ঢাকা ৯ চৈত্র ১৪৩১, রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫
English

আ.লীগের লুটপাটের চিত্র দেখছি

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম
আ.লীগের লুটপাটের চিত্র দেখছি
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

প্রথমত, যারা আমলা, তারাই রাজনীতিবিদ। আবার যারা ব্যবসায়ী, তারাও রাজনীতিবিদ। এটা হলো একটা কম্বাইন্ড সিন্ডিকেট। প্রথমে আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পিরিয়ডটা আমরা মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখছি। প্রচণ্ড ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছি যে কী ধরনের লুটপাট হয়েছে। এখন যদি কেউ মনে করে যে আগে কিংবা পরে কোনো লুটপাট নজরের বাইরে থাকবে, তারা মারাত্মক ভুল করবে।

দ্বিতীয়ত, যারা আওয়ামী লীগের নেতা, তারাই তো ব্যবসায়ী। যারা ব্যবসায়ী তারাই আওয়ামী লীগ নেতা। বাজার অর্থনীতির কারণে বাজার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সবকিছুই কেনাবেচা হচ্ছে। দলীয় পদও এখন কেনাবেচা হয়। ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ, লুটপাটকারীদের নিয়ন্ত্রণ, আবার তারাই রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে এই কাজ করে এবং প্রশাসনের যেসব বড় বড় কর্মকর্তা তারাই লুটপাট করা টাকা দিয়ে রাজনীতির পদ কিনে নেন, এমপি সিট কিনে নেন। পরে তারাই দেশের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। যে ব্যবস্থা আছে সেটাতে কিছুটা হাত দেওয়া হলেও তা পরিপূর্ণ করা হয় নাই। কেননা, যে ব্যবস্থাগুলোগুলো উত্থাপিত হওয়া প্রয়োজন, সেগুলো উত্থাপন করার জন্য যে গণসংগ্রাম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন সেটা করা হচ্ছে না। 

সিপিবির সাবেক সভাপতি 

আন্দোলন করেই এগিয়ে যেতে হবে

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম
আন্দোলন করেই এগিয়ে যেতে হবে
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

আমাদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাটা বড়ই পরিষ্কার। সরকারি দান-অনুদান ক্রমাগত বাড়ছে। সনদের স্বীকৃতিও দেওয়া হচ্ছে। সরকার বদল হয়, কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষাকে উৎসাহিত করার নীতিতে কোনো প্রকার ইতরবিশেষ ঘটে না। বরঞ্চ এ ব্যাপারে সরকারগুলো একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। এর পেছনে ভোট পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাটা তো রয়েছেই, আরও একটি গোপন অভিপ্রায়ও কাজ করে। সেটা হলো, গরিব মানুষকে গরিব করে রাখা।

তা ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও মাদ্রাসা খোলা হয় এবং হচ্ছেও। স্কুল খোলার চেয়ে মাদ্রাসা খোলা সহজ এবং লাভজনক। মাদ্রাসা খুলতে খরচ পড়ে কম। সরকারি অনুদান পাওয়া যায়। না পাওয়া গেলেও ক্ষতি নেই, ধর্মপ্রাণ মানুষ দান-খয়রাত করবে। কাজটা লাভজনকও বৈকি। একদিকে নয়, দুই দিকে। প্রথমত, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতারা বড় মাপের ভালো মানুষ বলে খ্যাতি পায়। লোকটি আসলে হয়তো খাঁটি দুর্বৃত্ত, কিন্তু তার সেই পরিচয়টা চাপা পড়ে যায় ধর্মপরায়ণতার লেবাসের অন্তরালে। সামাজিকভাবে এটি একটি ভালো বিনিয়োগ। দ্বিতীয়, এতে পুণ্যলাভও ঘটে। সেটা আরেক ধরনের বিনিয়োগ। তাই দেখা যায়, বিত্তবানরা মাদ্রাসার জন্য টাকা দেয়, কিন্তু স্কুলের ব্যাপারে উৎসাহ দেখায় না। এমনকি অপেক্ষাকৃত কম টাকার মালিক যারা তারাও মনে মনে আশা রাখে, একটা মাদ্রাসা খুলবে।

মাদ্রাসা শিক্ষা যে কত ভয়ংকর হতে পারে, পাকিস্তানের শাসকরা এখন তা অস্থিমজ্জায় টের পাচ্ছে। এক সময় মার্কিন অর্থে তারা মহোৎসাহে মাদ্রাসা খুলেছে, সেখানে জঙ্গিরা তৈরি হয়েছে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হটাবে বলে। তালেবানরা ওইসব মাদ্রাসাতেই শিক্ষিত। এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আর নেই। কিন্তু ওই যে জঙ্গিদের তৈরি করা হয়েছিল তারা তো আছে। আফগানিস্তানে তারা ছিল, এখনো আছে, অন্যত্রও ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এখন শত্রু খোঁজে, কমিউনিস্টদের না পেয়ে খোদ মার্কিনিদেরই শত্রু মনে করছে। কমিউনিস্টরা শয়তান ছিল, কেননা তারা ছিল ‘নাস্তিক’, এখন মার্কিনিরা শত্রু হয়েছে। কেননা, তারা হলো বিধর্মী। মার্কিনিদের নেতা সন্ত্রাসীশ্রেষ্ঠ জর্জ বুশ তাদের একদা মিত্র তালেবান, আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

 প্রতিক্রিয়ায় ইসলামি জঙ্গিরা নিজেদের মুসলমান পরিচয়টিকে উচ্চে তুলে ধরে বলেছে, তারা জিহাদে লিপ্ত রয়েছে। উভয়পক্ষের অবস্থানই ধর্মীয় মৌলবাদী। বুশের পক্ষে আফগানিস্তান, ইরাক, পারলে ইরান দখল করে নেওয়ার জন্য ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করা অনেক বেশি কার্যকর ছিল। আমেরিকা বিপন্ন, আমাদের খ্রিষ্টান সভ্যতা হুমকির মুখে- এ ধরনের আওয়াজ অধিকতর উপযোগী অন্য দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন, আমাদের তাই যুদ্ধে যেতে হবে বলার তুলনায়। বুশ ছিলেন নব্য-হিটলার। হিটলার ব্যবহার করেছিলেন বর্ণবাদী বিদ্বেষকে, ইনি কাজে লাগিয়েছিলেন ধর্মীয় অহমিকাকে, আর পরিহাসের বিষয় এটাও, যে ইহুদিরা এক সময় হিটলারের বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছিল, এখন তারাই মার্কিনিদের সাহায্য নিয়ে প্যালেস্টাইনে আরবদের ওপর নির্মম গণহত্য চালাচ্ছে।

