ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সাক্ষাৎকারে এম মনিরুল আলম সরবরাহ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ০১:২০ পিএম
আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
সরবরাহ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ

রমজানের বাকি আছে আর দুইদিন। এরই মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ আছে। তার পরও দাম কমেনি। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগও কাজে আসছে না। রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি, মজুত, দাম, সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এম মনিরুল আলম

খবরের কাগজ:  রমজান সামনে রেখে ৮ নিত্যপণ্য আমদানিতে ডেফার্ড পেমেন্ট বা বাকিতে আমদানির সুবিধা কতখানি কার্যকর হবে?
আশরাফ আহমেদ: আসলে রমজান সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের আমদানি পরিকল্পনার অধিকাংশই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে পরিপালন হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ, পণ্য আমদানির সঙ্গে পরিবহন ও বাজারজাতকরণের বিষয় জড়িত। সে জন্য আগাম সময়ও দরকার হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। তবে এর ফলাফল পেতে পেতে মার্চ ও এপ্রিল পর্যন্ত গড়াবে। কারণ, জানুয়ারিতে দেওয়া ওই সুবিধার আওতায় ঋণপত্র খোলা হলে তা রমজানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়বে। 

খবরের কাগজ: পণ্য সরবরাহ ও বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ কতটা সফল?
আশরাফ আহমেদ: পণ্য হিসেবে যদি আমরা মূল্যায়ন করি তা হলে চাল সরবরাহে সরকার বেশি গুরুত্ব দেয়। রমজান মাসে যদিও অনেক পণ্য ভোক্তার তালিকায় থাকে, তার পরও চালের চাহিদা প্রায় একই রকম থাকে। একটা সমস্যা ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি যে, সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি হওয়ায় কখনো ঢাকায় কম সরবরাহ হয়েছে, আবার অন্য শহরে একটু বেশি হয়েছে। এমন অসম সরবরাহ দুই ক্ষেত্রেই দামে প্রভাব ফেলে। রমজানে ভোগ্যপণ্যের মধ্যে মাছ, মুরগি, সবজি ও ডিমের সরবরাহও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সরকারের সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। আমরা আশাবাদী যে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রী ও আমলা দ্রব্যমূল্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছেন।

খবরের কাগজ: সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়! এ ব্যাপারে কিছু বলবেন? 
আশরাফ আহমেদ: সিন্ডিকেট যে আছে তার তো কোনো প্রমাণ বা লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না। এর অস্তিত্ব নিয়ে আমার দ্বিধা-সন্দেহ আছে। এটা কি কাল্পনিক নাকি এর অস্তিত্ব আদৌ আছে- বিষয়টা জানতে ইচ্ছে করে।

খবরের কাগজ: অর্থনীতির বাইরে কোন কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে বলে আপনি মনে করেন?
আশরাফ আহমেদ: কারণ অবশ্যই আছে। ঢাকায় ৪০-৫০ বছর পূর্বে যে বাজার অবকাঠামো ছিল সেটাই এখনো আছে। এসব বাজার বা আড়তকে সরবরাহ পয়েন্ট বা সাপ্লাই পয়েন্ট ধরলে তার সংখ্যা বাড়েনি। অর্থাৎ যে মোহাম্মদপুর টাউন হল বা কারওয়ান বাজার বা সোয়ারীঘাট আগে ঢাকা মহানগরীর ৫০ লাখ মানুষের পণ্য সরবরাহ করত, এখন তা ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ করে। 

নগরায়ণের পরিকল্পনায় এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বাড়ানোর চিন্তা করা হয়নি। ফলে একই পয়েন্টে আগে আসত ১০০ ট্রাক। এখন আসে ৫০০ ট্রাক। এতে করে ট্রাফিকসহ ও জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কয়েক দফা চাঁদাবাজি হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্যমূল্যে। এগুলো ভাবতে হবে।

খবরের কাগজ: সরকার জ্বালানির দাম কিছুটা কমিয়েছে। যেহেতু পরিবহনে জ্বালানি ব্যয় একটি বড় বিষয়, এর কোনো প্রভাব বাজারদরে পড়বে কি?
আশরাফ আহমেদ: এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। আমি মনে করি এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাজারে। কারণ এতে পরিবহন ব্যয় সামান্য হলেও কমবে। 

উৎপাদক ও আমদানিকারক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত পরিবহন ব্যয় কমলে দ্রব্যমূল্য কম হবে এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, শাকসবজি, মাছ, মাংস ও ডিম পরিবহনে ব্যয় বেশি হয়।

ধরা যাক, এক ট্রাক পণ্য পরিবহনে আগে ২০ হাজার টাকা ভাড়া ছিল। ওই ট্রাকে ১০ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা গেলে পণ্যের পরিমাণ হয় ১০ হাজার কেজি। এতে প্রতি কেজি পণ্য পরিবহনে ২ টাকা ভাড়া পড়ত। পথে আরও খরচ আছে। যেটা আমরা সবাই জানি। তা হলে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা কমলে মোট জ্বালানি ব্যয়ে কিছুটা সাশ্রয় হবে। তাতে প্রতি ১০০ লিটার জ্বালানিতে একটি ট্রাকের ব্যয় সাশ্রয় হবে ৪০০ টাকা। ব্যয় হ্রাসের এই অংশ থেকে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন। তাই জ্বালানির দাম কমাতে বাজারে নিত্যপণ্যের দামও কমার কথা। এ ছাড়া, সারা দুনিয়াতেই জ্বালানির দাম ওঠানামা করলে সব ধরনের পণ্যের দামে তার প্রভাব পড়ে।

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সমন্বয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
সমন্বয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব
প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব ছিলেন ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ২৬ জুলাই পিআরএলে যান। ওই বছরের ৮ নভেম্বর থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি ও প্রতিযোগিতা কমিশনের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম। 

খবরের কাগজ: নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতিযোগিতা কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু বলুন।

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের বাজার একটি আলোচিত বিষয়। তা স্থিতিশীল রাখতে প্রতিযোগিতা কমিশন ব্যাপকভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে। পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে যা আইনে আছে তা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে মামলা করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যে সচিব সভা হয়েছে তাতে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা অন্যতম নির্দেশনা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আরও তৎপর হতে বলেছেন। এই বিভাগ থেকে সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাজার অস্থিরতার খবর আসলে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করা। অনুসন্ধানের মাধ্যমে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মামলা করে শুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। 

খবরের কাগজ: পণ্য মজুত ও কারসাজির অভিযোগে প্রতিযোগিতা কমিশন এ পর্যন্ত কতগুলো মামলা করেছে। জরিমানা করা হয়েছে কতটি প্রতিষ্ঠানকে।

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: প্রতিযোগিতা কমিশন আইন-২০১২-এর আওতা অনুযায়ী ৯০টি মামলা রুজু করা হয়েছে। অধিকাংশ মামলায় গুদামজাতকরণ, কৃত্রিম সংকট তৈরীকরণ, পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০টির বেশি মামলায় শুনানি হয়েছে এবং যুক্তিতর্কের মাধ্যমে এসব মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। কারসাজির দায়ে কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক দণ্ড করা হয়েছে। 

খবরের কাগজ: সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন আপনারা? 

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: কাউকে শাস্তি দেওয়া প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্দেশ্য নয়। কমিশনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। কাউকে শাস্তি দেওয়া মুখ্য কাজ না। প্রতিযোগিতা কমিশনের ২০১২ সালের আইনের ৮ ধারায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ নিশ্চিত করা। অধিকাংশ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। তারপরও কমিশন দেখেছে যে, যারা বাজারকে অস্থির করে, কারসাজি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আর্থিক দণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

খবরের কাগজ: অনেকে বলেছেন, প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রচলিত যে আইন আছে তা দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকানো যাচ্ছে না। আপনি কি মনে করেন আইনের সংস্কার করা উচিত?

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: প্রতিযোগিতা কমিশন আইন এই সরকারের অনেকগুলো সাফল্যের একটি। আইটি এই সরকারের আমলে করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। এই আইন সংস্কারের লক্ষ্যে সম্প্রতি কর্মশালা করা হয়েছে। সেখানে আমরা কিছু পরামর্শ পেয়েছি। সে পরামর্শের আলোকে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। আইনের সংস্কারের ব্যাপারে স্টেকহোল্ডার সঙ্গে কনসালটেশন করে সমস্যা চিহ্নিত করে সংস্কার করা হবে। বিশ্বের অনেক দেশে, ভারতেও এটা হয়েছে। আমরাও সে পথে হাঁটব। 

খবরের কাগজ: সিন্ডিকেট ঠেকাতে নতুন কোনো আইন করা দরকার আছে কি? 

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের যে আইন, প্রতিযোগিতা কমিশনের ২০১২ আইনের যে গঠন ও কার্যাবলি তা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথাযথভাবে পালন করতে পারি সে ক্ষেত্রে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করতে আমরা পারব বলে বিশ্বাস করি। 

খবরের কাগজ: আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কমিশনের কার্যক্রমে কতটুকু পরিবর্তন করতে পেরেছেন?

