![পদ্মা সেতুতে দ্বিতীয় বছরে ৪৬ কোটি টাকা বেশি টোল আদায়](uploads/2024/06/30/padma-bridge-Tolplaza-1719722337.jpg)
পদ্মা সেতুতে প্রথম বছরের তুলনায় দ্বিতীয় বছরে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বেশি টোল আয় হয়েছে। প্রথম বছর আয় হয়েছে ৮০১ কোটি টাকারও বেশি। আর দ্বিতীয় বছরে টোল আসে ৮৪৭ কোটি টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, বিড়ম্বনাহীন যাতায়াতের কারণে পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে মানুষ।
পদ্মা সেতু দিয়ে দুই বছরে যান চলাচল করেছে এক কোটি ২৭ লাখেরও বেশি। রাজস্ব এসেছে এক হাজার ৬৪৮ কোটি ৭৬ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ টাকা। সেতু দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৯ হাজারের বেশি যান পারাপার হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৩২ লাখ টাকার বেশি।
পদ্মা সেতু সাইট অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক আমিরুল হায়দার চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
পরদিন ২৬ জুন ভোর থেকেই শুরু হয় যান চলাচল। উদ্বোধনের পরই দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন শুরু হয়েছে। টোল আদায়েও হয়েছে রেকর্ড। এই দুই বছরে সেতুতে প্রায় সোয়া কোটি যান পারাপার করেছে। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
আমিরুল হায়দার জানান, প্রথম বছরে মোট ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৬টি যানবাহন পার হয় এবং টোল আদায় হয় মোট ৮০১ কোটি ৪৪ লাখ ২৭ হাজার ২০০ টাকা। দ্বিতীয় বছরে মোট যানবাহন পারাপার হয়েছে ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার ২২৯টি এবং মোট টোল আদায় হয়েছে ৮৪৭ কোটি ৩১ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা।
প্রথম বছরে প্রতিদিন গড়ে যানবাহন পার হয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৩টি এবং গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৪ টাকা।
আর দ্বিতীয় বছরে প্রতিদিন গড়ে যানবাহন পার হয়েছে ১৯ হাজার ১৬৮টি এবং গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ২২২ টাকা।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরে পদ্মা সেতুতে সবচেয়ে বেশি চলেছে বাস। মাঝারি বাস চলেছে ৩১ লাখ ৩১ হাজার ৫৩২টি, যা থেকে টোল এসেছে ৬২৬ কোটি ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া, ১৪ হাজার ৭৮৪টি বড় বাস চলাচল বাবদ টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং ২৬ হাজার ৯০৮টি ছোট বাস থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ টাকা।
মোট মোটরসাইকেল চলাচল করছে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭০৪টি, যা থেকে টোল আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ৪০০ টাকা। ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৪টি প্রাইভেটকার ও জিপগাড়ি থেকে টোল আদায় হয়েছে ২২৫ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
১১ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৮টি পিকআপভ্যান পারাপার বাবদ টোল উঠেছে ১২৪ কোটি ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টাকা এবং ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৩২টি মাইক্রোবাস চলাচলে ১৭০ কোটি ৯১ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে।
১০ লাখ ১১ হাজার ৯০৯ ছোট ট্রাক থেকে টোল এসেছে ১৬১ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ মাঝারি ট্রাক থেকে ৮৮ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা টোল এসেছে।
৩৩ হাজার ৩০১টি থ্রি এক্সেল ট্রাক থেকে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা, ২ লাখ ৬১ হাজার ৮৬২টি ফোর এক্সেল ট্রেইলর থেকে ২৬ কোটি ৭৫ লাখ ২২ হাজার টাকা ও সবচেয়ে বড় মাপের ১৪ হাজার ৪৪৮টি ট্রেইলর থেকে টোল আদায় হয় ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
সেতু সচিব মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘বিড়ম্বনাহীন যাতায়াতের কারণে পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে মানুষ। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার আরও বাড়বে। সেতুর সুফল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। দুই পাড়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। সড়কপথ ও রেলপথ ছাড়াও পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় নদী দিয়ে হাই ভোল্টেজ জাতীয় গ্রিড লাইন স্থাপনে রামপাল ও পায়রার বিদ্যুৎ যুক্ত হতে পেরেছে রাজধানীতে। নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নতুন নতুন সাফল্য বয়ে আনছে।’
পদ্মা সেতু ও ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়কে এক্সপ্রেসওয়ে চালুর ফলে এ রুটে যাতায়াতের সময় কমেছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুব সহজে রাজধানীতে অফিস-আদালত, জরুরি কাজকর্ম করতে পারছেন। মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময়ে রাজধানীতে পৌঁছাতে পারছেন। পদ্মা সেতুতে যোগাযোগ চালুর পরে সময় বাঁচায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দ্বার খুলেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জে দ্রুত পরিবহন সম্ভব হচ্ছে, যা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করছে এবং ক্রেতারা আগের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে তাদের পণ্যসামগ্রী হাতে পাচ্ছেন।
রাজিব হোসেন/সাদিয়া নাহার/অমিয়/