![চরবাসীর কাছে নেই ভোটের খবর](uploads/2023/12/29/1703829857.bogura-1.jpg)
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের ভোটারদের অনেকেই এখনো জানেন না দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে। শুধু তা-ই নয়, কখন ভোটগ্রহণ শুরু হবে আর শেষ হবে কখন এসব তথ্যও নেই চরাঞ্চলের অনেক নারী-পুরুষের কাছে। এমনকি এ নির্বাচনে ওই আসনের প্রার্থীদের নাম, সংখ্যা এবং তাদের প্রতীক কী তাও জানেন না তারা।
সারিয়াকান্দি উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা এবং সোনাতলা উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত বগুড়া-১ আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১০৯ জন। এর অর্ধেকেরও বেশি নারী।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যে বলা হয়েছে, এ আসনে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৯ জন হলেও নারী ভোটার আছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬১৬ জন। ১২৪টি কেন্দ্রের মধ্যে যমুনার চরে আছেন ১৮টি কেন্দ্রের ৩৮ হাজার ৭২১ জন ভোটার। আগামী ৭ জানুয়ারি সারা দেশের মতো এ আসনগুলোয় সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। আর কোনো বিরতি ছাড়াই চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এসব তথ্যের কোনো কিছুই জানেন না চরের বেশির ভাগ মানুষ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), তৃনমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনসহ ছয়টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি ভোটের মাঠে আছেন স্বতন্ত্র চার প্রার্থী। নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের শাহাজাদী আলম লিপি ও কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু তাদের সম্পর্কে সাধারণ ভোটারের কাছে কোনো তথ্য নেই। জানেন না তাদের প্রতীক।
ভোটারদের কাছে নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য না থাকার বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলামের নজরে আনা হলে তিনি জানান, অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের দিন-তারিখসহ ভোট সংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। চরাঞ্চলেও ভোটারদের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি প্রার্থীরাও সহযোগিতা করছেন।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কমিশন থেকে দেওয়া পোস্টার সাটিয়ে ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচন সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে প্রকাশ করা সম্ভব এমন সব তথ্য নাগরিকদের দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যিনি চাইবেন তাকেই দেওয়া হবে।’
সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার বাসিন্দা মো. জাবদুল। থাকেন উপজেলার আনন্দবাড়ী গ্রামে। গত বুধবার সকালে তার সঙ্গে খবরের কাগজের প্রতিবেদকের কথা হয় যমুনা নদীর তীরে কালীতলা গ্রোয়েন সংলগ্ন এলাকায়। ভোট কবে হবে জানেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো এক মাস দেরি আছে।’ কতজন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাত্র চারজন।’
জাবদুল জানান, ভোটের মাইকিং আর প্রার্থীদের পোস্টার থেকে তিনি যেটুকু জেনেছেন তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। ভোট সম্পর্কে তার আর কোনো ধারণা নেই। সরকারিভাবেও কেউ তাদের কিছু এখনো জানাননি। কবে ভোট দিতে যেতে হবে আর কখন ভোট শুরু হবে তাও তিনি জানেন না। সারিয়াকান্দি উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের রাবেয়া খাতুন জানান, তিনি শুধু জানেন ভোট হবে ৭ জানুয়ারি। প্রার্থী কতজন আর তাদের প্রতীক কী, এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
চরবাটিয়া গ্রামের মাত সরকার বলেন, ‘আমরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। কবে কখন ভোট হবে কীভাবে হবে এসব জেনে আমাদের কী লাভ।’ নির্বাচন কবে হবে, জানেন কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো সরকারি লোক এখানে আসেননি। তাই কবে ভোট হবে জানি না। শুধু আমি না, আমার গ্রামের বেশির ভাগ লোকই জানেন না।’
গ্রামের কিছু জায়গায় লাগানো পোস্টার দেখে চরবাটিয়া গ্রামের কৃষক মো. ফকির মনে করেছেন এবারের ভোটে ওই এলাকা থেকে শুধু একজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বলেন, ‘বাড়ির বউ-ছেলে-মেয়েদের বেশির ভাগই এ ভোটের কোনো খবর রাখে না। সবাই কাজে ব্যস্ত থাকে।’
নতুন ভোটার রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে আলাপ করে মিলল মো. ফকিরের কথার সত্যতা। ভোট দেবেন কি না এ প্রশ্নের জবারে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘জীবনে প্রথম সরকারি ভোট দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। এবার ভোট দেব। কিন্তু কোথায় গিয়ে দেব, কীভাবে দেব তা তো জানি না। সবাই যেদিন ভোট দিতে যাবে সেদিন আমিও যাব।’
পছন্দের কোনো প্রার্থী আছেন কি না জানতে চাইলে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আমি কোনো প্রার্থীকে চিনি না। তাদের প্রতীক কী, তাও জানি না।’ ওই গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে অনেকে ভোটের তারিখ জানলেও কোথায় গিয়ে কীভাবে ভোট দিতে হবে তা বলতে পারেননি।
বগুড়ার তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া অধিকাংশই মানুষের বসবাস সারিয়াকান্দিতে। যমুনা আর বাঙ্গালী নদীর ভাঙনে অনেকেরই পূর্বপুরুষদের বাড়ি-ঘর বহু বছর আগে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের মানুষের কাছে বেঁচে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ। তাই জাতীয় নির্বাচনের মতো বিষয়ও তাদের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায় না। তাই ভোট নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই। স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন, চরের বেশির ভাগ মানুষের কাছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো তথ্য নেই। এই জনপদে ভোটের হাওয়া লাগেনি।