ঢাকা ২৯ মাঘ ১৪৩১, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

গরুকে বোকা বানানোর প্রযুক্তি!

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৫ এএম
গরুকে বোকা বানানোর প্রযুক্তি!
ছবি: সংগৃহীত

একটি গরু যদি স্বাচ্ছন্দ্যে লালিত-পালিত হয় এবং তাকে যদি একটু আরাম-আয়েশ দেওয়া হয় তাহলে সে গরু অনেক বেশি দুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ খামারি গরুর গলায় দড়ি বাঁধেন আর সে গরুর দড়ি এক সময় তাদের গলাতেই ফাঁস লাগে। তার কারণ- গরুকে যত বেশি আবদ্ধ এবং কষ্টদায়ক বন্দিদশায় লালন-পালন করা হবে সে তত কম দুধ দেবে। তাতে করে আমাদের দেশের খামারিরা অনেক ক্ষেত্রেই লোকসানের মুখে পড়েন। সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন গ্রামের খামারিরা। তাদের একটি গরু অসুস্থ হলে কী করতে হবে, তার খাওয়া খাদ্যে কী হবে, কতটুকু কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে যুগের পর যুগ গরু লালন-পালন করেও তা এখনো গ্রামের অনেকেই জানেন না। 

আধুনিক বিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রযুক্তির উন্নয়ন। সেই উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে কৃষি খামারেও। গরুর খামারের জন্য রাশিয়া তৈরি করেছে ভিআর চশমা। রাশিয়ার এ অভিনব আবিষ্কার দেখে অবাক হয়েছেন বিশ্বের পশু চিকিৎসক থেকে শুরু করে গবেষকরা পর্যন্ত।

যে গরু খোলা বিস্তীর্ণ মাঠে লালন পালন করা হয় সে গরু অনেক বেশি সুস্থ থাকে, দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায় এবং বেশি পরিমাণ দুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু বিস্তীর্ণ মাঠ তো আর ইচ্ছা করলেই পাওয়া যায় না। বিশ্বের বেশির ভাগ খামারেই বন্দিদশায় গরু লালন পালন করা হয়। তাতে গরু থাকে সব সময় বিরক্ত। অনেক ক্ষেত্রে গরু ঠিকভাবে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে গরুকে থাকতে হয়। তাতে গরু ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। কিন্তু রাশিয়ার ভিআর চশমা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার বলা চলে।

গরু থাকবে খামারে কিন্তু চশমায় ভেসে উঠবে বিস্তীর্ণ কাঁচা ঘাসের মাঠ। গরু খাবে শুকনো খড়-কুঠো কিন্তু সে দেখবে সে খাচ্ছে কাঁচা ঘাস। তার চশমায় একটু পরপরই ঘাসের মাঠের দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটবে। মনে হবে নতুন নতুন ঘাসের মাঠে গরুটি বিচরণ করছে। তাতে তার মন থাকবে ফুরফুরে। মনে আনন্দ থাকায় রোগেও ভুগবে কম। গরু সুস্থ থাকায় তার কাছ থেকে দুধের পরিমাণ পাওয়া যাবে বেশি। সত্যিকার অর্থে, গরুকে বোকা বানিয়ে তার থেকে বেশি বেশি সুবিধা নেওয়ার পদ্ধতিই হচ্ছে ভিআর চশমা।

আমাদের দেশের খামারিরা গরু খাদ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে দিশাহারা। সেভাবে তারা গরুর দুধের দাম পান না। তাদের জানা নেই এ দুধে কীভাবে ভ্যালু অ্যাড করা যায়। তার কারণ প্রযুক্তিগত অনেক সুবিধাই আমাদের কৃষকের নেই। আবার জানা থাকলে তা তারা অর্থের অভাবে কিনতে সক্ষম নন। এক কেজি দুধ দিয়ে যদি দই তৈরি করা যায় তাহলে ভ্যালু অ্যাড হয়ে তার মূল্যে দাঁড়াবে দ্বিগুণ। আবার দুধ থেকে মেশিনের মাধ্যমে ক্রিম তুলে তা জাল দিয়ে ঘি তৈরি করতে পারলে আরও বেশি মূল্য তারা পেতে পারেন। কিন্তু সেভাবে দেশের কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যা আছে তা শুধু বড় খামারিরাই পেয়ে থাকেন।

