![আবুল মিয়া এবং দৈত্য চিনি](uploads/2024/06/04/rong-jabe-1717498346.jpg)
আবুল মিয়া যখন বাজার থেকে রওনা হলেন, তখন রাত ১১টা বেজে গেছে। বাজারে তার মিষ্টির দোকান আছে। প্রতিদিন ১০টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন, কিন্তু আজ কাস্টমারের চাপ বেশি থাকায় দেরি হয়ে গেছে।
অন্য দিনের মতো আজও রাস্তার বাতিগুলো বন্ধ। টর্চ লাইটটা না থাকলে ভারি বিপদে পড়তে হতো। তবু ধীরে ধীরে একসময় বাড়ির কাছাকাছি চলে এলেন। হঠাৎ আবুল মিয়া খেয়াল করে দেখেন, রাস্তার পাশে একটা বোতল পড়ে আছে। কী মনে করে সেটিতে লাথি মারতেই এক আজব ঘটনা ঘটল। সেটির মধ্য থেকে শোঁ শোঁ শব্দে ধোঁয়া বের হতে লাগল। তা দেখে আবুল মিয়া দিলেন দৌড়। পাশের বড় আমগাছের গোড়ায় মুহূর্তেই লুকিয়ে পড়লেন। দেখতে লাগলেন কী হয়। একসময় সেই ধোঁয়া বিরাট এক দৈত্যে রূপ নিল। তারপর সেই দৈত্য কয়েকবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘কে আমাকে বোতলের মধ্য থেকে বের করল রে?’
আবুল মিয়া এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো সব দেখছিলেন। হঠাৎ তার মনে হলো, এটা প্রদীপের দৈত্য ছাড়া কেউ না। সে পৃথিবীর বহু মানুষের ইচ্ছা পূরণ করেছে। তার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকার কিছু নেই। তার সামনে গেলে সে-ও আমার ইচ্ছা পূরণ করবে।
অগত্যা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আবুল মিয়া এক দৌড়ে দৈত্যের কাছে এসে বললেন, ‘ভাই সাহেব, আপনার নাম মনে হয় জিনি? আমি আপনার কথা অনেক শুনেছি। আপনি নাকি সবার ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন? আমারও ইচ্ছা পূরণ করেন না!’
আবুল মিয়ার আবদার শুনে দৈত্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘দেখুন মহোদয়, আমার নাম জিনি না। আপনি যার কথা বলছেন, তিনি আমার নানা। আজ থেকে আড়াই শ বছর আগে এক ভদ্রলোকের আবদার পালন করতে গিয়ে খনি দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।’
আবুল মিয়া অবাক। তিনি বললেন, ‘আমি আপনার কথা বুঝলাম না।’
দৈত্য বলল, ‘এক ভদ্রলোক জিনি নানার কাছে দুই শ মণ সোনা চেয়ে বসলেন। নানা তার জন্য সোনা আনতে চীনের এক সোনার খনিতে ঢুকতেই দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনায় মাটিচাপা পড়ে আমার নানা নিহত হন।’
দৈত্যের মুখ থেকে জিনির কথা শুনে আবুল মিয়ার মনটাই ভেঙে গেল। তিনি বললেন, ‘তাহলে আপনি কে?’
দৈত্য বলল, ‘বললাম তো, আমি জিনি দৈত্যের ছেলের ঘরের নাতি। আমার নাম চিনি।’
আবুল মিয়া বললেন, ‘তাহলে আপনি অন্তত একটা ইচ্ছা পূরণ করেন। আপনার নানা পারলে আপনি পারবেন না কেন? আমার ইচ্ছা, গুলশানে ছয় কাঠা জমির ওপর একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি।’
আবুল মিয়ার কথা শুনে চিনি দৈত্য বলল, ‘আমার যদি বাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা থাকত, তাহলে আমি কি এই বোতলে বাস করি? আমি নিজেই তো একটা বাড়িতে থাকতাম। সত্যি কথা কী, আমার নানা লোকজনকে এত কিছু দিয়েছে যে নিজের নাতিদের জন্য কিছুই রাখেনি। সে কারণে আমার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। তিন দিন ধরে এই বোতলের মধ্যে না খেয়ে বসে আছি। আপনি যদি দয়া করে আমাকে এক বেলা নাশতা করান, তাহলে খুব উপকার হয়।’
চিনির কথা শুনে আবুল মিয়া থ। বাড়ি পাবে কী, উল্টো দৈত্যকে ফ্রি খানা খাওয়াতে হচ্ছে। তিনি চিনিকে বললেন, ‘আচ্ছা আচ্ছা, আর বলতে হবে না। আপনার নানা এত ভালো দৈত্য ছিলেন। এত মানুষের উপকার করেছেন। তার নাতিকে এক বেলা খাওয়াতে পারাটা আমার সৌভাগ্য। চলেন আমার বাসায়। কাঁচকলা দিয়ে শিং মাছের তরকারি আছে। একসঙ্গে খাব।’
অগত্যা চিনি দৈত্য তার বোতলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। সেই বোতল হাতে নিয়ে আবুল মিয়া বাড়ির দিকে রওনা হলেন।
বাড়ি পৌঁছে বউকে সব খুলে বলার পর তিনি প্রথমে ভয় পেলেও পরে চিনির সঙ্গে মানিয়ে নিলেন। ভরপেট খানা খেয়ে আবুল মিয়া যখন ঘুমাতে যাবেন, তখন চিনি দৈত্য এসে বলল, ‘আবুল ভাই, বলছিলাম কী, আমি আরও একটা সমস্যায় পড়েছি। আপনি যদি সমস্যাটা একটু শুনতেন!’
আবুল মিয়া বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে বললেন, ‘আবার কী হলো?’
চিনি বলল, ‘হয়েছে কী, আমার গার্লফ্রেন্ড মিডলইস্টে থাকে, মানে দুবাই আর কি। আমি সেখানে যাব যাব করছিলাম, কিন্তু ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে যেতে পারছি না। এদিকে ওর সঙ্গে সাত মাস ধরে কথাবার্তাও হচ্ছে না।’
আবুল মিয়া বললেন, ‘কথা হবে না কেন? একটা মোবাইল কিনে নিলেই পারেন।’
চিনি দৈত্য বলল, ‘সেটাই তো সমস্যা। মোবাইল কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা আমার হাতে নেই। তার ওপর বায়োমেট্রিক নিবন্ধন না থাকলে মোবাইলের সিম কেনা যায় না। আমার তো তা-ও নেই।’
আবুল মিয়া বললেন, ‘দেখেন চিনি ভাই, আপনাকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকা আমার হাতে নেই। আমি গরিব মানুষ। বাজারে হোটেল চালাই। আমার কাছে কি মোবাইল কিনে দেওয়ার মতো টাকা থাকে, বলেন?’
চিনি দৈত্য বলল, ‘আবুল ভাই, আপনাকে টাকা দিতে হবে না। আপনি যদি আপনার দোকানে আমাকে একটা কাজ দেন, তাহলে এক মাসের বেতন দিয়ে আমি একটা মোবাইল কিনে ফেলতে পারব।’
আবুল মিয়া বললেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। এমনিতে আমার দোকানে একজন লোকের দরকার। আপনি থাকলে লোকজন আপনাকে দেখার জন্য হলেও আমার দোকানে আসবে। চা-মিষ্টি খাবে। ঠিক আছে, কাল থেকে আমার দোকানে লেগে যান। হাজার হোক, জিনি দৈত্যের নাতির উপকার করতে পারার মধ্যেও শান্তি আছে।’
কলি