![আনার হত্যাকাণ্ড : গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে ফিরছে ডিবি টিম](uploads/2024/05/29/MP_Azim_DB-1717000078.jpg)
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কলকাতায় আসা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ একেবারে খালি হাতে ফিরছেন না। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ঢাকায় ফিরছে ডিবিপ্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্তকারী দলটি। গত মঙ্গলবার (২৮ মে) কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেন আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে আনারের মাংসখণ্ড উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া এমপি আনোয়ারুল আজীমের হত্যারহস্য-সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে নিয়েই ঢাকায় ফিরছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি এবং কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
এদিকে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এবার নেপাল যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির একটি টিম। তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কর্মকর্তারা। আনার খুনের পর অন্যতম অভিযুক্ত সিয়াম নেপালে পালিয়ে গেছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি খুনের মূল হোতা আখতারুজ্জামান শাহীন বাংলাদেশ থেকে দিল্লি হয়ে প্রথমে নেপালের কাঠমান্ডু যান বলে খবর রয়েছে। তাই তদন্তকারীরা যাচ্ছেন নেপালে।
সিআইডি সূত্রের খবর, খুনের ঘটনার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সিয়াম। দেহ লোপাটেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। নিউ টাউনের কাজ শেষ করেই তিনি পালান। তদন্তকারীরা মনে করছেন, নেপালেই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন সিয়াম। অন্যদিকে প্ল্যান ছকে দেওয়ার পর গত ১০ মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে পালান আনারের বাল্যবন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীন। খুন এবং দেহ পাচার সম্পন্ন করার পর বেশির ভাগ অভিযুক্ত বাংলাদেশে ফিরে যান। এরপর সেখান থেকে দিল্লির বিমান ধরেন। সেখান থেকে কাঠামান্ডু চলে যান। তাই সেখানেই যাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে বুধবার (২৯ মে) সকাল থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙড়ের জিরানগাছার রাস্তায় বাগজোলা খালের কৃষ্ণমাটি ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় রুটিন তল্লাশির পাশাপাশি আবাসন লাগোয়া হাতিশালা জলাশয়েও শুরু হয়েছে জোরদার তল্লাশি।
এর পাশাপাশি কলকাতায় আসার কথা রয়েছে এমপি আনারের মেয়ের। তিনি এলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে তদন্তকারীদের। খুব শিগগিরই কলকাতায় আসার কথা তার। উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরো এবং চুলের ডিএনএর সঙ্গে আনোয়ারুলের কন্যার ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য, মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন কলকাতায় বাবার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছিলেন।
ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ‘আমরা সংসদ সদস্যের কন্যাকে অনুরোধ করেছি কলকাতায় আসার জন্য। তার উপস্থিতি তদন্তের অগ্রগতিতে সাহায্য করবে। তিনি কলকাতায় এলে দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘তদন্ত ঠিক পথে এগোচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত চলবে। আমরা এখনো বাকি দেহাংশ উদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী। সিআইডিকে আমরা হাতিশালা কাঠের ব্রিজ লাগোয়া এলাকায় তল্লাশি চালানোর জন্য অনুরোধ করেছি। আমাদের হাতে ইতোমধ্যে যা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তাতে এই অপরাধীদের সাজা দিতে বেশি বেগ পেতে হবে না।’
হারুন বলেছেন, ‘ঘাতকদের আমরা ধরে ফেলেছি। তার পাশাপাশি কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ এবং ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া শিলাস্তি রহমানের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে।’
‘ডিজিটাল প্রমাণ’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গোয়েন্দাপ্রধান জানিয়েছেন, সিসিটিভিতে একজনকে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তাকে বের হতে দেখা যাচ্ছে না। বরং বাকি সন্দেহভাজনদের ট্রলি ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণগুলো প্রথমে সংকলিত করে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। তার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের তরফে দুটি জায়গায় তল্লাশি চালানোর জন্য সিআইডিকে অনুরোধ করা হয়েছিল। একটি হলো যে আবাসনে আনারকে খুন করা হয় তার সেপটিক ট্যাংক ও আবাসনের পাশের একটি খাল। সেই অনুরোধ মতো সিআইডি সিএসএফএলের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ট্যাংকে তল্লাশি চালানো হয়। সেই ট্যাংক থেকে প্রচুর ছোট ছোট মাংসের টুকরো পাওয়া গেছে। এসব মাংসের ওজন সব মিলিয়ে প্রায় ৪ কেজি। পাশাপাশি পাওয়া যায় কয়েক গাছি চুলও। এখন ফরেনসিক পরীক্ষার পর বোঝা যাবে ওই মাংস কোনো মানুষের কি না। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান মাংস ছোট টুকরো করে তা কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশি করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আনোয়ারুল আজীমের খুনের এই রহস্য উদঘাটনে উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করছে। এই বিষয়টি ভবিষ্যতে আন্তর্দেশীয় তদন্তের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাতে পারে।