ঢাকা ২১ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

কিলিং মিশন শেষে সিয়ামের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন ফয়সাল

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১১:১৭ এএম
কিলিং মিশন শেষে সিয়ামের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন ফয়সাল
মোস্তাফিজুর রহমান-ফয়সাল আলী সাহাজী-সিয়াম

কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেনে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর বিভিন্ন স্থানে গা-ঢাকা দেন খুনিরা। এ খুনের মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। অপর কিলার জিহাদ কলকাতায় গা-ঢাকা দেন। বাকিরা পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। খুনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে সিয়াম নেপালে পালিয়ে যান। এ সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল সাহাজীও নেপালে সিয়ামের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে তিনি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। 

নেপালের ‘গন্ডকীর দুলিয়া’ নামক এলাকায় সিয়াম তার এক পূর্ব পরিচিত সুপারি ব্যবসায়ীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সিয়াম ওই ব্যবসায়ীকে বলেছিলেন যে, ফয়সাল তার বন্ধু। তার কাছে বেড়াতে এসেছে। এতে ওই ব্যবসায়ী কিছুই বুঝতে পারেননি। নেপালে যাওয়ার পর সিয়ামের অর্থ ফুরিয়ে এসেছিল। সিয়াম তখন ফয়সালকে কলকাতা ফেরত যাওয়ার নিদের্শ দেন। 

পরে ফয়সাল কলকাতায় এসে তার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। বাংলাদেশে এসে প্রথমে ঝালকাঠি এবং পরে সীতাকুণ্ডের একটি মন্দিরে আত্মগোপন করেন। পরে ঢাকার ডিবি পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতায় তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে নেপাল পুলিশ সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সিয়াম এখন কলকাতার জেল-হাজতে রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। 

এ দুটি মামলায় ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭ জন। তারা হলেন- শিলাস্তি রহমান, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজি, ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল সাহাজী। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যার ঘটনা ঘটেছে কলকাতায়। যেহেতু এই মামলার পিও (ঘটনাস্থল) কলকাতা, সেহেতু এই মামলার মূল তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশ। যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক কলকাতায় খুন হয়েছেন এ জন্য ডিবি পুলিশ শুধু ছায়া তদন্ত করছে। তাই খুনের মোটিভ কী আসে এর জন্য কলকাতা পুলিশের দিকে লক্ষ রয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের। এ ছাড়াও আনারের পরিবার কলকাতায় যাওয়ার পর ডিএনএ পরীক্ষার কী ফল আসে তার দিকেও নজর রয়েছে ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। 

সূত্র জানায়, কলকাতায় আনার হত্যার পর ঢাকার ডিবির পক্ষ থেকে ছায়া তদন্ত শুরু হয়। শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা হওয়ার পর এই তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের খুব শিগগির আবার কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে। ডিবির দল কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশে আনার হত্যাকাণ্ডের ছায়া তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কলকাতায় পুলিশ অবহিত করবে। 

মোস্তাফিজুরের দায় স্বীকার

হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে করা মামলার অন্যতম আসামি মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল এই জবানবন্দি দেন তিনি। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার মোস্তাফিজুর রহমান স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় পুলিশ এদিন আদালতে তাকে হাজির করে। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান তা রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। এ নিয়ে এই মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজন আদালতে জবানবন্দি দিলেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গত ২৬ জুন আনার হত্যায় জড়িত ফয়সাল আলী সাহাজী ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন ২৭ জুন আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

সিলেট নৌ-পুলিশের অঞ্চল আছে, ইউনিট নেই

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:০২ পিএম
নৌ-পুলিশের অঞ্চল আছে, ইউনিট নেই
সিলেটের হরিপুরবাজার এলাকায় এ নৌপথেই চোরাই চিনি পরিবহন করা হয়। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেটের পিয়াইন নদ ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি চ্যুতিস্থলের সঙ্গে যুক্ত। সীমান্তের ডাউকি-জাফলং হয়ে বেশ কয়েকটি উপজেলার নদ-নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে প্রবাহিত। গত ৩০ জুন ভোরের দিকে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ছৈলাখেল এলাকার পিয়াইন নদের উত্তর পাড়ে ভারতীয় চোরাই চিনি নৌপথে পারাপার চলছিল। কিন্তু সে সময় মামারবাজার পয়েন্টে অবস্থান করছিল একদল পুলিশ। বেলা সাড়ে ৩টায় তারা অভিযান চালায়। কিন্তু সময়ক্ষেপণের ফলে টের পেয়ে পালায় চোরাচালানিরা। একজন চোরাকারবারি আটকসহ ইঞ্জিনচালিত স্টিল বডির নৌকার মধ্য থেকে ভারতীয় ৫০ কেজি ওজনের ১১৫ বস্তা চোরাই চিনি জব্দ করে পুলিশ। 

