![বেনজীরকাণ্ডের তদন্ত : অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে হবে হাইকোর্টে](uploads/2024/06/26/Benzir_Ahmed-1719420489.jpg)
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অগ্রগতি হাইকোর্টকে জানাতে হবে। প্রতিবেদন আকারে তা আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বুধবার (২৬ জুন) দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান খবরের কাগজকে বলেন, বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে গত এপ্রিল মাসে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদেশের কপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন আকারে অগ্রগতি জানাতে হবে।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ভর্তির সুযোগ নিয়ে বেনজীর আহমেদের পাওয়া ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে।
এদিকে দুদক সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য আইনে নির্ধারিত ৪৫ কার্যদিবস শেষ হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুন)। অবশ্য ইতোমধ্যে অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করার কথা রয়েছে। প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কমিশন অনুমতি দিলে এই নোটিশ জারি করা হবে। সে ক্ষেত্রে অনুসন্ধানের মেয়াদ আরও ১৫ কর্মদিবস বাড়ানো হবে। তবে প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কমিশন চাইলে নোটিশ জারি ছাড়াই মামলার অনুমোদন দিতে পারে।
বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন দুই ভাগে করা হয়েছে। একটি হলো বেনজীরের অর্থসম্পদ এবং অপরটি তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের অর্থসম্পদসংশ্লিষ্ট। একটি প্রতিবেদনে বেনজীরের বিরুদ্ধে সব রকম তথ্য-প্রমাণ যুক্ত করা হয়েছে। অপরটিতে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, দুই মেয়ে- ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ যুক্ত করা হয়েছে। দুটি প্রতিবেদনেই তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
গত ২১ এপ্রিল বেনজীরের দুর্নীতি অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের কমিটি করে দুদক। এর এক দিন পর ২৩ এপ্রিল এক আদেশে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে দুই মাস সময় বেঁধে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চ। এর প্রায় দুই সপ্তাহ পর আদেশের কপি পায় দুদক।
ঢাবি থেকে পাওয়া বেনজীরের ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, এদিকে নিয়ম শিথিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ভর্তির সুযোগ নিয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের পাওয়া ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে।
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এই ডিগ্রি বাতিলের প্রস্তাব করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত কুমার সাহা।
তিনি বলেন, ‘বেনজীর আহমেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়ার যোগ্যতা ছিল না। তাকে বিশেষ বিবেচনায় অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা গেল তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত করেছেন। তার যে থিসিস সেটি খুবই সাধারণ মানের ছিল, যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যায় না। আমি তার ডিগ্রি বাতিলের দাবি জানাই।’
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতির জন্য ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি অনুষদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। যার উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ডিনস কমিটির ১৪-০৫-২০১৫ তারিখের সভায় র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদকে নিয়ম শিথিল করে বিশেষ বিবেচনায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের অধীনে ডিবিএ প্রোগ্রামে ভর্তির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে, যদি তিনি অন্য কোনো প্রকারে অযোগ্য বিবেচিত না হন।
নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৫ সালের আগস্টে অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তাকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ডিবিএ প্রোগ্রামে রেজিস্ট্রেশনের অনুমতি দেওয়া হয়। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘কন্ট্রিবিউশন অব বাংলাদেশ ইউএন পিস কিপিং ফোর্স টু আওয়ার ন্যাশনাল ইকোনমি’।