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: দায়িত্ব নেওয়ার পর কমিশনের উন্নয়নে অনেক কিছু করে ফেলেছি তা বলব না। তবে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। এখানে যারা আছেন সবাই কাজ করছেন। শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনজীবীরাও বলেন, কমিশনের যে কালচার তাতে তারা আস্থাশীল হয়েছে। বিভিন্ন কাজে সহায়তা করছেন। বিশেষ করে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে তারা সহায়তা করছেন। 

খবরের কাগজ: ২০২২ সালের পর নিয়ম না মানায় আর কোনো মামলা হয়েছে কি?

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: হ্যাঁ, একই অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০২২ সালে মামলা করার পর ২০২৩ সালেও মামলা করা হয়েছে। দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওই পণ্যের ক্ষেত্রে বা অপর একটি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন ঘটিয়েছে তখন তাদের বিরুদ্ধে একই অপরাধে আগের জরিমানা করা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আবার মামলা করা হয়েছে। 

খবরের কাগজ: বিভিন্ন নামিদামি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার পরও পণ্যের দাম কমছে না কেন? 

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: পণ্যের দাম কমছে না। এতে মূল্যস্ফীতির ব্যাপার জড়িত। তাছাড়া যারা অসাধু ব্যবসায়ী তারা সবসময় সুযোগ নেয়। বিভিন্ন অজুহাত খুঁজে। বৃষ্টি হলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সরবরাহের ঘাটতি দেখা যায়। তাই আমাদের কাজ করতে হবে সমন্বয়ের ভিত্তিতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিদপ্তর সবাই যদি এক সুরে কাজ করতে পারি তাহলে দেশ অবশ্যই ভোক্তার স্বার্থে এগিয়ে যাবে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। 

খবরের কাগজ: আইন ভঙ্গ করায় এ পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের কি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছে? 

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: যখন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয় তখন কিছু ব্যাপার থাকে। প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলেই সব শেষ না। যখন কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মামলার মুখোমুখি হয় বা কোনো দণ্ডে দণ্ডিত হয় তখন কিন্তু তাদের সুনামের ঘাটতি হয়। তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা গ্রুপ এটা ইস্যু করে। তার দুর্বলতা ছিল বলেই তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে। এটা কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক বলা যায়। 

খবরের কাগজ: নতুন করে আর কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন কি? 

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী: আমি আগেও বলেছি মামলা করা প্রতিযোগিতা কমিশনের এক মাত্র কাজ না। উদ্দেশ্যও না। তবে যখন কোনো বিষয় সম্পর্কে কমিশনের কাছে বিভিন্নভাবে গোচরীভূত হয়, যেকোনো প্রতিষ্ঠান বাজারে কারসাজি করেছে বা সিন্ডিকেট করে বাজারকে অস্থির করেছে তখন তা যাচাই করা হয়। তাদের ডেকে শুনানি করা হয়। অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। এরপর মামলা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়।

মির্জা আব্বাস দলে নেতৃত্বের সংকট নেই

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম
দলে নেতৃত্বের সংকট নেই
মির্জা আব্বাস

মির্জা আব্বাস বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী, সাবেক মন্ত্রী এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র। ২০০১ সালে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং ১৯৯১ সালে ঢাকার মেয়র নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র সদস্য। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে এ দলে যোগদান করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির চলমান রাজনীতি, আন্দোলন-কর্মসূচি এবং সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার মো. শফিকুল ইসলাম 

খবরের কাগজ: ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন ও আন্দোলনে বিএনপির অর্জন সম্পর্কে জানতে চাই।

মির্জা আব্বাস: বিএনপি দেশের জনগণকে ভোট বর্জনের পক্ষে রায় দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং জনগণ আমাদের কথা শুনেছে। আমরা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় দেশের জনগণও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। 

সম্প্রতি ভারতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-অন্যায়-অত্যাচার করে কারাগারে পাঠিয়ে নির্বাচন করেছে। এখন বাংলাদেশ স্টাইলে মোদি সরকারও ভারতে নির্বাচন করতে চায়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে যে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং বিএনপি সেখানে সফল হয়েছে। 

খবরের কাগজ: সামগ্রিকভাবে দেশটি কোথায় আছে, কোন দিকে যাচ্ছে?

মির্জা আব্বাস: সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে দেশের বর্তমান অবস্থা খারাপ। একে কয়েক ভাগে ভাগ করা যাবে। এগুলো হলো- দেশের রাজনৈতিক অবস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থান, ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিস্থিতি এবং সামাজিক অবস্থান। বর্তমান পেক্ষাপটে দেশে যা হচ্ছে, এগুলো নিয়ে দেশ ও বিদেশে আমরা ভালো অবস্থানে নেই।

খবরের কাগজ: বর্তমান সরকারের সামনে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে?

