ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

রপ্তানি বাড়াতে ঋণ ও নীতি সহায়তা দিতে হবে

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০১:০২ পিএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ০১:০২ পিএম
রপ্তানি বাড়াতে ঋণ ও নীতি সহায়তা দিতে হবে
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ

গুণগত মানের কারণে বাংলাদেশের পশুর চামড়ার চাহিদা বিশ্বব্যাপী। তবে ডলারসংকটের কারণে বছর দুয়েক ধরে এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। চামড়া খাতে গতি আনতে উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ এবং সরকারি নীতি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ। চামড়া খাতের নানা বিষয় নিয়ে খবরের কাগজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনী

খবরের কাগজ: একদিকে দাম না পাওয়ায় প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে চামড়াপণ্য রপ্তানির জন্য বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে হেমায়েতপুরের চামড়া শিল্পনগরের দূষণের কারণে এগোতে পারছে না বাংলাদেশের চামড়াশিল্প। এসব বিষয়ে আপনার মতামত কী?

শাহিন আহমেদ: গত বছরের সংগৃহীত অনেক ব্যবসায়ীর কাঁচা চামড়া এখনো ট্যানারিতেই পড়ে আছে। করোনার সময়ে চামড়া ব্যবসায়ে মন্দা নামে। এই মন্দা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ডলারসংকট শুরু হয়েছে। চামড়া শিল্পনগরীর বিষয়ে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। 

খবরের কাগজ: এবার কোরবানির পশুর চামড়ার মান কেমন ছিল? 

শাহিন আহমেদ: সংরক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় একসঙ্গে অনেক চামড়া কেনার চাপ থাকে। এবার পশুর চামড়ায় গুটি দাগের কারণে আমরা অনেক চামড়া কিনিনি। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য না বুঝে ইন্ডিয়ান ওষুধ খাওয়ানোর ফলে গুটি হচ্ছে পশুর শরীরে। তার কারণে পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে। আমার ধারণা, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চামড়ায় গুটি বা পক্সে নষ্ট হয়েছে।

খবরের কাগজ: এবার চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক পরিস্থিতি কেমন ছিল? 

শাহিন আহমেদ: এবার চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক সংকট অন্যান্য বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি ছিল। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থাও ভালো না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া না গেলে দেশের চামড়া খাত পাটশিল্পের মতোই শেষ হয়ে যাবে।

খবরের কাগজ: পরিবেশবান্ধবভাবে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন না করলে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্য কিনতে আগ্রহী হয় না। আপনারা দেশের মধ্যে পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি কতটা নিশ্চিত করছেন? 

শাহিন আহমেদ: চামড়া ব্যবসায়ীরা পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় আগ্রহী। এখন ব্যবসা করে টিকে থাকতে হলে কারখানায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ব্যবসা করতে হচ্ছে। এর জন্য কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার থাকতে হবে। ডাম্পিং ইয়ার্ডে কঠিন বর্জ্য জমা রাখতে হবে। আমাদের এখানে সরকার সিইটিপি নির্মাণ করে দিয়েছে। ডাম্পিং ইয়ার্ডও সরকার নির্মাণ করেছে। এসব সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না বা কাজ করছে কি না, তা দেখা সরকারের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারলে চামড়া খাতের ব্যবসায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

খবরের কাগজ: চামড়া খাত এ দেশের অর্থনীতিতে কতটা ভূমিকা রাখছে? 

শাহিন আহমেদ: চামড়া খাত সফলতার সঙ্গে আবারও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারলে এ দেশে নতুন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলবে। অনেক মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মূক্তি পাবে। চামড়াশিল্পের প্রধান কাঁচামাল পশুর চমড়া। দেশে সাধারণ পরিবারে পশু পালন করা হয়। এর জন্য বড় কোনো আয়োজন নেই। তাই চামড়া খাতের কাঁচামালের যথেষ্ট সরবরাহ আছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করলেই আমরা ভালোভাবে টিকে থাকতে পারব।

খবরের কাগজ: চামড়া খাতের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি কেমন? 

