![৪ বছরে ন্যাশনাল ব্যাংক আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করবে](uploads/2024/05/12/nb-1715486743.jpg)
ন্যাশনাল ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কেডিএস গ্রুপের কর্ণধার আলহাজ খলিলুর রহমান বলেছেন, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সবাই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তাদের সেই অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাংকটির আর্থিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারে চার বছরের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনায় প্রথমেই আছে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে গ্রাহককে অনুপ্রাণিত করা। তাতে কাজ না হলে পরবর্তী সময়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ। আমানতকারীদের স্বার্থের পুরোপুরি সুরক্ষা দেওয়া এবং নতুন আমানত সংগ্রহ অভিযান জোরদার করাও এ পরিকল্পনার অংশ। তিনি জানান, এসবের মাধ্যমে ব্যাংকটিকে পূর্বের ন্যায় লাভজনক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য।
খবরের কাগজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আলহাজ খলিলুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংকটির সম্পদ ও দক্ষ জনবল আছে। একই সঙ্গে আছে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকটির ব্যবসায়িক সুনাম। আমি সবাইকে অনুরোধপূর্বক নির্দেশ দিয়েছি যেন গ্রাহকের সঙ্গে বিনয়ী ব্যবহার করা হয়। গ্রাহকসংখ্যা বাড়াতে হলে, ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে হলে গ্রাহক তথা জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতোমধ্যে শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৫ টাকা থেকে প্রায় ৭ টাকা হয়েছে। আমি পর্ষদ সদস্যদের নিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করব যেন ব্যবসায়ীদের অধিকহারে ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত করা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক কার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে টাকা গেছে, তার সবকিছুই সবাই জানে। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা একত্রিত হয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে সেটা বলেছি। কষ্ট করে চালাব। পরিশ্রম এবং সততা থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। যাদের কাছে টাকা পাওনা রয়েছে তা আদায় করতে হবে। তাদের বোঝাব। ডিপোজিট আনব। ব্যবসা করব। একসময় বছরে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা লাভ করেছি। ৯০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছি। সেই ইতিহাস আমাদের আছে।
খলিলুর রহমান বলেন, আমিসহ পর্ষদের সব সদস্য দায়িত্ব নিয়েই খেলাপি গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছি। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি জানান, কিছু বড় ঋণখেলাপির সঙ্গে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করলে তারা তাকে কথা দিয়েছেন টাকা ফেরত দেবেন। জমি বিক্রি করে হলেও টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ভুয়া কাগজপত্রের বিপরীতে নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের চিহ্নিত করতে সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করা হবে। প্রয়োজনে ঋণ অনুমোদন ও ছাড়ের পর ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ইস্যু করা চেক কোন ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারিং করা হয়েছে, তা অনুসন্ধান করা হবে। তারপর ওই সব খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে খুঁজে বের করে ব্যাংকের টাকা উদ্ধার করা হবে। তিনি জানান, ব্যাংকটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের শাখাপ্রধানদের এক মতবিনিময় সভায় এসব পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের নিজেদের স্বার্থে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা ও সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা অর্থ জনগণের আমানত। আমরা সে অর্থের খেয়ানত বরদাশত করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে বর্তমান পর্ষদ খুবই কঠোর হবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, আগামী চার বছরে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।
অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের মাত্র ২৫ শতাংশ খেলাপি। এখনো ব্যাংকের হাজার হাজার গ্রাহক ও তাদের আমানত আছে। তারা নিয়মিত লেনদেন করছেন ব্যাংকে। এটিই আমাদের শক্তি। ব্যাংকটি একীভূত করার কথা বলা হয়েছে। যখন এটা জানতে পেরেছি তখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় বসে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা একীভূত হব না। কারণ যে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হচ্ছিল ওই ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক অনেক শক্তিশালী। আমরা কেন তাদের সঙ্গে একীভূত হব। প্রয়োজনে নতুন পর্ষদ গঠন করে ব্যাংক চালাব। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার বিষয়টি।
তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করার পর এটি দেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিল। একীভূতকরণের কারণে এ ব্যাংকের কারও জীবিকার্জনের ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাক সেটি আমরা চাই না। ব্যাংকটির সব কর্মীরও একই মতামত। তারা ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনে সফল হবে বলে বিশ্বাস করেন। এটিও আমাদের ভরসার স্থান।
খলিলুর রহমান বলেন, আমরা জানি ব্যাংক কীভাবে চালাতে হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি বাংলাদেশের এক নম্বর কাতারে ছিল। এটি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক। আমাদের যারা পরিচালক ছিলেন সবাই অভিজ্ঞ। পরিচালকরা সবাই ব্যবসায়ী ছিলেন। অভিজ্ঞতা দিয়েই ব্যাংকটিকে তারা এত দূর নিয়ে এসেছেন। আমি নিজেই অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়েছি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য। প্রচুর মানুষকে চাকরি দিয়েছি। আমার একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। আমার কাছে এসে কেউ সহযোগিতা না পেয়ে ফেরত যায়নি। ইন্শাআল্লাহ এই ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ফেরাতেও সক্ষম হব।