আবার দেশে দুধের চাহিদা বাড়ায় তার জোগান নিশ্চিত করতে সরকার রাজস্ব খাতের একটা বিরাট অংশ কৃষকদের মাঝে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করে থাকেন। কিন্তু তার দেখা পান না আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা। তাই রাশিয়ার ভিআর চশমার প্রযুক্তি যদি আমাদের দেশে সহজলভ্য হতো তাহলে দেশে গরু পালনে ঘটে যেত বিপ্লব।

 

 

তারেক

 

যে শহরে ‘আইন’ নেই

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
যে শহরে ‘আইন’ নেই
ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার অন্যতম একটি ধনী রাজ্য হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া। জাঁকজমক আর আভিজাত্যের জন্য এ রাজ্যের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু এর ভেতরেই রয়েছে এমন এক শহর যেখানে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট। এখানে নেই নিয়মকানুন মানার বালাই। শহরটির নাম স্ল্যাব সিটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত এ অঞ্চলটি এখন মোটেও ব্যবহারের উপযুক্ত নয়।

কিন্তু তারপরও ক্যালিফোর্নিয়ার স্ল্যাব সিটিতে বসবাস করছে আমেরিকার গৃহহীন মানুষরা। পুরনো এক সামরিক ঘাঁটিতে গজিয়ে ওঠা ছোটখাটো এই শহরটি এখন অবশ্য প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষের আশ্রয়, যাদের বেশির ভাগেরই বসবাস ভ্রাম্যমাণ ঘর বা ট্রেইলার হোমে।

দূর থেকে স্ল্যাব সিটিকে দেখলে তেমন আহামরি কোনো কিছু মনে নাও হতে পারে।

পুরনো কিছু দালানকোঠা, কিছু পুরনো ট্রাকের সারি কিংবা ভেঙে পড়া তাঁবু দেখে একে পুরনো কোনো শহরের ধ্বংসাবশেষ মনে হতেই পারে। তবে স্ল্যাব সিটিতে আধুনিক কোনো শহরের সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা ঠিকই রয়েছে। ক্যাফে আর রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ক্লাব, লাইব্রেরি এমনকি গলফ কোর্সও রয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বানানো বিশাল আকারের এক স্ল্যাবের ওপর ক্যাম্প সাইটটি গড়ে ওঠায় জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে স্ল্যাব সিটি।

আর এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসীরা শীতের অতিথি পাখির মতো কেবল শীতকাল পার করতেই জায়গাটিতে আসে। শহরটির অবস্থান কলোরাডো মরুভূমির মধ্যখানে। শীতকালে এখানে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। গরমকালের তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যায় সহ্যের সীমা। তাই স্থায়ী প্রায় ১৫০ জন বাসিন্দা ছাড়া সে সময় দেখা পাওয়া যায় না আর কারোরই। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় ওই শ দেড়েক মানুষকে একরকম বাধ্য হয়েই থাকতে হয় এখানে।

অদ্ভুত হলেও সত্যি, যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হয়েও আইনকানুনের কোনো বালাই নেই স্ল্যাব সিটিতে। এমনকি অবৈধভাবে গাড়ি রাখার জন্যও কোনো রকম মাশুল গুনতে হয় না বাসিন্দাদের। কোনো শহরের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় পানি বা বিদ্যুৎ সংযোগও নেই এখানে। দিতে হয় না কোনো ধরনের করও।

বিদ্যুতের অভাব দূর করতে সৌরশক্তি ব্যবহার করছে বাসিন্দারা। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মেটাতে হচ্ছে ধারেকাছের শহরে গিয়েই।

তবে স্ল্যাব সিটিতে দেখার মতো জায়গা হচ্ছে এর স্যালভেশন পাহাড়। প্রায় সাড়ে তিনতলার সমান উঁচু এই ছোট্ট পাহাড়টিতেও গর্ত করে বসবাস করছে স্ল্যাব সিটির স্থায়ী বাসিন্দারা।