মির্জা আব্বাস: সরকারের এখন টিকে থাকাটাই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। ‘মারি অরি, যেভাবে পারি’- এটা একটা সাংস্কৃতিক শ্লোক। মারি অরি, যেভাবে পারি- শত্রুকে যেভাবে সম্ভব নিপীড়ন করে ক্ষমতায় থাকতে হবে, বিরোধীদের দমন করতে হবে- এটাই হলো বর্তমান সরকারের নীতি। 

খবরের কাগজ: আপনাদের নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় হয়নি, এটি আন্দোলনের ব্যর্থতা নয় কি?

মির্জা আব্বাস: সরকার যেখানে অস্ত্রের মাধ্যমে টিকে থাকতে চায়, সেখানে ব্যর্থতার প্রশ্ন একেবারেই আসে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা সফল। আমাদের যুদ্ধ সরকারে যাওয়ার জন্য নয়, দেশটাকে বাঁচানোর জন্য, দেশের মানুষকে গণতন্ত্রের স্বাদ দেওয়ার জন্য। কিন্তু সরকার তার লাঠিয়াল বাহিনী ও প্রাতিষ্ঠানিক বাহিনীগুলোকে অস্ত্র-লাঠি, বন্দুক-পিস্তল দিয়ে বিরোধী দল দমনে ব্যবহার করছে। 

খবরের কাগজ: নির্বাচনের দিন হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি থাকলেও পরে আপনারা কঠিন কর্মসূচি থেকে সরে এসেছেন। এর কারণ কী? 

মির্জা আব্বাস: হরতাল-অবরোধ রাজনৈতিক কর্মসূচি। এটা বিরোধী দলগুলোর একটা অস্ত্র। আমরা আমাদের প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করি। কিন্তু এই মারাত্মক অস্ত্র যথেচ্ছ ব্যবহার করা বিএনপি পছন্দ করে না। যখন যেখানে প্রয়োজন হবে, সেখানে ব্যবহার করবে। 

খবরের কাগজ: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে, স্থায়ী কমিটির অনেকে অসুস্থ- এমন পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের অভাব আছে কি না?

মির্জা আব্বাস: নেতা ও নেতৃত্ব এক জিনিস না। নেতা হয়তো চোখের দৃষ্টির বাইরে আছেন, কিন্তু তার নেতৃত্বে দল সঠিক পথেই আছে। আমি মনে করি, দলে নেতৃত্বের কোনো ব্যর্থতা নেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তার সঙ্গে আমাদের রেগুলার কথা হয়। দূর থেকে দল পরিচালনা করলেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ এখন তো ডিজিটাল যুগ। যখন ডিজিটাল সিস্টেম ছিল না, প্রায় ৪০ বছর আগে- তখন আয়াতুল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে নির্বাসিত থেকেও ইরানের বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

সম্প্রতি পাকিস্তানে ইমরান খান জেলে বসে নির্বাচন করেছেন, সেখানে তার দলের নেতারা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছেন। সুতরাং বিএনপিতে নেতৃত্বের কোনো সংকট নেই। বিএনপির নেতৃত্বের সংকট নিয়ে কথা বলছে সরকার। এর কারণ সরকার নিজেই সংকটে আছে। তো, আমাদের এত সংকট থেকে থাকলে সাহস করে সরকার একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন দিক না। দেখি কারা জয়লাভ করে।

খবরের কাগজ: পাঁচ বছর পর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করবেন, নাকি আন্দোলনে যাবেন? 

মির্জা আব্বাস: পাঁচ বছর তো অনেক দীর্ঘ সময়। পাঁচ বছর অপেক্ষা করার মতো অবস্থা আমাদের খুব একটা নেই। নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করা এক জিনিস, আর আন্দোলন করে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো আরেক জিনিস। আমরা মনে করি, সরকারের ব্যর্থতার সুযোগে যদি আমরা আন্দোলন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারি, তাহলে এ সরকার টিকে থাকতে পারবে না।

খবরের কাগজ: ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতারা আন্দোলনে সেভাবে কেন মাঠে থাকছেন না, কমিটি বারবার কেন ব্যর্থ হচ্ছে?
 
মির্জা আব্বাস: এ ব্যাপারে আমার কমেন্ট করা একটু ডিফিকাল্ট। কারণ ওই সময়ে আমিসহ সিনিয়র নেতারা কারাগারে ছিলাম। ২৮ অক্টোবরের পর সারা দেশের বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়। ফলে আন্দোলন কিছু সময়ের জন্য দিকনির্দেশনাহীন ছিল। সুতরাং আন্দোলনের সময় মহানগরের নেতারা যারা ছিলেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। এটাকে আমরা ব্যর্থতা বলব না। 

খবরের কাগজ: বিএনপির সামনে এখন কী চ্যালেঞ্জ আছে?
 