জাফলংয়ে থানা-পুলিশ ও পাশাপাশি তৎপর পর্যটন পুলিশ। নৌপথে থাকার কথা নৌ-পুলিশের। কিন্তু সেখানে নেই কোনো ফাঁড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ‘সিলেট অঞ্চল’ নামে নৌ-পুলিশের একটি আঞ্চলিক দপ্তর থাকলেও সিলেটের নৌপথ সুবিধার উপজেলাগুলোতে নেই কোনো ইউনিট।

বন্যার সময় সিলেট অঞ্চলের নৌপথগুলো সচল হওয়ায় সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার রুটগুলোতে নৌপথে চিনি, ওষুধ, কসমেটিকসসহ নানা ভারতীয় পণ্য অবৈধভাবে আনা হয়। বর্ষাকালে নদীগুলোতে ভারতের পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ার ফলে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে নৌপথে চোরাচালান বাড়ে। নৌ-পুলিশের কোনো ইউনিট না থাকায় নিশ্চিন্তেই চোরাচালান করে চোরাকারবারিরা।

সরেজমিনে জানা যায়, বিভিন্ন সময় বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাঁড়াশি অভিযান চালান। কিন্তু নৌপথে নজরদারি থাকলেও চোরাকারবারিদের ঠেকানোর জন্য পর্যাপ্ত জলযান বা আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি না থাকায় তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে না নৌ-পুলিশ। তাই নৌপথ পাড়ি দিয়ে যখনই সড়কপথে চোরাই পণ্য পরিবহন করা হয়, তখন সেগুলো জব্দ করে পুলিশ। 

আঞ্চলিক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় নৌ-পুলিশের ইউনিট নেই। সুনামগঞ্জে পাঁচটি ফাঁড়ি এবং হবিগঞ্জে তিনটি ফাঁড়ি রয়েছে। এই আটটি ফাঁড়ির মধ্যে জলযান আছে মাত্র চারটিতে; মোট জনবল ৯৯ জন। একেকটি ফাঁড়িতে ৮ থেকে ১০ জন নৌ-পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্য থেকে ছুটি, অসুস্থতা, ট্রেনিং থাকায় গরহাজির থাকে। যারা কর্মরত থাকেন, তাদের নিয়েই বিভিন্ন অভিযান ও টহল পরিচালনা করা হয়।

নৌপথে চাঁদাবাজির ৩৯ পয়েন্ট
নদীপথে পণ্যবোঝাই জলযান চলার জন্য নদীর অগভীর জায়গা চিহ্নিত করে দিতে বাঁশের মাথায় লাল কাপড় বেঁধে নদী চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। এটাকে স্থানীয়ভাবে ‘মার্কার’ বলে। প্রায় ১৫ বছর ধরে স্থানীয়রা নৌযানকে সহযোগিতা করতে এভাবে নদীতে মার্কার দিয়ে আসছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই মার্কার-চিহ্নিত স্থানে চাঁদাবাজি চলছে। নৌ-পুলিশের ছাতক ফাঁড়ি চেঙ্গেরখাল ছাড়া সিলেটের আর কোনো নদীতে টহল দিতে পারে না। এই নদীপথ ছাড়া সুনামগঞ্জ দিয়ে প্রবহমান সুরমা নদীসহ শাখা-উপশাখা মিলিয়ে অন্তত শতাধিক পয়েন্টে মার্কার রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি পয়েন্টে চলছে চাঁদাবাজি। এসব চাঁদাবাজির মূল উদ্দেশ্য চোরাকারবারিদের পণ্য নিরাপদে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া।

নৌ-ইজারাদারদের চাঁদাবাজি
সিলেটের নদীগুলোর বিভিন্ন অংশে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ইউনিয়ন থেকে ইজারা দেওয়া হয়। এসব ইজারাদার নির্দিষ্ট শর্ত মেনে ইজারা নিলেও বেশির ভাগ সময় নির্দিষ্ট টোলের বাইরেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। পণ্য পরিবহনকারী নৌযান শ্রমিকদের অভিযোগ, নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ১ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করেন ইজারাদাররা। 