 

 

তারেক

বধিরদের গ্রাম

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২২ পিএম
বধিরদের গ্রাম
বেংকালা গ্রামে আসা পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণ হলো ‘জাঞ্জের কোলক’ বা বধিরদের নৃত্য। ছবি: সংগৃহীত

গল্প-উপন্যাসে আমরা বিভিন্ন সময় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের গ্রাম বা বধিরদের গ্রাম সম্পর্কে পড়েছি, যেখানে সবাই থাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বা বধির। কিন্তু বাস্তবে ইন্দোনেশিয়াতেই এমন এক গ্রাম রয়েছে যেখানে সব বাসিন্দা সাংকেতিক ভাষায় কথা বলে। শত শত বছর ধরে গ্রামে চলছে ইশারা ভাষা। সেখানে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় ভাষা প্রচলিত নয়। সবাই ভাব আদান-প্রদান করে ইশারা ভাষায়।

উত্তর বালির সুন্দর গ্রামীণ জঙ্গলে বধিরদের একটি গ্রাম আছে, নাম- বেংকালা। বিশ্বে অনেক মানুষই একে বধিরদের গ্রাম বা ‘The Village Of Deaf’ বলেই চেনেন। চাষাবাদ আর পশুপালনই এই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা। পর্যটন থেকেও আংশিক উপার্জন হয় গ্রামবাসীদের।

এই গ্রামের নিজস্ব ইশারা ভাষা রয়েছে, যা শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পুরো গ্রামে যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়। এই সাংকেতিক ভাষা ‘কা’তা কোলোক’ নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘বধিরদের কথা’। এটি ভৌগোলিকভাবে অনন্য, আন্তর্জাতিক বা ইন্দোনেশিয়ান সাংকেতিক ভাষা থেকে ভিন্ন। এই গ্রামের অধিকাংশ লোক বধির। সাত প্রজন্মের বেশি সময় ধরে এই গ্রামের মানুষ বধির। এই বধিরতা যদি ভৌগোলিক-কেন্দ্রিক রিসেসিভ জিন দ্বারা সৃষ্টি হয়, যাকে DFNB3 বলা হয়, যা বংশপরম্পরায় প্রচলিত। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের এই গ্রামে প্রায় ৩ হাজার লোক বসবাস করে।

বেংকালা নামের এই গ্রামের বাসিন্দারা তাদের সন্তানদেরও সাংকেতিক ভাষা শেখান। বিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষকরা সাংকেতিক ভাষায় পড়ান। শিক্ষার্থীরাও সাংকেতিক ভাষায় একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন। এই গ্রামের কেউ এই বধিরতাকে অস্বাভাবিকতা হিসেবেও দেখেন না, তারা মনে করেন এটি বধিরদের দেবতার দেওয়া উপহার হিসেবে। এটি একটি স্থানীয় কবরস্থানে বসবাস করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে, অন্য স্থানীয় লোককথা অনুসারে, বধিরতা একটি অভিশাপ। এই গ্রামের মেয়র ইদা মারদানা বলেন, বিখ্যাত গল্পটি হলো যে দুটি জাদুশক্তির লোক একে অপরের সঙ্গে লড়াই করেছিল এবং তারপর একে অপরকে বধির হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিল।

নিওমান সান্তিয়ার নেতৃত্বে এই গ্রামে একটি শক্তিশালী বাহিনী আছে। এই বাহিনী অনেক শক্তিশালী এবং সুশৃঙ্খল। তাদের গুণাবলি বালিতে এতই বিখ্যাত যে, প্রতিবেশী সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রায়শই তাদের কাছে কঠিন সময়ে আশ্রয় এবং সুরক্ষার জন্য আসে। তারা ‘হ্যান্সিপ’ (বেসামরিক রক্ষী) এবং ‘পেকালাং’ (ঐতিহ্যবাহী বালিনিজ নিরাপত্তা রক্ষী) হিসেবেও নিয়োগ পায়।

