![কেউ চায় বৃষ্টি কেউ চায় না](uploads/2024/04/30/Paddy-1714448399.jpg)
প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ দেশের মানুষ। এক পশলা বৃষ্টির আশায় সবখানে ইসতেসকার নামাজ আদায় হচ্ছে। সবার অপেক্ষা একটাই, কখন নামবে স্বস্তির বৃষ্টি। তবে উল্টো চিত্রও রয়েছে। হাওর অঞ্চল থেকে শুরু করে বরেন্দ্র অঞ্চল, প্রায় সবখানেই কৃষকরা এখন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে তাদের সারা বছরের পরিশ্রম পণ্ড হবে। তারা চাইছেন বৃষ্টি কিছুদিন পরে আসুক। সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও গোলায় তোলার উৎসব। অন্য বছরগুলোতে আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে কৃষকের ধান সেখানে পানির নিচে তলিয়ে যেত। তবে এ বছর তারা অনেকটাই নির্ভার। হাওরজুড়ে এখন কেবল স্বস্তির হাসি। কৃষকরা বলছেন, আরও সপ্তাহখানেক আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, বৃষ্টি না হলে শতভাগ ফসলই কৃষকের গোলায় উঠবে। তারা এখন বৃষ্টি চান না।
কৃষি অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে একযোগে ধান কাটা এখন শেষের দিকে। এ বছর ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬২ হেক্টর বেশি।
উত্তরাঞ্চলের বিশেষ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের যেসব এলাকায় ধানের ফলন ভালো হয় তার মধ্যে বগুড়ার নন্দীগ্রাম অন্যতম। চলনবিলের মতোই এ উপজেলার অনেক এলাকাতেই ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে আরও সাত দিন আগে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই নন্দীগ্রামে অধিকাংশ এলাকায় ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়ে যাবে।
বগুড়ার নন্দীগ্রামের কৃষক আব্দুল বারিক বলেন, ‘এমন গরম আগে কখনো দেখিনি। আমার চার বিঘা জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। আরও চার বিঘা বাকি রয়েছে। এখন বৃষ্টি হলে ওই দুই বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।’
তবে একই জেলার কাহালু, দুপচাচিয়া, শিবগঞ্জ ও গাবতলী উপজেলার অনেক কৃষক চান এখন বৃষ্টি হোক। কাহালুর সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় শিলকর গ্রামে। ওই গ্রামের শিক্ষক আব্দুর রহিম তার ৪০ বিঘা জমিতে সুবর্ণলতা, বীনা-২৫ ও খাটো জিরাসহ পাঁচ ধরনের ধান চাষ করেছেন; যা এখনো কাটার মতো অবস্থায় আসেনি। আব্দুর রহিম বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ধানের দানা ভালো হবে। সেচের খরচ বাঁচবে। বৃষ্টি না হওয়ায় আমার ১২ শতাংশ জমির ধানের শীষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলোতে হলদেভাব দেখা দিয়েছে। এখন বৃষ্টির খুব প্রয়োজন।’
নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার আত্রাই, রাণীনগর, মান্দার পূর্বাঞ্চল ও সদর উপজেলার দক্ষিণের বিল-বাওড়গুলোতে বছরে একবার ধান চাষ হয়। চলতি মৌসুমে বিলের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। এসব এলাকার কৃষকরা ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় রয়েছেন। বলছেন, বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়া হলে তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
অন্যদিকে তীব্র খরায় নাজেহাল আম চাষিরা। জেলার সাপাহার, পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর বাগানে আম উৎপাদন হচ্ছে। খরায় আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে। তাই চাষিরা বৃষ্টি কামনা করছেন। পোরশার ঘাটনগর এলাকার বাগানমালিক সাইদুর রহমান বলেন, ‘খরা মোকাবিলা করে আম উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়েছে। কিছুতেই গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
জেলার মুন্সীরহাটের লিচুবাগানের মালিকদের বরাত দিয়ে ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি বলছেন, তীব্র তাপদাহের কারণে লিচুর গুটিগুলো ধরে রাখা যাচ্ছে না। বারবার পানি দেওয়ার পরেও ঝরে পড়ছে। এ কারণে এবার ফলন অনেক কম হবে। অন্যদিকে একই জেলার ভুট্টা চাষীরা ভালো ফলন পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়ব।
অন্যদিকে মণিরামপুর উপজেলার কুমারসীমা গ্রামের চাষি বিদ্যুৎ রায়ের সঙ্গে কথা হয় খবরের কাগজের নিজস্ব প্রতিবেদকের (যশোর)। বিদ্যুৎ রায় বলেন, ‘প্রায় তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। মাত্র এক বিঘা জমির ধান কেটেছি। এখন বৃষ্টি হলে মাঠে মারা যাব।’
ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধান চাষিরা বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন। এরই মধ্যে তারা ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে সদর উপজেলার তালুকদার চরের এই গ্রামেই বৃষ্টিকে আপাতত অভিশাপ হিসেবে দেখছেন মুগডাল, সয়াবিন ও সূর্যমুখী চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসান ওয়ারেসুল কবীর জানান, হালকা বৃষ্টিপাত হলে ফসলের জন্য ভালো হবে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতে ক্ষতির শঙ্কার রয়েছে। আর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তীব্র দাবদাহে বাগানের মাল্টা, কমলা ও আম ঝরে যাচ্ছে। সেচ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলে অনেক উপকার হবে।