![তুলির আঁচড়ে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ](uploads/2024/02/20/1708397925.shaid-minar.jpg)
দিন পেরোলেই শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটি উদযাপনে বেশ জোরেশোরেই চলছে প্রস্তুতি। একদিকে যেমন নিরাপত্তা জোরদারে প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে তেমনি সাজসজ্জা আর দেয়াল চিত্রেও পিছিয়ে নেই শহিদ মিনার এলাকা। শহিদ মিনার বেদিতে আল্পনা আর দেয়ালে ফুটে উঠেছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথার রঙবেরঙের দেয়ালচিত্রে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেয়ালজুড়ে স্থান পেয়েছে দেশাত্মবোধক নানা গান-কবিতার লাইন।
গতকাল সোমবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকা জুড়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে। এই সৌন্দর্য বর্ধনে অংশ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রায় ৩০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্টরা বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগ মুহূর্তেই পুরো কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের হুমায়রা খন্দকার দুই বছর ধরে একুশের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। স্বেচ্ছায় এখানে কাজ করি। ভীষণ ভালো লাগে, চারুকলার সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও এতে অংশ নিয়েছেন। তুলির আঁচড়ে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান-কবিতার লাইন আর উক্তি লিখার কাজটি বেশ উপভোগ করি।’
ভালো লাগার টানে আসা চারুকলা অনুষদের সাবেক শিক্ষার্থী মুনজেরিন রিমঝিম বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালে স্নাতকে ভর্তি হই। তখন থেকেই ২১শে ফেব্রুয়ারি এলে আল্পনার কাজ করি। অনেক উপভোগ করি এই কাজটি, কেননা সাবেক-বর্তমান সবার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়ে যায়।’
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘এখন দেয়ালচিত্রের কাজ চলছে, যেখানে ভাষা আন্দোলন-মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া শরীর শিক্ষা কেন্দ্রেও বেশকিছু কাজ চলছে।’
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান হিসেবে এ পর্যন্ত ২১ বার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তার ২১ বার পুষ্পস্তবক অর্পণের দুর্লভ ছবি নিয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মাতৃভাষা দিবসে ঢাবির যেসব রাস্তা বন্ধ
মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজিমপুর কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যাতায়াতের জন্য একটি রুট-ম্যাপ প্রণয়ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
রুটম্যাপ অনুযায়ী, আগামী বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য বাসভবনে গেট থেকে ফুলার রোড মোড়, টিএসসির সড়কদ্বীপ থেকে বকসিবাজার সড়ক, কাজী মোতাহার হোসেন থেকে শহিদ মিনারের সড়ক এবং দোয়েল চত্বর থেকে চানখারপুল পর্যন্ত সড়ক বন্ধ থাকবে। সর্বস্তরের জনসাধারণ পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহিদ মিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাস্তা দিয়ে চানখারপুল হয়ে শুধুমাত্র প্রস্থান করা যাবে, শহিদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।
এ ছাড়া শহিদদের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জনসাধারণ হোম ইকোনমিকস মোড় দিয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর গেটের দিকে যাবে। শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর দক্ষিণ গেট দিয়ে ইডেন মোড় হয়ে বের হবে। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে রুটম্যাপ অনুসরণ করার জন্য সবাইকে উপাচার্য অনুরোধ করেন। প্রবেশপথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ও স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
ঢাবি উপাচার্য জানান, রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিতে প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা। এরপর পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন তিন বাহিনীর প্রধান, ভাষা সৈনিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিন ও হলের প্রাধ্যক্ষরা। এরপর রাত সাড়ে ১২টা থেকে সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের জন্য শহিদ মিনার উন্মুক্ত থাকবে।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, রাষ্ট্রাচার অনুযায়ী একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিমূল প্রস্তুত করার যথাসময়েই তা সম্পন্ন হবে।
এ বছর প্রতিটি সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। এ সময়ে শহিদ মিনার এলাকায় কোনো সভা সেমিনার বা প্রোগ্রাম করা যাবে না, ব্যানার টানানো যাবে না।
নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই: ডিএমপি কমিশনার
এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবসকে ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। ঝুঁকি না থাকার পরও চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। গতকাল শহিদ মিনারে ডিএমপির নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্য না থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা হুমকি বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’