সাম্রাজ্যবাদীদের মহানায়ক জর্জ বুশ নিজেকে বলছেন খ্রিষ্টান, তার আক্রমণে বিপন্নরা আত্মপরিচয় খুঁজতে গিয়ে নিজেদের বলছে মুসলমান। শোষক ও শোষিতের ঝগড়াটা তাই পরিণত হচ্ছে খ্রিষ্টান-মুসলমান কলহে। আত্মপরিচয়ের এই প্রশ্নটা আমাদের এ অঞ্চলেও জরুরি হয়ে উঠেছিল। ব্রিটিশ আমলে কেউ ছিল হিন্দু, কেউ মুসলমান; পাকিস্তান শাসনামলে আমরা নিজেদের চিনলাম বাঙালি বলে। কিন্তু দেখা গেল, ক্রমে বাঙালি পরিচয়ের চেয়ে সেই পরিত্যক্ত মুসলমান পরিচয়টিই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। লক্ষণটা কিন্তু একেবারে শুরুতেই দেখা দিয়েছিল। বাহাত্তর সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে নতুন রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রেসকোর্সের বিশাল জনসভায় শেখ মুজিব যে বক্তৃতা দেন তাতে তিনি বলেছিলেন যে, আমরা হলাম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমান রাষ্ট্র, সেই বলাটা কোনো আকস্মিক বিচ্যুতি ছিল না। তার নিজের ভেতরে এবং অনেকের ভেতরেই মুসলমান পরিচয়টি নিয়ে সুপ্ত একটা গর্ববোধ ছিল বৈকি। সুপ্তের ঘুমভাঙা কি আর অস্বাভাবিক ঘটনা?

পরে বাঙালিত্ব নিয়ে গর্বটা কমেছে, কেননা বাঙালির নতুন রাষ্ট্র মানুষকে মুক্তি দেয়নি, যেভাবে দেওয়ার কথা ছিল; আর সেই ফাঁকে মুসলমানত্বের অহমিকাটা নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছে। পরবর্তী শাসকরা ওই মুসলমান পরিচয়টাকেই বড় করে তুলেছেন। প্রমাণ? সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিদায় করে দেওয়া। আর এরশাদের তো কথাই নেই। তিনি তো একজন ‘সাচ্চা’ মুসলমানই! রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ আরও এগিয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।

বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ যখন বাড়ে তখন সেটার জন্য প্রকাশের পথ থাকে দুটো। একটি ডানের, অপরটি বামের। আমাদের শাসকরা বামপন্থাকেই সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করে। যে জন্য আমরা দেখেছি যে, একাত্তরের পরে শেখ মুজিব মনুষ্যসভ্যতার এবং বাঙালির নিকৃষ্টতম শত্রু আল-বদর, রাজাকারদের বিচার করে যেতে পারেননি, কিন্তু নকশাল দেখামাত্রই গুলি করা হবে বলে হুকুম জারি করেছেন। আর ক্ষমতায় এসে জিয়া দেখেছেন তার প্রধান প্রতিপক্ষ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, যার জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রধান ভিত্তি যে ধর্মনিরপেক্ষতা তাকে নির্মূল করার পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু তিনিও জানতেন যে, তার প্রকৃত শত্রু যদি কেউ থাকে তবে তারা আওয়ামী লীগ নয়, বামপন্থিরাই। তাই বামপন্থি কর্নেল তাহেরকে ফাঁসির মঞ্চে উঠতে হয়েছে এবং রাজাকাররা মন্ত্রী হতে পেরেছে। বামপন্থিদের ধ্বংস করার জন্য তিনি আরও একটি কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, সেটা হলো নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের একাংশকে নিজের দলে টেনে নেওয়া। বামপন্থি ধারা শক্তিহীন হয়েছে, দক্ষিণপন্থিরা চাঙা হয়ে উঠেছে, বর্ষাকালের খালের মতো; তবে তারা খাল থাকেনি, পরিণত হয়েছে নদীতে। জিয়া যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সেটাও ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে যা দক্ষিণপন্থিদের সাহায্য করেছে। সেটা হলো তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতন। এর ফলে বিশ্বজুড়ে দক্ষিণপন্থিরা উল্লসিত এবং বামপন্থিরা বিষণ্ন হয়েছে। তবে বাংলাদেশে যেমন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তেমনটা বিশ্বের অন্য কোথাও চোখে পড়েছে কি না জানি না। বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি ছিল বামপন্থিদের সবচেয়ে পুরানো এবং সর্ববৃহৎ সংগঠন। তাদের একাংশ বলে বসল সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, চেষ্টা করল নিজেদের বিলুপ্ত করে দিতে।

বামদিকের পথ অবরুদ্ধ দেখে মানুষের বিক্ষোভ ডানদিকে মোড় নিতে চাইল। তাতে সুবিধা হলো ডানের, এবং ডানের শেষ মাথায় যাদের অবস্থান সেই জামায়াতে ইসলামীর, তারা ক্ষমতালাভের আশায় নাড়াচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে।
বাস্তবতার চেহারাটা এ রকমেরই নির্মম। কিন্তু উপায় কী? প্রতিকার আসবে কোন পথে? গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতায় যারা আস্থা রাখেন না অথচ গণতন্ত্রের কথা বলেন, তারা হয় অজ্ঞ নয়তো ভণ্ড। আমরা আমাদের পরিচয় দিতে চাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে, মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে নয়। কিন্তু আমাদের শাসকশ্রেণি তা চায় না।