বেংকালা গ্রামের প্রহরীরা অন্য প্রহরীদের চেয়ে বেশি সুশৃঙ্খল এবং দক্ষ। চোর ধরতে পারলে তারা আঘাত করতে দ্বিধা করেন না। কেননা তারা চিৎকার কানে শোনেন না। তবে বেংকালা গ্রামের মানুষ অত্যন্ত ধৈর্যশীল এবং শান্ত স্বভাবের। তাদের কেউ পীড়িত করলে সহজে প্রতিক্রিয়া দেখায় না। বর্তমানে এই গ্রামের তরুণ প্রজন্ম স্মার্টফোনসহ নানা আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করে। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিও আছে। দেশ-বিদেশ থেকে এই গ্রামে আসা পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণ হলো ‘জাঞ্জের কোলক’ বা বধিরদের নৃত্য। তারা সব সময়ই চায়, তাদের গ্রামে যেন পর্যটকের ঢল নামে।

 

তারেক

বলছি চে গুয়েভারার জন্মভূমির কথা

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
বলছি চে গুয়েভারার জন্মভূমির কথা
ছবি: সংগৃহীত

ভাবুন তো, এমন একটা দেশে ঘুরতে গেলেন, যে দেশ এতটাই নিরাপদ যে সেখানে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ঘোরার জন্য নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পর্যটকরা ইচ্ছামতো যখন-তখন যেখানে খুশি ঘুরতে পারেন। হ্যাঁ, বলছিলাম ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র চে গুয়েভারার জন্মভূমি কিউবার কথা।

কিউবার সরকারি নাম ‘রিপাবলিক অব কিউবা’। দেশটি আশপাশের অনেকগুলো ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত।

কিউবা একটি কমিউনিস্ট দেশ। সেখানে একই বাসায় ডাক্তার বসবাস করেন, আবার পরিচ্ছন্নতাকর্মীও বসবাস করেন। সমাজে যেন শ্রেণিবৈষম্য তৈরি না হয়, তাই সরকারই নির্ধারণ করে দেন কোন বাসায় কে কে থাকবে এবং তাদের মাসিক উপার্জনও প্রায় কাছাকাছি। 

কিউবার হাসপাতালগুলোতে প্রতিটি রোগী একই ধরনের সেবা পেয়ে থাকেন। কোনো বৈষম্যের সুযোগ নেই। এমনকি রোগীপ্রতি ডাক্তারের সংখ্যা বিশ্বের যে দুটি দেশে সবচেয়ে বেশি, তার একটি হচ্ছে এই কিউবা।

সেখানে অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা নিষেধ। যদি কেউ বিনা অনুমতিতে গাছ কাটে, পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। আর এই কঠোর নিয়মের জন্যই কিউবা এখনো সবুজ শ্যামল একটি দেশ। কিউবার কৃষিব্যবস্থাও আদিম। চাষাবাদে এমন কোনো যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এমনকি কোনো রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা হয় না।

কিউবায় প্রতি বছর অনেক পর্যটক ঘুরতে যান। কিন্তু সেখানে কোনো আবাসিক হোটেল নেই। অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ারই কথা। আসলে কিউবার প্রতিটি বাড়িই এক একটা হোটেল। সরকারিভাবে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, প্রতিটি বাড়িতে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিউবার নাগরিকরা সেখান থেকে একটা বাড়তি রোজগার করার সুযোগ পান।

কিউবার ভূমি খুব উর্বর। সেখানে আখ ও তামাকের প্রচুর ফলন হয়। আর এই ফলনের জন্যই দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো। এ ছাড়া কিউবা বনজ সম্পদেও সমৃদ্ধ। দেশটিতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে বিধায় সেখানে সংস্কৃতিরও অনেক বৈচিত্র্য দেখা যায়।

