![সাংবাদিকদের মারধর : হামলাকারী এরা কারা?](uploads/2024/04/24/1713976071.fdc.jpg)
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন শেষ হয়েছে ১৯ এপ্রিল। আর এতে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপিপন্থি মিশা সওদাগর ও ডিপজল প্যানেলের অধিকাংশ প্রার্থী। গত ২৩ এপ্রিল এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজয়ীদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান শেষে বর্তমান সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরীর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন সমিতির সাধারণ সদস্য খল অভিনেতা শিবা শানু, আলেকজান্ডার বো, জয় চৌধুরীসহ অনেকেই। এই ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের মোট ২২ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন খবরের কাগজের ক্যামেরা পারসন আরমান আফ্রাদসহ আরও বিভিন্ন গণমাধ্যমের তিনজন সংবাদকর্মী। এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন।
বিএনপি-সমর্থিত মিশা-ডিপজল প্যানেল নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এফডিসিতে নানা রকম তাণ্ডব চালাচ্ছেন তারা। নিয়ম ভেঙে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তে কাজী হায়াতের কাছে শপথবাক্য পাঠ করেছেন নির্বাচিতরা। কিন্তু নিয়মানুযায়ী এই শপথ পাঠ করাতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে মিশা ও ডিপজল প্যানেল।
মিশা সওদাগর পর্দার মতো বাস্তব জীবনেও খল অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পরিচিত। কারণ তেলে-জলে মেশাতে তার জুড়ি নেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সেই দলেই ভিড়ে যান কৌশলী এই অভিনেতা। তবে তার মনের ভেতর শুধু বাংলাদেশ জাতীয়বাদীর (বিএনপি) গুণগাঁথা। সাংবাদিকদের ওপর হামলার পর থেকেই নতুন করে আবারও আলোচনায় এসেছে মিশা সওদাগরের রাজনৈতিক পরিচয়। নতুন করে আবারও ভাইরাল হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তোলা একটি ছবি। যে ছবিতে মিশা রয়েছেন হাস্যোজ্জ্বল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিশা সওদাগর একসময় বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) সহসভাপতি ছিলেন। তখন মিশা বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সমালোচনায়ও মত্ত থাকতেন নিয়মিত।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মিশা সওদাগর আস্তে আস্তে নিজের ভোল পাল্টাতে থাকেন এবং নিজেকে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় শিল্পী হিসেবে প্রচার করতে থাকেন সর্বদা। এভাবে একসময় তিনি সরকারদলীয় বিভিন্নজনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। মিশা নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে সরকার দলের লোকদের সঙ্গে মিশে যান। তবে বাস্তবে তিনি সুযোগসন্ধানী। সুযোগ পেলেই চুপিসারে, কৌশলে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করে থাকেন তিনি।
এদিকে শিল্পী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক একসময়ের অশ্লীল ও কাটপিচ সিনেমা যুগের সমালোচিত খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে সবাই অবগত। তিনি মিরপুর ও গাবতলী এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী। বিএনপি সরকারের আমলে ডিপজল ছিলেন মিরপুরে বিএনপি-সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। ডিপজলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, সরকারি জমি দখলসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে থানায়। তাকে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে র্যাব গ্রেপ্তার করেছিল। উদ্ধার করেছিল বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র। দুর্নীতি দমন কমিশন ডিপজল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল তখন। এরপর ডিপজলও নিজের রাজনৈতিক আদর্শ পরিবর্তন করে নাম লেখাতে চান আওয়ামী লীগে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নও চেয়েছিলেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার সেই সুযোগ দেয়নি ডিপজলকে। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী হওয়ার পর থেকেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে নানা রকম পরিকল্পনায় ব্যস্ত রয়েছেন ডিপজল। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সরকারকে বিপাকে ফেলতে এঁটেছেন নানা রকম ফন্দি। রাজধানীর গাবতলীতে ডিপজলের মালিকানাধীন সিনেমা হলটি এখন মদ বিক্রির বার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের মূল হোতা জয় চৌধুরী। তিনি বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। তারও রাজনৈতিক পরিচয় মিলেছে। তার জন্মস্থান মাগুরায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময় ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন জয়। এরপর সরকার পরিবর্তনের পর এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। শুরু করেন সিনেমায় অভিনয়। দীর্ঘদিন ধরে সিনেমায় কাজ করলেও ভাগ্যে জোটেনি সফলতা। বাংলা সিনেমার তৃতীয় শ্রেণির এই নায়ক অভিনয়ে সফলতা না পেলেও শিল্পী সমিতির নির্বাচনে পেয়েছেন সফলতা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিল্পীদের এক ছাতার নিচে আনতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন খুব সুচারুভাবেই জয় নিজের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীদের মাঝে।
আরেক হামলাকারী সমিতির সাধারণ সদস্য ও অশ্লীল সিনেমায় অভিনয় করা খল অভিনেতা শিবা শানু। তিনি বর্তমানে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই খল অভিনেতা প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে একটি মামলায় জেল খাটার পর বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে বর্তমান এই কমিটি জাতীয়তাবাদী আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেও চলচ্চিত্রাঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে।
চিত্রনায়ক আলেকজান্ডার বো। অশ্লীল সিনেমার নায়ক হিসেবেই সর্বজন পরিচিত তিনি। ঢাকাই সিনেমায় অশ্লীলতার যুগে আবির্ভাব ঘটে এই নায়কের। মুনমুন, ময়ূরীসহ সমালোচিত নায়িকাদের সঙ্গে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি। শিল্পী হিসেবে বর্তমানে বেকার তিনি। তার হাতে নেই কোনো সিনেমা। সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে জয়ী হয়েছেন আলেকজান্ডার বো।