![ফেসবুক ফিরিয়ে দিল বন্ধুত্ব](uploads/2024/06/08/----1717829229.jpg)
ফেসবুক কি কেবল কেড়ে নেয়? নাকি ফিরিয়েও দেয়? ডিজিটাল দুনিয়া এখনকার শিশুদের শৈশব কেড়ে নেওয়ার যেই অভিযোগ, তার ঠিক উল্টো একটা চিত্রও আছে। কারও শৈশব-কৈশোরও ফিরিয়ে দিচ্ছে এই ফেসবুক। যেমনটা ফিরে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লিপিকা ইকবাল।
গত ১৮ মে সন্ধ্যাটি লিপিকা ইকবালের জন্য অতীতকে কাছে টেনে নেওয়ার দিন বলা চলে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বসবাসকারী লিপিকা একটি পুরোনো ছবির দিকে তাকিয়ে ভাবছিলেন তার হারানো তিন বন্ধুর কথা। হৃদয়ের গহিনে জমে থাকা স্মৃতিরা ফিরে আসছিল বারবার। মনের কোণে জেগে ওঠে হারানো বন্ধুদের খুঁজে পাওয়ার তাড়না।
সেই লক্ষ্যেই হয়তো তিনি বন্ধুদের খোঁজে মে মাসের ১৮ তারিখ ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপে ১৯৯০ সালে চার বান্ধবীর তোলা একটি ছবি পোস্ট করেন। যেই ছবি দিয়ে তিনি খুঁজে বেড়ান হারানো তিন বন্ধু মাকসুদা খানম টুটু, সানোয়ারা বেগম সানী এবং মাহমুদা খানম সীমাকে।
ছোট্ট ওই পোস্ট মুহূর্তেই হাজারো মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। পোস্টের ক্যাপশনে লিপিকা লেখেন, ‘গত ৩০ বছর ধরেই খুঁজে চলেছি আমার এই তিন বান্ধবীকে। ছবির সবচেয়ে বামে বসে আছি আমি (লিপি)। আমার পাশে টুটু, তারপরে সীমা আর সবার শেষে সানী। আমরা ১৯৯০ সালে তেজগাঁও কলেজে বিএ পাস কোর্সে ভর্তি হই।’ লিপিকার এই আবেগমিশ্রিত স্ট্যাটাসটি পোস্ট করার মিনিট দশেকের মধ্যেই সন্ধান পাওয়া যায় মাকসুদা খানম টুটুর। রাত ১০টায় সানোয়ারা বেগম সানী ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সন্ধান মেলে মাহমুদা খানম সীমার।
লিপিকা ইকবাল ছবি পোস্ট করার পর সেই গ্রুপে শুরু হয় যাচাই-বাছাই। দুষ্প্রাপ্র ছবি সমগ্র গ্রুপের কর্ণধার গিরিধর দে বলেন, ‘আমরা লিপিকার তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রচার শুরু করি। পোস্টটি প্রচারের পরপরই টুটু এবং সানীকে খুঁজে পাই। এরপর সীমাকেও খুঁজে পাই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করানো হয়।’
৩০ বছর ধরে খুঁজতে থাকা বান্ধবীদের ছোট্ট একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে অতিদ্রুত খুঁজে পেয়ে যাবেন তা যেন ভাবতেই পারেননি লিপিকা ইকবাল। তিনি বলেন, ‘আমি তো ভাবতেও পারিনি। আল্লাহ আমার মনের কথা শুনতে পেরেছেন আলহামদুলিল্লাহ। এই পেজ না থাকলে তা কি সম্ভব হতো? ৩০ বছরের স্বপ্ন ৩০ মিনিটেই সত্য হলো।’
বন্ধুত্বের সম্পর্ক কি কখনো হারায়? তৃতীয় বন্ধু সানী বলেন, ‘বন্ধুত্বের এই সম্পর্ক কোনোদিন হারায় না। আবারও এক হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এই পুনর্মিলনকে সীমা তুলনা করেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার হিসেবে।’
এই ঘটনা পরিষ্কার করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা আমাদের জীবনে কল্যাণ ও সুখের মুহূর্তের উপলক্ষও সামনে নিয়ে আসতে পারে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেড়ে নেওয়ার একচেটিয়া অভিযোগ কিংবা হাহাকারের মাঝে এই ঘটনা আমাদের কাছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল যে ফেসবুক বন্ধুত্ব ফিরিয়েও দিচ্ছে।
কলি