![মাদ্রিদে হাজার হাজার ফিলিস্তিনপন্থির বিক্ষোভ](uploads/2024/05/13/aggitationkk-1715540269.jpg)
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনপন্থিরা। তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবারও বিক্ষোভ হয়েছে স্পেন, পর্তুগাল, গ্রিস, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডে।
জানা গেছে, প্রায় ৪ হাজার বিক্ষোভকারী ব্যানার ও প্রতীক বহন করে গাজায় ‘গণহত্যার’ নিন্দা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ‘প্রতিরোধের’ প্রশংসা করেছেন।
রাফাহ শহর থেকে সরে যাওয়ার ইসরায়েলি ঘোষণার কথা উল্লেখ করে ৫৭ বছর বয়সী জলদিয়া আবুবাকরা বলেন, দক্ষিণ গাজায় জড়ো হওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পুনরায় এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের চাপের মধ্যে পড়েছেন কিন্তু তাদের যাওয়ার মতো নিরাপদ জায়গা কোথাও নেই।
ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকীর আগে প্রায় ৩০টি সংগঠন এই সমাবেশের ডাক দেয়।
মাদ্রিদের সিটি সেন্টারে ‘গাজায় গণহত্যা ও ইহুদিবাদী গণহত্যার নিন্দা জানাই’ শিরোনামে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে একত্রিত হন তারা। এ সময় অনেকেই ফিলিস্তিনের পতাকা সঙ্গে নিয়ে আসেন। ‘ফিলিস্তিনকে মুক্তি দাও’, ‘এটি যুদ্ধ নয়, গণহত্যা’, ‘ইসরায়েল খুনি’ লেখা ব্যানারও নিয়ে এসেছিলেন অনেকে। গাজা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ভূমিকার সমালোচনা করে অনেকে বক্তব্যও দেন।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, স্পেন সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জরুরি, দৃঢ় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসা বন্ধ করতে হবে এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোকে বয়কট করতে হবে।
এদিকে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনেও ফিলিস্তিনিপন্থি শিক্ষার্থীরা গাজার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ‘লিসবন ইউনিভার্সিটি’ ক্যাম্পাসে জড়ো হন। তবে সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। এ ছাড়া অ্যাথেন্স, আমস্টারডাম, মিলান, তুরিন, প্যারিস ও বার্লিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় শহরগুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। বার্লিনের সমাবেশে বিক্ষুব্ধরা ‘ইসরায়েল সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’, ‘জার্মানির অর্থায়নের ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ’, ‘ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
এবার সমাবর্তন বর্জন করলেন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক ডজন শিক্ষার্থী তাদের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ব্যক্তিকে সমাবর্তনে বক্তা করায় শিক্ষার্থীরা ওই অনুষ্ঠান বর্জন করেন। খবর বিবিসির।
ওই বক্তা এর আগে শিক্ষার্থীদের চলমান বিক্ষোভ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন পোস্টে দেখা যায়, ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভিসিইউ) শিক্ষার্থীরা গাউন ও টুপি পরা অবস্থায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কক্ষ থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলের গভর্নর গ্লেন ইয়ংকিন তখন সমাবর্তন অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বস্তুত, ইয়ংকিনকে সমাবর্তনের বক্তা করার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। কারণ তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ডাকা প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন।
এ ছাড়া ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন বর্ণবাদবিষয়ক একটি পাঠ্যক্রম চালু করার কথা ভাবছিল, তখন সেটির বিরোধিতা করার কারণেও ইয়ংকিন সমালোচিত হয়েছিলেন।
ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী সমাবর্তন বর্জন করেছেন, তাদের একজন হচ্ছেন শিরিন হাদাদ। শনিবার তিনি বিবিসিকে বলেন, সমাবর্তনের স্বাগত বক্তব্য শুরু করার পর বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা এত জোরে তালি বাজাতে শুরু করেন যে, অন্যরা ইয়ংকিনের কোনো কথাই শুনতে পাচ্ছিলেন না। এরপর অন্তত ১৫০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে সমাবর্তন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান বলেও জানান হাদাদ। তবে এতে ইয়ংকিন তার স্বাগত বক্তব্য থামাননি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ এবং সমাবেশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
বিবিসি হিসাব করে দেখেছে, দেশটিতে কমপক্ষে ১৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। ইসরায়েলের সঙ্গে থাকা আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। সূত্র: বিবিসি, আনাদোলু।