শাহিন আহমেদ: আমাদের মূল প্রতিযোগী দেশ ভারত ও চীন। এই দুই দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা যেসব সুবিধা পান, আমরা তেমনটা পাই না। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানে থেকেও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এই দুই দেশের সঙ্গে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা করে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে।

আছাদুজ্জামান মিয়া জ্ঞাত আয়ের বাইরে কোনো সম্পদ নেই

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০৯:১৯ এএম
জ্ঞাত আয়ের বাইরে কোনো সম্পদ নেই
পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন খবরের কাগজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার আল-আমিন। 

খবরের কাগজ: আপনি স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। ছেলে ও মেয়েরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দক্ষ ও সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অর্জনের যে অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত। জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ থাকা দোষের কিছু নয়। এটি বৈধ প্রক্রিয়া। 

বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন দোষের কিছু নয়। আমার জ্ঞাত আয়ের বাইরে কোনো সম্পদ নেই। আমার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অতিরঞ্জিত। আমার সব সম্পদ বৈধ। অবৈধ পন্থায় কোনো সম্পদ অর্জন করিনি। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শত্রু ও আগুন-সন্ত্রাসীরা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। আমার কোনো সম্পদ অবৈধ নয়। 

ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব পালনের সময় শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো রকম ভয়কে তোয়াক্কা করিনি। ওই সময়টি ঢাকায় অরাজকতা বিরাজ করছিল। চলছিল আগুন-সন্ত্রাস। ঢাকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে আমি শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। একটি মহল আমার ওপর ঈর্ষান্বিত হয়ে তথ্য সন্ত্রাস চালিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না। তারাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। 

খবরের কাগজ: সরকারি চাকরিতে থাকার সময় আপনি যেসব সম্পদ অর্জন করেছেন সেগুলো কি বৈধ? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: যেসব সম্পদ অর্জনের কথা বলা হয়েছে, সেখানে তো বলা হয়নি কীভাবে, কোথা থেকে এবং কোন উপায়ে ওই সম্পদ অর্জন করা হয়েছে। শুধু ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতেই দেশি ও বিদেশি মহলের ষড়যন্ত্রে অভিযোগ তোলা হয়েছে। 

আমার ও আমার পরিবারের মানসম্মান ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে এসব প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। একটি প্রবাদ আছে, শত্রুর-শত্রুরা একটি পর্যায়ে বা একটি বহুমাত্রিক স্বার্থের কারণে এসে আবার বন্ধু হয়। যারা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন, তারাই এসব মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। 

খবরের কাগজ: কেন আপনার বিরুদ্ধে এমন প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার কারণে সরকারের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যোগাযোগ ভালো ছিল। গণতন্ত্রের শত্রুরা আমাকে বিতর্কিত করেছে। বিদেশি শত্রুদের একটি বার্তা দিতে চাই, আমার সঙ্গে সরকারের যাদের ভালো সম্পর্ক তারা সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা গভীর ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র।

খবরের কাগজ: কারা ষড়যন্ত্র করছেন? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: ফরিদপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর হাত থাকতে পারে। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট না করার জন্য ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। কারণ আমি শতভাগ স্বচ্ছ। 

খবরের কাগজ: অনলাইন মিডিয়ায় আপনার বিরুদ্ধে নানা কথা শোনা যাচ্ছে? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: সাইবার জগতে আমার বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমি আইনের আশ্রয় নেব এবং কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে দাঁত ভাঙা জবাব দেব। আমি ইতোমধ্যেই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছি। 

খবরের কাগজ: আপনার বিরুদ্ধে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার গুজব রয়েছে?

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমার বিরুদ্ধে যখন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলো তার কয়েক দিন আগেই আমি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়েছি। এ সময় একটি পক্ষ অভিযোগ আনল যে, আমি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছি। এটি গুজব। আগুন-সন্ত্রাসীরা আমার বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: আপনার বিদেশ সফর ও বিদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে জানতে চাই? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: আমি সরকারি কাজে বিদেশ গিয়েছি। বিদেশে আমার কোনো বিনিয়োগ নেই।

খবরের কাগজ: পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: পুলিশের বিরুদ্ধে একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে। হঠাৎ কেন এমন অভিযোগ দেওয়া শুরু হলো। আগে তো এমন অভিযোগ ঢালাওভাবে করা হয়নি। এর অবশ্যই একটি কারণ আছে। আমরা সেই কারণ কিছুটা জেনেছি। মুখোশধারীদের চেহারা দ্রুতই উন্মোচন করা হবে। 

খবরের কাগজ: ভবিষ্যতে রাজনীতি বা সংসদ নির্বাচন করবেন কি? 

আছাদুজ্জামান মিয়া: ----- (এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি) 

আছাদুজ্জামান মিয়া ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি ডিএমপি কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ১৩ আগস্ট তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে অবসরোত্তর ছুটি বাতিলের শর্তে ১৪ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাস মেয়াদে ডিএমপির কমিশনার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনে নবগঠিত জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান। আছাদুজ্জামান মিয়া পুলিশে যোগদানের পর সুনামগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল জেলার পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে রেলওয়ে পুলিশ সুপার ছিলেন। বগুড়ায় প্রথম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিও, নোয়াখালীর পুলিশ প্রশিক্ষণ সেন্টার, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও হাইওয়ে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

ডিএমপিতে যোগদানের পর বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তিনি সরকারের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তিনি যে সময় ডিএমপিতে দায়িত্ব নেন ওই সময় বিরোধী দলের আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। 

ক্যাশলেস লেনদেন হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০১:০৮ পিএম
আপডেট: ২৭ জুন ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
ক্যাশলেস লেনদেন হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত

দেশে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো খুব কমসংখ্যক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এর আওতায় এসেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাগিদ দিয়ে বলেছে, আগামী বছরের মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন ৩০ শতাংশে নিতে হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে ব্যাংকগুলো। দেশে ক্যাশলেস সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাধা ও চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে খবরের কাগজ কথা বলেছে ব্যাংকার গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্তের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার এম মনিরুল আলম

খবরের কাগজ: ক্যাশলেস সোসাইটি বলতে আমরা কী বুঝি?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: ক্যাশলেস সোসাইটি বলতে আমরা বুঝি এমন একটা ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম, যেখানে ক্যাশ বা নগদ অর্থ ব্যবহার করা ছাড়াই লেনদেন করা যায়। সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এই ক্যাশলেস লেনদেনের আওতায় পড়ে ক্রেডিট, ডেবিট, প্রিপেইড কার্ড, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা অন্য কোনো ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) অথবা অনলাইনে পাওনা আদায় বা দেনা পরিশোধ করা।

খবরের কাগজ: একটা আদর্শ ক্যাশলেস সোসাইটি কেমন হয়ে থাকে। 
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে সত্যিকারের আধুনিক করতে গেলে তার একটা বড় পূর্বশর্ত লেনদেনকে যতটা সম্ভব ক্যাশলেস করা। একটা আদর্শ ক্যাশলেস সোসাইটি অনেকগুলো সুবিধা: প্রতিটা ট্রানজ্যাক্শনের রেকর্ড থাকে। তাই দুর্নীতির সুযোগ কমে যায়, সরকারের ট্যাক্স আদায় সহজ হয় এবং আদায় বাড়বে, কারেন্সি নোট তৈরি ও সংরক্ষণ করার খরচ কমে, টাকা সঙ্গে না থাকলে অপরাধ ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়, আর এ ছাড়া কাগুজে টাকার পরিবর্তে ক্যাশলেস লেনদেন কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আমাদের পরিবেশবান্ধব হতে সাহায্য করে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বেশ কিছু দেশ ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির কাজে অনেক অগ্রসর হয়েছে। এর মধ্যে সুইডেন ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের দেশকে ক্যাশলেস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, কানাডা এবং সেই সঙ্গে এশিয়ায় চীনও ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

খবরের কাগজ: আমাদের দেশে এর সম্ভাবনা ও বাস্তবতা কেমন?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: বাংলাদেশে এখনো লেনদেন প্রধানত ক্যাশ টাকার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। প্রকৃত অর্থে দেশের ৪০ শতাংশেরও কম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, যদিও ফিন্যান্সিয়াল ইন্ক্লুশন বা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি গণনা করার জন্য এর সঙ্গে মাইক্রো-ফিন্যান্স ইনস্টিটিউশন বা ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহকদেরও গণ্য করা হয়। প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং দিয়ে এই ক্যাশলেস যাত্রার দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব না, এটাই বাস্তবতা। তাই ক্যাশলেস সোসাইটি হওয়ার আগে প্রথমে আমাদের নগদ টাকার লেনদেন (লেসক্যাশ) কমাতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বড়সড় অগ্রগতি।

আশার কথা হলো, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী, যার প্রমাণ আমাদের দেশে মোবাইল ফোন, মোবাইল ইন্টারনেট ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের দ্রুত প্রসার। এর ওপর পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯-এর কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তি অ্যাডপশন বা আত্মস্থ ও ব্যবহার করার বিষয় আরও গতি লাভ করেছে। আর এর সঙ্গে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার আলো দেখায় দেশের সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ সৃষ্টির পরিকল্পনা।

খবরের কাগজ: ক্যাশলেস সোসাইটি গড়তে চ্যালেঞ্জসমূহ কী?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: আমাদের দেশের মতো অর্থনীতিতে ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির পথে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ  হচ্ছে ফিন্যান্সিয়াল ইন্ক্লুশনের ক্ষেত্রে আমাদের এখনো লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালে ঘোষিত পাঁচ বছরের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করার জন্য সব স্টেকহোল্ডাররাই একসঙ্গে কাজ করছে, আগামীতে আশা করছি, আমরা এ ব্যাপারে আরও সাফল্য দেখব।

খবরের কাগজ: ব্যাংকগুলোর অগ্রগতি কতটুকু?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং সার্ভিস চালু করার মাধ্যমে। কিছু কিছু ব্যাংক ইতোমধ্যেই এই ব্যাপারে অনেকটা  এগিয়ে এসেছে, আর বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের ডিজিটাল পলিসি দিয়ে এর পথকে আরও সহজ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলা কিউআরের মতো সময়োপযোগী পদক্ষেপ আমাদের দেশে পেমেন্ট এক্সেপটেন্স নেটওয়ার্ককে বড় শহরের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে দেবে সারা দেশে, যা ক্যাশলেস পেমেন্টকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক।

খবরের কাগজ: পুরো জনগোষ্ঠী এর আওতায় আনা সম্ভব কি না?
গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত: হ্যাঁ, তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে তা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে যেখানে ব্যাংকিং খাতেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিমাণ এখনো অনেক বাড়াতে হবে, তাই আমাদের ক্যাশলেস সোসাইটির যাত্রায় প্রথমে লেসক্যাশ সোসাইটিকে সত্যিতে পরিণত করতে হবে। আমাদের দেশে ব্যাংকিং খাতে যে ডিজিটাল বিপ্লবের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন থেকেই একদিন তৈরি হবে ক্যাশলেস বাংলাদেশ।

সাক্ষাৎকারে আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দরপতন ঠেকিয়েছে

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪, ১১:১২ এএম
আপডেট: ১০ জুন ২০২৪, ১১:১৬ এএম
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দরপতন ঠেকিয়েছে

সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকই ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতন ঠেকিয়েছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির ফলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। রিজার্ভ নিয়ে সব শঙ্কা কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ। খবরের কাগজের এম মনিরুল আলম তার একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতন ঠেকিয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করে আসছিলেন যে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১৫০-১৬০ টাকায় উঠবে। আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকই ডলারের বিপরীতে ব্যাপক দরপতন থেকে টাকার শেষরক্ষা করেছে। এ কৃতিত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে দিতেই হবে।

রবিবার (৯ জুন) খবরের কাগজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব কাটাতে সচেষ্ট ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত। নানা নীতি-কৌশল দিয়ে রিজার্ভটা ধরে রাখা, ডলারের দর প্রত্যাশিত সীমায় রাখা ও বিলাসদ্রব্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক তার দায়িত্ব পালন করেছে। এ সময়ে দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, শিক্ষকসহ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও প্রয়োগ করেছে। আমরা দেখেছি, ব্যাংকগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ডলার পরিস্থিতির অস্থিতিশীলতা রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তদারকির ভূমিকায় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক ডলার কেনাবেচায় দর বেঁধে দিয়েছে। সবশেষ ক্রলিং পেগ পদ্ধতি সূচনা করায় রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। এর মাধ্যমে ডলারের সরবরাহ বাড়বে এবং রিজার্ভ নিয়ে নেতিবাচক সব আশঙ্কা কেটে যাবে বলেও মন্তব্য করেন এই সফল ব্যবসায়ী।

ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়িয়ে এখন আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হয় না বলেও মন্তব্য করে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, কিছুদিন আগে আমি আফ্রিকার দেশ ঘানায় গিয়েছিলাম। সেখানে ঋণের গড় সুদহার ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ২৫ শতাংশের ঘরে। 

পরিবহন ভাড়া-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মাতলুব আহমাদ বলেন, আমাদের দায়ী করা হয় অতিরিক্ত পরিবহন ভাড়ার জন্য। কিন্তু একটি বাস ভালো সার্ভিস দিতে গেলে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। সস্তায় এখন আর ভালো যাত্রী পরিবহন সেবা পাওয়া যায় না। সম্প্রতি লন্ডনে আমি ৪ কিলোমিটার পথ ট্যাক্সিতে গিয়ে ভাড়া দিয়েছি ৩০ পাউন্ড। ওখানে বাস ও ট্রেন ভাড়াও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতির এ চাপ সহনীয় করতে আমাদের এখানে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য দরকার আয় বাড়ানো। আমরা এখন স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল বা মধ্যম আয়ের দেশে যাব। আমাদের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য বড় হয়েছে। অর্থনীতিকে সঠিক ধারায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রচেষ্টা সফল করতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

আবদুল মাতলুব আহমাদ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ১৯৮২ সালে ছোট একটি গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এখন চিনি, সিমেন্ট, কাগজশিল্পসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। তিনি ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি বাজেট ব্যবসাবান্ধব হতে হবে

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
বাজেট ব্যবসাবান্ধব হতে হবে

দেশে ডলারসংকট চলছে। আমদানি-রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির টানাপোড়েনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে খরচ বেড়েছে। সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে রেকর্ড করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জনমুখী ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নের দাবি করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজের ডেপুটি বিজনেস এডিটর ফারজানা লাবনীর কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন। 
   
খবরের কাগজ: আপনার মতে আগামী অর্থবছরের বাজেটের মূল সূত্র কেমন হওয়া উচিত?
মাহবুবুল আলম: করোনা-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মধ্যেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরি। অর্থনীতি সঠিক গতিতে চললেই সরকার তার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ করতে পারবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একটি জনমুখী ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।  

খবরের কাগজ: আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দাবি করেছেন। আপনি শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে দাবিগুলো নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব দাবির কতটা আগামী বাজেটে আসবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন?  
মাহবুবুল আলম: আগামী বাজেটে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তা নিয়ে সারা দেশের ব্যবসায়ীরা এফবিসিসিআইয়ের কাছে মতামত দিয়েছেন। এসব মতামত যাচাই-বাছাই করে তালিকা বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আমরা আশাবাদী আমাদের সুপারিশ প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হবে। তবে কোনো কারণে প্রতিফলিত না হলে চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য দাবি করছি।

খবরের কাগজ: এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবে কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?  
মাহবুবুল আলম: বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিং, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আনা, রপ্তানি বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের নীতি প্রণয়নে জোর দিয়েছি। একই সঙ্গে ব্যবসা বহুমুখীকরণ, নতুন বাজার সংযোজন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সুদের হার কমানো এবং ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কার্যক্রম জোরদার, কর-জিডিপি রেশিও বাড়ানো, রাজস্ব নীতির সংস্কার এবং মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয়, সর্বস্তরে সুশাসন এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা সহজ হবে। 

খবরের কাগজ: জাতীয় বাজেট একটা জাতির এক বছরের অর্থনৈতিক রুপরেখা। যা পরের বছরগুলোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ মসৃণ করে। এ বিষেয় আপনার মতামত কী? 
মাহবুবুল আলম: এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, এসডিজি অর্জন, নির্বাচনি ইশতেহার, স্মার্ট বাংলাদেশ ও সর্বোপরি ভিশন ২০৪১-কে সামনে রেখে আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি সমন্বয় করা জরুরি। বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমুন্নত রাখতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রাখতে হবে। 

খবরের কাগজ: ব্যবসায়ে খরচ বেড়েছে। খরচ কমানো হলে অনেকে নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ইতিবাচক ধারা আনতে হলে আপনার পরামর্শ কী?   
মাহবুবুল আলম: বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ কমিয়ে আনতে হবে। বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগ সহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্থায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রে হয়রানি ও জটিলতা দূর করে ব্যবসাবান্ধব কর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আগামী বাজেটে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার সামনের দিকে আরও বড় হবে। তবে সেই অনুপাতে আমাদের সক্ষমতা হয়নি। রাজস্বসংক্রান্ত আইনকানুন আধুনিকায়ন করা এবং দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে সরকারি এবং বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করার বিকল্প নেই। তাই আমরা মনে করি, শুধু  এনবিআর নয় এবং দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনের সক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে; যাতে সরকারকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে। এ লক্ষ্যে দেশের সব বাণিজ্য সংগঠনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে আগামী বাজেটে বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ করছি।

খবরের কাগজ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আপনার সুপারিশ কী? 
মাহবুবুল আলম: কর্মসংস্থানের স্বার্থে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং সিএমএসএমইকে শুল্ক করের যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা। বিশেষে অব্যাহতি বা বন্ড সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের প্রয়াস অব্যাহত রাখা। ভোগ্যপণ্যসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা। করনীতি, কর পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন, অটোমেশন ও ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে করজাল সম্প্রসারণ করা। কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করা। আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও যথাযথ করনীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা। সমন্বিত শুল্ককর এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার সুপারিশ করছি। 
 
খবরের কাগজ: আগামী অর্থবছরের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আরও কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত?   
মাহবুবুল আলম: বিনিয়োগ বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার লক্ষ্যে সুদের হার স্থিতিশীল রাখতে হবে। বিনিয়োগের স্বার্থেই সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। বৈদেশিক অর্থায়নে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল প্রকল্প গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তার বিকল্প সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিকল্প সহায়তা হিসেবে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও পরিবহন খাতে প্রণোদনা বা বিশেষ সুবিধা বহাল রাখতে হবে। কোনো ধরনের চাপে তা কমানো বা বাতিল করা যাবে না। 

খবরের কাগজ: অর্থ পাচার রোধে আপনার পরামর্শ কী? 
মাহবুবুল আলম: অর্থ পাচার রোধে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব পদক্ষেপ কার্যকরে সবচেয় জরুরি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন।  

খবরের কাগজ: রিজার্ভ বাড়াতে আপনার পরামর্শ কী? 
মাহবুবুল আলম: প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কযুক্ত। বিদেশে দক্ষ জনসম্পদ পাঠাতে পারলে প্রবাসী আয় বাড়বে। দক্ষ জনবল পাঠাতে পারলে মূল্য সংযোজন বেশি হয়। আগামী বাজেটে সম্ভাবনাময় এবং নতুন জনশক্তি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। 

খবরের কাগজ: রাজস্ব আদায় বাড়াতে এফবিসিসিআই থেকে কী পরামর্শ দেওয়া হয়েছে? 
মাহবুবুল আলম: রাজস্ব বাড়াতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, সহায়ক নীতি, কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণ এবং করের আওতা বাড়াতে হবে। করহার কমিয়ে আয়কর এবং মূসকের আওতা সম্প্রসারণ করে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সক্ষম করাদাতাদের আয়করের আওতায় আনতে হবে। আমদানি করা কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প-উপকরণের ওপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর এবং ভ্যাট আইনের আওতায় আগাম কর প্রত্যাহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে আগাম কর ভ্যাটও না আবার আয়করও না।  

খবরের কাগজ: শোনা যাচ্ছে বাজেটে এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এটা কতটা যৌক্তিক বলে মনে করেন?  
মাহবুবুল আলম: শুল্ক, মূসক ও আয়কর কর্মকর্তাদের কর ফাঁকি বের করতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর ফলে আইনের অপপ্রয়োগ হয়। অনেক সৎ ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা কমানোর জন্য পুরস্কার প্রথা বাতিল করে বিকল্প প্রণোদনার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করছি। রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনে কর্মকর্তাদের বিকল্প উপায়ে যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই।

খবরের কাগজ: অনেক অর্থনীতির বিশ্লেষক মনে করেন ১৬-১৭ কোটি মানুষের এই দেশে আয়কর আদায়ে আরও গুরুত্ব বাড়ানো উচিত। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী? 
মাহবুবুল আলম: বর্তমান মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের জন্য ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করছি। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ইটিআইএনধারী আছে। অথচ রিটার্ন দাখিল করে গড়ে ৩৫ লাখ। এভাবে রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। সবাইকে রিটার্ন দাখিলের আওতায় আনতে হবে। শিল্প পরিচালনার ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের হার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। বর্তমান আইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যসামগ্রী যেমন- চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, সকল প্রকার ফল ইত্যাদির সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে ২ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান রয়েছে; যার কারণে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। সব কৃষিজাত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব করছি। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পসহ সব রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ এবং তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখা। পাশাপাশি নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ হতে কমিয়ে ৫ শতাংশ  নির্ধারণের সুপারিশ করছি। 

খবরের কাগজ: মূসক রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণও বাড়ানো হয়। যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপে। সাধারণ মানুষের ওপর মুসকের চাপ কমিয়ে আওতা বাড়াতে আপনার প্রস্তাব  কী? 
মাহবুবুল আলম: আমদানি করা উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ ও ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছি। এতে শিল্পের উৎপাদন খরচ কমবে। উৎসে কর্তনের হার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। কারণ আদর্শ ভ্যাট পদ্ধতির সঙ্গে এই পদ্ধতি বৈষম্যমূলক। অধিক ভ্যাট আদায়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সব সিটি করপোরেশন এলাকায় সব শপিংমলে যন্ত্র সরবরাহ করে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করার প্রস্তাব করছি। ইএফডি মেশিনকে অধিক কার্যকর করার লক্ষ্যে অনলাইন ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনার প্রস্তাব করছি। বিশেষ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জুয়েলারি খাত, রেস্তোরাঁ এবং বিভিন্ন শপিংমলে অতি দ্রুত ইএফডি মেশিন সরবরাহ করে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করার  প্রস্তাব করছি। 

খবরের কাগজ: ডলারসংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ে গতি কমেছে। শুল্ক খাতে নীতি-সহায়তা দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে গতি আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার সুপারিশ কী? 
মাহবুবুল আলম: কোনো পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি ব্যবহৃত হয়- এমন তৈরি পণ্যের সর্বোচ্চ স্তর, মূসক নিবন্ধিত দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং মধ্যবর্তী কাঁচামালের ক্ষেত্রে শুল্ক, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না- এমন কাঁচামাল ক্ষেত্রে শুল্ক এবং তালিকাভুক্ত পণ্যের ওপর পরিমাণভিত্তিক মিশ্র শুল্ক কমিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। সম্পূরক শুল্ক কেবল বিলাসদ্রব্য, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তালিকাভুক্ত পণ্য এবং অনভিপ্রেত দ্রব্য ব্যবহার সীমিত করার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করার প্রস্তাব করছি। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে আমদানি সীমাবদ্ধ করার জন্য তালিকাভুক্ত পণ্য বা সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করছি। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বাজার বহুমুখীকরণের উদ্দেশ্যে ছোট, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে কাঁচামালের উপকরণ প্রাপ্তি সহজীকরণ করার উদ্দেশ্যে আংশিক বন্ড চালু করা এবং সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস চালু করার প্রস্তাব করছি।

সাক্ষাৎকারে মো. তাজুল ইসলাম উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ১১:০১ এএম
আপডেট: ২৬ মে ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
উপজেলা নির্বাচনে ভোটের হার গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম

টানা দ্বিতীয়বার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. তাজুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, এখন আইডি নম্বর ব্যতীত কোনো ‘কনস্ট্রাকশন’ কাজ হবে না। উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির যে হার, তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। গত বুধবার মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে এ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন

খবরের কাগজ: একই মন্ত্রণালয়ে পুনরায় দায়িত্ব পাওয়া এবং নিজের কাজকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
তাজুল ইসলাম: দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই গত মেয়াদে কাজ করতে গিয়ে যেসব জ্ঞান অর্জন করার সুযোগ হয়েছে, সেগুলোর আলোকে আগামী দিনের পথ চলাটা শক্তিশালী হবে বলে আমি মনে করি। 

খবরের কাগজ: অতীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকরা এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। বিশেষ কোনো কারণ আছে কী? 
তাজুল ইসলাম: সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকরাই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসেন। সম্ভবত এটা একটা কারণ যে, এই মন্ত্রণালয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বলব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন। আমি এর আগে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। 

খবরের কাগজ: আপনার মন্ত্রণালয়ের কাজ সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আপনি কী মনে করেন সাধারণ মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন?
তাজুল ইসলাম: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র এবং সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব পালন করেছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি গ্রাম-গঞ্জের উন্নয়ন এবং মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমি আমার মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তদারকি করে আসছি। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণের কাজগুলো আরও মানসম্পন্ন হয়েছে।

খবরের কাগজ: দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন কী? 
তাজুল ইসলাম: কিছু নতুন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। বটম লেভেলের প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা নিয়ে কাজ করছি। 

খবরের কাগজ: দেশের অনেক জেলা পরিষদ অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কী?
তাজুল ইসলাম: ইতোমধ্যে আমরা জেলা পরিষদ আইন সংশোধন করেছি। জবাবদিহির জন্য এক্সটার্নাল অডিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আরও কিছু নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জেলা পরিষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। 

খবরের কাগজ: ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম একটি অঙ্গীকার। এই কাজটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এই অঙ্গীকার পূরণের জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তাজুল ইসলাম: এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য গঠিত কমিটির সভাপতি আমি। তবে এটা শুধু আমার মন্ত্রণালয়ের কাজই নয়। তাই কাজগুলো বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। আমরা একাধিক সভা করেছি। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

খবরের কাগজ: এই কর্মসূচির অগ্রগতি কেমন হয়েছে?
তাজুল ইসলাম: উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়নের কানেকটিভিটি শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কানেকটিভিটিও সন্তোষজনক। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করেছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও কাজ করে যাচ্ছে। 

খবরের কাগজ: আপনার মন্ত্রণালয়ের নতুন কোনো প্রকল্প আসছে কী?
তাজুল ইসলাম: স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আমরা নতুন প্রকল্প নিই। একটা প্রকল্প শেষ হলে আরেকটা প্রকল্প নেওয়া হয়।

