![বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি](uploads/2024/05/26/cam-ja-1716701382.jpg)
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আপনি এখন থেকেই রুটিন করে নিয়মিত পড়ালেখা শুরু করে দিন। একটা সময় দেখবেন, সিলেবাসের সব বিষয়ের প্রস্তুতি হয়ে গেছে। সিলেবাসের তুলনায় বিসিএসে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আপনাদের হাতে সময় কম থাকে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে পরিকল্পনামতো রুটিন করে গুছিয়ে পড়ালেখা করলে পরীক্ষা শুরুর আগেই আপনি সব বিষয়ের প্রস্তুতি নেওয়া শেষ করতে পারবেন। আজ বিসিএস লিখিত পরীক্ষার বাংলা ও বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতি নিয়ে লিখেছেন মোশাররফ হোসেন
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেলেই পাস। মানে ৯০০ নম্বরের মধ্যে আপনি ৪৫০ পেলেই পাস। কোনো একটি বিষয়ে আপনি ১০০-তে ৪০ পেয়েছেন। মানে ৫০ শতাংশের চেয়ে ১০ নম্বর কম পেয়েছেন। আবার কোনো একটি বিষয়ে আপনি ১০০-তে ৬০ নম্বর পেয়েছেন। মানে ৫০ শতাংশের চেয়ে ১০ নম্বর বেশি পেয়েছেন। এখন এ দুই বিষয়ের নম্বর যোগ করে আপনি ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন; সুতরাং আপনি পাস। তবে কোনো বিষয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৩০-এর কম নম্বর পেলে সে বিষয়ে আপনি কোনো নম্বর পাননি বলে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ কোনো একটি বিষয়ে আপনি ১০০-তে ২৯ নম্বর পেয়েছেন, তাহলে আপনার এই ২৯ নম্বর যোগ হবে না। তবে এই ২৯ নম্বর বাদ দিয়েও যদি আপনি অন্য বিষয়গুলোর নম্বর যোগ করে ৯০০-তে মোট ৪৫০ নম্বর পান, তবে আপনি লিখিত পরীক্ষায় পাস করবেন।
বিসিএস লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে ফাইনাল রেজাল্ট তৈরি করা হয়। আপনি ক্যাডার নাকি নন-ক্যাডার চাকরি পাবেন, নাকি আপনার পছন্দের ক্যাডারটিই পাবেন– সেটি লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ওপরই নির্ভর করে। তাই লিখিত পরীক্ষার জন্য আপনার প্রস্তুতি হতে হবে সিলেবাস ও সাজেশনভিত্তিক এবং গোছানো। আজ বাংলা ও বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি প্রস্তুতি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-
বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি
(১) ব্যাকরণ থেকে ৫টি প্রশ্ন থাকবে। ব্যাকরণ থেকে যেসব বিষয়ের ওপর প্রশ্ন হবে তা হলো (ক) শব্দগঠন, (খ) বানানের শুদ্ধরূপ/বানানের নিয়ম, (গ) বাক্যশুদ্ধি/বাক্যের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, (ঘ) প্রবাদ-প্রবচনের নিহিতার্থ প্রকাশ, (ঙ) বাক্য গঠন।
বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে ব্যাকরণ অংশের জন্য যা পড়বেন তা হলো-
শব্দ গঠন থেকে যা পড়বেন
(ক) শব্দ কী? বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের পাঁচটি প্রক্রিয়া উদাহরণসহ লিখুন।
(খ) অর্থগতভাবে বাংলা ভাষার শব্দগুলোকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ আলোচনা করুন।
(গ) উপসর্গযোগে শব্দ গঠন করুন।
বানান থেকে যা পড়বেন
(ক) বানানের শুদ্ধরূপ, (খ) বাংলা বানানে শ, স, ষ ব্যবহারের নিয়ম।
(গ) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে তৎসম শব্দের বানানের সূত্রগুলো লিখুন।
(ঘ) বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম অনুসারে অ-তৎসম শব্দের বানানের সূত্রগুলো লিখুন।
বাক্য থেকে যা পড়বেন
(ক) বাক্য কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা লিখুন, (খ) কোন কোন বৈশিষ্ট্যের ওপর বাক্যের সার্থকতা নির্ভর করে লিখুন।
(গ) বাক্য শুদ্ধ করে লিখুন।
(ঘ) বাক্যে রূপান্তর করুন (সরল থেকে জটিল, জটিল থেকে সরল এমন)।
প্রবাদ প্রবচন থেকে যা পড়বেন
(ক) প্রবাদ প্রবচন ব্যবহার করে অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করুন।
(খ) বাগধারার অর্থ উল্লেখ করে বাক্যে প্রয়োগ দেখান।
(গ) সাহিত্য অংশ থেকে ১০টি প্রশ্ন থাকবে। সাহিত্য থেকে সাধারণত কয়েকটি টপিকস থেকে প্রতি বছর প্রশ্ন থাকে। সেগুলো হলো- চর্যাপদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ইত্যাদি।
সাহিত্য অংশ থেকে যা পড়বেন
চর্যাপদ কে, কবে, কোথায় আবিষ্কার করেন?
চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে লিখুন।
বাংলা সাহিত্যে চর্যাপদের গুরুত্ব আলোচনা করুন।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের পরিচয় ও বিষয়বস্তু লিখুন।
মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলার চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য লিখুন।
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতি
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রেফারেন্স বই, যেমন- মোজাম্মেল হকের উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি দ্বিতীয় পত্র, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে বই, মুক্তিযুদ্ধের বই, আব্দুল হাইয়ের বাংলাদেশ বিষয়াবলি ইত্যাদি বই পড়তে পারেন।
বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে সংবিধান, বাংলাদেশের ম্যাপ ও অর্থনৈতিক সমীক্ষার ওপর পড়ায় মনোযোগ দিন। এ বিষয়ে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই সময়ানুযায়ী প্রশ্নের উত্তর লিখবেন। লেখার মাঝে ছোট ছোট ম্যাপ, ইনফোগ্রাফ, টেবিল, ডেটা দিলে ব্র্যাকেটে সোর্স, বাংলা অথবা শুদ্ধ ইংরেজিতে কোটেশন দেবেন।
প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পড়বেন।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে কনসেপচুয়াল প্রশ্ন থাকে। এর মধ্যে প্রশ্ন কমন পাওয়া কঠিন। লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরে মনীষীদের উক্তি, উদাহরণ দিলে বেশি নম্বর পাবেন।
প্রতিদিন অনলাইনে ৪-৫টা সংবাদপত্র খুব দ্রুত পড়বেন। সংবাদপত্র পড়ার সময় সংবাদপত্রের কলামগুলো পড়ে পড়ে বুঝে নেবেন কোন কোন টপিক থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন হতে পারে। সাধারণ জ্ঞানে সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা অনুসারে প্রশ্নের ধরন বদলাতে পারে।
উত্তর লেখার সময় প্রয়োজনীয় চিহ্নিত চিত্র ও ম্যাপ আঁকুন। যথাস্থানে বিভিন্ন ডেটা, টেবিল, চার্ট, রেফারেন্স দিন। সংবাদপত্র থেকে কোনো উদ্ধৃতি দিলে উদ্ধৃতির নিচে সোর্স এবং তারিখ উল্লেখ করে দেবেন। উইকিপিডিয়া কিংবা বাংলাপিডিয়া থেকে উদ্ধৃত দিতে পারেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কে, কী বললেন, সেটা প্রশ্নের উত্তরে প্রাসঙ্গিকভাবে লিখতে পারেন।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন ছেড়ে আসবেন না। উত্তর জানা না থাকলে ধারণা থেকে কিছু না কিছু লিখবেন।
মাঝে মাঝে বিভিন্ন টপিক নিয়ে লেখার অনুশীলন করুন। পড়ার অভ্যাস বাড়ান। এতে আপনার লেখা মানসম্মত হবে। কোনো উত্তরই মুখস্থ করার দরকার নেই। ধারণা থেকে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। লিখিত পরীক্ষায় সবাই বানিয়ে লেখে। ঠিকভাবে বানিয়ে লেখাটাও একটা আর্ট।
লিখিত পরীক্ষায় বেশির ভাগ প্রশ্নই কমন পড়ে না। এসব বই পড়া থাকলে উত্তর করাটা সহজ হয়। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়, ইন্টারনেট, বিভিন্ন সোর্স থেকে উদ্ধৃতি দিলে বেশি নম্বর পাবেন। পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তরে রেফারেন্স দিলে বেশি নম্বর পাবেন।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন আসলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং আপনার নিজের মতামত সহকারে পয়েন্ট আকারে লিখলে বেশি নম্বর পাবেন।
যা মনে রাখবেন
লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার উপায় হলো, ‘যত পড়া, তত লেখা’।
একজন প্রার্থী কতটুকু জানল, এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সে কতটুকু লিখতে সক্ষম; সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে লেখার চর্চাও করবেন।
প্রতি সপ্তাহে মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেবেন।
নিজেদের সুবিধামতো রুটিন সাজিয়ে নিন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ের (বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) যেকোনো একটি এবং প্রতিদিন রাতে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং অনুবাদ অনুশীলন (ইংরেজি ও বাংলা) করতে পারেন।
গণিতের ওপর আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিন।