![রপ্তানি বাড়াতে বন্ড সুবিধা চাই](uploads/2024/03/24/1711264064.elias-sarkar.jpg)
ফার্নিচারের বাজার দিন দিন বাড়ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে নানামুখী সংকটে রয়েছে উদীয়মান এই শিল্প। ডলার সংকটের কারণে ফার্নিচার তৈরিতে খরচ বেড়েছে। প্রয়োজনীয় এলসির অভাবে কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফার্নিচার শিল্পের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্পমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস সরকারের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা রশিদ লাবনী
খবরের কাগজ: ফার্নিচার শিল্পের সমস্যা সম্পর্কে কিছু বলুন।
ইলিয়াস সরকার: ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং বিক্রি কমে যাওয়ায় কঠিন সময় পার করছে ফার্নিচার শিল্প। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে বিক্রি কমেছে। আমাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের সহায়তা লাগবে।
খবরের কাগজ: বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের সম্ভাবনা কেমন?
ইলিয়াস সরকার: বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের মতোই ফার্নিচার খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে ফার্নিচার শিল্প গড়ে তোলার মতো পরিবেশ আছে।
খবরের কাগজ: চীন সারা বিশ্বে ফার্নিচার রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানে আছে। বাংলাদেশ ফার্নিচার রপ্তানিতে আরও সফলতা দেখানোর জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ইলিয়াস সরকার: ফার্নিচার শিল্পে রপ্তানিতে বড় সাফল্য পেতে হলে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করতে হবে সরকারকে। আমাদের তৈরি করা ফার্নিচারের মান উন্নত হলেও আমরা প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে দামের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি। আমি প্রতি বছরই বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে গিয়ে কীভাবে, কী কৌশলে উৎপাদন করছে তা দেখি। চীনে ফার্নিচার শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি অনেক বেশি। এখানে আমাদের একটা সুযোগ আছে। মজুরি বাড়ায় চীনের ফার্নিচার শিল্পে খরচ বাড়ছে। খরচ বাড়ার কারণে চীনের অনেক ফার্নিচার কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এখনো এ দেশে শ্রমিকের মজুরি কম। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে যদি কাঁচামাল কম দামে কেনার সুবিধা দেওয়া হয় তবে আমরাও রপ্তানি বাড়াতে পারব। আমাদের পণ্যের পরিচিতি বাড়াতে বিদেশে স্টল নিতে পারি। সেখানকার মানুষের সামনে ফার্নিচার নিয়ে যেতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচারের চাহিদা। এখানে বায়ারের রুচি ও চাহিদামতো সরবরাহ করতে হবে। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। আশাকরি সরকারের সহযোগিতা পেলে রপ্তাতিতে বড় ধরনের সফলতা দেখাতে পারব।
খবরের কাগজ: দেশে-বিদেশে ফার্নিচার রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কাছে কোন ধরনের নীতি সহায়তা চেয়েছেন?
ইলিয়াস সরকার: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে ফার্নিচার খাতে ১০০ ভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় সমপরিমাণ অর্থের বিপরীতে আংশিক শুল্ক বন্ড সুবিধা প্রদানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা রাজস্ব বোর্ডে আমাদের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছি।
খবরের কাগজ: ফার্নিচার শিল্পে কর্মরতদের সক্ষমতা বাড়ানো এখন সময়ে দাবি। এ দায় কিন্তু বেসরকারি খাতেরও আছে। এ বিষয়ে আপনারা কী করছেন?
ইলিয়াস সরকার: বেসরকারি খাতের দায় থাকলেও সরকারের দায় বেশি। আমরা ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারকের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করছি। এক দিনে হবে না। সময় লাগবে।
খবরের কাগজ: অভিযোগ আছে ব্র্যান্ডের ফার্নিচারের দাম বেশি। আপনারা উচ্চবিত্তের জন্যই ফার্নিচার বানিয়ে থাকেন। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
ইলিয়াস হোসেন: আমরা গুণগত মানের ফার্নিচার বানাই। আমাদের পণ্যের চাহিদা আছে বলেই প্রায় সব বিভাগ ও জেলায় ব্র্যান্ডের ফার্নিচারের শোরুম আছে। এসব জায়গায় বিক্রিও হচ্ছে। এ ছাড়া এসব ফার্নিচার দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবহার করা যায়। একসময় ব্র্যান্ডের ফার্নিচার উচ্চবিত্তের জন্য ছিল। এখন এ অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন সবার জন্য ফার্নিচার বানানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মেলাতে তুলনামূলক কম দামে ফার্নিচার বিক্রি করা হয়। ঈদ বা বড় আয়োজন উপলক্ষে ছাড় দিয়ে ফার্নিচার বিক্রি করা হয়।
খবরের কাগজ: সম্ভাবনাময় এ খাতে নতুন উদ্যোক্তা বাড়াতে আপনারা কী করছেন?
ইলিয়াস সরকার: নতুন উদ্যোক্তা আসছে। যেহেতু প্রতিকূল পরিবেশেও ফার্নিচারের চাহিদা আছে। তাই নতুন উদ্যোক্তা আসার সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব মেলাতে ভালো, গুণগতের মানের ফার্নিচার বানানোর জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এতে পুরোনো প্রতিষ্ঠান ভালো ফার্নিচার বানাতে উৎসাহিত হবে। ভালো পণ্য বানিয়ে সাধারণ মানুষের পছন্দের তালিকায় থাকতে পারলে ব্যবসা বন্ধ করার প্রশ্নই উঠবে না।
খবরের কাগজ: অনেকে ফার্নিচার খাতের জন্য বন্ড সুবিধার দাবি করেন। এর কারণ কী?
ইলিয়াস সরকার: ফার্নিচার খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা প্রয়োজন। এতে বিশ্ববাজারে ফার্নিচারের রপ্তানি বাড়বে।
খবরের কাগজ: পণ্যের গুণগত মান বাড়াতে আপনার প্রতিষ্ঠান কী করেছে?
ইলিয়াস সরকার: আমার প্রতিষ্ঠানের সব শাখায় ডেলিভারির (সরবরাহ) ব্যবস্থা আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানের পণ্য টেকসই, মানসম্মত ও ক্রেতার পছন্দমতো বানানোর চেষ্টা করি।