খবরের কাগজ: উত্তরাঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নলকূপ। এ সম্পর্কে আপনি জানেন কী? কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তাজুল ইসলাম: অবশ্যই এ সম্পর্কে আমি অবহিত। আমরা ‘ডাউনস্ট্রিমের কান্ট্রি’। এ কারণে সব সময় পানির অভাব ছিল। সারা বিশ্বে ‘আপস্ট্রিম’ কান্ট্রিগুলো তাদের চাহিদার কারণে পানি প্রত্যাহার করছে। বৃষ্টির আনুপাতিক হারও ইদানীং কমে যাচ্ছে। সে জন্য পানির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা বিকল্প চিন্তা করছি। 

খবরের কাগজ: প্রথমবার অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে গুণগত মান নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। এবার কী প্রাধান্য দিচ্ছেন?
তাজুল ইসলাম: মানুষের ‘অবজারভেশন’ ছিল যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, তার স্থায়িত্বকাল কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের নয়। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এগুলোর স্ট্রাক্চারাল ডিজাইন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে পরিবর্তন করেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা ভালো ফলাফল পাচ্ছি। 

খবরের কাগজ: একই সড়কের কাজ বারবার যাতে না হয়, সে জন্য সড়কের আইডি নম্বর চালু করেছিলেন। তার সুফল কী পাচ্ছেন?
তাজুল ইসলাম: অবশ্যই, এখন আইডি নম্বর ব্যতীত কোনো ‘কনস্ট্রাকশন’ কাজ হবে না। এই ব্যবস্থায় একই রাস্তা দেখিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ আর নেই। 

খবরের কাগজ: সিটি করপোরেশন এলাকায় একই সড়কে বারবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার ফলে অপচয় হচ্ছে। অপচয় রোধে করপোরেশন এলাকার সড়কের আইডি নম্বর চালু করবেন কি না?
তাজুল ইসলাম: সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে রাস্তার আইডি নম্বর চালুর জন্য একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং পৌরসভার জন্যও আমরা কাজ শুরু করেছি। 

খবরের কাগজ: দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঠিকাদাররা কাজ সময়মতো শেষ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনি অবহিত কি না?
তাজুল ইসলাম: কিছু বৈশ্বিক কারণে এটা হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম অনেক বেড়ে গেছে। ঠিকাদাররা যেসব দামে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে তা এখন বহুগুণে বেড়েছে। এ কারণে তারা কাজ করতে পারেনি। সে জন্য কিছু সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

খবরের কাগজ: ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ডেঙ্গু বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবারের পরিকল্পনা কী? 
তাজুল ইসলাম: ডেঙ্গু নিয়ে আমরা প্রতিবছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সভা করি। অবশ্য এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর তেমন প্রকোপ দেখা গেছে বলে মনে হয়নি। তার পরও আমাদের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। প্রতিদিন টিভিসি প্রচার করা হচ্ছে। স্প্রে করার জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক থাকা দরকার, তা রয়েছে। 

খবরের কাগজ: আপনি কী মনে করছেন সচেতনতামূলক প্রচারের কারণে মানুষ সতর্ক হচ্ছে এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণ তাদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সহযোগিতা করছে?
তাজুল ইসলাম: অবশ্যই সচেতন হয়েছে এবং এখনো আমরা টিভিসি প্রচারের মাধ্যমে সচেতন করে যাচ্ছি। মাইকিং করা হয়েছে, ইমামদের কাছে গিয়েছি, স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের কাছে গিয়েছি। মসজিদের মাধ্যমে সচেতন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এবং নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররাও সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। 

খবরের কাগজ: উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ গত মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, দুই ধাপের নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি কম। এই ধরনের ভোটার উপস্থিতিতে আপনি সন্তুষ্ট কী?
তাজুল ইসলাম: ভোটার উপস্থিতি যে রকম পরিমাণ দেখেছি, তা খুব বেশি কম বলে মনে হয় না। বিভিন্ন কারণেই মানুষ কেন্দ্রে আসতে পারে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় গড় ভোটার উপস্থিতি কম নয়। তাই নিরুৎসাহিত হওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। 

খবরের কাগজ: আপনি কী মনে করেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে? 
তাজুল ইসলাম: একটা কারণ হতে পারে, বিরোধীরা এ নির্বাচনকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। তাদের তো কিছু লোকজন আছে, তারা এলে উপস্থিতির হার বাড়ত। অবশ্য তার পরও এখন যে হার, তাকে আমি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি। 

খবরের কাগজ: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
তাজুল ইসলাম: খবরের কাগজের প্রতি রইল আমার শুভকামনা।