নিজেদের গণতন্ত্রের পথযাত্রী করতে হলে যা করতে হবে তা হলো রাষ্ট্রের চরিত্রে পরিবর্তন আনা এবং সেই সঙ্গে সমাজে মৌলিক অর্থাৎ বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটানো। এই দুটি অত্যাবশ্যকীয় কাজের কোনোটিই সম্ভব হবে না, যদি না শাসকশ্রেণিকে পরাভূত করা যায়। কিন্তু পরাভূত যে করব, সেটা কোন পথে? নির্বাচনের? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে ওই কর্তব্যপালন সম্ভব নয়, সেটা তো অভিজ্ঞতাই আমাদের বলে দিচ্ছে। নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে শাসকশ্রেণির কোন অংশের হাতে আমরা লাঞ্ছিত ও শোষিত হব সেটা ঠিক করা, তার বেশি নয়, কমও নয়। পথটা হলো আন্দোলনের। যে আন্দোলন আমরা অতীতে করেছি, এখন প্রয়োজন তাকে আরও সুসংহত করে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাওয়া। নইলে আমরা কেবল আক্ষেপই করব, মুক্তি পাব না। এমনকি সামনে এগোতেই পারব না।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সিরিয়াকে সহায়তা দেওয়া

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৬ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সিরিয়াকে সহায়তা দেওয়া
ড. আমাল মুদাল্লালি

বাশার আল-আসাদ পরিবারের শাসনামলের কয়েক দশকের নৃশংস সহিংসতা ও নিপীড়নের পর সিরিয়ার আবার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেশটির ভাগ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এখন নির্ভর করছে সিরিয়ার সরকার, তার অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। যুক্তরাষ্ট্র আগামী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে কী করে বা কী করতে ব্যর্থ হয় তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। 
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে সিরিয়াবিষয়ক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট সম্মেলনে মূল বক্তৃতা দেওয়ার সময় পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে পূর্ববিষয়ক সিনিয়র ব্যুরোর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিমোথি লেন্ডারকিং বিষয়টি ভালোভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার সহকর্মীসহ আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের আগামী চ্যালেঞ্জ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে কারণ এখন সিরিয়া এবং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চলছে’।

এখন সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ওয়াশিংটনের নতুন প্রশাসন তাদের সিরিয়ানীতি প্রণয়ন করছে। আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক কৌশলগত সাফল্যে প্রশাসন মজা লুটতে পারে। কারণ ইরানকে বিতাড়িত করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ ইরান থেকে যাবতীয় অস্ত্র সরবরাহের জন্য স্থলপথ হারিয়েছে। রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং সিরিয়ায় তাদের উপস্থিতির ভবিষ্যৎ এখন ক্ষীণ। গত মাসে সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান জিম রিশ ‘আগুনের বলয়’-এর অবসানকে স্বাগত জানিয়েছেন, যা ‘কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাসী প্রক্সি এবং অস্থিতিশীলতা দিয়ে ইসরায়েলকে ঘিরে রেখেছিল এবং এখন তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন যে প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে তা নতুন সিরিয়ায় তার ভবিষ্যৎ সম্পর্ক এবং সেখানে তার সামরিক উপস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। ওয়াশিংটনের সিরিয়া বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, দেশ এবং এ অঞ্চলকে স্থিতিশীল করার জন্য বড় একটা সুযোগ এসেছে। তারা ওয়াশিংটনকে তার সতর্কতা পরিত্যাগ করে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ সিরিয়ার যাতে আরব প্রজাতন্ত্রকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে সঠিক পথে আনা যায় এবং সরকারকে শক্তিশালী করা যায়। যেহেতু সিরিয়ায় এখন নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। 

সিনেটর রিশ সিরিয়ানীতি সম্পর্কে ওয়াশিংটনের মনোভাব তুলে ধরে বলেন- ‘সুযোগ এবং ঝুঁকির মধ্যে বিশাল এক বাস্তবতা রয়েছে। অতি শিগগিরই খুব বেশি সম্পৃক্ততা দেখালে আরও নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হতে পারে। কোথাও খুব কম সম্পৃক্ততা দেখালে রাশিয়া এবং ইরান আবারও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা দেখাবে। এতে ইঙ্গিত বহন করতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই, যা বড় ভুল ধারণা হবে। 

গত সপ্তাহের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট সম্মেলনে তিনটি থিংকট্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ‘রিইমেজিনিং সিরিয়া’ নামে একটি নতুন প্রতিবেদনে সিরিয়ার উত্তরণকে ‘সফল হওয়ার বড় সুযোগ’ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে এবং যুক্তি দেয় যে বিচ্ছিন্নতার চেয়ে ‘সিরিয়ায় পরিবর্তনের সুযোগ এবং দিকনির্দেশ করার’ ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা বেশি।

যদিও নতুন সিরিয়ার নেতারা এখন পর্যন্ত সঠিক কথা বলেছেন এবং সেভাবেই করেছেন। তবুও কিছু সংশয়বাদী এবং অন্যরা আছেন, সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের নাতাশা হলের মতে, ‘সিরিয়ার সরকার ব্যর্থ হোক এবং সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা চায়’। তিনি বিশ্বাস করেন যে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে ‘এই সরকার টিকে থাকার কোনো উপায় নেই’। বিশেষজ্ঞরা ওয়াশিংটনকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, শ্বাসরুদ্ধকর নিষেধাজ্ঞা বজায় রেখে নতুন সিরিয়াকে রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে, সংশয়বাদীরা সরকারের কিছু পদক্ষেপকে উদ্বেগজনক বলে মনে করেন।

দুর্ভাগ্যবশত, সম্প্রতি সিরিয়ার উপকূলে সংঘটিত সহিংসতা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বিরোধিতাকারী সন্দেহবাদীদের আরও শক্তিশালী করেছে। এখন বাস্তব আশঙ্কা হলো, যা ঘটেছে তা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থানকে আরও শক্ত করে তুলতে পারে।

