চট্টগ্রামে রোজার এক দিন আগে সব ধরনের ইফতারসামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফলে রোজার আগের দিন নিত্যপণ্যের বাজারে গিয়ে স্বস্তি পাননি সাধারণ ক্রেতারা।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে বেড়েছে ছোলা, খেসারি ও চিনির দাম। পাইকারি এই বাজারে দুই দিন আগেও কিছুটা নিম্নমানের ছোলা কেজিপ্রতি ৯২ টাকা ও ভালোমানের ছোলা কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকায়। রোজার এক দিন আগে পাইকারিতে দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি নিম্নমানের ছোলা ৯৮ টাকা ও ভালো মানের ছোলা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ১১০ টাকা।
পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি খেসারি বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকায়। বর্তমানে পণ্যটির দাম ঠেকেছে ১৩৫ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়।
চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ দে খবরের কাগজকে বলেন, টেরিবাজার দিয়ে খাতুনগঞ্জে মালামাল আনতে সুবিধা। কিন্তু বর্তমানে টেরিবাজার দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই ভিন্ন রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরে আসায় আমাদের পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তাই পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বেড়েছে ১০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ২০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৪৪-১৪৫ টাকা। খাতুনগঞ্জের চিনির আড়তদার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, চিনির সরবরাহ ভালো। তবে চিনির দাম সামান্য বেড়েছে। আশা করছি দাম আর বাড়বে না।
এদিকে রোজার আগের দিন সোমবার (১১ মার্চ) মহানগরের কাজীর দেউড়ি, কর্ণফুলী বাজারসহ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, লেবু, শসা, গাজর, নারিকেল, কাঁচা মরিচ, সয়াবিন তেল, চিনি, ছোলা সবকিছু বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে। শুধু খুচরা দোকানেই নয়, ভ্যানে অনেকে শুধু লেবু, শসা, ধনেপাতা, গাজর ও কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন। কিন্তু সেখানেও চলছে অতি মুনাফার কারসাজি।
নগরের কাজীর দেউড়ি বাজারে সকালে প্রতি পিস লেবু (বড় সাইজ) ১৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিকেল গড়াতেই ক্রেতাসমাগম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পণ্যটির দাম। বিকেলে প্রতি পিস লেবু বিক্রি হচ্ছিল ২০ টাকায়। পাশাপাশি পাইকারি বাজারে প্রতি পিস নারিকেল ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় পণ্যটির দাম ঠেকেছে ১৩০ টাকায়।
গত সপ্তাহে প্রতি কেজি বেগুন ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। গাজরের কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় ঠেকেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি টমেটো ছিল ৪০ টাকা, গত পরশু (১০ মার্চ) ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও রোজার আগের দিন প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। গত ১০ মার্চ প্রতি কেজি শসা ছিল ৬০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়।
তা ছাড়া প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও আলু ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাজীর দেউড়ি বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ এনাম জানান, রোজাকে ঘিরে লেবু, শসা, বেগুন, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির চাহিদা বেড়ে যায়। সে অনুপাতে সরবরাহ কম বলে আড়তদাররা সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরাও বাড়তি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বেড়ে যাওয়া মুরগির দাম এখনো ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসেনি। প্রতি কেজি ব্রয়লার ২২০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮৫০ টাকা ও খাসির মাংস কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
হালিশহরের ঈদগা বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. শফিউল খবরের কাগজকে বলেন, রোজায় মুরগির চাহিদা বাড়ে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় খামারে মুরগির উৎপাদন কম। তার ওপর মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম বাড়ায় খামারিরা কম দামে এখন আর মুরগি বিক্রি করছেন না। তাই দাম বাড়তি।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। ১ মার্চ থেকে নতুন দর কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও নির্ধারিত দরে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।
নগরের কর্ণফুলী বাজারে কথা হয় ক্রেতা মোহাম্মদ শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, রমজান মাস শুরু হচ্ছে, তাই বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে এসেছি। অধিকাংশ সবজিতে এক দিনের ব্যবধানে ২০ থেকে ৪০ টাকার ওপরে বাড়ানো হয়েছে। মাছ-মাংসের দামও আমাদের নাগালের বাইরে। আমাদের আয় নির্দিষ্ট। কিন্তু ব্যয় দিনকে দিন বাড়ছেই। তাই অল্প অল্প করে কেনাকাটা করছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘রোজার আগে ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বারবার তাগিদ দিয়েছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে। কিন্তু কেন সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তা আমরা বুঝতে পারছি না। তার ওপর পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং হচ্ছে না। ফলে খুচরা পর্যায়ে একটি পণ্যই ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দাম বাড়িয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক ফয়েজউল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের লোকবল কম, তবুও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আমরা ক্রেতাদের বলব, কোনো ব্যবসায়ী যদি বাড়তি দরে পণ্য বিক্রি করেন, তাহলে যেন আমাদের জানানো হয়, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’