মির্জা আব্বাস: ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপির সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে না। বিএনপি দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে আগ্রহী, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়েই চিন্তিত বিএনপি। 

খবরের কাগজ: বিগত সময়ে দল থেকে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের ফেরানোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না?
 
মির্জা আব্বাস: বহিষ্কৃতদের ফেরানোর ব্যাপারে দল এখনো পর্যন্ত কোনো চিন্তাভাবনা করেনি। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের আগে জানানো হয়েছিল যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দলের কঠোর অবস্থানই বহাল রয়েছে। দল যদি কখনো মনে করে, তখন শিথিল করবে। 

খবরের কাগজ: বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি? 

মির্জা আব্বাস: আশা করি, বিএনপির কাউন্সিল যথাসময়ে হবে। 

খবরের কাগজ: নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই ইস্যুতে আপনাদের দল আরও সক্রিয় আন্দোলন করছে না কেন? 

মির্জা আব্বাস: আমরা প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টা জনগণের সামনে তুলে ধরছি। দলের পক্ষ থেকে নিয়মিত ব্রিফিং করা হচ্ছে। নেতারা তাদের বক্তৃতায় সেটা তুলে ধরছেন। এখন এ সরকারের কাছে আমরা যতই প্রতিবাদ করি না কেন, তাতে কোনো লাভ আছে কি? বর্তমানে ৩০ শতাংশ ট্যাক্সের স্লট বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আর অর্থমন্ত্রী বলছেন এই ট্যাক্স ধনী শ্রেণির জন্য। আরে ভাই, ধনী লোক ট্যাক্স দেয়, তাদের এখন গরিব বানাতে হবে? সবচেয়ে মজার বিষয়, ট্যাক্স না দিয়ে এই বৈধ টাকাই যদি ধনীরা অবৈধ দেখায়, তখন তাদের ট্যাক্স হবে ১৫ শতাংশ। 

খবরের কাগজ: কালোটাকা সাদা করার প্রচলন তো বিএনপিই প্রথম চালু করেছিল- এমন কথা তো শোনা যায়? 

মির্জা আব্বাস: হ্যাঁ, এটা আমাদের সময়ে হয়েছিল। তবে ওই সময়ের প্রেক্ষাপট আর আজকের পেক্ষাপট এক না। ওই সময়ে এত দুর্নীতি ছিল না। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন, একজন ভিশনারি নেতা ও মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, বহু লোকের কাছে টাকা আছে, তারা ভয়ে সিন্দুকে লুকিয়ে রেখেছেন। 

তাই তিনি মানি সার্কুলেশন আনার জন্যই চালু করেছিলেন। বৈধ টাকাও যদি কেউ জমিয়ে রাখে, তাহলে তা মানুষের কাছে যাবে না। আজকে দেশে মানি সার্কুলেশন তো নেই। একশ্রেণির মানুষ বিদেশে সবকিছু নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন। আওয়ামী লীগের যারা অবৈধভাবে টাকা কামিয়েছেন, তাদের বৈধ করার একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

খবরের কাগজ: দলের ভেতরে কোন্দল-গ্রুপিংয়ের কথা শোনা যায়, এটি কোনো চ্যালেঞ্জ কি না? 

মির্জা আব্বাস: দলের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা আছে, কিন্তু বিভাজন-কোন্দল নেই। এত বড় দলের ভেতরে একটা প্রতিযোগিতা থাকবে- এটা স্বাভাবিক। তবে প্রতিযোগিতা শত্রুতায় পরিণত হয়েছে, এমন নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।

খবরের কাগজ: সরকার পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারলে বিএনপির ভূমিকা কী হবে?

মির্জা আব্বাস: সরকার টিকে গেছে, টিকে যাচ্ছে- যদি এমনই হয়, তাহলে আমাদের দায়িত্ব হবে জনগণকে আরও সচেতন করা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ দেশের সার্বিক অবস্থা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা এবং তাদের সচেতন করে তোলা হবে। 

খবরের কাগজ: ভারতের কাছে বিএনপির প্রত্যাশা কী? 

মির্জা আব্বাস: ভারত একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। বিশ্বের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ। আর বাংলাদেশ আলাদা স্বাধীন-সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক দেশ। ভারতের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশকে তারা একটি স্বাধীন দেশের মর্যাদা দিয়ে পাশে থাকবে। 

খবরের কাগজ: খবরের কাগজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

মির্জা আব্বাস: খবরের কাগজকেও ধন্যবাদ।

আছাদুজ্জামান মিয়া জ্ঞাত আয়ের বাইরে কোনো সম্পদ নেই

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:১৯ এএম
জ্ঞাত আয়ের বাইরে কোনো সম্পদ নেই
পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন খবরের কাগজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার আল-আমিন। 