এখনো পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়টি নিয়ে কোনো গুরুত্ব দেননি। তবে এই সময়কালে প্রশাসন এগিয়ে যাওয়ার দিকে ঝুঁকেছে। অন্যান্য রপ্তানি সীমিত করে সিরিয়ায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর দিকে হাত দিয়েছে। 
জানুয়ারিতে, বাইডেন প্রশাসন সিরিয়ায় ছয় মাসের জন্য সীমিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার মঞ্জুর করে। রয়টার্সের মতে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন কাতারকে জর্ডানের মাধ্যমে সিরিয়ায় গ্যাস সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে, যাতে দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়তা করা যায়।

হোয়াইট হাউস সিরিয়া সরকার এবং কুর্দিশ সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেসের মধ্যে চুক্তির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে জানা গেছে। যেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ঐক্যবদ্ধ সিরিয়ায় একীভূত করার’ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কিন্তু সিরিয়া এখনো পরীক্ষাধীন। লেন্ডারকিং বলেন, দামেস্কের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ওয়াশিংটনের ‘বড় প্রশ্ন’ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই নতুন নেতৃত্ব এবং (অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার ওপর নজর রাখছি এবং সতর্কতা নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যাতে তারা প্রকৃত কি না তা দেখা যায়’।
এর মধ্যে বড় পরীক্ষা হলো উপকূলে যা ঘটেছিল তার জবাবদিহি করা। লেন্ডারকিং বলেন, ‘সিরিয়ায় জবাবদিহি কেবল একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতাই নয়, স্থিতিশীলতা ও সামাজিক সংহতির জন্যও এটি অপরিহার্য’। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং বিদেশি যোদ্ধাদের সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সরকার বা সামরিক বাহিনীতে কোনো ভূমিকা থাকা উচিত নয়। লেন্ডারকিং বলেন, ‘সিরীয় ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি অঙ্গীকারের নিদর্শন হিসেবে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বিদেশি যোদ্ধাদের সরকারি পদ এবং দেশ থেকে বহিষ্কার করা হোক।

১৯৭৯ সাল থেকে সিরিয়া নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে, কিন্তু ২০১৯ সালের সিজার সিরিয়া বেসামরিক সুরক্ষা আইন যা সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে বর্বরতার কারণে বাশার আসাদ এবং তার সরকারকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছিল। এখন সেই একই সিরিয়ান জনগণকে সাহায্য করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যাদের সুরক্ষার জন্য এটি প্রণীত করা হয়েছিল। সিরিয়া সরকার এবং তার সামরিক মেরুদণ্ডকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিন্তু দেশ এবং তার অর্থনীতিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের হাত বাঁধা থেকে নিষেধাজ্ঞাগুলো থামানো কঠিন প্রমাণিত হচ্ছে।

গত মাসে রিশ ‘সিজার নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়ার’ প্রস্তাব করেছিলেন এবং নতুন সরকার কীভাবে কাজ করে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, ‘আমরা সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার ধারা অব্যাহত রাখব’। তিনি শর্তসাপেক্ষ এবং ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি ‘গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থ’ তুলে ধরেছিলেন। দেশটিকে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমাদের অংশীদারদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ‘লঞ্চিং প্যাড’ হতে না দেওয়া, সিরিয়া থেকে রাশিয়া এবং ইরানকে স্থায়ীভাবে বিতাড়িত করা, আসাদের মাদক সাম্রাজ্য ধ্বংস করা, আসাদ সরকারের হাতে আটক আমেরিকান সিরিয়ানদের জন্য জবাবদিহি করা এবং স্বৈরশাসনে ফিরে না আসা নিশ্চিত করা।

কিন্তু এমন কিছু লোক আছেন যারা বিশ্বাস করেন যে, দামেস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের একমাত্র উপায় হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা শুরু করা। যার অর্থ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যেমনটি আটলান্টিক কাউন্সিলের থমাস ওয়ারিক গত সপ্তাহে MEI সম্মেলনে বলেছিলেন।
ওয়াশিংটন যখন তার সিরিয়ানীতি নির্ধারণ করছে, তখন মনে রাখা ভালো যে, কৌশলগত সুবিধাগুলো সংরক্ষণ করা। এমন একটি উন্মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সিরিয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো যা ইরানের অক্ষের অংশ নয় বা তার প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি না হয়। এ ধরনের সিরিয়া অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বাস্তবে ছিল না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচিত সিরিয়াকে একটি সুযোগ দেওয়া এবং দেশটির বিষয়ে পুরানোদের কথা না শোনা এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। 

লেখক: জাতিসংঘে লেবাননের সাবেক রাষ্ট্রদূত।
আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত 
অনুবাদ: সানজিদ সকাল

বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা বদলানো এখন সময়ের দাবি

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম
বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা বদলানো এখন সময়ের দাবি
আনু মুহাম্মদ

বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির জন্য পুরো ব্যবস্থার বদল দরকার। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের বৈষম্যের ভিত তৈরি করে। শিক্ষা হতে হবে সব নাগরিকের অধিকার এবং তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকেই। অভিন্ন এবং উন্নত মানের শিক্ষা শ্রেণি, জাতি, লিঙ্গ, ধর্মনির্বিশেষে সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে একই সঙ্গে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য অভিভাবকদের আর্থিক দুশ্চিন্তা বা সংকটের সমাধান করতে হবে।...

দেশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান শিক্ষাবঞ্চিত অথবা শ্রমিক। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় অনেকেই লেখাপড়ার পরিবেশ থেকে দূরে সরে গেছে। এই অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই নেওয়ার কথা। তা এখনো অগোছালো অবস্থায় রয়েছে। ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়ের কারণে সংখ্যালঘু অনেক মানুষ নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে দিন-রাত কাটাচ্ছেন এখনো। বহু কারখানা অচল হয়ে বর্তমানে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার। বহু শ্রমিককে বকেয়া মজুরির জন্য এখনো পথে নামতে হচ্ছে। বেশির ভাগ জিনিসপত্রের দাম এখনো সেই ক্রয়ক্ষমতার ওপরেই আছে। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ এখনো বিশ্বের মধ্যে নিকৃষ্ট। যানজট, দুর্ঘটনা বা কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত আছে।  
যেসব প্রকল্প ও চুক্তি বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিপজ্জনক, বাংলাদেশের প্রাণপ্রকৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ এবং যা বড় আর্থিক বোঝা তৈরি করতে পারে- এসব প্রকল্প এবং চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন দরকার।

 যেগুলো খুবই ক্ষতিকর, সেগুলো বাতিল করা দরকার। সেজন্য এগুলোর বোঝা থেকে কীভাবে বাংলাদেশ ও মানুষকে রক্ষা করা যায়- সেটা নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া শুরু করা এই সরকারেরই দায়িত্ব। অন্যদিকে বৈষম্যবাদী রাজনীতির নড়াচড়া ক্রমেই বাড়ছে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে খাটো বা অস্বীকার করে এই জনপদের মানুষের লড়াইয়ের ঐতিহ্যকে খারিজ করা, সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে মহিমান্বিত করার প্রবণতা ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। জোরজবরদস্তি, ট্যাগিং, মব ভায়োলেন্স ও নারীবিদ্বেষী তৎপরতা দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মাত্রায়। বলাই বাহুল্য, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে গেলে এসবের পরিবর্তন হতে হবে। এসবের বিরুদ্ধে সরকারের সরব ও সক্রিয় হওয়াই প্রধান পদক্ষেপ হতে পারে। এখন পর্যন্ত সরকারের ভূমিকা খুবই দুর্বল বলতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কতিপয় বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, যাদের এই সরকারের না চেনার কথা নয়। এ ছাড়া আবার শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি, যা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে এবং এগুলো বহুদিন ধরেই চলছে। এই যে কতিপয় গোষ্ঠীর বাজার নিয়ন্ত্রণ, এটা আগের সরকার ভাঙার বদলে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। বর্তমান সরকারও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে সরকারের বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। 


বাংলাদেশ ব্যাংককে একটা কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানো, যেসব ব্যাংক রাজনৈতিক ও কতিপয় গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল সেগুলোকে পুনর্গঠন, পুনর্বিন্যাস বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্ধ করে দেওয়া, মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় মুদ্রানীতি প্রণয়ন এগুলো করার জন্য কমিশনের সংস্কার কর্মসূচি বা কমিশনের রিপোর্টের অপেক্ষার দরকার নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার যদি ঠিকমতো হয়, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অনিয়মগুলো যদি দূর হয়, বাজারে মুদ্রাব্যবস্থা যদি সুস্থ অবস্থায় আসে, ডলার এক্সচেঞ্জ রেট স্বাভাবিক অবস্থায় আসে, এসবই মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এগুলো নিয়ে আগেই সক্রিয় ভূমিকা দরকার ছিল। সে ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভাষ্য বা কার্যকর উদ্যোগ এখনো আমরা দেখতে পাইনি।

সরকারকে আস্থা তৈরি করতে হবে। অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার হঠাৎ করে গত সরকারের স্টাইলে মানুষের ওপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপিয়ে দিল তা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আস্থা কমাবে, আরও কঠিন অবস্থা তৈরি করবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য। শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত অর্থনীতির যে গতি বা ধারা ছিল, সেখানে অচিন্তনীয় মাত্রায় কতিপয় গোষ্ঠীর লুণ্ঠন, দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল। ফলে দীর্ঘমেয়াদি অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যেতে থাকে। অতি ব্যয়ে করা ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোর জন্য ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকে। মূল্যস্ফীতি দেখা দেয় ব্যাপকভাবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার উঁচু দেখালেও তা কর্মসংস্থানের সমস্যা কমাতে পারেনি। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বাড়ে। এর সঙ্গে সম্পদ কেন্দ্রীভবন, বৈষম্য বৃদ্ধি- এগুলো যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি করে, তাতে হাসিনা সরকারের পতন না ঘটলে, এই সংকটগুলো আরও বেশি ঘনীভূত হতো। এসব ঋণ শোধের চাপ সামনে আরও বাড়বে। 

তবে জনগণের নামে একটা ভূমিকা নিতে পারে সরকার। বলতে পারে, এগুলো যেহেতু অনির্বাচিত সরকার জনসম্মতির বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেরা কমিশন পাওয়ার জন্য এবং কিছু গোষ্ঠী থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য নিয়েছে, যেহেতু দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচার হয়েছে এর বড় অংশ, সেহেতু এর দায়িত্ব আমরা কেন নেব? এই প্রশ্ন তুলতে হবে। দরকষাকষি করে সময় বাড়াতে হবে, সুদ এবং আসল কমাতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না বরং পূর্ণমাত্রায় সচল রাখতে হবে। এরকম একটি দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে সরকারকে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের দায়িত্ব সরকারের কোনো কোনো প্রতিনিধিকে নিতে হবে। 

শিক্ষা নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন অবশ্যই দরকার। তবে তা যেন নতুন সমস্যা তৈরি না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে যেকোনো রাজনৈতিক দলের দাপট দূর করা উচিত। তবে রাজনৈতিক সচেতনতা, সুস্থ বিতর্ক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ইত্যাদি বিষয় অবশ্যই থাকতে হবে। বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির জন্য পুরো ব্যবস্থার বদল দরকার। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের বৈষম্যের ভিত তৈরি করে। শিক্ষা হতে হবে সব নাগরিকের অধিকার এবং তা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রকেই। অভিন্ন এবং উন্নত মানের শিক্ষা শ্রেণি, জাতি, লিঙ্গ, ধর্মনির্বিশেষে সবার জন্য নিশ্চিত করতে হবে একই সঙ্গে সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য অভিভাবকদের আর্থিক দুশ্চিন্তা বা সংকটের সমাধান করতে হবে। 

অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু পার্থক্যের সূচনা করতে হবে সরকারকে। আগের সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক-বেসামরিক আমলা ও পুলিশকে অনেক বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। কতিপয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাত। বিপরীতে যারা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ও চাপের সম্মুখীন হয়েছেন তার মধ্যে প্রধানত হচ্ছে সর্বজনের জন্য প্রয়োজনীয় খাতগুলো। যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ, নিয়োগ, অবহেলার কারণে এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রমিকদের কথাও আমরা বলতে পারি। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে গেলে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বরাদ্দের বর্তমান চিত্র পরিবর্তন করে তা আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে আসতে হবে। জিডিপির শতকরা কমপক্ষে ছয় ভাগ বরাদ্দের ধারা তৈরি করলে ব্যয় বাড়বে বর্তমানের তিন থেকে পাঁচ গুণ। তার যথাযথ ব্যবহারের জন্য এই দুটি খাতে বড় ধরনের পুনর্বিন্যাস দরকার আছে। পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে প্রয়োজনীয় সব খাতেই সংস্কারের কাজগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।

লেখক: শিক্ষাবিদ

গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী তরুণ নেতৃত্ব ও নাগরিক প্রত্যাশা

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম
গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী তরুণ নেতৃত্ব ও নাগরিক প্রত্যাশা
রায়হান আহমেদ তপাদার

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য কেবল রাজনৈতিক সংকল্পই যথেষ্ট নয় বরং কার্যকর নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামোগত পরিবর্তন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস এবং জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ রূপান্তর সম্ভব নয়। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সব শ্রেণির মানুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।...

আমাদের দেশের ইতিহাসে প্রতিটি রাজনৈতিক আন্দোলন ও সামাজিক পরিবর্তনের মূল ভিত্তি ছিল সাম্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানও ছিল সেই ধারাবাহিকতার অংশ, যেখানে তরুণ প্রজন্ম রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বৈষম্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি ন্যায্য সমাজ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল, এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়ে গেছে। বৈষম্যের এ দুষ্টচক্র ভাঙতে গেলে গণ-আন্দোলনের পাশাপাশি প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত পরিবর্তন। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, অসম উন্নয়ন এবং রাজস্ব বণ্টনের অসংগতি বৈষম্যকে আরও তীব্র করেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অযোগ্যতা ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ জনগণ কাঙ্ক্ষিত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 এ বাস্তবতায় এক নতুন অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা আজ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার মুসলমানরা আবারও নতুন এক স্বপ্নের মুখোমুখি হন, যেখানে তারা আশা করেছিলেন এক বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার, যেখানে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত হবে। পাকিস্তানের অংশ হিসেবে পূর্ব বাংলার মানুষ ভেবেছিল তারা পাবে ন্যায্য অধিকার, কিন্তু বাস্তবে তারা নতুন এক শোষণব্যবস্থার শিকার হয়। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে শোষণের নীতিতে অটল থাকে, ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য আরও প্রকট হয়। সেই বৈষম্যের প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তবে স্বাধীনতার পর পরই নতুন এক চ্যালেঞ্জ সামনে আসে- ধনতন্ত্র বনাম সমাজতন্ত্রের আদর্শিক দ্বন্দ্ব। রক্তাক্ত প্রক্রিয়ায় সে দ্বন্দ্বের একতরফা নিরসন হলেও নীতি ও বাস্তবতার পার্থক্যের ফলে এখনো সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান।

চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই তরুণরা চব্বিশের পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তারা রাজনৈতিক দল গড়ার মধ্য দিয়ে আরেক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। তরুণ নেতৃত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে যেভাবে গত বছর সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, তার ফলেই দেড় দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। এ কারণেই তরুণদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি সে আস্থা কাজে লাগিয়ে কতটা রাজনীতি করতে পারবে; ভোটের মাঠের জটিল হিসেবে দলটি কতটা চমক আনতে পারবে, নিঃসন্দেহে তা দেখার বিষয়। মানুষের কাছে দলটি কতটা পৌঁছতে পারবে এবং মানুষকে তাদের এজেন্ডা কতটা বোঝাতে পারবে। দলটি যে বাংলাদেশ পন্থার কথা বলছে, সেটি নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের মানুষের ভাগ্য দেশের নাগরিকরাই নির্ধারণ করবে। নাগরিকদের দ্বারা এবং নাগরিকদের জন্যই বিশেষ করে যে রাজনীতি, তা দেশের মানুষকে জাতীয় নাগরিক পার্টি বোঝাতে পারলে জনভিত্তি তৈরি করাও সহজ হবে। দেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ। 

এ তারুণ্য আজ নানাবিধ সংকটে জর্জরিত। তরুণদের নেতৃত্বাধীন নাগরিক পার্টির এ বাস্তবতা ভালোই বোঝার কথা। সে জন্য তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিশেষ কর্মসূচি দলটির থাকতেই হবে। তারুণ্যের বেকারত্ব আমাদের বড় সমস্যা। জাতীয় নাগরিক পার্টির তরুণ নেতৃত্বকে বেকারত্ব ঘোচাতে অভিনব ও বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিতে হবে। অবশ্য কেবল তরুণদের জন্যই নয়, সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের জন্যও দলটির কর্মসূচি থাকতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখার কারণেই দলটির প্রতি মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। ২০১৮ সালে তাদের উল্লেখযোগ্য অংশ ছাত্র অবস্থায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অংশ নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

একই বছরেই তারা কোটা সংস্কারের সফল আন্দোলন করেছিল। ২০২৪-এ এসে কোটা সংস্কার দিয়ে শুরু হওয়া তাদের আন্দোলন সরকার পতন পর্যন্ত গড়ায়। বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরও যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হয়নি, সেখানে তারুণ্য অল্প দিনেই আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যে তরুণ সমাজ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে; বিগত সরকার নির্দয়ভাবে তাদের অনেককে হত্যা করে। অন্তত দেড় হাজার শহিদের কথা আমরা জানি। তাদের রক্তের ওপরেও দাঁড়িয়ে আছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সে জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে শহিদদের আত্মত্যাগ তাদের স্মরণে রাখতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হওয়ার পরও জনপ্রত্যাশা পূরণের সরকার সে অর্থে দেখা যায়নি। জাতীয় নাগরিক কমিটি সেই স্থান পূরণ করতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ এতটা সহজ নয়। তা ভেবেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

