড়া মেজর ডালিম কেনিয়ার নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে দেশটির পাসপোর্ট সংগ্রহ করতেও সমর্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওই টাস্কফোর্সের কাজ ছিল ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত এবং বিদেশে চলে গেছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তি করা। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত টাস্কফোর্সের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালি-উর-রেহমান।

অমিয়/

যে পাথরের উপর নেচে বেড়াতো ডাইনোসররা

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫১ পিএম
যে পাথরের উপর নেচে বেড়াতো ডাইনোসররা
ক্যাল অর্কো ডাইনোসর সাইট-কে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্মসম্পর্কিত দর্শনীয় স্থান হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।

পৃথিবীতে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে ডায়োনোসরদের ঘুরে বেড়ানোর প্রমাণ এখনো স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। কোনোটি ছোট কোনোটি বিশাল, চলাচল করার সময় ভেজা কর্দমাক্ত মাটিতে এরা এমন হাজারো পদচিহ্ন ফেলে গেছে! তবে তারা যে স্পাইডার ম্যানের মতো পাহাড় বেয়েছে বা দেয়াল বেয়ে উঠেছে বিষয়টি কিন্তু তা নয়। ডাইনোসোরগুলো সমতল ভূমিতেই চষে বেড়িয়েছে। কিন্তু বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কালের বিবর্তনে এই ভূমিই খাড়া উপরে উঠে এমন পাহাড়ের মতো আকার ধারণ করেছে কিন্তু পদচিহ্নগুলো অবিকৃত থেকে গেছে।

বলিভিয়ার চুকুইসাকা প্রদেশের অদূরে স্যুকের অঞ্চলের পাশে একটি পাহাড়ের পাথরেই রয়েছে প্রায় ৫ হাজারের মতো আলাদা আলাদা ডাইনোসরের পায়ের ছাপ! এই পাথরের নাম ক্যাল অর্কো, যাকে বলা হয় 'ডাইনোসরদের নৃত্যভূমি'। এই পাথরটি দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ১১০ মিটার উঁচু! একে পাথর বললে অবশ্য ভুলই হবে। কারণ, কালের বিবর্তনে সমতল তৃণভূমি ক্রমশ ওলট-পালট হয়ে এমন উল্লম্ব চুনাপাথরে পরিণত হয়েছে। এই ক্যাল অর্কো নামের পাথরের বুকেই লুকিয়ে আছে ৬৮ মিলিয়ন বছর আগে লেট ক্রেটাসিয়াস যুগে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়ানো বড় বড় সব ডাইনোসরের পায়ের ছাপ! এখানে মোট ২৯৩ প্রজাতির ডাইনোসরের পায়ের ছাপ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর সামনে মাথা উঁচু করে দাড়ালেই দেখা মিলবে অদ্ভুত সব সরিসৃপদের পায়ের আকাঁবাঁকা চিহ্ন যে প্রাণিগুলো মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এগুলোর মধ্যে আছে হিংস্রতম ডাইনোসর ট্রাইনোসরাস-রেক্স ওরফে টি-রেক্স, মাংসাশী ত্রি-পদাঙ্গুলিবিশিষ্ট থেরোপড, লম্বা গলাওয়ালা সরোপডস যেমনটা জুরাসিক ওয়ার্ল্ড মুভিতে দেখানো হয়েছে সেই ব্রাচিওসাউরাস ডাইনোসর, তৃণভোজী হ্যাড্রোসরসহ অন্তত ৮ প্রজাতির ডাইনোসরের পায়ের ছাপ!

সাধারণ একজন মানুষের কাছে এ বিষয়টা অনেকটা অর্থহীন মনে হলেও হতে পারে, তবে একজন জীবাশ্মবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর কাছে এ তথ্যগুলো রীতিমতো গায়ের লোম দাঁড়া করিয়ে দেবার মতো।

লক্ষ কোটি বছর আগে সবুজ প্রকৃতিতে বিলুপ্ত এই সরিসৃপদের চলাফেরা, আচরণ, খাদ্যাভ্যাস ও আকৃতি সম্পর্কে ধারনা দিতে এই পাথর জীবাশ্মবিজ্ঞানের মহামূল্যবান উপাত্ত। তাই ক্যাল অর্কো ডাইনোসর সাইট-কে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্মসম্পর্কিত দর্শনীয় স্থান হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়।

১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো যখন এই স্থানের সন্ধান মেলে তখন  ইতিহাস ও বিজ্ঞানে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। এই জায়গাটি পাহাড় যুগ বা ক্রেটাসিয়াস যুগের শেষে, প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগেকার টারশিয়ারী যুগের শুরুতে ঘটে যাওয়া চিত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় গবেষণায় একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটায়। এ তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় ডাইনোসরের জীববৈচিত্র্যের সংখ্যাগত দলিল পৃথিবীর অন্য যে-কোন স্থানের তুলনায় বেড়ে যায়। এটি আবিষ্কার হবার আগে সর্ববৃহৎ ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো তুর্কমেনিস্তানের খোদা-পিল-আটা। এবং এর পরবর্তী স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হতো পর্তুগাল, গ্রেট ব্রিটেন, স্পেন ও সুইজারল্যান্ডকে। কিন্ত এ সকল চরণভূমির তুলনায় ক্যাল অর্কো বেশ কয়েকগুণ বড়।

দিনা/সিফাত/

২০২৫ সালে যেভাবে আরও সুখী হয়ে ওঠতে পারেন

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
২০২৫ সালে যেভাবে আরও সুখী হয়ে ওঠতে পারেন
প্রতীকী ছবি

সুখ শুধু একটা আবেগ তা কিন্তু নয়। আমাদের ধারণা সুখ-দুঃখ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিজের কাছে থাকে না। তবে বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। গবেষণায় উঠে এসেছে চাইলেই জীবনটাকে আরও সুখী করা সম্ভব।

নতুন বছরে কীভাবে পুরোনো জরাজীর্ণ জীবনটাকে পাল্টানো যায়- এরই একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পথ দেখানোর চেষ্টা এই লেখায়।

বয়স বাড়লেও নতুন বন্ধু বানান
জীবনের যেকোনো পর্যায়েই বন্ধুত্ব গুরুত্বপূর্ণ। বয়সের সঙ্গে মানুষের বন্ধুর চাহিদাও বাড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বয়স্করা পরিবার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে এ সময় বন্ধু থাকা খুবই জরুরি। পরিবারের প্রতি একতা দায়বদ্ধতা থাকে, কিছু কর্তব্য পালন করতে হয়। অন্যদিকে বন্ধুত্বে কর্তব্য কম থাকে। যখন ইচ্ছে হলো বন্ধুর সঙ্গে দেখা করলেন, আড্ডা দিলেন- এভাবে মানসিক চাপ কমে। 

এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ‘বৃদ্ধ বয়সে বন্ধুত্ব শক্ত থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিস্থিতি ভালো থাকে।’

আপনার যদি নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালো না লাগে, অস্বস্তি লাগে- তকে কাঙ্ক্ষিত মানুষকে অভিনব কোনো অভিজ্ঞতার অংশ করার চেষ্টা করুন।

অন্যের সুখে খুশি হওয়ার চেষ্টা করুন
গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে সহমর্মিতাকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। সবার একই কথা- সম্পর্ক ভালো রাখতে হলে মানুষের দুঃখে পাশে থাকতে হয়। তবে আমরা ভুলে যাই যে, সুখের সময়েও পাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। 

বিবিসির সংবাদকর্মী ড্যাভিড রবসনের মতে, বন্ধুর কাছে কোনো খুশির সংবাদে আপনিও আনন্দিত হলে সম্পর্ক আরও জোর পায়। অন্যদিকে বন্ধু আপনাকে ‘দুধের মাছি’ ভাববে মনে করে তার কোনো খুশির সময় আপনি বৈরাগ্য দেখালে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

অর্থপূর্ণ কোনো কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দিন
অন্যের সাহায্য করলে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি মানসিক কষ্টে ভোগা অনেকেই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে কষ্ট কিছুটা কমাতে পেরেছেন।

এমনকি চিকিৎসরাও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাশ্রমের পরামর্শ দেন। ২০২৫ সালে আপনি চাইলে পথশিশুদের জন্য সাপ্তাহিক স্কুলে দুই ঘণ্টা বাচ্চাদের পড়াতে পারেন অথবা শীতার্তদের কল্যাণে নিয়োজিত কোনো সংস্থার হয়ে কাজ করতে পারেন। আপনার মানসিক টানাপোড়েন হয়তো সেরে যাবে না। তবে দুঃখ কিছুটা হলেও কমবে।

পারিবারিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন
নিজের পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত থাকার বেশ কিছু মানসিক উপকারিতা আছে। মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুজান এম মুর এক গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন, পূর্বপুরুষদের ইতিহাস জানলে মনে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করা যায়।

তাই জগতে আপনার অবস্থান জানার মাধ্যমে জীবনের প্রতি আরও আত্মনিয়ন্ত্রণ ও কৃতজ্ঞতা অনুভব করতে আপনার পরিবারের ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন।

জীবনের ভালো দিকগুলো মনে রাখুন
প্রতিদিন নিজের জীবনের তিনটি ভালো দিক লিখে রাখলে মন ভালো থাকে। ভালো বিষয়গুলো যত ছোটই হোক, নিয়মিত সহজ-সুন্দর বিষয়গুলো একবার করে মনে করলে নিজের জীবনটাকে আর এত কঠিন মনে হয় না। এভাবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আশপাশের মানুষের কাছেও আপনার অবস্থান দৃঢ় হয়।

মজার কিছু করার চেষ্টা করুন
মজার অভিজ্ঞতা আমাদের মনে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। শহুরে যান্ত্রিক ব্যস্ততায় আনন্দের কিছু করাকে বিলাসিতা মনে হলেও নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এর বিকল্প নেই। সারাক্ষণ গুরুগম্ভীর হয়ে থাকলে শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই মাঝে মধ্যে মজার কিছু করার চেষ্টা করুন। সেটা হতে পারে আশপাশে কোথাও ঘুরে আসা বা বন্ধুদের সঙ্গে বারবিকিউ করে খাওয়া।

আনন্দের অভিজ্ঞতা যে শুধু ওই সময়েই আবদ্ধ তা কিন্তু নয়। সময়টা পার হয়ে গেলেও শরীর ও মনের ওপর অভিজ্ঞতার প্রভাব থেকে যায়।

ইঁদুরদের ওপর এক গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ভালো খাবারের অপেক্ষায় থাকা ইঁদুররা অন্য ইঁদুরের তুলনায় বেশি স্বতঃস্ফূর্ত থাকে।

মানুষের মনও একই রকম। নিজের মন ভালো রাখার জন্য নিয়মিত মজার কিছু করলে মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

মাঝে মাঝে কিছু না করাটাই আসল সমাধান
মজার ব্যাপার হলো, মাঝে মাঝে সুখ খুঁজতে গিয়েই মানুষ অসুখী হয়ে পড়েন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান অনেক ভালো কাটবে আশা করতে গিয়ে মনোমতো না হওয়ায় অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন।
 
এ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী আইরিস মওসের বক্তব্য, আমাদের উচিত ‘স্টইক’ মানসিকতা ধারণ করা। অর্থাৎ কোনোকিছুর ওপর প্রত্যাশা না রাখা। এভাবে আশানুরূপ ফল না পেলেও মন খারাপ হবে না।

চা-কফি নিয়ন্ত্রণ করুন
কাজের মাঝখানে ঘুম পেলে আমরা চা-কফি খাই। এসবের ক্যাফেইন আমাদের শরীরের বেশ কিছু উপকার করে। তবে শরীরে কখন ক্যাফেইন ঢুকছে- সে সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। সকালে এক কাপ চা খেলে দিনের কর্মক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু ঘুমানোর আগে কফি খেলে রাতের ঘুমটাই মাটি। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, চা-কফি যা খাওয়ার সব ঘুমানোর আট ঘণ্টা আগেই খেয়ে নিতে হবে। এই সময়ের পর খাওয়া শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর।

এ ছাড়া দিনে ৪০০ (২-৩ কাপ) গ্রামের বেশি ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় পান করতে বারণ করেন তারা।

আমরা সবাই একটা সুস্থ, আনন্দের জীবন চাই। তবে মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকের কাছেই সুখের সংজ্ঞা আলাদা। 

ওপরের আলোচনা সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কিছু পরামর্শ মাত্র। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণাভিত্তিক হওয়ায় এই উপায়গুলো অবলম্বনের মাধ্যমে আপনার এই বছরটিকে তুলনামূলক আনন্দদায়ক করতে পারেন। সূত্র: বিবিসি

নাইমুর/অমিয়/