সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ‘যুদ্ধশিশু’ মেরিনা খাতুন অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক চিঠি পেয়েছেন।
রবিবার (১৪ জুলাই) জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে এক চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। উপজেলা পোস্ট মাস্টার মো. আইয়ুব আলীর কাছ থেকে চিঠিটি গ্রহণ করেছেন মেরিনা খাতুন।
কোথাও পিতার নাম লেখার প্রয়োজন হবে না যুদ্ধশিশু মেরিনার। পিতার নাম ছাড়াই তিনি রাষ্ট্রের সব সুবিধা বা অধিকার ভোগ করতে পারবেন। এই স্বীকৃতিতে অনেক উচ্ছ্বসিত তার পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। তবে তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মাসিক ভাতা দেওয়ার কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় খানিকটা হতাশও তারা। সরকার এ বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবে এমনটাই ভাবছেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় লোকজন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে তাড়াশের উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত ফাজিল আকন্দের স্ত্রী পচি বেওয়াকে বাড়ি থেকে স্থানীয় রাজাকাররা অস্ত্রের মুখে তুলে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসরদের পাশবিক নির্যাতনে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা পচি বেওয়ার গর্ভে আসে মেরিনা খাতুন। লোকলজ্জার ভয়ে ভ্রূণেই মেরিনাকে শেষ করতে চাইলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। অন্য সন্তানদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত মেরিনার জন্ম দেন মা পচি বেওয়া। রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০১৮ সালের ৪ জুলাই মায়ের বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির পর ২০২২ সালে মেরিনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিজেকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৮২তম সভায় মেরিনাকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবটি পাঠায় জামুকা। দীর্ঘ সময় পরে মন্ত্রিসভা তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয় জামুকাকে। তার আলোকে জামুকার ৮৯তম সভায় মেরিনাকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জামুকা। গত ৭ জুলাই এটি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) উপপরিচালক (উন্নয়ন) প্রমথ রঞ্জন ঘটক স্বাক্ষরিত পত্রে মেরিনা খাতুনকে অবহিত করা হয়েছে।
যুদ্ধশিশু মেরিনা খাতুন বলেন, বিভিন্ন সময় মানুষের কটু কথা শুনতে হয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেক সময় বাইরে বের হতে পারিনি। একটু স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অনেকদিন যাবৎ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। অবশেষে আমাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন অনেক ভালো লাগছে। বাকি জীবন একটু মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে পারব। সরকারের কাছে দাবি জানাই মুক্তিযোদ্ধারা যেসব সুযোগ সুবিধা পান, আমাকেও যেন তা দেওয়া হয়। স্বীকৃতি পাওয়ার এ বিজয় দেশের সব যুদ্ধশিশুর।
মেরিনা খাতুনের স্বামী ওমর আলী জানান, যুদ্ধশিশু মেরিনাকে বিয়ে করার জন্য তাকেও লোকজন নানা কটুকথা বলে বিরক্ত করত। তারপরও তাকে নিয়ে সংসার করছি। আমার স্ত্রী অনেক কষ্ট করেছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ায় আমরা উচ্ছ্বসিত আনন্দিত। শেষ বয়সে এসে সে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে, এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।