উর্বর ভূমি আর খনিজ সম্পদের জন্য স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র কিউবাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে বিভিন্ন সময়। এমনকি কিউবা টানা ৪০০ বছর স্পেনের অধীনে ছিল। পরবর্তী সময়ে উনিশ শতকের মধ্যভাগে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় কিউবা স্বাধীনতা অর্জন করে। তবে, কিউবার সরকারি ভাষা স্প্যানিশ এবং দেশটির বেশির ভাগ মানুষ স্প্যানিশ ভাষাতেই কথা বলে। পর্যটনের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে অনেকে ইংরেজি ভাষাও ব্যবহার করে থাকে।

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা হলো হাভানা, যা কিউবার রাজধানী। এটিই প্রধান বাণিজ্যিক শহর এবং সমুদ্রবন্দর। হাভানায় রয়েছে কয়েক শ বছরের পুরোনো বাড়িঘর, ভিনটেজ গাড়ি আর খোয়া বিছানো রাস্তা। তাই হাভানায় গেলে পুরোনো দিনে হারিয়ে যেতে হয়। তবে, ছবির মতো সুন্দর এই গণতান্ত্রিক দেশটায় চাইলেই যাওয়া সম্ভব হয় না। এর জন্য পর্যটকদের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।

 

তারেক

পাঠকের লেখা: স্বপ্নদর্শন

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২৫ এএম
পাঠকের লেখা: স্বপ্নদর্শন

১.
মা দুপুরের রান্না এখনো শেষ করতে পারেনি, আরও আধ ঘণ্টা সময় লাগবে। পুরোনো বই আমার কাছে নতুনের মতোই লাগে। বই মানে জ্ঞান, জ্ঞান কখনো পুরোনো হয় না। তাই সময় কাটানোর জন্য, বুক শেলফ থেকে একটি বই নিয়ে চেয়ারে বসলাম। এদিক-ওদিক পাতা উল্টিয়ে বিশেষ একটা অধ্যায় খুঁজে পড়তে লাগলাম।

পড়তে পড়তে মনে হলো কোনো বুড়ো ব্যক্তি হেঁটে আসছে, হ্যাঁ লাঠির শব্দ পাচ্ছি। সে দিকে না তাকিয়ে পড়ায় মনোযোগ দিলাম। কিন্তু লাঠির শব্দটা ধীরে ধীরে আমার দরজার সামনে এসে থেমে গেল। আমি গর্দান ঘুরিয়ে নির্বাক হয়ে গেলাম, বলে উঠলাম কবিজি! কবি একগাল হাসি দিয়ে বলল—আয় ঘুরে আসি।

২.
সিমেন্টের পাটা বিছানো রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় মেহগনি গাছ, আর সারি সারি কবর। কত বছরের পুরোনো কবরস্থান জানি না। আমি কবির হাত ধরে হাঁটছি। যেমন গপ্প করতে করতে হেঁটে যায় দাদুর হাত ধরে প্রিয়তম নাতি। গাছের ডালে পাখির নাচন দেখে কবি আমাকে বলল—দেখো দেখো দাদু পাখির নাচন। আমি ভীষণ আনন্দের সঙ্গে হাঁটছি। সুন্দর, উজ্জ্বল, নির্মল একটা পরিবেশ। গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে মুখ দেখিয়ে যাচ্ছে সূর্যদেব।

কবিজি আমাকে বললেন—জানি তুমি একদিন এই বিশাল গাছের মতো বড় হবে, গাছের পাতার মতো তোমাকে মানুষ চোখ বুলিয়ে দেখবে, পড়বে। তোমাকে দেখে তৃপ্তি পাবে। বলো তো দাদু মানুষ কীসের তৈরি? আমি বললাম—মাটির। না মানুষ মাটির নির্যাসে তৈরি। মানুষ যদি মাটির তৈরি হতো, তাহলে এত শত মানুষ মাটি দিচ্ছে, কই এই জায়গায়গুলো তো পাহাড়ের মতো উঁচু হচ্ছে না। তুমি যদি এক জায়গায় প্রতিদিন এক টুকরি করে মাটি ফেলো, জায়গাটা তো উঁচু হবে তাই নয় কি? আমি বললাম—হ্যাঁ তাই। তাহলে এত শত মাটির লাশ মাটি দিচ্ছে, কই উঁচু তো হচ্ছে না, তার মানে মানুষ মাটির তৈরি নয়। মাটির নির্যাসে তৈরি।

