![মেসেজিং অ্যাপসের সাতকাহন](uploads/2024/06/25/ron-fd-1719320159.jpg)
ইমো: নিত্যদিনই কানের পাশে শতবার উচ্চারিত এ অ্যাপসটির অপর নাম ‘স্বামী বিদেশ অ্যাপ’, যা অনেক অবিবাহিতা মেয়েই জানে না। না জানাটাও দোষের কিছু না। দেখা যায়, বাংলাদেশের বিদেশগামী পুরুষরা বিদেশে রওনা করার আগে প্লে-স্টোর থেকে ইমো অ্যাপটি ইনস্টল করে দিয়ে যায় তাদের স্ত্রীর ফোনে।
কোন রাজার আমলে এবং কীভাবে মানুষের দাম্পত্য জীবনে এই অ্যাপটি এল, কতবার এবং কেন ইনস্টল হলো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে ধৈর্য ধরে নারীরা এই অ্যাপস চালায় তা খতিয়ে দেখার বিষয় বলে জানিয়েছেন অনেক অবিবাহিত পুরুষ। এমনকি এটি একটি অনার্স লেভেলের রিসার্চের বিষয় হতে পারে বলে জানিয়েছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র। তাছাড়া ভুক্তভোগী অনেক ছেলেই জানিয়েছেন পারিবারিক চাপে পড়ে তাদের মোবাইলে এই অ্যাপস রাখতে হয় অন্যথায় তারা অনেক আত্মীয়ের চোখে ‘সেকেলে’ এবং পরিশেষে ‘খ্যাত’ তকমা পায়।
হোয়াটসঅ্যাপ: এর অপর নাম ‘ছবি আদান-প্রদান অ্যাপস’। ক্যাম্পাস বা অফিস, ট্যুর বা প্রোগ্রাম, গায়ে হলুদ বা বিয়ে যেকোনো প্রোগ্রামে ছবি তোলার দায়িত্ব থাকে যার মোবাইলের ক্যামেরার মেগাপিক্সেল ভালো এবং হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল আছে। অনেকটা চাপে পড়ে, কিছুটা দায়িত্ববোধ থেকে এবং অতি সামান্যই ভালো ক্যামেরাওয়ালা মোবাইলের ফুটানি দেখাতে গিয়ে নিজের আনন্দের বারোটা বাজিয়ে অপরের শত শত ছবি তুলে গ্যালারি ভর্তি করতে হয়। প্রোগ্রাম শেষে বাসায় ফিরতে না ফিরতেই চারদিক থেকে সিম কোম্পানির মতো ফোন আসতে থাকে। জাতীয় আন্দোলনগুলোর স্লোগানের মতো সবার একটাই চাওয়া, আজকের প্রোগ্রামের ছবিগুলো দিস।
হোয়াটসঅ্যাপে দিস নতুবা ছবি ‘ফেটে যাবে’। এই ফেটে যাবে ধারণা থেকেই হোয়াটসঅ্যাপের এত প্রচার এবং প্রসার বলে জানিয়েছেন নাখালপাড়ার মুদি দোকানদার কেরামত চাচা। জানা গেছে, বাজার সমিতির বার্ষিক মিটিংয়ে আরেকজনের ভালো মেগাপিক্সেল সম্পন্ন মোবাইলে তোলা ছবিগুলো আনতে তিনি সম্প্রতি মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করেছেন। তাই হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কে অল্প বিস্তর ভালোই জানেন।
ফেসবুক: ‘পরের ধনে পোদ্দারি’ বলে বাংলায় একটা প্রবাদ আছে। ফেসবুক ইউজারদের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। মার্ক জাকারবার্গ নামক আড্ডাবাজ এক ক্যাম্পাস ড্রপআউট ব্যক্তি বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাস শেষে বাসায় এসে রাতেও আড্ডা দেওয়ার জন্য এই অ্যাপস বানান বলে জানা গেছে। কিন্তু হরহামেশাই দেখা যায়, জাকারবার্গ বইয়ে মুখ গুঁজে থাকেন আর তার ফেসবুক (বাংলায় পড়ুন মুখবই) নামক সম্পত্তিতে (পৈতৃক সম্পত্তি নয়) অন্যরা মশগুল হয়ে থাকেন।
সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে তা এখন বাংলাদেশেও চলে এসেছে। ফেসবুক নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বিশিষ্ট ফেসবুক ইউজার এঞ্জেল নার্গিস আপার কাছে, যার দুটি অ্যাকাউন্ট আছে, তার মধ্যে একটা ফেক। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মানুষ ফেসবুকের দোষ নিয়ে কেন যে ফেসবুকেই স্ট্যাটাস ঢালেন তা বুঝে উঠতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ফেসবুকে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে আরও সচ্ছল করতে পারেন। পদ্ধতিগুলো জিজ্ঞেস করায় তিনি আর কিছু বলেননি। সম্ভবত তিনি আলঝেইমার রোগে ভুগছেন বা অন্যের ভালো দেখতে পারেন না।
ভাইবার: এই অ্যাপস সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যাদের মোবাইলে এই অ্যাপস ইনস্টল করা তাদের পূর্বপুরুষরা ভারতবর্ষের কোথাও না কোথাও জমিদারি করেছেন।
মেসেঞ্জার: প্রেমবান্ধব অ্যাপস। কপোত-কপোতীরা এখন অ্যানালগ যুগের মতো চিঠি আদান-প্রদান করেন না। কারণ চিঠি পাঠালে তা অপর পক্ষের বাবা-মার হাতে পড়ার ৯৩ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। বাকি ৭ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে বাসার দারোয়ান বা বড় ভাবির হাতে পড়ার। তখন তাদের ঘুষ দিয়ে চিঠি ফেরত আনতে হয়। ঘুষের খরচ বাঁচাতে কপোত-কপোতীরা এখন ব্যবহার করেন মেসেঞ্জার। কেউ টেক্সট করলে বড়জোর টুংটাং আওয়াজ হয়।
আবার অপেক্ষাকৃত নতুন যুগলরা সেই সাউন্ডটাও গলা টিপে বন্ধ করে রাখেন পাছে কেউ জেনে যায় এই ভয়ে। পকেট খরচ বাঁচিয়ে এখন ডেটা প্যাক কিনে তারা তাদের ভালোবাসার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন এই মহান অ্যাপের মাধ্যমে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে তারা সুদূর রোম শহরের বাসিন্দা মিস্টার ভ্যালেন্টাইনের পাশাপাশি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সেই ব্যক্তিকে যার মাথা থেকে এই মেসেঞ্জারের আইডিয়া এসেছিল। তবে এই অ্যাপস নিয়ে নাখোশ বল্টুদের বাড়ির দারোয়ান।
তিনি জানান, আগের মতো আর বল্টুর বড় বোনের চিঠি ধরা পড়ে না তার হাতে। তাই তিনি এই অ্যাপের ঘোরতর বিরোধী। তবে তিনি ইমোর বিরাট ভক্ত বলে জানান। কিন্তু মনে তো একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, তিনি তো বিদেশে থাকেন না, তবে কেন তিনি এই ইমো ব্যবহার করেন?
কলি