![কমেছে কোরবানিদাতা, ঝোঁক বেড়েছে ছাগলে](uploads/2024/06/15/1709188448.Thakurgaon-goat-1718426252.jpg)
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নাটোরে জমে উঠেছে কোরবানির হাট। ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতাই বেশি দেখা গেছে হাটে। এবার জেলায় তুলনামূলকভাবে গরুর চেয়ে ছাগল বিক্রি বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া বিক্রি বেড়েছে ছোট গরুর। এতে বেকায়দায় পড়েছেন বড় গরুর খামারিরা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৪২টি। আর পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২২৭টি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নাটোরে কোরবানি পশুর মধ্যে ৯৪ হাজার ৬৫৮টি ষাঁড়, ১২ হাজার ৮৫৩টি বলদ, ১৪ হাজার ৩৩৫টি গাভি, ২ হাজার ১৬৬টি মহিষ, ৩ লাখ ২০ হাজার ৩৬টি ছাগল, ৩৪ হাজার ১৫০টি ভেড়া ও দুম্বাসহ অন্যান্য পশু ২৯টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় প্রস্তুত রয়েছে ৮৭ হাজার ৪৬০টি, সিংড়ায় ৯২ হাজার ৫৬৬টি, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৯৭ হাজার ৮৮৯টি, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৬৫ হাজার ২২৫টি, লালপুর উপজেলায় ৪০ হাজার ৯৮১টি, বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৩৭ হাজার ৯২২টি এবং নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫৬ হাজার ১৮৪টি।
নলডাঙ্গা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পবিত্র কুমার জানান, হাটে বড় সাইজের গরু তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। তবে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে গরু বিক্রি হচ্ছে। এবার গরুর তুলনায় ছাগল বেশি বিক্রি হচ্ছে, এমন দাবি করেন তিনি।
সরেজমিনে জানা যায়, এবার কোরবানিদাতার সংখ্যা কমেছে। আবার যারা কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ছাগল কোরবানি দিচ্ছেন। আবার যারা গরু কোরবানি দেবেন, তাদের অধিকাংশই ছোট আর মাঝারি আকৃতির গরু পছন্দ করছেন।
সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া বাজার এলাকার মৌসুমী জানান, তিনি অন্যান্য বছরে ভাগে কোরবানি দিতেন। তবে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় এবার কোরবানি দিচ্ছেন না।
দিঘাপতিয়া পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেননি। এ ছাড়া পারিবারিক কারণে অনেক টাকা খরচ হওয়ায় তিনিও কোরবানি দিচ্ছেন না।
সদর উপজেলার ভাটোদাঁড়া গ্রামের ছাগল খামারি জামিল জানান, তিনি একটি মাঝারি খাসি ১৯ হাজার টাকা ও ১১ হাজার টাকায় একটি ছাগল বিক্রি করেছেন।
একই উপজেলার করিম মৃধা জানান, তিনি বিক্রির জন্য একটি গরু প্রস্তুত করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত গরুটি কিনতে কোনো খদ্দের আসেনি। অথচ এর আগের বছরগুলোতে গরু কেনার জন্য প্রতিদিনই বাড়িতে খদ্দের আসত।
দিঘাপতিয়া হাগুড়িয়া এলাকার গরু খামারি মুনছুর আলী জানান, তার খামারে বেশ কয়েকটি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে তেমন খদ্দের আসছে না।
লালপুর উপজেলার বিলমারিয়া ইউনিয়নের চকবাদকয়া এলাকার খামারি গোলাম মোস্তফা জানান, তিনি ১২০০ কেজির গরুটি বিক্রি করতে চাইলেও তেমন খদ্দের পাননি। গরুটি বিক্রির জন্য তিনি ১৫ লাখ টাকা দাম চাইলেও দাম উঠেছে মাত্র ৬ লাখ।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোরবানি পশু বিক্রির জন্য জেলায় ১৮টি হাট চলছে। এ ছাড়া অনলাইনেও পশু বিক্রি হচ্ছে। কোরবানি উপলক্ষে কয়েকটি বিশেষ হাটেরও আয়োজন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের টাকার সমস্যা রয়েছে সেটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তাই এবার বড় গরু বিক্রি নিয়ে খামারিরা সমস্যায় পড়েছেন। তবে ছোট আর মাঝারি গরু বিক্রি হচ্ছে। আর বড় গরুগুলো জেলার বাইরে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রিতে খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ পুলিশ প্রশাসন।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘নাটোরের কোরবানির পশু ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটে যেতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে জেলা-পুলিশ।’