![বাজেটে প্রধান সংকট দ্রব্যমূল্য, ডলারের ক্রমবর্ধমান মূল্য : সিপিবি](uploads/2024/05/15/CPB-1715783954.jpg)
আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের ক্রমবর্ধমান মূল্যকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলেন, বাজেটে অর্থনৈতিক বাস্তবতা, সরকারের শ্রেণিগত পক্ষপাতিত্ব ও উন্নয়ন দর্শনের গতিমুখের একটি প্রতিফলন দেখা যাবে।
বুধবার (১৫ মে) রাজধানীতে সিপিবির প্রধান কার্যালয়ে ‘বাজেট: গণমানুষের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে এই প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এ ছাড়া সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি কৃষক, শিক্ষক, বিভিন্ন খাতের শ্রমিক, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, নারী ও যুবক সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দ্রব্যমূল্য ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার- এসব অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, লুটেরা রাজনীতির সংকট। এ জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল সংস্কার জরুরি। আসন্ন বাজেটে খাদ্য-কাজ-চিকিৎসা-শিক্ষা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ওই বরাদ্দের টাকা যাতে সংশ্লিষ্টদের জন্য দুর্নীতি, দলবাজি ও স্বজনপ্রীতি ছাড়াই যাতে খরচ হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
তারা বলেন, বাজেটের আগে সরকার ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বড়লোকদের সঙ্গে সংলাপ করে। যারা দেশের টাকা পাচার করছে, ব্যাংকের টাকা নিয়ে শোধ করে না, তাদের সঙ্গে সংলাপ করে। অথচ দেশের অর্থনীতির চাকা যারা সচল রেখেছে, সেই শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সংলাপ করে না। কমিউনিস্ট পার্টি এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করল তারা প্রকৃতপক্ষে গণমানুষের রাজনৈতিক দল।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের ঘনিষ্ঠজনই বলতে শুরু করেছেন যে বিদেশে অর্থ পাচারের শতকরা ৯০ ভাগ ঘটছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরেই ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য মিলেছে, যা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ৬৫ ভাগ বেশি। বর্তমানে ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীরা ক্ষমতা কাঠামোয় যে রকম শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছেন, তাতে তাদের ট্যাক্সের আওতায় আনা না গেলে সরকারি বাজেটের আয় দিয়ে ব্যয় সংকুলান করা যাবে না। পাচারের টাকা ফেরত আনতে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের নাম প্রকাশ ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন তিনি।
অধ্যাপক আকাশ আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যেটুকু প্রবৃদ্ধির সূচক দৃশ্যমান হয়েছে, তার মূলে রয়েছেন আমাদের কৃষক, পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিক, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পের অসংখ্য উদ্যোক্তা। এসব উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠীকে আরও বিকাশের সুযোগ প্রদান ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্য-নিরসনকারী উন্নয়ন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।’
অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনা করে বাজেট প্রণীত হচ্ছে। তাতে আসল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এর মূল কারণ রাজনৈতিক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ডলারসংকট এগুলো আসলে মূল সংকটের বহিঃপ্রকাশ। ডলার দেশে যথাযথভাবে আসে না, আবার ডলার দেশ থেকে চলে যায়। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া সম্পদের লুটপাট ঠেকানো যাবে না।
অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নামে কয়েকটি খাতে শুধু বরাদ্দ দিয়ে দেশের মানুষের সংকট সমাধান করা যাবে না। সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল কথা হবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ে মানুষের দায়িত্ব নেওয়া। আমাদের অর্থনীতি সেটা বহন করতে পারে। করের টাকা লুটপাট নয়, জনস্বার্থে ব্যবহার করতে হবে।’
সভায় সিপিবি নেতারা বলেন, সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আবার ঋণ করে ঋণ শোধ করার ধারা চলার মধ্য দিয়ে ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে চলবে। আইএমএফ এবং কিছু দেশের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। কিন্তু এসব শক্তির নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারবে না।
সিপিবি নেতাদের ভাষ্যমতে, এবার সরাসরি আইএমএফের নির্দেশে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার নামে মূল্যবৃদ্ধির উৎসব দেখা যাবে।