 বিদ্যমান রাজনৈতিক দলের বিপরীতে নাগরিক পার্টি কী বার্তা নিয়ে হাজির হচ্ছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত ধারার রাজনীতিতে নেতাদের চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যায়। জাতীয় নাগরিক পার্টির তৃণমূল হতে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে এ ধরনের অন্যায়ে যুক্ত হওয়া যাবে না। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্বে এসেছেন চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরকারের উপদেষ্টা থেকে পদত্যাগ করে এসেছেন। অন্যান্য নেতৃত্বকেও মানুষ দীর্ঘ সময় না হলেও অনেক দিন ধরেই দেখে আসছেন। তারা অন্যায়ের কাছে আপসহীন হবেন এটাই প্রত্যাশা। মনে রাখতে হবে, রাজনীতির পথ খুব সহজ নয়। এখানে সাফল্য পেতে দীর্ঘ সাধনা প্রয়োজন, যেখানে জেল-জুলুম-নির্যাতনের শঙ্কা নিত্যসঙ্গী।

যারা রাজনীতি করেন, এটা ঘোষণা দিয়েই করেন- তারা দেশ ও দশের সেবা করতে চান। তাদের কাছে যেন নিজের উন্নতির চেয়ে দেশের উন্নতিই মুখ্য। তার ক্ষমতা পাওয়ার মূলেও রয়েছে দেশ আর সবার গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা। দিনশেষে জনগণের কাছে জবাবদিহির মানসিকতাও রাজনীতিকদের থাকা জরুরি। চব্বিশের জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বড় সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। দেশের অনেক জায়গায় সংস্কার প্রয়োজন। অভ্যুত্থানের পর সে জন্যই সংস্কারের আলোচনা প্রধান হয়ে উঠেছে। নাগরিক কমিটির মতো অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানকারীদের দলের মাধ্যমেই সে সংস্কার বাস্তবায়ন হতে পারে। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে যে তরুণরা একদিন আন্দোলনে নেমেছে, আজ তারাই অভ্যুত্থানের মতো সাফল্য এনে দিয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে রাজনীতিতে নিয়োজিত। সুতরাং দেশকে বৈষম্যমুক্ত করতে হবে। 

দেশের তরুণদের জন্য গতানুগতিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে, তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিয়ে গবেষণা করেই পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বৈষম্যহীন সমাজ রূপান্তরের জন্য যে অর্থনৈতিক কর্মসূচি প্রয়োজন তার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমতাবাদী করার উদ্যোগ নিতে হবে। জনক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সর্বক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়। কেবল আইন ও নীতির পরিবর্তন নয়, বরং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে এমন প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে যাতে জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার প্রসার ও স্বাস্থ্যসেবার সমতা না থাকলে সামাজিক বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। বিশেষত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও শহরের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির জন্য উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। উচ্চশিক্ষায় প্রবেশাধিকারকে আরও গণতান্ত্রিক করা প্রয়োজন, যাতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে। 

একই সঙ্গে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদ দূর হয়। রাজস্ব আহরণের কাঠামোয় বৈষম্য দূর করতে হবে। ধনীদের ওপর আনুপাতিক হারে কর আরোপ এবং গরিবদের জন্য কর রেয়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। রাজস্ব ব্যবস্থায় বৈষম্য থাকলে সমাজে আয়বৈষম্য বাড়বে এবং ধনী-গরিবের ব্যবধান আরও গভীর হবে। নতুন রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্র পরিচালনায় তার রাজস্ব নীতিকে বৈষম্য নিরসনের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় সরকারের ব্যাপক ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন। কারণ গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের কাঠামো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের অনুপস্থিতিতে ও জাতীয় সরকারের প্রাধান্যের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নয়ন অসমভাবে ঘটে। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করলে স্থানীয় জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। 

নতুন রাজনৈতিক দলকে বাজেট বরাদ্দ থেকে শুরু করে নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা বৃদ্ধি করার নীতি প্রণয়ন করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের বৃহত্তর যুবসমাজের জন্য যথাযথ ও মানসম্মত কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা ব্যতীত বাংলাদেশ সামনে এগোবে না। নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে শিল্পায়ন, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে বিকশিত করে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বেকারত্ব দূর না হলে সামাজিক বৈষম্য আরও প্রকট হবে। এ ক্ষেত্রে বৃহৎ শিল্পে অর্থায়নের পলিসি পরিবর্তন করে দেশে স্বল্প মূলধনী ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প (এসএমই) খাতে অর্থায়নের মাধ্যমে শিল্প সম্প্রসারণ করে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। 

পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা ন্যায্য পারিশ্রমিক পায়। স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করা জরুরি। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রান্তিক মানুষ ও বিশেষত নারী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ও নাজুক হয়। টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার বাড়াতে পলিসি গ্রহণ করতে হবে। কৃষি খাত আধুনিকায়ন ও তরুণ প্রজন্মকে কৃষি উৎপাদনে উৎসাহী করার পলিসি গ্রহণ করতে হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের উৎপাদন পরিচালনার জন্য সাংগঠনিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

 সাংগঠনিক সক্ষমতার জন্য তাদের উন্নত ও দক্ষ শিল্পায়িত দেশগুলোয় প্রয়োজন হলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বশেষ নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গণতন্ত্র ও সুশাসন নিশ্চিত করা ভিন্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে স্বচ্ছতা, অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র এবং নাগরিক অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে সুশাসনে সহায়ক হবে। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য কেবল রাজনৈতিক সংকল্পই যথেষ্ট নয় বরং কার্যকর নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামোগত পরিবর্তন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস এবং জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ রূপান্তর সম্ভব নয়। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সব শ্রেণির মানুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।

লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক 
[email protected]

সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সুসংগঠিত করা জরুরি

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম
সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সুসংগঠিত করা জরুরি
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে যেকোনো দেশের অর্থনীতি বাইরের পৃথিবীর পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। বহিঃখাত থেকে যে অভিঘাতগুলো আসে তা অভ্যন্তরীণভাবে মোকাবিলার চেষ্টা করতে হয়। আমরা আজও আমাদের অর্থনীতিতে শক্ত ভিত্তির ওপর পুরোপুরি দাঁড়াতে পারিনি। ফলে অর্থনীতি একটা বড় রকম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ আছে। দেশে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এর ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করে মূল্যস্ফীতিকে আরও অসহনীয় করে তুলছে। এর পেছনে বিগত সরকারের অব্যবস্থাপনা বহুলাংশে দায়ী। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ম্যানিপুলেশন করে বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এটা যেন করতে না পারে, সেদিকটা লক্ষ রাখা জরুরি।

বাজার পরিস্থিতি সব সময়ই অস্থির করে তোলে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সেখানে সঠিকভাবে মনিটরিং না থাকার কারণেই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা দ্রুত সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। মূল্যস্ফীতির কবলে পড়ে বিগত কয়েক বছরে বহু লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। কতসংখ্যক তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই। নিম্নমধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের মান ক্রমাগত নিম্নমুখী হচ্ছে। এ পরিস্থিতি এখনই মোকাবিলা করতে হবে। তা না হলে এ সমস্যা দিনে দিনে আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।

 বর্তমানে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিশেষ করে আঞ্চলিক বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। এমতাবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সুসংগঠিত করতে হবে। এটা ভেঙে পড়লে এই অস্থিরতা আরও বাড়বে। দেশে সরবরাহব্যবস্থার সংকট এবং শ্রমবাজারের ওপর থাকা চাপ যদি প্রশমিত না হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির হারের অঙ্কটি অনেক বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে আসন্ন মন্দার ঝুঁকি এড়াতে ভোগ কমানোর চেয়ে বরং উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। আগের বিভিন্ন সময়ের মন্দা আমাদের দেখিয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যখন দুর্বল থাকে, তখন লম্বা সময় ধরে মূল্যস্ফীতি বাড়তে দেওয়া ঝুঁকি তৈরি করে। 

আমাদের এমন সব মধ্যমেয়াদি রাজস্ব পরিকল্পনা করতে হবে, যেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা থাকবে এবং দরিদ্র ও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে আছে- এমন পরিবারকে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট ব্যর্থতা আছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বা বাজার ম্যানিপুলেশন করার জন্য সাধারণত কৃষক বা উৎপাদনকারী দায়ী নয়। দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়িক শ্রেণি। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে থাকে। কৃষক উৎপাদন করে কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই কৃষক বা সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। দেশের সাধারণ মানুষ দিন আনে দিন খায়। হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে গেলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের একটি অংশকে ঋণ করে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ মেটাতে হচ্ছে। 

এখন ভোক্তাঋণের সুদ বাড়ানোর ফলে তারা হয়তো চাপে পড়বেন। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণের সুদহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলা করছে। দেরিতে হলেও আংশিকভাবে আমরা সেই পথে গেছি। তবে বিদ্যমান নীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে করমুক্ত আয়ের সীমা কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে। আমাদের কর সীমা বাড়ানো উচিত। বিগত বছরগুলোতে করমুক্ত আয়ের সীমা একই আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। আর সেটা করতে হলে রাজস্ব আদায় বাড়াতেই হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত খুবই কম। এই অনুপাত অবশ্যই বাড়াতে হবে। যাদের টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) আছে, তাদের সবাই যাতে কর দেয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। করের হার কমিয়েও কিন্তু রাজস্ব আদায় বাড়ানো যায়। 

দেশে আমদানি খরচ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া আরেকটা বড় রকম সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও আমদানির তুলনায় তা অনেক কম। ফলে বিশাল এক ধরনের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এখানে একটি বিষয় খুব তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। দেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয়েছে। যদি এটা হয়ে থাকে, তাহলে যে করে হোক তা বন্ধ করতে হবে। পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে রপ্তানিকারকরা লাভবান হন। প্রবাসীরাও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হয়।

সে ক্ষেত্রে করের আওতা বাড়াতে হবে। যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের সবার কাছ থেকে কর আদায় করতে হবে। নতুন নতুন খাতকে করের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বেগজনক বলতে হবে। অর্থনীতি এখন একটা বেশ বড় সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলা যায়। দেশ থেকে অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে। সেগুলোর আইনি প্রয়োগে যথেষ্ট অবহেলা ছিল। আইনগুলো শক্তিশালী হওয়া দরকার ছিল কিন্তু তা হয়নি। এসব বিষয় অর্থনীতির ভিত্তিকে আরও দুর্বল করেছে। ফলে অর্থনীতি একটা বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে; অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ আছে। অন্য সূচকগুলোর দিকে তাকালে স্বস্তির ব্যাপারও আছে। রপ্তানি আয়ে ধারাবাহিকভাবে বেশ কিছুদিন ধরে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। যে কারণে অযথা ভয় বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি না হয়ে আরও ঝুঁকির মধ্যে আছে। যা মানুষের জীবনযাত্রার মানকে অনেক বেশি নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। এমতাবস্থায় সচেতন হয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে অর্থনীতি আরও বেশি সমস্যাসংকুল হবে। মূল্যস্ফীতির ফলে আমাদের রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমগুলো ও বিনিয়োগ ব্যাহত হলে যেসব সমস্যা আছে, সেগুলোর সমাধান কঠিন হয়ে যাবে। অর্থনীতির সঙ্গে সমাজের অনেক মানুষ সম্পৃক্ত- নীতিনির্ধারক যারা আছে, যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে, যারা উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, প্রান্তিক মানুষের জন্য নিরাপত্তাবেষ্টনী বৃদ্ধি ও সুসংগঠিত করার পাশাপাশি অর্থনীতি পুনর্গঠনে মনোযোগী হতে হবে। 

লেখক: সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