খবরের কাগজ: আপনি স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। ছেলে ও মেয়েরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষ ও সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অর্জনের যে অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ থাকা দোষের কিছু নয়। এটি বৈধ প্রক্রিয়া। 

বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন দোষের কিছু নয়। আমার জ্ঞাত আয়ের বাইরে কোনো সম্পদ নেই। আমার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত। আমার সব সম্পদ বৈধ। অবৈধ পন্থায় কোনো সম্পদ অর্জন করিনি। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শত্রু ও আগুন-সন্ত্রাসীরা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। আমার কোনো সম্পদ অবৈধ নয়। 

ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালনের সময় শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো রকম ভয়কে তোয়াক্কা করিনি। ওই সময়টি ঢাকায় অরাজকতা বিরাজ করছিল। চলছিল আগুন-সন্ত্রাস। ঢাকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে আমি শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। একটি মহল আমার ওপর ঈর্ষান্বিত হয়ে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। তারাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। 

খবরের কাগজ: সরকারি চাকরিতে থাকার সময় আপনি যেসব সম্পদ অর্জন করেছেন সেগুলো কি বৈধ? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: যেসব সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে, সেখানে তো বলা হয়নি কীভাবে, কোথা থেকে এবং কোন উপায়ে ওই সম্পদ অর্জন করা হয়েছে। শুধু ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই দেশি ও বিদেশি মহলের ষড়যন্ত্রে অভিযোগ তোলা হয়েছে। 

আমার ও আমার পরিবারের মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে এসব প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। একটি প্রবাদ আছে, শত্রুর-শত্রুরা একটি পর্যায়ে বা একটি বহুমাত্রিক স্বার্থের কারণে এসে আবার বন্ধু হয়। যারা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন, তারাই এসব মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। 

খবরের কাগজ: কেন আপনার বিরুদ্ধে এমন প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে সরকারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যোগাযোগ ভালো ছিল। গণতন্ত্রের শত্রুরা আমাকে বিতর্কিত করেছে। বিদেশি শত্রুদের একটি বার্তা দিতে চাই, আমার সঙ্গে সরকারের যাদের ভালো সম্পর্ক তারা সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা গভীর ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র।

খবরের কাগজ: কারা ষড়যন্ত্র করছেন? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: ফরিদপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাত থাকতে পারে। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট না করার জন্য ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। কারণ আমি শতভাগ স্বচ্ছ। 

খবরের কাগজ: অনলাইন মিডিয়ায় আপনার বিরুদ্ধে নানা কথা শোনা যাচ্ছে? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: সাইবার জগতে আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমি আইনের আশ্রয় নেব এবং কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে দাঁত ভাঙা জবাব দেব। আমি ইতোমধ্যেই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। 

খবরের কাগজ: আপনার বিরুদ্ধে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার গুজব রয়েছে?

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমার বিরুদ্ধে যখন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলো তার কয়েক দিন আগেই আমি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়েছি। এ সময় একটি পক্ষ অভিযোগ আনল যে, আমি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছি। এটি গুজব। আগুন-সন্ত্রাসীরা আমার বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: আপনার বিদেশ সফর ও বিদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাই? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমি সরকারি কাজে বিদেশ গিয়েছি। বিদেশে আমার কোনো বিনিয়োগ নেই।

খবরের কাগজ: পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: পুলিশের বিরুদ্ধে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে। হঠাৎ কেন এমন অভিযোগ দেওয়া শুরু হলো। আগে তো এমন অভিযোগ ঢালাওভাবে করা হয়নি। এর অবশ্যই একটি কারণ আছে। আমরা সেই কারণ কিছুটা জেনেছি। মুখোশধারীদের চেহারা দ্রুতই উন্মোচন করা হবে। 

খবরের কাগজ: ভবিষ্যতে রাজনীতি বা সংসদ নির্বাচন করবেন কি? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: ----- (এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি) 

আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে অবসরোত্তর ছুটি বাতিলের শর্তে ১৪ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাস মেয়াদে ডিএমপির কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে নবগঠিত জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান। আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশে যোগদানের পর সুনামগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে রেলওয়ে পুলিশ সুপার ছিলেন। বগুড়ায় প্রথম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিও, নোয়াখালীর পুলিশ প্রশিক্ষণ সেন্টার, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও হাইওয়ে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

ডিএমপিতে যোগদানের পর বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তিনি সরকারের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তিনি যে সময় ডিএমপিতে দায়িত্ব নেন ওই সময় বিরোধী দলের আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। 

ক্যাশলেস লেনদেন হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০১:০৮ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
ক্যাশলেস লেনদেন হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত

