
একটি গরু যদি স্বাচ্ছন্দ্যে লালিত-পালিত হয় এবং তাকে যদি একটু আরাম-আয়েশ দেওয়া হয় তাহলে সে গরু অনেক বেশি দুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ খামারি গরুর গলায় দড়ি বাঁধেন আর সে গরুর দড়ি এক সময় তাদের গলাতেই ফাঁস লাগে। তার কারণ- গরুকে যত বেশি আবদ্ধ এবং কষ্টদায়ক বন্দিদশায় লালন-পালন করা হবে সে তত কম দুধ দেবে। তাতে করে আমাদের দেশের খামারিরা অনেক ক্ষেত্রেই লোকসানের মুখে পড়েন। সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন গ্রামের খামারিরা। তাদের একটি গরু অসুস্থ হলে কী করতে হবে, তার খাওয়া খাদ্যে কী হবে, কতটুকু কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে যুগের পর যুগ গরু লালন-পালন করেও তা এখনো গ্রামের অনেকেই জানেন না।
আধুনিক বিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রযুক্তির উন্নয়ন। সেই উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে কৃষি খামারেও। গরুর খামারের জন্য রাশিয়া তৈরি করেছে ভিআর চশমা। রাশিয়ার এ অভিনব আবিষ্কার দেখে অবাক হয়েছেন বিশ্বের পশু চিকিৎসক থেকে শুরু করে গবেষকরা পর্যন্ত।
যে গরু খোলা বিস্তীর্ণ মাঠে লালন পালন করা হয় সে গরু অনেক বেশি সুস্থ থাকে, দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায় এবং বেশি পরিমাণ দুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু বিস্তীর্ণ মাঠ তো আর ইচ্ছা করলেই পাওয়া যায় না। বিশ্বের বেশির ভাগ খামারেই বন্দিদশায় গরু লালন পালন করা হয়। তাতে গরু থাকে সব সময় বিরক্ত। অনেক ক্ষেত্রে গরু ঠিকভাবে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে গরুকে থাকতে হয়। তাতে গরু ঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। কিন্তু রাশিয়ার ভিআর চশমা একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার বলা চলে।
গরু থাকবে খামারে কিন্তু চশমায় ভেসে উঠবে বিস্তীর্ণ কাঁচা ঘাসের মাঠ। গরু খাবে শুকনো খড়-কুঠো কিন্তু সে দেখবে সে খাচ্ছে কাঁচা ঘাস। তার চশমায় একটু পরপরই ঘাসের মাঠের দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটবে। মনে হবে নতুন নতুন ঘাসের মাঠে গরুটি বিচরণ করছে। তাতে তার মন থাকবে ফুরফুরে। মনে আনন্দ থাকায় রোগেও ভুগবে কম। গরু সুস্থ থাকায় তার কাছ থেকে দুধের পরিমাণ পাওয়া যাবে বেশি। সত্যিকার অর্থে, গরুকে বোকা বানিয়ে তার থেকে বেশি বেশি সুবিধা নেওয়ার পদ্ধতিই হচ্ছে ভিআর চশমা।
আমাদের দেশের খামারিরা গরু খাদ্যের ঊর্ধ্বমূল্যে দিশাহারা। সেভাবে তারা গরুর দুধের দাম পান না। তাদের জানা নেই এ দুধে কীভাবে ভ্যালু অ্যাড করা যায়। তার কারণ প্রযুক্তিগত অনেক সুবিধাই আমাদের কৃষকের নেই। আবার জানা থাকলে তা তারা অর্থের অভাবে কিনতে সক্ষম নন। এক কেজি দুধ দিয়ে যদি দই তৈরি করা যায় তাহলে ভ্যালু অ্যাড হয়ে তার মূল্যে দাঁড়াবে দ্বিগুণ। আবার দুধ থেকে মেশিনের মাধ্যমে ক্রিম তুলে তা জাল দিয়ে ঘি তৈরি করতে পারলে আরও বেশি মূল্য তারা পেতে পারেন। কিন্তু সেভাবে দেশের কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। যা আছে তা শুধু বড় খামারিরাই পেয়ে থাকেন।
আবার দেশে দুধের চাহিদা বাড়ায় তার জোগান নিশ্চিত করতে সরকার রাজস্ব খাতের একটা বিরাট অংশ কৃষকদের মাঝে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করে থাকেন। কিন্তু তার দেখা পান না আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা। তাই রাশিয়ার ভিআর চশমার প্রযুক্তি যদি আমাদের দেশে সহজলভ্য হতো তাহলে দেশে গরু পালনে ঘটে যেত বিপ্লব।
তারেক