৩.
ফাতিহা মক্তবে যাবি না? কচি কণ্ঠের ডাক শুনতে পেয়ে চোখ খুললাম, বুঝতে পারলাম আমি স্বপ্ন দেখেছি। শোয়া থেকে উঠে বসে দেয়ালে ঝুলানো ছবিটির দিকে তাকালাম। ওই তো ঝাঁকড়া চুলগুলো, পূর্ণিমার চাঁদের মতো ভরা দুটি গাল, নীহারের মতো টলোমলো দুটি চোখ। ওই তো কবি নজরুল, ছবি হয়ে ঝুলে আছে আমার ঘরের দেয়ালে। ভোর হলো, দোর খোলো, খুকুমনি ওঠো রে… বলতে বলতে উঠে এসে দরজাটা খুললাম। ভোরের সূর্য কেবল ফেটে গিয়ে আলো ছড়াচ্ছে। আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে, ঠোঁটের কোণে একটু আনন্দের হাসি হাসলাম।

দারুণ একটি স্বপ্ন দেখলাম আজ। ফাতিহা আর রুকু বুকে কোরআন শরিফ জড়িয়ে, বাসিমুখে রওনা দিল মক্তবের উদ্দেশ্যে। আজ ভোরের আলো দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীর জন্ম কেবলই হলো। জেগে জেগে আশা প্রত্যাশার স্বপ্ন দেখলে সফল বা বড় হবেন। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখতে পেলে, আপনি পবিত্র রুহের অধিকারী ভেবে নেবেন।


ফকির শাহিন শাহ 
বিলাশপুর, জাজিরা
শরীয়তপুর

 

তারেক

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বনস্পতি

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:২০ এএম
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বনস্পতি
ছবি: সংগৃহীত

স্থলে-জলে, বনে-জঙ্গলে অনেক গাছই তো আমরা দেখতে পাই। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বনস্পতির নামটি কি আমরা জানি? এই বৃক্ষটি উত্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত।

গাছটির উচ্চতা এতটাই সুবিশাল যে, এর আশপাশে পৃথিবীর বিখ্যাত স্থাপনাগুলোকেও অত্যন্ত ক্ষুদ্র মনে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বনস্পতিটির নাম হলো হাইপরিয়ন। কোস্ট রেডউড প্রজাতির এই গাছটির নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক পুরাণের দেবতা হাইপরিয়নের নামে। যার অর্থ, ‘উচ্চ স্থানের অধিকারী।’

গাছটির উচ্চতা প্রায় ১১৫.৮৫ মিটার। বৃক্ষটির মূল অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত এবং এর কোনো শাখা-প্রশাখা  নেই। ২০০৬ সালে এক দম্পতি এই গাছটি আবিষ্কার করেন। এর পর বৃক্ষটি বৈজ্ঞানিক, পরিবেশবিদ এবং দর্শনার্থীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। গাছটি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল পার্কের নিয়ম অনুযায়ী, এর আশপাশে যাওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। 

ক্যালিফোর্নিয়ার জাতীয় উদ্যানের কর্মীদের ভাষ্যমতে, ‘নিয়ম অনুযায়ী গাছটিকে অনেক দূর থেকে দর্শন করতে হয়। কেউ যদি গাছের কাছে ঘোরাফেরা করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তা হলে তার ৬ মাসের জেল এবং ৪ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।’ এই গাছটি বছরে প্রায় ৭০০ কেজি অক্সিজেন উৎপন্ন করে। যা বায়ুদূষণ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও গ্রীষ্মকালে এই গাছটির নিচে অবস্থান করলে তাপমাত্রা ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম অনুভূত হয়। 

এই বৃক্ষটি প্রকৃতির এক বিরল উপহার। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই গাছটি কেবল উচ্চতার জন্য নয়, পরিবেশ রক্ষায় এর অনন্য অবদানের জন্যও প্রশংসিত।

 

তারেক