![১৫০ টাকার টোকেনে চলছে অটোরিকশা](uploads/2024/04/04/1712207877.Sherpur-CNG-AutoRicksha.jpg)
শেরপুর জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। এরমধ্যে নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৭৪৩টির! আবার বেশির ভাগ চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। যাদের আছে, সেগুলোর মেয়াদও শেষ হয়েছে অনেক আগে। দিনের পর দিন এভাবে চললেও তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। প্রতিমাসে মালিক সমিতির কাছ থেকে নেওয়া ১৫০ টাকার একটি টোকেনই তাদের সকল মুশকিল আসান করে দেয়।
চালকরা বলছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলে বিআরটিএ অফিসের লোকজন নানাভাবে হয়রানি করেন। এখন যেহেতু টোকেন নিয়েই সিএনজি চালানো যায় তাই তারা লাইসেন্স করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এছাড়া অটোরিকশার নিবন্ধন থাকলেও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক মাসিক (প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া) করতে হয়। তাই তারা রেজিস্ট্রেশন করতে চান না। মালিক সমিতির সঙ্গে টোকেন বাবদ চাঁদা তোলার বিষয়ে কথা হলে সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। বিআরটিএ বলছে, পুলিশ কঠোর হলে এসব গাড়ি ও চালকদের নিয়ন্ত্রণ করা যেত। আর পুলিশ বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি সোবহান হাজীর টোকেন (মাসিক চাঁদা) দিয়ে পুরো জেলায় নির্বিঘ্নে গাড়ি চালানো যায়। মাত্র ১৫০ টাকা খরচ করলে আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলে আসছে। তবে হয়রানি না থাকলে হয়তো অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করতেন।
হযরত আলী নামে সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, ‘লাইসেন্স দিয়ে কী করব। আমাদের ওসব লাগে না। মালিক সমিতির কাগজ থাকলে চোখ বন্ধ করে চলা যায়। পুলিশও আটকায় না। আরামে গাড়ি চালাই।’
রমজান আলী নামে আরেক চালক বলেন, ‘শেরপুর বিআরটিএ অফিস থেকে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ডাইভিং লাইসেন্স ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তাই কোনো কাগজপত্র (নিবন্ধন, লাইসেন্স) ছাড়াই মান্থলি (মাসিক চাঁদা) দিয়ে গাড়ি চালাই।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চালক বলেন, ‘সরকার যদি কম খরচে কোনো হয়রানি ছাড়া লাইসেন্স করার সুযোগ দেয় তাহলে আমি করব।’
কিছুটা ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানান চালক ইস্রাফিল হোসেন। বলেন, ‘১৫০ টাকা করে মান্থলি (মাসিক চাঁদা) দেই, এরপরও মাঝে মধ্যে পুলিশ ঝামেলা করে। তাই আমাদের লাইসেন্স করা দরকার। কিন্তু লাইসেন্সতো করতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই মান্থলি দিয়েই গাড়ি চালাই।’
যাদের নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তাদের পথে পথে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যারা চাঁদার টাকা জমা দিয়ে একটি বিশেষ স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে রাখেন না, তাদের জেলার একাধিক স্পটে হয়রানির শিকার হতে হয়। নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আলাল মিয়া নামে এক চালক বলেন, ‘যে উপজেলাতেই যাই, মান্থলি করা লাগে। মানে প্রতিটি থানা এলাকায় ঢুকতে গেলে মাসিক টাকা দেওয়া লাগে। এভাবে চলা তো মুশকিল। আর বিআরটিএ অফিসে গেলে নানা ঝামেলা। এটা দাও, এটা দাও করে।’
টোকেনের মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয় কি না, অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসানের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘গরিব শ্রমিকদের মেয়ের বিয়ে দিতে, কোনো চালক দুর্ঘটনায় আহত হলে তাদের জন্য টাকা খরচ করতে হয়। ওগুলোর জন্য টাকা নেওয়া হয়। আমরা কোনো চাঁদা তুলি না। এটা আইনে নেই। সভাপতি এবং আমি, দুজনের কেউই চাঁদা তোলা পছন্দ করি না।’
তবে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন শ্রমিক সংগঠনটির সভাপতি সাবাহান আলী। তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে আছে মাসে কত টাকা উঠানো যায়। এই টাকাটা কোন কোন খাতে খরচ হয় তার সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। কোনো চালক মারা গেলে তার নামাজে জানাজায় যে খরচটা হয় সেটা আমাদের তোলা টাকা থেকেই খরচ হয়। গঠনতন্ত্রে আছে মাসে ২০০ টাকা নেওয়া যাবে। এরমধ্যে যারা টাকাটা উঠায় তারাইতো ৫০ টাকা নিয়ে নিচ্ছে।’
জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল কিবরিয়া বলেন, ‘বেশির ভাগ অটোরিকশার নিবন্ধন নেই। যাদের আছে, সবগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। আমরা এখন আগের তুলনায় বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। পুলিশের নজরদারি বাড়ানো গেলে বিআরটিএতে রেজিস্ট্রেশন বাড়বে।’
পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম বলেন, ‘নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালককে ধরতে আমরা প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছি। তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। সড়কের কোথাও টোকেন নেওয়ার সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’