![প্রত্যয় স্কিমের বিষয় স্পষ্ট করল অর্থ মন্ত্রণালয়](uploads/2024/07/02/Prottoy-skim-1719906553.jpg)
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মাঝেই এই স্কিমের কিছু বিষয় স্পষ্ট করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে ১ জুলাই থেকে প্রত্যয় স্কিম যাত্রা শুরু করেছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয়’ স্কিম যাত্রা শুরু করেছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনার লক্ষ্যে অন্যদের পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রবর্তন করা হয়েছে।
বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠান কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন।
সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না। তাছাড়া সরকারি, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া দেশের বিপুলসংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতাবহির্ভূত থাকায় সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রবর্তন করেছে।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী দেশের সব মানুষের জন্য পেনশন স্কিম প্রবর্তনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ১ জুলাই ২০২৪ বা তৎপরবর্তীতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন।
অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ১ জুলাই ২০২৫ বা তৎপরবর্তীতে যোগদানকারী সরকারি কর্মচারীরাও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসবেন।
প্রত্যয় স্কিম সম্পর্কে যেসব বিষয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে সেগুলো হলো-
৩০ জুন ২০২৪ সাল পর্যন্ত যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিতে আছেন তারা আগের মতো সব পেনশন সুবিধা পাবেন।
বর্তমানে সরকারি পেনশনে আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ফলে, পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। ১ জুলাই ২০২৪ সাল থেকে ফান্ডের ডিফাইন্ড কন্টিবিউটরি সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে বিধায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা যা কম হবে তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন হতে কর্তন করবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা দেবে। এরপর উভয় অর্থ ওই কর্মকর্তা, কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় যা দীর্ঘ মেয়াদে কোনোক্রমেই টেকসই ব্যবস্থা নয়। অন্যদিকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন এবং বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠন করা হবে বিধায় এটি দীর্ঘ মেয়াদে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থা। পাশের দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে।
নতুন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে। এতে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন এবং ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের পর নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তিনি সার্ভিস প্রটেকশন ও পে-প্রটেকশন পান বিধায় এটিকে নতুন নিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হয় না। সেক্ষেত্রে তার বিদ্যমান পেনশন সুবিধার আওতায় থাকার সুযোগ থাকবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী যারা ২০২৪ সালের ১ জুলাই ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন নিয়োগ পাবেন কেবলমাত্র তারা প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর থেকে অবসরে যাবেন। ৬৫ বছর থেকে তারা আজীবন পেনশন পাবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।
লাম্পগ্রান্ট ও পিআরএল অর্জিত ছুটি প্রাপ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হয়। ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে তা বহাল থাকবে।
কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এককালীন নয়; বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করাই অগ্রগণ্য বিধায় এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বরং বিদ্যমান মাসিক পেনশনের কয়েকগুণ বেশি মাসিক পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতন থেকে কর্তন করা হলে একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা দিলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমা করা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তার মোট প্রাপ্তি হবে ২ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা যা তার জমার প্রায় ১২ দশমিক ৫ গুণ। পেনশনার পেনশনের যাওয়ার পর ৩০ বছর জীবিত থাকলে তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনার আজীবন পেনশন পান। তার অবর্তমানে পেনশনারের স্ত্রী/স্বামী এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন। পেনশনারের অবর্তমানে তার স্ত্রী/স্বামী বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসাবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্য হবেন।
উদাহরণস্বরূপ, একজন পেনশনার অবসরে যাওয়ার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় ৫ বছর পেনশন পেয়ে তারপর মারা গেলেন। এক্ষেত্রে তার স্ত্রী/স্বামী বা নমিনি আরও ১০ বছর পেনশন পাবেন।
অমিয়/