![ব্ল্যাকবোর্ডে এঁকে শহিদ দিবস পালন](uploads/2024/02/20/1708410358.Rajbari-sohid-minar-news.jpg)
রাজবাড়ীর চরাঞ্চলের ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনটিতেই শহিদ মিনার নেই। এসব বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটিতে ব্ল্যাকবোর্ডে শহিদ মিনারের ছবি এঁকে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চরাঞ্চলের শিশুরা এমনিতেই অনেক পিছিয়ে। তার ওপর শহিদ মিনার না থাকায় তারা ভাষা দিবসের তাৎপর্য ভালোভাবে বুঝতে পারে না। অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীদের আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। তবে এসব বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৪৮২টি। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে ৪৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। এরমধ্যে জেলার পাঁচ উপজেলায় চরাঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২০টি।
এগুলোর মধ্যে সদরে চারটি, পাংশা উপজেলায় চারটি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় একটি, গোয়ালন্দ উপজেলায় ছয়টি ও কালুখালি উপজেলায় পাঁচটি। চরাঞ্চলের এই ২০টি বিদ্যালয়ের কোনটিতেই নেই শহিদ মিনার। এ ছাড়া জেলার ৪৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কতটিতে শহিদ মিনার আছে সেই তথ্যও নেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।
সরেজমিন রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে কোনো শহিদ মিনার নেই। ২০১৩ সালে স্কুলের ভবন পদ্মায় ভেঙে যাওয়ার পর নতুন একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। টিন দিয়ে বানানো ঘরটি সাত শতাংশ জমির ওপর। স্কুলটির আর কোনো জমি নেই। ক্লাসরুম থেকে বের হলেই পা পড়ে অন্যের জমির ওপর। নেই খেলার মাঠ।
স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী কোহিনুর আক্তার খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্কুলটির ভবন ২০১৩ সালে পদ্মায় তলিয়ে যায়। এরপর এখানে নতুন ভবন তৈরি করা হয়। বিদ্যালয়ের যেটুকু জমি তার ওপরই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। আর কোনো জমি নেই। শহিদ মিনার বানানোর মতো জায়গাও নেই। আমাদের বলা হয়েছে, কেউ জমি দান করলে সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। কোনো ব্যক্তি এখন পর্যন্ত স্কুলের জন্য জমি দান করেননি। আমাদের আগের জায়গাতেও শহিদ মিনার ছিল না। আমরা ব্ল্যাকবোর্ডে ছবি এঁকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহিদ দিবস পালন করি।’
একই ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলটিও ২০২১ সালে পদ্মার স্রোতে ভেঙে যায়। বর্তমানে দুটি টিনের ঘরে চলে পাঠদান। এখানেও কোনো শহিদ মিনার নেই।’
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ইমান আলী বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে আগেও শহিদ মিনার ছিল না, এখনো নেই। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমরা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করি। প্রতিবছর আমরা কোনো কিছু দিয়ে শহিদ মিনার তৈরির চেষ্টা করি। না পারলে ব্ল্যাকবোর্ডে ছবি একে সেখানে শ্রদ্ধা জানাই।’
স্কুলটির সহকারী শিক্ষক ছবদুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার থাকা উচিত। কারণ চরাঞ্চলের শিশুরা অনেক কিছু থেকেই পিছিয়ে। শহিদ মিনার থাকলে তারা বুঝতে পারত, ভাষার জন্য আমাদের ত্যাগ কতটা। তাদেরকে দিবসটির তাৎপর্যও বোঝানো সহজ হত।’
সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর জৌকুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শহিদ মিনার নেই। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক আসিফ বিশ্বাস বলেন, ‘শহিদ দিবসে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে প্রভাত ফেরিতে অংশ নেই। আধা কিলোমিটার দূরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।’
পদ্মা নদী তীরের আরেকটি স্কুল চর কাঠুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের পক্ষ থেকে রড দিয়ে এখানে একটি শহিদ মিনার বানানো হয়েছে। শহিদ দিবসের দিন এখানেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা জানান।
জেলার কতগুলো স্কুলে শহিদ মিনার রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে রাজবাড়ী জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম তৌফিকুর রহমান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের তথ্য তাদের কাছে নেই। তথ্য নিয়ে মোবাইল ফোনে জানানো হবে। কিন্তু পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তথ্য দিতে পারেননি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল বলেন, ‘জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শহিদ মিনার রয়েছে। চরাঞ্চলসহ যেসব স্কুলে শহিদ মিনার নেই সেখানে স্থাপন করতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহিদ মিনার নির্মাণে সরকারি কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। বলা হয়েছে স্থানীয় সহযোগিতা নিয়ে যেন দ্রুত নির্মাণ করা হয়।’ কতগুলো স্কুলে শহিদ মিনার নেই- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সঠিক সংখ্যা বলতে পারব না।’