কোথাও কোথাও বিআইডব্লিউটিএর ইজারা, আবার কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের কালেকশন আদায়ের নামে এই জুলুম চলছে। ইজারার শর্ত না মেনে যার যত ইচ্ছা টাকা আদায় করায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাল্কহেড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘নৌ-পুলিশ এখন আরেক যন্ত্রণার নাম। বাল্কহেড বা যেকোনো ইঞ্জিনচালিত নৌযানের কাগজ দেখেন তারা। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা দিতে হচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নৌ-পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন লোকবল কম ও ফাঁড়ির সংখ্যা অপ্রতুল থাকায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নৌ-পুলিশের সব জায়গায় ইউনিট নেই; যেখানে যেখানে আছে, সেখানে আমরা নৌ-টহল করি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করি। গত দুই মাসে আমরা দুই দফা চোরাই চিনির চালান এবং অবৈধ মাদক ও কসমেটিকস ধরেছি। আমরা যখনই আমাদের নৌ-টহলে ও রাতে সংবাদ পাই, তখন আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজেদের অবস্থা গুছিয়ে কনফার্ম হয়ে এরপর অভিযানে যাই। কারণ আমাদের জনবলের স্বল্পতা রয়েছে।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘একটি জেলা থানায় যেখানে ৬০ থেকে ৭০ জন কাজ করেন, সেখানে আমরা স্বল্প জনবল নিয়ে দুর্গম এলাকায় কাজ চালাচ্ছি। সারা বাংলাদেশেই নৌ-পুলিশের জনবল কম। যেহেতু গোটা দেশে এই সমস্যা, তাই অনেক জায়গায় প্রয়োজন হলেও আমাদের ইউনিট নেই। অবশ্য নৌপথ নিরাপদ রাখতে জনবল বাড়াতে প্রস্তাব দেওয়া আছে।’ 

চোরাচালান ছাড়া নৌপথে ‘মার্কার’ দিয়ে ৩৯ পয়েন্টে চাঁদাবাজির ব্যাপারে নৌ-পুলিশ সুপার বলেন, ‘বর্ষাকালে মালামাল নিয়ে ডুবোচরে নৌযান আটকা পড়লে সহযোগিতার জন্য বাঁশের মধ্যে লাল কাপড় বেঁধে মার্কার দেওয়া হয়। কিন্তু আমার নৌ-পুলিশ থেকে বলেছি, এটাও করা যাবে না। এই মার্কারের খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাই। নৌযানগুলোকে সহযোগিতার নাম করে টাকা নিতে চাইলেই অভিযান করে আমরা চাঁদাবাজদের ধরি।’

নিরাপদ নৌপথ দাবি
বর্ষাকালে নৌপথ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকে না সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও ধরমপাশা উপজেলার। এই পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি পড়েছে সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনি এলাকায়। সেখানে একটানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তিনি গত ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান। সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন অ্যাডভোকেট রণজিত সরকার। বহুদিন ধরেই এ অঞ্চলের নিরাপদ নৌপথের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এলাকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে একটি চক্র ইজারার নামে চাঁদা আদায়ে সক্রিয় বলে মনে করছে শ্রমিক সংগঠন।

রণজিত সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকা চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে অনেক হাওর আছে। একটানা ১৫ বছর এখানে একধরনের লুটপাটের রাজত্ব ছিল। আমি এখানকার সংসদ সদস্য মাত্র পাঁচ মাস। এই কদিনে অনেক কিছু সামাল দিয়েছি ও দিচ্ছি। লুটপাট-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি সব সময় সোচ্চার থাকব। কেবল নৌপথ নয়, সব পথ নিরাপদ রাখতে প্রশাসনকে নিয়ে বন্যা পরিস্থিতির পরই আলোচনায় বসব।’ 

বোটানিক্যাল ও বলধাসহ ছয় পার্ক ২০ টাকার টিকিট ১০০!

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০১ পিএম
২০ টাকার টিকিট ১০০!
ছবি: সংগৃহীত

বৃক্ষপ্রেমীদের উপভোগ্য সময় বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের পর বর্ষার বৃষ্টিস্নানে গাছপালা প্রাণ ফিরে পায়। আষাঢ়ের মাঝামাঝিতেই পূর্ণ যৌবনে বিকশিত হয় বৃক্ষ-লতা, গুল্মরাজি। তবে এবারের আষাঢ়ে রাজধানীসহ দেশের বৃক্ষপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে সরকারের একটি সিদ্ধান্ত।

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন) ও বলধা গার্ডেনসহ ছয়টি উদ্যান-ইকোপার্কের প্রবেশমূল্য ২০ টাকা থেকে একলাফে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। 

বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের টিকিটে উল্লেখ আছে, উদ্যানটির ইজারাদার মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজ।

টিকিটে উল্লেখ করা নম্বরে ফোন করলে রফিকুল ইসলাম নামের একজন নিজেকে টিকিট চেকার পরিচয় দিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) খবরের কাগজকে বলেন, ‘টিকিটের মূল্য ২০ টাকা ছিল। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ৪ জুলাই থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ১০০ টাকা করে টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে। আর ১২ বছরের কম বয়সীদের দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা।’

এদিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ হওয়া ‘কিছুটা অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, এটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এটা তার ব্যক্তিগত মত বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি। সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গত ১ জুলাই থেকেই বেশির ভাগ উদ্যান-ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রবেশমূল্য ছিল ২০ টাকা। এসব উদ্যান-ইকোপার্কে প্রবেশের জন্য ১২ বছরের বেশি বয়সী দর্শনার্থীদের জনপ্রতি ১০০ টাকা ফি দিতে হবে।

গত ২১ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা-১ থেকে ফি বাড়ানোর তথ্য জানানো হয়। এতে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন (জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান) এবং রাজধানীর বলধা গার্ডেনে ফি বাড়ানোর তথ্য জানানো হয়।

এ ছাড়া কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক এবং ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানোর কথা বলা হয়। তা ছাড়া মধুটিলা ইকোপার্ক বাদ দিয়ে সব কটি উদ্যান-ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানো হয়েছে।

এই প্রজ্ঞাপন অনুসারে, বিদেশি পর্যটকদের প্রতিজনের প্রবেশমূল্য ১ হাজার টাকা। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের দল বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেলে ১০০ জনের জন্য ১ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। আর দলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হলে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে।

শরীরচর্চার জন্য যারা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে যান, তারা বার্ষিক ৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশ কার্ড করতে পারবেন। যদিও শরীরচর্চার জন্য আগে উদ্যানে প্রবেশে কোনো ফি দিতে হতো না। এখন কার্ড পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্যানের ইজারাদারের কাছে আবেদন করতে হবে। 

এই বৃদ্ধি প্রশ্নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বন-১ অধিশাখা) এ কে এম শওকত আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রবেশমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করেছি। এখানে আসলে আমাদের কিছু করার নেই।’

সচিব সভায় অভিমত দুর্নীতিবাজদের বয়কট করতে হবে

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
দুর্নীতিবাজদের বয়কট করতে হবে
বাংলাদেশ সচিবালয়

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রতি অনুকম্পা দেখান না! তার পরও এরা (দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা) কীভাবে পদোন্নতি ও ভালো পদ পেয়ে যান! কারা এদের পদোন্নতি ও ভালো পদ দেন?’ সচিবালয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের কর্মকর্তাদের নীতিনির্ধারণী সভায় গতকাল বৃহস্পতিবার এমন প্রশ্ন করেছেন একজন সচিব। তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর উদাহরণ দিয়ে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এসব চলতে দেওয়া যাবে না। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। জনপ্রশাসন (মাঠ প্রশাসন) সম্পর্কে জনগণের মনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টির জন্য শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করার জন্যও সভায় বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র খবরের কাগজকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সচিব কমিটির এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা অংশ নেন। জানা গেছে, সভায় কৃষি, স্থানীয় সরকার, আইএমইডি, পরিকল্পনা সচিবসহ প্রায় ১৫ জন সচিব বক্তৃতা করেন। বেলা সাড়ে ৪টার দিকে শুরু হওয়া সচিব সভা শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে।

সূত্র জানিয়েছে, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও এ নিয়ে সচিবদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। সভায় একাধিক সচিব বলেছেন, আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী এসব তথ্য গোপন থাকবে। তিনজন সচিব বলেন, স্ত্রীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। তবে প্রত্যেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হিসাব বিবরণী জমা দেবেন। এই তথ্য কর্তৃপক্ষকে গোপন রাখতে হবে। জনগণের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। অন্য এক সচিব বিদেশি প্রকল্পের নামে সরকারি কর্মকর্তারা যে ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন, তা পুরোপুরি বন্ধ করার ব্যাপারে প্রস্তাব দেন। এর ফলে মূল্যবান সময় এবং অর্থ অপচয় রোধ করা যাবে বলে মনে করেন তিনি। সভায় প্রস্তাব দেওয়া হয়, শুদ্ধাচার পুরস্কার ফেরত নেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ পরবর্তী সময়ে দুর্নীতিতে জড়ালে তার পুরস্কার কেড়ে নেওয়া হবে। এ জন্য নীতিমালা সংশোধন করা দরকার।

এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সচিবদের নিয়ে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির প্রথম সভা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের প্রথম সচিব সভা ছিল এটি। সেই সভার আলোচ্যসূচিতে ৪১টি এজেন্ডা ছিল। ওই সব বিষয়ে গতকালের সভায় আলোচনা হয়। এতে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থায় কাজ করা সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন। 

বর্তমানে নিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক মিলিয়ে ৮৫ জন সচিব ও সিনিয়র সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনিয়র কয়েকজন সচিব বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯-এ সংশোধনে জনমতের প্রতিফলন থাকা উচিত। এ জন্য বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবলও নিয়োগ করতে হবে। কারণ বিদ্যমান জনবল দিয়ে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর সম্পদের হিসাব যাচাই-বাছাই করা অসম্ভব।’
 
সভায় সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ ও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। তবে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া না দেওয়ার বিষয়টিই বেশি সময় ধরে আলোচনা হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে জনগণের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দুর্নীতি দমনে বিশেষ জোর দিতে বলা হয়। কয়েকজন সচিব বলেন, ‘গুটিকয়েক জনের কারণে প্রশাসনের সবার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তারা বলেন, নিজ নিজ দপ্তর ও অধীন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সম্পর্কে সব সময় সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। 

একজন সিনিয়র সচিব বলেন, শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রাপ্ত কারও কারও নামে পরবর্তী সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে। এ সময় আলোচনা হয়, তারা প্রত্যেকেই সম্পদের হিসাব জমা দেন। এনবিআর-এ প্রত্যেকের আয়কর নথি আছে। চাকরিতে প্রবেশের সময় সম্পদের হিসাব নেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিমালায়ও ৫ বছর পর পর সম্পদের হিসাব কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার বিধান আছে। কেউ কেউ বলেন, সম্পদের বিবরণী সরাসরি কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়ার বিধান থাকা উচিত। এ জন্য বিধিমালা সংশোধন করে বিষয়টি সহজ করা দরকার।

বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ও কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। কেউ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলে তাকে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এ ছাড়া তারা বলেন, সম্পদের হিসাব দেওয়া যাবে। তবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গোপন রাখতে হবে। 

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীদের প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ ছিল প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে জনপ্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণী নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ কর্তৃক এ ক্ষেত্রে আগে ভেটিংকৃত অংশ হতে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা উপবিধি-১০(২) বাদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আয়কর আইন, ২০২৩-এ ৩০৯ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ ওই উপবিধি-১০(২) বাদ দেয়। একইভাবে ১১ ধারার বিষয়ে মতামত দিয়েছে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ। এ নিয়েও বৈঠকে সচিবদের মধ্যে মতানৈক্য হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিমালা দ্রুত যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। একই সঙ্গে ২০১২ সালের শুদ্ধাচার কৌশল সংশোধন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন প্রথম সচিব সভা করেন তখন আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা এসেছিল, আমরা যেন বছরে অন্তত দুটি সচিব সভা করি। আমরা হিসাব করেছিলাম যে, জুলাই মাসে আমরা একটি সচিব সভা করব। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রথম সভার যে বাস্তবায়ন অগ্রগতি সেটি জানতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চিঠি দিয়েছিলাম। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকের মিটিং করেছি।’ 

সভায় গত সভার বাস্তবায়ন অগ্রগতি আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুদ্ধাচার বিষয়ে কিছু আলোচনা করেছি। বাজেট বাস্তবায়ন এবং নির্বাচনি ইশতেহার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের কিছু দাপ্তরিক কাজে প্রধানমন্ত্রী সময়ে সময়ে যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন, সেগুলো যেন যত্নসহকারে সিরিয়াসলি অনুসরণ করা হয়, সে ব্যাপারে সভায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সচিব বলেন, সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের সেবা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা ছিল। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হওয়ায় তাদের মধ্যে বিব্রতকর অবস্থা বিরাজ করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন তারা। তারা বলেন, আজকের (গতকালের) সচিব সভায় নির্ধারিত কিছু এজেন্ডা থাকলেও অনির্ধারিত সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা সংশোধন এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনাসংবলিত মাঠ প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠানো হবে।

‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯’ অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী দাখিল এবং স্থাবর সম্পত্তি অর্জন বা বিক্রির অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সরকার বিধিমালাটি বাস্তবায়ন করছে না। পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানসহ সরকারের অনেক কর্মকর্তা কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও সরকারি দপ্তরে কোনো তথ্য নেই। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর বিষয়টি এবার আলোচনায় এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এ বিধিমালাটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সচিব সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সচিবদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ, সরকারি অর্থের সাশ্রয় ও রপ্তানি বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলোও বিশেষ গুরুত্ব পায় সভায়।

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড: ঝিনাইদহের ১৩ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও গ্রেপ্তারে নানা হিসাব-নিকাশ

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:৩২ পিএম
এমপি আনার হত্যাকাণ্ড: ঝিনাইদহের ১৩ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও গ্রেপ্তারে নানা হিসাব-নিকাশ
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে জেলার ১৩ জন নেতাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

এর মধ্যে ৯ জনকে ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। বাকি ৪ জনকে ঝিনাইদহ জেলায় গিয়ে ডিবির টিম জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান তদন্তকারীরা। তাদের তথ্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। 

এই ১৩ নেতা ঝিনাইদহ জেলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। কেউ যুবলীগ, কেউ ছাত্রলীগ আবার কেউ স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা। এদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কারণ এমপি আনার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করীম মিন্টুকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর ডিবির অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না। তাকে গ্রেপ্তার করার পর বড় চাপে পড়ে পুলিশ। তাকে ছাড়াতে নানা পর্যায় থেকে তদবির আসে। এতে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। এ জন্য এ মামলায় যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে নানা হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্র জানায়, ডিবির ছায়া তদন্তে আনার হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। এরপরই আস্তে আস্তে উপরের নামগুলো বের হয়ে আসে।

এদিকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সীতাকুণ্ডু থেকে গ্রেপ্তার আসামি ফয়সাল আলী সাহাজী।

৬ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার (৩ জুলাই) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান এ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার এই মামলার আরেক আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ফকির আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

আসামি ফয়সাল এর আগে ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যে, আনারকে হত্যার সময় শাহীন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।

এ সময় তিনি মদ্যপ অবস্থায় চিৎকার করে বলছিলেন যে, তাকে (আনার) দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। তখন খুনিরা আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর চিকিৎসা ভিসার মাধ্যমে ভারতে গিয়েছিলেন। ডিবি পুলিশ তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চেয়েছিল যে, তাদের শরীরে কোনো রোগ আছে কিনা? তারা ডিবিকে জানিয়েছেন যে, তাদের কোনো রোগ নেই। একটা অজুহাত দেখিয়ে তারা ভারতে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের দুজনের মোবাইল জব্দ করেছে ডিবি। এসব মোবাইলে তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তার রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহীনকে সহসাই দেশে ফেরানো যাচ্ছে না। এর জন্য বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। ২২ মে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

অন্যদিকে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ দুটি মামলায় ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭ জন। 

তারা হলেন শিলাস্তি রহমান, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজি, ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল সাহাজী।

এশিয়ান হাইওয়ে গতিশীলে চীন-ভারতের সহযোগিতা দরকার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৫ এএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
এশিয়ান হাইওয়ে গতিশীলে চীন-ভারতের সহযোগিতা দরকার
ছবি : খবরের কাগজ

এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক (এএইচ) প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএন-এসক্যাপ) একটি সহযোগী প্রকল্প এটি। এই নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার। এটি এশিয়ার ৩২টি দেশকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করবে। হাইওয়ের সঙ্গে রয়েছে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়েও। এটি বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে এক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগে সমঝোতা হওয়ার পর এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের প্রশ্ন, গত ৬৫ বছরে এই নেটওয়ার্ক কতটা এগোল। তবে বাংলাদেশকে এই প্রকল্প থেকে সুফল পেতে হলে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্থল-বাণিজ্য অন্য উচ্চতায় উঠবে।

এ প্রসঙ্গে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘যেসব দেশ যুক্ত হয়েছে তারা এগিয়ে গেছে। যারা যুক্ত হয়নি তারা পিছিয়ে গেছে। আমাদের প্রথম যখন রুট প্রস্তাব করা হলো, আমাদের সেই রুট পছন্দ হলো না। এখন অবশ্য বাংলাদেশ বুঝতে পেরেছে। কিন্তু রুটগুলোর তেমন উন্নতি করেনি সরকার। ভারত আমাদের তিন দিকে বেষ্টন করে আছে বিধায় আমাদের ল্যান্ড কানেকটিভিটি খুবই দরকার।’

এই নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য ২০০৩ সালে ব্যাংককে একটি আন্তসরকার চুক্তি হয়। বাংলাদেশ ২০০৯ সালে আঞ্চলিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়। এটি এমন একটি রুট, যেটি ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। এর শুরু জাপানের টোকিও থেকে, শেষ ইউরোপে- মিশবে গিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে।

অন্যদিকে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে হলো ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে একটি সমন্বিত মালবাহী রেলওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরির একটি প্রকল্প। এটিও ইউএন-এসক্যাপের একটি সহযোগী প্রকল্প। এটিও একই সময়ে শুরু হয়েছিল। 

ইউএন-এসক্যাপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক হলো একটি আঞ্চলিক পরিবহন সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য এশিয়ায় সড়ক অবকাঠামোর দক্ষতা ও উন্নয়ন বাড়ানো। এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং প্রধান উপাদান হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলোর সঙ্গে এই অঞ্চলের জন্য একটি আন্তর্জাতিক, সমন্বিত, মাল্টিমোডাল পরিবহন এবং লজিস্টিক সিস্টেমের বিকাশ দেখা এসক্যাপের সামগ্রিক লক্ষ্যের অংশ। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এখন ৩২টি দেশের মধ্য দিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার রাস্তা নিয়ে গঠিত।

এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রতি দুই বছর পরপর গ্রুপের বৈঠক হয়। এটি চুক্তির বাস্তবায়ন বিবেচনা করে এবং এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক চালু করার বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি বিবেচনা করে।

এসক্যাপ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা এবং পরিবহন সুবিধার ব্যবস্থার প্রচার, পরিবহন নীতি, চুক্তি, কর্মসূচি এবং প্রকল্পগুলোকে সমন্বিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উপায়ে প্রণয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলজুড়ে রাস্তার মাধ্যমে পণ্য ও যানবাহনের দক্ষ ও মসৃণ চলাচল সমর্থন করে। এই লক্ষ্যে এসক্যাপ আটটি পরিবহন সুবিধা মডেল তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক সড়ক পরিবহন সুবিধার জন্য আঞ্চলিক কৌশলগত কাঠামোর সঙ্গে তারা ব্যাপকভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং এই অঞ্চলে বিরামহীন আন্তর্জাতিক সড়ক পরিবহন ও সরবরাহ সক্ষম করে।

যে ৩২টি দেশ যুক্ত হয়েছে
নেটওয়ার্কটির মোট দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার। এই নেটওয়ার্কে আছে আফগানিস্তান (৪,২৪৭ কিলোমিটার), আর্মেনিয়া (৯৫৮ কিলোমিটার), আজারবাইজান (১,৪৪২ কিলোমিটার), বাংলাদেশ (১,৮০৪ কিলোমিটার), ভুটান (১ কিলোমিটার), কম্বোডিয়া (১,৩৩৯ কিলোমিটার), চীন (২৫,৫৭৯ কিলোমিটার), জর্জিয়া (১,১৫৪ কিলোমিটার), হংকং (৯১ কিলোমিটার), ভারত (২৭,৯৮৭ কিলোমিটার), ইন্দোনেশিয়া (৩,৯৮৯ কিলোমিটার), ইরান (১১,১৫২ কিলোমিটার), জাপান (১,২০০ কিলোমিটার), কাজাখস্তান (১৩,১৮৯ কিলোমিটার) এবং উত্তর কোরিয়া (১,৩২০ কিলোমিটার)।

৩২টি দেশের মধ্যে আরও যেসব দেশ রয়েছে সেগুলো হলো দক্ষিণ কোরিয়া (৯০৭ কিলোমিটার), কিরগিজস্তান (১,৬৯৫ কিলোমিটার), লাওস (২,২৯৭ কিলোমিটার), মালয়েশিয়া (৪,০০৬ কিলোমিটার), মঙ্গোলিয়া (৪,২৮৬ কিলোমিটার), মায়ানমার (৩,০০৩ কিলোমিটার), নেপাল (১,৩২১ কিলোমিটার), পাকিস্তান (৫,৩৭৭ কিলোমিটার), ফিলিপাইন (৩,৫১৭ কিলোমিটার), রাশিয়া (১৬,৮৬৯ কিলোমিটার), সিঙ্গাপুর (৩৮ কিলোমিটার), শ্রীলঙ্কা (৬৫০ কিলোমিটার), তাজিকিস্তান (১,৯২৫ কিলোমিটার), থাইল্যান্ড (৫,১১২ কিলোমিটার), তুরস্ক (৫,২৫৪ কিলোমিটার), তুর্কমেনিস্তান (২,২০৪ কিলোমিটার), উজবেকিস্তান (২,৯৬৬ কিলোমিটার) এবং ভিয়েতনাম (২,৬৬৪ কিলোমিটার)। 

বাংলাদেশ যেদিক দিয়ে যুক্ত হবে
ম্যাপ অনুযায়ী, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে ৪৪টি পৃথক রুট রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রুট (এএইচ১- তামাবিল-বেনাপোল ৪৯২ কিলোমিটার, এএইচ২- তামাবিল-বাংলাবান্ধা ৫১৭ কিলোমিটার এবং এএইচ৪১- টেকনাফ-মোংলা ৭৬২ কিলোমিটার) পড়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে তিনটি রুটের কাজই চলমান। তবে শেষ হতে অনেক দেরি হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, তিনটি রুটই রাজধানী ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। দুটি রুট দুই প্রান্তে ভারতকে সংযুক্ত করবে। অন্য রুট অর্থাৎ এএইচ৪১ বাংলাদেশের মধ্যে আছে, তবে টেকনাফ দিয়ে মায়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে নেওয়া হতে পারে।

নেটওয়ার্কটি তৈরির উদ্দেশ্য
ইউএন-এসক্যাপের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, এটি করার মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়ে বৃহত্তর স্বাধীনতায় সামাজিক অগ্রগতি এবং জীবনযাত্রার উন্নত মানকে উন্নীত করবে, যেমনটি জাতিসংঘের সনদের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংযুক্তির ফলে ব্যবসার প্রসার, বিনিয়োগ ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ট্রানজিট ইত্যাদি সুফল প্রত্যাশা করা হয়। এটি একটি আঞ্চলিক পরিবহন সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য এশিয়ায় সড়ক অবকাঠামোর দক্ষতা ও উন্নয়ন বৃদ্ধি করা। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, এশিয়ার দেশগুলো ছোট ছোট ব্লকে নিজেদের মতো করে একটি মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটি তৈরি করে উদার বাণিজ্যের পথ তৈরি করবে- এমনটিই ছিল এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের লক্ষ্য। বৈষম্যহীন অর্থনীতির জন্য আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থা আরও সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছিল। এতে প্রতিটি দেশ উপকারভোগী হবে। একটি দেশের পণ্য অন্য দেশে সহজে পরিবহন করা যাবে, এতে নেটওয়ার্কে থাকা সব দেশ উপকারভোগী হবে।

তহবিল
এই প্রকল্পের বেশির ভাগ তহবিল আসে উন্নত এশীয় দেশ যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের পাশাপাশি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে।

তবে মহা উৎসাহ ও ধুমধামের সঙ্গে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তহবিল কমে আসতে থাকে। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে বলতে গেলে হিমঘরেই চলে গেছে এখন প্রকল্পটি। প্রকল্পের কাজ আবার কবে শুরু হবে, তা কেউ বলতে পারে না। 

বাংলাদেশের লাভ কী
এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলে বাংলাদেশের লাভ না ক্ষতি হবে, সেটি নিয়ে ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়ার সময় থেকে বিতর্ক চলে আসছে। চুক্তি সইয়ের পর পরই বিরোধীরা তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত করেন। 
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলে বাংলাদেশই লাভবান হবে। বিরোধীরা যে সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ করছেন, প্রকৃত অর্থে বিষয়টি তেমন নয়। 

বুয়েট অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলছেন, ‘কোস্টাল বেল্টে থাকা বাংলাদেশ এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নিজেদের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। বাংলাদেশ মাতারবাড়ীতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর করল, তা কেবল তো নিজেদের পণ্য পরিবহনের জন্য না। এই বন্দর ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যেন তাদের পণ্য পরিবহন করতে পারে, সে জন্য এশিয়ান নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।’

এশিয়ান হাইওয়ের সম্ভাবনা অনেক। আন্তদেশীয় সীমান্তজুড়ে মোটর ভেহিক্যাল ও ট্রান্স-এশিয়ান রেল সংযোগ হলে বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যয় সাশ্রয়ে বড় সুবিধা পাবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনের সময়ও কমবে।

প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে তহবিল সংকটে এক রকম বন্ধই হয়ে আছে প্রকল্পের কাজ। বাংলাদেশের মধ্যে ১ হাজার ৮০৪ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে ৩০০ কিলোমিটারেরও কম অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যদের মতো বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও উদ্যোগের অভাবে এ প্রকল্প আর এগোয়নি। যেমন কুনমিং পর্যন্ত যেতে মায়ানমারের অভ্যন্তরের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত একটি ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা ছিল। চীন রাস্তাটি তৈরি করতে রাজি হয়েছিল, সম্মতি দিয়েছিল মায়ানমারও। কিন্তু গত দশকের শেষ দিকে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার চুক্তি করতে অসম্মতি জানায়। কাজটি করা গেলে বাংলাদেশ সরাসরি কুনমিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারত।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এটিও বলছেন, ভারতের কারণে এ প্রকল্প থমকে গেছে। চীনের মতো ভারতেরও সুযোগ ছিল এই আঞ্চলিক সংযোগ নিশ্চিতের নেতৃত্ব দেওয়ার। কিন্তু দেশটি তা করেনি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ উদ্যোগটি স্থবির হয়ে আছে। এই দীর্ঘ সময়ে এ উদ্যোগের অগ্রগতি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে আমাদের অনেকগুলো অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোর সংযোগ করে দিলেই হবে। কিন্তু সীমান্তে এসব অবকাঠামোর আন্তদেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রেও অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।’

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘আমরা যখন আসিয়ানের দিকে তাকাই, তখন দেখি বিগ ব্রাদার তার বাণিজ্য সম্প্রসারণের স্বার্থে ছোট দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। কিন্তু এশিয়ান হাইওয়ে কানেকটিভিটিতে দেখছি, এখানে এলওসি প্রকল্পে ঋণ গ্রহণ নিয়ে নানা জটিলতা থাকছে। আমাদের লোন টানতে হচ্ছে। এখানে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপন করতে গিয়ে ভারত কেবল যদি নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে, যদি কেবল তার বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের অবকাঠামো ব্যবহার করতে চায়, তখনই তো এশিয়ান হাইওয়ে প্রকল্পে ভাটা পড়ে।’