রাজবাড়ীর ৯টি রেলস্টেশনে নেই রেলওয়ের কোনো কর্মচারী। ফলে এসব স্টেশনে ট্রেনের ঘণ্টা বাজে না। ট্রেন কখন আসে আর কখন ছাড়ে, জানে না যাত্রীরা। কয়েকটি স্টেশন আবার জরাজীর্ণ। সেগুলোর প্ল্যাটফর্ম নেই। রেলমন্ত্রী জানালেন, দ্রুতই এসব স্টেশনে লোকবল নিয়োগ দিয়ে সচল করা হবে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় রেলপথ রয়েছে। পাঁচ উপজেলায় মোট রেলস্টেশন রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে ৬টি স্টেশনে রেলওয়ের জনবল রয়েছে। বাকি ৯টি রেলস্টেশনে কোনো জনবল না থাকায় স্টেশনগুলোয় কোনো আন্তনগর ট্রেন থামে না। লোকাল ট্রেন থামলেও টিকিট কাটার ব্যবস্থা নেই। বন্ধ থাকা রেলস্টেশনগুলো হলো, মাছপাড়া, বেলগাছী, সূর্যনগর, গোয়ালন্দ বাজার, খানখানাপুর, বসন্তপুর, রামদিয়া, আড়কান্দি ও নলিয়া জামালপুর। এর মধ্যে মাছপাড়া, বেলগাছী ও সূর্যনগর রেলস্টেশন ভবনগুলো জরাজীর্ণ। যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা নেই।
স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম অনেক নিচু। ট্রেনে ওঠানামা করতে নারী ও শিশুদের কষ্ট করতে হয়। বাকি ছয়টি স্টেশন গোয়ালন্দ বাজার, খানখানাপুর, বসন্তপুর, রামদিয়া, আড়কান্দি ও জামালপুর রেলস্টেশন নতুনভাবে তৈরি করা। এই স্টেশনগুলোতে আধুনিক মানের হলেও কোনো জনবল না থাকায় ভবঘুরে মানুষের আবাসে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলস্টেশন চালু রাখতে গেলে কমপক্ষে ১০ জন কর্মচারীর প্রয়োজন। এর মধ্যে দুজন স্টেশন মাস্টার, চারজন পয়েন্টম্যান, দুজন বুকিং সহকারী ও দুজন পুটারের প্রয়োজন হয়। রাজবাড়ীর ওই ৯টি স্টেশনে কোনো জনবল না থাকায় সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ আছে।
বন্ধ থাকা ৯টি স্টেশনের মধ্যে কালুখালি জংশন থেকে ভাটিয়াপাড়া রুটে রামদিয়া, আড়কান্দি ও নলিয়া জামালপুর ৩টি, পাচুরিয়া জংশন থেকে ঢাকা রুটে খানখানাপুর, বসন্তপুর ২টি আর গোয়ালন্দ ঘাট থেকে পোড়াদহ রুটে গোয়ালন্দ বাজার, সূর্যনগর, বেলগাছী, মাছপাড়া ৪টি। এর মধ্যে বিএনপির আমলে বন্ধ হয়ে যায় কালুখালি থেকে ভাটিয়াপড়া রেলপথ এবং পাচুরিয়া থেকে ফরিদপুর রেলপথ। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে নতুন করে রেলপথ দুটি চালু হয়। এক সময় বন্ধ থাকা রামদিয়া, আড়কান্দি, নলিয়া জামালপুর, খানখানাপুর ও বসন্তপুর রেলস্টেশন চালু করে বর্তমান সরকার। কিন্তু নতুনভাবে চালু হলেও এই পাঁচটি স্টেশনে কোনো জনবল নিয়োগ দেয়নি রেলওয়ে।
বেলগাছী স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন ভবনটি অনেক পুরাতন আর জরাজীর্ণ। যাত্রীদের বসার জায়গাটি ভেঙে গিয়েছে অনেক আগেই। স্টেশনে থাকা টয়লেটে তালা দেওয়া। রেলের আশপাশের জায়গায় গড়ে উঠেছে দোকানপাট।
স্টেশনে বসে থাকা যাত্রী আরজু মনি বলেন, ‘আমরা স্টেশনে এসে আন্দাজের ওপর বসে থাকি। কখনো ট্রেন পাই, কখনো মিস করি। আর এই স্টেশনে শুধু লোকাল দুটি ট্রেন যাত্রা বিরতি দেয়। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজশাহী, খুলনা ও বেনাপোল থেকে তিনটি আন্তনগর ট্রেন এই স্টেশনের ওপর দিয়ে ঢাকা যায়। আমরা সেই ট্রেনের সুবিধা পাই না।’
এদিকে সূর্যনগর রেলস্টেশনের পরিস্থিতি আরও খারাপ। স্টেশনটিতে কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। ফলে যাত্রীদের ট্রেনে ওঠানামায় অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে ট্রেনে ওঠানামা করতে গিয়ে ট্রেন থেকে পড়ে যায় নারী ও শিশুরা। স্টেশন ভবনের ওপর বটগাছও জন্মেছে। বৃষ্টি এলে ভবন দিয়ে পানি পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ খান বলেন, ‘এখান থেকে অনেক ট্রেনের যাত্রী রয়েছেন, যারা ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা যান। কিন্তু আমাদের রাজবাড়ী গিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়। সব থেকে বড় সমস্যা স্টেশনে কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই।’
একসময়ের ব্যস্ততম রেলস্টেশন ছিল গোয়ালন্দ বাজার। কিন্তু স্টেশনটিতে এখন শুধু সুনশান নীরবতা। রেলস্টেশনে আধুনিক প্ল্যাটফর্ম করা হয়েছে কিন্তু কর্মকর্তা কর্মচারী নেই। এ ছাড়া এই রুটের দুটি ট্রেনও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী কমল সরকার জানান, অতীতে গোয়ালন্দ বাজার থেকে চারটি ট্রেন কলকাতায় যেত। বর্তমানে ট্রেনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত গোয়ালন্দ উপজেলাবাসী। এখন শুধু একটি লোকাল ট্রেন গোয়ালন্দ ঘাট-পুরাদহের মধ্যে চলাচল করে। কিছু দিন আগে নকশিকাঁথা ও মধুমতি দুটি ট্রেন এই রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। আমরা গোয়ালন্দ ঘাট থেকে পোড়াদহ নতুন ট্রেন চাই।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৯টি রেলস্টেশনে কার্যক্রম না থাকায় প্রভাব পড়ছে ট্রেনের সময় সূচিতে। লোকাল ট্রেনগুলো সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। প্রতিদিনই দুই তিন ঘণ্টা করে দেরি করতে হয় লোকাল ট্রেনের। কারণ কালুখালি স্টেশনে যদি কোনো লোকাল ট্রেন থাকে, তাহলে রাজবাড়ী থেকে আন্তনগর ট্রেন যাবে। তারপর সেটি ছেড়ে আসবে। কিন্তু কালুখালি রাজবাড়ীর মাঝে দুটি স্টেশন রয়েছে বেলগাছি ও সূর্যনগর। এই স্টেশন দুটি চালু থাকলে এভাবে লেট হতো না।
রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম জানান, প্রধানমন্ত্রী রেলওয়ের শূন্য থাকা জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য বলেছেন। এরই মধ্যে আমরা ৫ হাজার লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। লোক নিয়োগ দেওয়ার পরে এসব বন্ধ থাকা স্টেশন চালু করা হবে।’