![ধার-দানের টাকায় ভোট করবেন তারা](uploads/2023/12/27/1703695057.Rangamati.jpg)
রাঙামাটি (২৯৯ নম্বর) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার এমপি পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তবে মাঠে শুধু সক্রিয় আছেন নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি দীপংকর তালুকদার। অন্য দুই প্রার্থী সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকে অমর কুমার দে এবং তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে মো. মিজানুর রহমানকে প্রচারে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। ফলে বিজয়ের আবহে থাকা নির্ভার দীপংকর তালুকদারের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এবার নিরুত্তাপ আর ভোট উৎসবের রং হারিয়েছে আসনটি।
এর কারণ হিসেবে দীপংকরের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর সম্পদ আর আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে ভোটারদের। হলফনামা অনুযায়ী কোটিপতি দীপংকর তালুকদারের নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৭৮ লাখ। আর নির্ভরশীলসহ তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮১ টাকা।
বিপরীতে অমর কুমার দের নগদ আছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। আর ব্যাংকে আছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ১৭৪ টাকা ৫০ পয়সা। সব মিলিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ১৭৫ টাকা। অন্যদিকে মো. মিজানুর রহমানের নগদ আছে দেড় লাখ টাকা। আর দুই ব্যাংকে আছে ৪ হাজার টাকা। তবে স্ত্রীর হাতে নগদ আছে আরও ১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
তবে তিন প্রার্থীই এবার নির্বাচন করছেন দান ও ধারের টাকায়! ৭১ বছর বয়সী বর্তমান এমপি দীপংকর তালুকদার বিএ অনার্স (ইংরেজি) পাস। হলফনামায় নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য ২৫ লাখ টাকা প্রাপ্য সম্ভাব্য অর্থ দেখিয়েছেন। এর উৎস দেখিয়েছেন নিজের দালান ভাড়া, ব্যাংক লভ্যাংশ, এমপি সম্মানী থেকে ১২ লাখ, ভাইয়ের কাছ থেকে দান ২ লাখ, তিন ব্যক্তির কাছ থেকে দান হিসেবে ১১ লাখ টাকা।
আসনটিতে ১৯৯১ সাল থেকে একটানা আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে সপ্তমবারের মতো নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন দীপংকর তালুকদার। দুবার পরাজিত হলেও জয়ী হয়েছেন চারবার। এক মেয়াদে ছিলেন প্রতিমন্ত্রীও।
৬১ বছর বয়সী অমর কুমার দের পড়াশোনা এসএসসি পাস। হলফনামায় নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য ১৪ লাখ টাকা প্রাপ্য সম্ভাব্য আয় দেখিয়েছেন। এর উৎস দেখিয়েছেন নিজের ব্যবসা থেকে ১০ লাখ, দান হিসেবে ফুপাতো ভাইয়ের ছেলের কাছ থেকে ১ লাখ ও ভাইয়ের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা। হলফনামার তথ্যমতে, তিনি পেশায় ভিসিডি ব্যবসায়ী।
অন্যদিকে ২৮ বছর বয়সী মো. মিজানুর রহমান কামিল পাস। হলফনামায় নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য ২৫ লাখ টাকা প্রাপ্য সম্ভাব্য অর্থ দেখিয়েছেন। এর উৎস দেখিয়েছেন নিজের ব্যবসা ও কৃষি থেকে ১০ লাখ, দুই ভগ্নিপতির কাছ থেকে ধার ৫ লাখ, দুই চাচার কাছ থেকে দান ৫ লাখ এবং জেলা কমিটি থেকে দলীয় অনুদান ৫ লাখ টাকা। হলফনামার তথ্যে পেশায় গাড়ি ও মাছের ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে কথা বলতে অমর কুমার দের ব্যক্তিগত দুটি মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনি খরচের জন্য নিজের, ধার ও দানের ২৫ লাখ টাকা সম্ভাব্য আয়ের খাত হিসেবে দেখিয়ে হলফনামার সঙ্গে জমা দিয়েছি। কারা আমাকে টাকা দিচ্ছেন তার উল্লেখ করেছি সেখানে। তবে রাঙামাটির আয়তন ও দুর্গমতার কারণে নির্বাচনি খরচ ২৫ লাখ কি, এখানে তো ২৫ কোটি দিয়েও হবে না।’
রাঙামাটি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সাধারণ সম্পাদক ললিত চন্দ্র চাকমা বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে যে কেউ তো নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন। মুক্তিজোট ও তৃণমূল বিএনপি প্রার্থীর স্বল্প টাকায় নির্বাচনের দাঁড়ানোয় মানুষ সন্দিহান। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারও এখন নির্বাচনের সময় ২০ লাখ টাকা খরচ করেন। তাদের প্রশ্ন করা দরকার, আপনারা গোটা রাঙামাটি আসনে এক লাখ-দেড় লাখ টাকায় কী করবেন?’
বিশেষ ভূ-প্রকৃতির কারণে খাগড়াছড়ি, বান্দরবানের মতো পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে নির্বাচনি প্রচার ব্যয়সাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। ফলে বিশাল এই নির্বাচনি এলাকায় পর্যাপ্ত গণসংযোগ, প্রচার, সভা-সমাবেশ ও নির্বাচনি ক্যাম্প করতে পারেননি রাঙামাটি শহরের বাসিন্দা অমর কুমার দে ও লংগদু উপজেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। এ জন্য তাদের আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে ভোটারদের। এমনকি সাংগঠনিক কাঠামো না থাকায় নেই নিজস্ব কর্মী বাহিনীও। ফলে পোস্টার, ব্যানার মাইকিংয়েও তাদের প্রচার খুবই সীমিত। আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে অমর জেলা শহরে কিছুটা পরিচিত হলেও ভোটারদের কাছে একেবারেই অপরিচিত মুখ মিজানুর।
কিন্তু দীপংকর তালুকদার দলের নিজস্ব কর্মী বাহিনীর সঙ্গে আর্থিক সক্ষমতা থাকায় এরই মধ্যে জেলা সদরসহ উপজেলাগুলোর ইউনিয়ন, এমনকি ওয়ার্ড-গ্রাম পর্যন্ত নির্বাচনি গণসংযোগ, অফিস স্থাপন করে প্রচার চালাচ্ছেন। শহর-গ্রাম সর্বত্রই ঝুলছে নৌকার পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং। ফলে নির্ভার আওয়ামী শিবির এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে।