![রওশন অনড়, ঐক্যের তোড়জোড়](uploads/2023/11/29/1701265173.rowshon_ershad.jpg)
পঞ্চমবারের মতো ভাঙনের আশঙ্কা আরও প্রবল হয়েছে জাতীয় পার্টিতে। গত সোমবার জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর রওশন শিবির থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের মনোনয়নে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
রওশন শিবির থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মনোনয়ন ঘোষণায় তাকে অবজ্ঞা করে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলে পঞ্চমবারের মতো ভাঙন ডেকে এনেছেন। রওশন এরশাদের অনুসারীরা আলাদাভাবে দল গঠনের আভাস দেওয়ায় জাপায় এখন চরম অস্থিরতা ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে জানা যায়, মনোনয়নের ইস্যুতে আবারও আলোচনার টেবিলে বসছেন দুই পক্ষের নেতারা। রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের সমঝোতার পর ঘোষিত মনোনয়ন তালিকায় ফের কাটাছেঁড়া হতে পারে বলে মিলেছে আভাস। সোমবার দলের প্রার্থিতা পাওয়া নেতারা এখন আশঙ্কায়, যদি চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়ে যায় তাদের নাম!
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মনোনয়ন ঘোষণার দিনে বলেছেন, তারা ময়মনসিংহ-৪ আসনটি রওশন এরশাদের জন্য ফাঁকা রেখেছেন। সংকটের সূত্রপাত হয় রংপুর-৩ আসনে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রার্থী হওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা এলে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য তার ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ)। ছেলে সাদকে মনোনয়ন না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন রওশন এরশাদ। নিজের মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে তিনি জানিয়ে দেন, এবার তিনি জাপার প্রার্থী হবেন না।
সাদ এরশাদ ইস্যুর সুরাহা হয়ে যাবে বলে আভাস দেন জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। সাদ এরশাদের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘রংপুর-৩ আসনে এখন এমপি সাদ এরশাদ। তবে তার আগে জি এম কাদের কিন্তু এই আসনে এমপি ছিলেন। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ওই আসনে ইলেকশন করার অপশন তার আছে। এখন সাদ এরশাদ যদি অন্য কোনো আসনে নির্বাচন করতে চান, তবে তার সুযোগ আছে। সাদ এরশাদ অন্য কোথাও ইলেকশন করতে চাইলে সেটি আমাদের বলুক। আমরা তাকে সহযোগিতা করব।’
পঞ্চম দফায় বড় ভাঙনের মুখে থাকা দলকে বাঁচাতে রওশন এরশাদও ঐক্যের আভাস দেন। গতকাল সকাল থেকে গুলশানে রওশনের বাসভবনে তার অনুসারী নেতাদের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের পরে রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, ‘তিনি (রওশন এরশাদ) বিভক্ত জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চান না। তিনি বারবার বলছেন, নির্বাচনে যেতে হলে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টিকে যেতে হবে।’
রওশন অনুসারী এক নেতা জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হতে রওশন এরশাদের শর্ত ছিল তার অনুসারী ৩০-৩২ জন নেতার মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে হবে জি এম কাদেরকে। অনেক দেনাদরবারের পর তা নেমে আসে ১৫ জনে। তবে দল থেকে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত এবং দলে নিষ্ক্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দিতে রাজি হননি জি এম কাদের। শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার কথা।
সোমবার জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু জানান, এবারের নির্বাচনে জাপা ২৮৯টি আসনে প্রার্থী দেবে। ১১টি আসন এখনো ফাঁকা রেখেছে দল। তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল ৩০ নভেম্বর দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। সে হিসেবে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন তালিকা কাটাছেঁড়া করার সুযোগ রয়েছে মাত্র এক দিন। ওই ১১টি আসনের দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছেন রওশন অনুসারীরা।
মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দল থেকে যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের বিষয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।’
সোমবার মনোনয়ন ঘোষণার পর দলের শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী অফিসে নিজের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে চলে গেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয় ছিল প্রায় শূন্য। গতকাল বনানীতে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও আনাগোনা ছিল কম। জাপা চেয়ারম্যানের দুজন উপদেষ্টার সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির যে সদস্যরা এসেছিলেন, গতকাল সকালে তাদের সবার একটাই প্রশ্ন ছিল- রওশন এরশাদের বিষয়টি কখন সুরাহা হবে।
তারা আশঙ্কা করছেন, শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নিলে জাতীয় পার্টির ভাঙনের সব আনুষ্ঠানিকতা সেখানেই সম্পন্ন হবে। রওশন এরশাদ সরকার ঘনিষ্ঠ বলে দলের কো-চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের অনেকেই তখন রাজনৈতিক সুবিধা নিতে তার মুখাপেক্ষী থাকেন। দল ভাঙলে এই নেতারা রওশন শিবিরে ভিড়তে দেরি করবেন না বলে মন্তব্য করেন তারা। তখন জি এম কাদের চরম বিপদে পড়বেন।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এই আশঙ্কার কথা জানেন জাপার শীর্ষ নেতারাও। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই পক্ষই চাচ্ছে দ্রুত রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের দ্বন্দ্বের সুরাহা হোক।