![অটোস্ট্যান্ডের দখলে শহিদ মিনার](uploads/2024/02/17/1708149451.JHALOKATHI-SHAHID-MINAR-PHO.jpg)
ঝালকাঠির নলছিটি পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বর দখল করে গড়ে উঠেছে অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এতে শহিদ মিনারের চারপাশ সব সময় ময়লা-আবর্জনায় বেষ্টিত থাকে। চত্বরটি উন্মুক্ত হওয়ায় এর দুপাশে মলমূত্রত্যাগ করেন যাত্রী ও পথচারীরা। পাশাপাশি শব্দদূষণের সমস্যা ও মাদকের আড্ডা তো আছেই। এ ছাড়া চত্বর দখল করে সারি সারি অটোরিকশা রাখায় শহিদ মিনারকে কেন্দ্র করে এলাকার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সারা দেশে শহিদ মিনারগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু নলছিটি পৌর শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে এখনো রয়েছে সারি সারি অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক গাড়ি।
জানা যায়, ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে নলছিটিতে প্রথমে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছোট আকারে একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ১৯৯৮ সালে শহরের কলেজ রোডে বড় আকারে আরেকটি শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটিই এখন নলছিটি উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই শহিদ মিনারে প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। অথচ সেই শহিদ মিনারটি এখন অরক্ষিত। নেই সীমানা প্রাচীর। যথাযোগ্য মর্যাদা ও অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে এটি। ২০১৬ সালের দিকে শহিদ মিনার চত্বরে অবৈধভাবে অটোরিকশা ও ইজিবাইক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়। সেই থেকে শহিদ মিনার চত্বর এখন অটোস্ট্যান্ড নামে পরিচিত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহিদ মিনারটি সুরক্ষিত না থাকায় দিনের বেলায় অটোরিকশা ও ইজিবাইক গাড়ির কারণে শব্দদূষণ হয়। এ ছাড়া চালকদের একে অপরের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় সাধারণ মানুষের চলাচলে সমস্যা হয়। আর রাতের বেলায় নির্জন হওয়ায় চত্বরটিতে বসে মাদকের আড্ডা। অরক্ষিত শহিদ মিনার চত্বরটি ময়লা-আবর্জনা, দখল ও দূষণে অস্তিত্বসংকটে রয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বর।
অটোরিকশা ও ইজিবাইক গাড়ির চালকরা জানান, এ এলাকাটি অত্যন্ত ব্যস্ত। এখানে অটোরিকশা রাখার মতো কোনো স্ট্যান্ড নেই। সড়কের ওপর অটোরিকশা, ইজিবাইক গাড়ি পার্কিং করলে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই তারা শহিদ মিনার চত্বরের খালি জায়গায় অটোরিকশার স্ট্যান্ড করা হয়েছে। শহিদ মিনারে কোনো জাতীয় অনুষ্ঠান হলে তারা নিজেদের উদ্যোগে চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেন। তখন অটোরিকশা ও ইজিবাইক গাড়িগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে নলছিটি পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম খান বাহার বলেন, ‘শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শে মনোরম পরিবেশে ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের পর শহিদ মিনারটির সুরক্ষায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই এখনো শহিদ মিনারটি অরক্ষিতই রয়ে গেছে। এ সুযোগে অটোবাইক ও ইজিবাইক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বললে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’
নলছিটির সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তপন দাস বলেন, ‘অটোরিকশা ও ইজিবাইক গাড়ির জন্য শহিদ মিনার চত্বরে স্ট্যান্ড হবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পুরোপুরি খামখেয়ালি করে একটি চক্র এই স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। এ বছর ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই যদি অটোস্ট্যান্ড সরানো না হয়, তাহলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
নলছিটি পৌরসভার মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে শহিদ মিনার চত্বর থেকে অটোরিকশার স্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে পৌরসভা মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দ্রুত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করতে বলা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’