দেশে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো খুব কমসংখ্যক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এর আওতায় এসেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দিয়ে বলেছে, আগামী বছরের মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন ৩০ শতাংশে নিতে হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে ব্যাংকগুলো। দেশে ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাধা ও চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে ব্যাংকার গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্তের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার এম মনিরুল আলম

খবরের কাগজ: ক্যাশলেস সোসাইটি বলতে আমরা কী বুঝি?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: ক্যাশলেস সোসাইটি বলতে আমরা বুঝি এমন একটা ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম, যেখানে ক্যাশ বা নগদ অর্থ ব্যবহার করা ছাড়াই লেনদেন করা যায়। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এই ক্যাশলেস লেনদেনের আওতায় পড়ে ক্রেডিট, ডেবিট, প্রিপেইড কার্ড, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা অন্য কোনো ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) অথবা অনলাইনে পাওনা আদায় বা দেনা পরিশোধ করা।

খবরের কাগজ: একটা আদর্শ ক্যাশলেস সোসাইটি কেমন হয়ে থাকে। 
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে সত্যিকারের আধুনিক করতে গেলে তার একটা বড় পূর্বশর্ত লেনদেনকে যতটা সম্ভব ক্যাশলেস করা। একটা আদর্শ ক্যাশলেস সোসাইটি অনেকগুলো সুবিধা: প্রতিটা ট্রানজ্যাক্শনের রেকর্ড থাকে। তাই দুর্নীতির সুযোগ কমে যায়, সরকারের ট্যাক্স আদায় সহজ হয় এবং আদায় বাড়বে, কারেন্সি নোট তৈরি ও সংরক্ষণ করার খরচ কমে, টাকা সঙ্গে না থাকলে অপরাধ ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়, আর এ ছাড়া কাগুজে টাকার পরিবর্তে ক্যাশলেস লেনদেন কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আমাদের পরিবেশবান্ধব হতে সাহায্য করে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বেশ কিছু দেশ ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির কাজে অনেক অগ্রসর হয়েছে। এর মধ্যে সুইডেন ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের দেশকে ক্যাশলেস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, কানাডা এবং সেই সঙ্গে এশিয়ায় চীনও ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

খবরের কাগজ: আমাদের দেশে এর সম্ভাবনা ও বাস্তবতা কেমন?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: বাংলাদেশে এখনো লেনদেন প্রধানত ক্যাশ টাকার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। প্রকৃত অর্থে দেশের ৪০ শতাংশেরও কম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, যদিও ফিন্যান্সিয়াল ইন্ক্লুশন বা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি গণনা করার জন্য এর সঙ্গে মাইক্রো-ফিন্যান্স ইনস্টিটিউশন বা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহকদেরও গণ্য করা হয়। প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং দিয়ে এই ক্যাশলেস যাত্রার দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব না, এটাই বাস্তবতা। তাই ক্যাশলেস সোসাইটি হওয়ার আগে প্রথমে আমাদের নগদ টাকার লেনদেন (লেসক্যাশ) কমাতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বড়সড় অগ্রগতি।

আশার কথা হলো, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী, যার প্রমাণ আমাদের দেশে মোবাইল ফোন, মোবাইল ইন্টারনেট ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের দ্রুত প্রসার। এর ওপর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯-এর কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তি অ্যাডপশন বা আত্মস্থ ও ব্যবহার করার বিষয় আরও গতি লাভ করেছে। আর এর সঙ্গে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার আলো দেখায় দেশের সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ সৃষ্টির পরিকল্পনা।

খবরের কাগজ: ক্যাশলেস সোসাইটি গড়তে চ্যালেঞ্জসমূহ কী?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: আমাদের দেশের মতো অর্থনীতিতে ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির পথে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ  হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল ইন্ক্লুশনের ক্ষেত্রে আমাদের এখনো লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালে ঘোষিত পাঁচ বছরের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করার জন্য সব স্টেকহোল্ডাররাই একসঙ্গে কাজ করছে, আগামীতে আশা করছি, আমরা এ ব্যাপারে আরও সাফল্য দেখব।

খবরের কাগজ: ব্যাংকগুলোর অগ্রগতি কতটুকু?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিস চালু করার মাধ্যমে। কিছু কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যেই এই ব্যাপারে অনেকটা  এগিয়ে এসেছে, আর বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের ডিজিটাল পলিসি দিয়ে এর পথকে আরও সহজ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলা কিউআরের মতো সময়োপযোগী পদক্ষেপ আমাদের দেশে পেমেন্ট এক্সেপটেন্স নেটওয়ার্ককে বড় শহরের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে দেবে সারা দেশে, যা ক্যাশলেস পেমেন্টকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক।

