![নারায়ণগঞ্জে জিয়ার ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদে বিএনপি নেতাদের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি](uploads/2024/04/05/1712298847.jia.jpg)
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় শহিদ জিয়া হল ও মিলনায়তনের ওপরে থাকা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকালে ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের নেতা-কর্মীদের ম্যুরালটি ভাঙার জন্য দায়ী করেন তারা। তবে বুধবার (৪ এপ্রিল) গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা ম্যুরালটি ভেঙেছে বলে জানান মিলনায়তনটির তদারকির দায়িত্বে থাকা আরিফুর রহমান।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৮১ সালে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সম্মানে এই মিলনায়তনটিকে শহিদ জিয়া হল হিসেবে নামকরণ করা হয়। তার ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। মিলনায়তনটি জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকায় প্রথমে আমরা ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন ম্যুরাল ভাঙার বিষয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। সম্প্রতি জিয়া হল ভেঙে আরেকটি ভবন করার প্রস্তাব দিয়ে সংসদে বক্তব্য রেখেছিলেন শামীম ওসমান। আজকের এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এটা সরকারি দলের নীলনকশার মাধ্যমে শহিদ জিয়ার এ ম্যুরাল কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।’ ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় ম্যুরালটি স্থাপন করার দাবি জানান বিএনপি নেতারা। অন্যথায় তারা আন্দোলনের দিকে এগোবেন বলে জানান সাখাওয়াত।
ম্যুরালটি ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান বলেন, ‘বিগত সময় সংসদে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান জিয়া হল ভাঙার কথা বলেছেন। রাতের অন্ধকারে বাহিনী দিয়ে এ ম্যুরাল ভেঙে প্রমাণ করেছেন তিনি আসলে প্রতিহিংসাপরায়ণ একজন রাজনীতিবিদ। তিনি শান্তিপূর্ণ কাজ করতে পারেন না। নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে এই কাজটি তিনি করেছেন।’
মিলনায়তনটির তদারকির দায়িত্বে থাকা আরিফুর রহমান বলেন, ‘বুধবার রাতে বাসায় যাওয়ার সময়ও বিল্ডিংয়ের ওপরে ম্যুরালটি দেখেছি। সকালে এসে দেখি ম্যুরালটি নেই। চাবি খুলে ওপরে গিয়ে দেখি ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙা অবস্থায় সেটি ছাদের ওপর পড়ে আছে।’ দুর্বৃত্তরা ম্যুরালটি ভেঙেছে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘ভবনটি জরাজীর্ণ ছিল। এটি ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা তাদের ছিল। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কে বা কারা ম্যুরালটি ভেঙেছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে নারায়ণগঞ্জ সফরকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চাষাঢ়ায় ‘টাউন হল’ নামে ওই মিলনায়তনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এমএ সাত্তার টাউন হল উদ্বোধনের সময় জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে হলটির নাম রাখেন শহিদ জিয়া হল।
তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মিলনায়তটির নাম পরিবর্তন করে ‘শহিদ মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তন’ রাখা হয়। ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারও নাম পরিবর্তন করে শহিদ জিয়া হল করা হয়। পরে ভবনটির ওপরের অংশে জিয়াউর রহমানের একটি ম্যুরালও স্থাপন করা হয়। তবে ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
ম্যুরালটি ভাঙার অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শুনেছি বিষয়টি। ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে কিংবা ভেঙে পড়েছে; দুইটার একটা হতে পারে। কেননা ২০১৪ সালে ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে সেটা তার বা তাদের ব্যাপার, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।’ তবে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বিকেল তিনটায় এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
বিল্লাল হোসাইন/জোবাইদা/