![শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ৫ দফা অদল-বদলের পর আবার দ্বন্দ্ব](uploads/2024/07/04/monsur-1720065863.jpg)
প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ দফা নাম ও মালিকানা অদল-বদলের পর আবারও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়াল রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
একটি ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত এই হাসপাতালটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসচিব দাবিদার ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরীর সাম্প্রতিক তৎপরতাকে ঘিরে নতুন দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে।
গত ২৭ জুন ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী ওই কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে অধ্যক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন।
এই হাসপাতালের পেছনের ঘটনাপ্রবাহ খুঁজে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির সরকারের আমলে লিবিয়াফেরত কিছু ব্যক্তির অর্থায়নে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সহায়তায় রাজধানীর মিরপুরে উম্মাহ ট্রাস্ট তৈরি করে একটি হাসপাতাল চালু করা হয়। পরে ১৯৯৪-৯৫ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে বিএনপি-সমর্থিত একটি গ্রুপ নিজেদের দখলে নিয়ে এটির নাম পরিবর্তন করে ভাসানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নাম দেয়।
১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিমের সহায়তায় একদল চিকিৎসক এই প্রতিষ্ঠানটিকে মিরপুর থেকে উত্তরায় স্থানান্তর করে শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামকরণ করেন। তখন এর প্রকল্প পরিচালক করা হয় স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরীকে।
সরকারের পালাবদলের মধ্য দিয়ে ২০০১ সালের অক্টোবরের পর আবার নাম পরিবর্তন করে মওলানা ভাসানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নাম দেওয়া হয় এবং মওলানা ভাসানী ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজটি পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ট্রাস্টের ও পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মনোনীত হন মোসাদ্দেক হোসেন। পরে আবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলেজের নাম শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ পুনঃপ্রর্বতন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে মওলানা ভাসানী ট্রাস্ট থেকে মনসুর আলী ট্রাস্টের অধীনে নিয়ে আসা হয়।
এ সময় ট্রাস্টের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মনোনীত হন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মো. নাসিমের পত্নী লায়লা আরজুমান্দ এবং সদস্যসচিব হন ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী। এভাবে চলার একপর্যায়ে ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরীকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়। কমিটিতে চেয়ারম্যান পদে লায়লা আরজুমান্দ রয়ে যান এবং সদস্যসচিব হন বর্তমান এমপি মো. নাসিমের বড় সন্তান তানভীর শাকিল জয়। আর পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান হন মেজো সন্তান তমাল মনসুর। এখন পর্যন্ত এভাবেই চলে আসছে।
তবে গত ২৭ জুন দুপুরে বর্তমান স্বাচিপ সভাপতি ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী হঠাৎ করেই উত্তরার শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের রুমে ঢুকে নিজেকে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসচিব দাবি করে ওই ভবনে নিজের জন্য একটা অফিস রুম রেডি করে দিতে বলেন। একই সঙ্গে সদস্যসচিব হিসেবে এখন থেকে কলেজ পরিচালনায় তার কাছে সব ধরনের জবাবদিহি ও অনুমোদন নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেন। ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী ও ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন দুজনই খবরের কাগজের কাছে এই তথ্য সত্য বলে স্বীকার করেন।
ডা. জামাল উদ্দীন চৌধুরী দাবি করেন, তাকে সরিয়ে দেওয়া হলেও এখনো জয়েন্ট স্টকে কাগজে-কলমে ট্রাস্টের সদস্যসচিব পদে তার নামই রয়ে গেছে। ফলে তিনি এখনো বৈধ সদস্যসচিব আছেন এবং এ জন্যই তিনি তার বৈধ দায়িত্ব বুঝে নিতে ক্যাম্পাসে গেছেন এবং যাবেন। তিনি কোনো অন্যায় করেননি।
অন্যদিকে ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, স্বাচিপ সভাপতি নিজের পদ দাবি করে তার কাছে জবাবদিহি করার জন্য চাপ দেন। পাশাপাশি স্বাচিপ সভাপতির সঙ্গে থাকা অন্যরা তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ফলে বিষয়টি তিনি বোর্ডের সেক্রেটারি ও সংসদ সদস্য তানভীর শাকিলকে অবহিত করেন এবং উত্তরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবরেও বিষয়টি লিখিত দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় খবরের কাগজকে বলেন, ‘স্বাচিপ সভাপতি নিজেকে যেভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যসচিব বা সম্পাদক দাবি করছেন সেটা ঠিক নয়। তিনি ভুল বলছেন। কারণ ২০১৫ সালেই ট্রাস্টি বোর্ডের পরিবর্তন করে আমাকে সেক্রেটারি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনা আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন বিষয়টি যাতে আর সামনে না এগোয়, সেভাবে তিনি দেখবেন।’