খবরের কাগজ: পুরো জনগোষ্ঠী এর আওতায় আনা সম্ভব কি না?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: হ্যাঁ, তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে তা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে যেখানে ব্যাংকিং খাতেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিমাণ এখনো অনেক বাড়াতে হবে, তাই আমাদের ক্যাশলেস সোসাইটির যাত্রায় প্রথমে লেসক্যাশ সোসাইটিকে সত্যিতে পরিণত করতে হবে। আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাতে যে ডিজিটাল বিপ্লবের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন থেকেই একদিন তৈরি হবে ক্যাশলেস বাংলাদেশ।

রপ্তানি বাড়াতে ঋণ ও নীতি সহায়তা দিতে হবে

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০১:০২ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০১:০২ পিএম
রপ্তানি বাড়াতে ঋণ ও নীতি সহায়তা দিতে হবে
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ

গুণগত মানের কারণে বাংলাদেশের পশুর চামড়ার চাহিদা বিশ্বব্যাপী। তবে ডলারসংকটের কারণে বছর দুয়েক ধরে এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। চামড়া খাতে গতি আনতে উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ এবং সরকারি নীতি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ। চামড়া খাতের নানা বিষয় নিয়ে খবরের কাগজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী

খবরের কাগজ: একদিকে দাম না পাওয়ায় প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে চামড়াপণ্য রপ্তানির জন্য বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরের দূষণের কারণে এগোতে পারছে না বাংলাদেশের চামড়াশিল্প। এসব বিষয়ে আপনার মতামত কী?

শাহিন আহমেদ: গত বছরের সংগৃহীত অনেক ব্যবসায়ীর কাঁচা চামড়া এখনো ট্যানারিতেই পড়ে আছে। করোনার সময়ে চামড়া ব্যবসায়ে মন্দা নামে। এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ডলারসংকট শুরু হয়েছে। চামড়া শিল্পনগরীর বিষয়ে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। 

খবরের কাগজ: এবার কোরবানির পশুর চামড়ার মান কেমন ছিল? 

শাহিন আহমেদ: সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় একসঙ্গে অনেক চামড়া কেনার চাপ থাকে। এবার পশুর চামড়ায় গুটি দাগের কারণে আমরা অনেক চামড়া কিনিনি। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য না বুঝে ইন্ডিয়ান ওষুধ খাওয়ানোর ফলে গুটি হচ্ছে পশুর শরীরে। তার কারণে পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে। আমার ধারণা, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চামড়ায় গুটি বা পক্সে নষ্ট হয়েছে।

খবরের কাগজ: এবার চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক পরিস্থিতি কেমন ছিল? 

শাহিন আহমেদ: এবার চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক সংকট অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ছিল। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থাও ভালো না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া না গেলে দেশের চামড়া খাত পাটশিল্পের মতোই শেষ হয়ে যাবে।

খবরের কাগজ: পরিবেশবান্ধবভাবে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন না করলে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্য কিনতে আগ্রহী হয় না। আপনারা দেশের মধ্যে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি কতটা নিশ্চিত করছেন? 

শাহিন আহমেদ: চামড়া ব্যবসায়ীরা পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় আগ্রহী। এখন ব্যবসা করে টিকে থাকতে হলে কারখানায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ব্যবসা করতে হচ্ছে। এর জন্য কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার থাকতে হবে। ডাম্পিং ইয়ার্ডে কঠিন বর্জ্য জমা রাখতে হবে। আমাদের এখানে সরকার সিইটিপি নির্মাণ করে দিয়েছে। ডাম্পিং ইয়ার্ডও সরকার নির্মাণ করেছে। এসব সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না বা কাজ করছে কি না, তা দেখা সরকারের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে চামড়া খাতের ব্যবসায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

খবরের কাগজ: চামড়া খাত এ দেশের অর্থনীতিতে কতটা ভূমিকা রাখছে? 

শাহিন আহমেদ: চামড়া খাত সফলতার সঙ্গে আবারও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলে এ দেশে নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলবে। অনেক মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মূক্তি পাবে। চামড়াশিল্পের প্রধান কাঁচামাল পশুর চমড়া। দেশে সাধারণ পরিবারে পশু পালন করা হয়। এর জন্য বড় কোনো আয়োজন নেই। তাই চামড়া খাতের কাঁচামালের যথেষ্ট সরবরাহ আছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করলেই আমরা ভালোভাবে টিকে থাকতে পারব।

খবরের কাগজ: চামড়া খাতের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি কেমন? 

শাহিন আহমেদ: আমাদের মূল প্রতিযোগী দেশ ভারত ও চীন। এই দুই দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা যেসব সুবিধা পান, আমরা তেমনটা পাই না। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানে থেকেও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই দুই দেশের সঙ্গে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা করে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে।