ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪

বোটানিক্যাল ও বলধাসহ ছয় পার্ক ২০ টাকার টিকিট ১০০!

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০১ পিএম
২০ টাকার টিকিট ১০০!
ছবি: সংগৃহীত

বৃক্ষপ্রেমীদের উপভোগ্য সময় বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের পর বর্ষার বৃষ্টিস্নানে গাছপালা প্রাণ ফিরে পায়। আষাঢ়ের মাঝামাঝিতেই পূর্ণ যৌবনে বিকশিত হয় বৃক্ষ-লতা, গুল্মরাজি। তবে এবারের আষাঢ়ে রাজধানীসহ দেশের বৃক্ষপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে সরকারের একটি সিদ্ধান্ত।

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন) ও বলধা গার্ডেনসহ ছয়টি উদ্যান-ইকোপার্কের প্রবেশমূল্য ২০ টাকা থেকে একলাফে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। 

বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের টিকিটে উল্লেখ আছে, উদ্যানটির ইজারাদার মেসার্স সাগর এন্টারপ্রাইজ।

টিকিটে উল্লেখ করা নম্বরে ফোন করলে রফিকুল ইসলাম নামের একজন নিজেকে টিকিট চেকার পরিচয় দিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) খবরের কাগজকে বলেন, ‘টিকিটের মূল্য ২০ টাকা ছিল। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ৪ জুলাই থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ১০০ টাকা করে টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে। আর ১২ বছরের কম বয়সীদের দিতে হচ্ছে ৫০ টাকা।’

এদিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি পাঁচ গুণ হওয়া ‘কিছুটা অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, এটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এটা তার ব্যক্তিগত মত বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি। সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১০০ কর্মদিবসের অগ্রাধিকার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

গত ১ জুলাই থেকেই বেশির ভাগ উদ্যান-ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রবেশমূল্য ছিল ২০ টাকা। এসব উদ্যান-ইকোপার্কে প্রবেশের জন্য ১২ বছরের বেশি বয়সী দর্শনার্থীদের জনপ্রতি ১০০ টাকা ফি দিতে হবে।

গত ২১ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা-১ থেকে ফি বাড়ানোর তথ্য জানানো হয়। এতে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন (জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান) এবং রাজধানীর বলধা গার্ডেনে ফি বাড়ানোর তথ্য জানানো হয়।

এ ছাড়া কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক এবং ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানোর কথা বলা হয়। তা ছাড়া মধুটিলা ইকোপার্ক বাদ দিয়ে সব কটি উদ্যান-ইকোপার্কে প্রবেশমূল্য বাড়ানো হয়েছে।

এই প্রজ্ঞাপন অনুসারে, বিদেশি পর্যটকদের প্রতিজনের প্রবেশমূল্য ১ হাজার টাকা। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের দল বোটানিক্যাল গার্ডেনে গেলে ১০০ জনের জন্য ১ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। আর দলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ জনের বেশি হলে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে।

শরীরচর্চার জন্য যারা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে যান, তারা বার্ষিক ৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশ কার্ড করতে পারবেন। যদিও শরীরচর্চার জন্য আগে উদ্যানে প্রবেশে কোনো ফি দিতে হতো না। এখন কার্ড পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্যানের ইজারাদারের কাছে আবেদন করতে হবে। 

এই বৃদ্ধি প্রশ্নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বন-১ অধিশাখা) এ কে এম শওকত আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রবেশমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। আমরা সেটি বাস্তবায়ন করেছি। এখানে আসলে আমাদের কিছু করার নেই।’

কুড়িগ্রামে বন্যা বেকার ২ লাখ, ফসলহানি ১০০ কোটির

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
বেকার ২ লাখ, ফসলহানি ১০০ কোটির
যমুনার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী-কষ্টাপাড়া-ভালুকুটিয়া রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ছবি: খবরের কাগজ

কৃষিপুঞ্জি অনুযায়ী খরিফ-২ মৌসুমে রোপা আমন, শাকসবজি, মাষকলাইসহ অন্যান্য ফসল চাষের জন্য সাধারণ জমি প্রস্তুত করার কাজ হয় জুলাই মাসের শুরু থেকে। কিন্তু অভিন্ন নদ ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর পানিতে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের অর্ধেকটাই প্লাবিত। ফলে বেকার হয়ে আছেন কমপক্ষে ২ লাখ কৃষিশ্রমিক। সবজি, মরিচ, পাটসহ বিভিন্ন ফসল বন্যায় নষ্ট হওয়ায় অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষিনির্ভর প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, বন্যার পানিতে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির পাট ও মরিচসহ নানা ধরনের ফসল নষ্ট হয়েছে। বন্যা-উত্তর কৃষি পুনর্বাসনে চাষাবাদে অগ্রাধিকার পাবে রোপা আমন, শাকসবজি, মাষকলাই এবং শীতের আগাম ফসল যেমন সরিষা। 

অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হবে। খরিফ-২ মৌসুমের জন্য চাষিদের জমি তৈরির কাজ এ বছর শুরু হতে দেরি হবে। কারণ বন্যায় ডুবে আছে অনেক জমি।’ 

কুড়িগ্রামে কত পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কৃষি বিভাগের হিসাবে বলা হয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তার মধ্যে অন্তত আড়াই লাখ পরিবারেই আছেন কৃষিশ্রমিক। বন্যায় তাদের অনেকেই এখন বেকার।’

তার দাবি, পানি নেমে গেলেই কাজ পাবেন বেকার কৃষিশ্রমিকদের অনেকেই। কারণ খরিফ-২ মৌসুমের জন্য জমি তৈরির কাজ শুরু করবেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় শতভাগ নষ্ট হয়ে গেছে ৫৫৪ হেক্টর বীজতলার পাশাপাশি ৩৭ হেক্টরের মরিচ, ১ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির আউশ আর ৭৩৭ হেক্টর জমির শাকসবজি। তবে কুড়িগ্রামের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটের তেমন ক্ষতি হয়নি এ পর্যন্ত। পানি নেমে যাওয়ার পরই ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির পাট কাটা শুরু হবে। 

কথা হয় কৃষিশ্রমিক মো. মহসিন আলীর সঙ্গে। বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ইত্তর নবাবাস গ্রামে। দুই দফা বন্যা তাকে প্রায় নিঃস্ব করে ছেড়েছে। প্রথম দফা বন্যার পর থেকেই তিনি প্রায় বেকার। প্রথম বন্যার আগে তিনি দিনে গড়ে রোজগার করতেন ৫০০ টাকা। বন্যায় তার অবস্থা কী- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘৯ সদস্যের পরিবার চালাতে গিয়ে গত ছয় মাসে দেনা করেছি প্রায় এক লাখ টাকা। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, ধারও কেউ দিতে চায় না।’

তার আফসোস, পানি নেমে যাওয়ার পর আবার কাজ করার সুযোগ হলেও ধারের টাকা শোধ করতেই বড় অঙ্ক চলে যাবে। এ অবস্থায় পরবর্তী দিনগুলো আরও কঠিন হবে। 

যেসব এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলা একটি। কুড়িগ্রামের এ উপজেলার অনেকটা এলাকা এখন ফসলসহ পানিতে ডুবে আছে। ডুবে থাকা জমি দেখতে এসেছিলেন বর্গাচাষি মো. আব্দুস সাত্তার। পূর্ব নাগেশ্বরী বয়লার ডাবা গ্রামের এ চাষি নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতেও শ্রম দেন। জানালেন, দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এ বছর তিনি যে ফসল চাষ করেছেন, তার পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে বন্যায়। কেমন আছেন?

উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে বেকার বসে আছি। প্রথম বন্যার আগে দিনে আমার রোজগার হতো ৪০০-৫০০ টাকা। আর এখন ধারদেনা করে চলছি।’

তিনি জানান, হাতে কোনো টাকা-পয়সা না থাকায় গত সপ্তাহের বাজার করেননি। পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটার টাকা না থাকায় সকালে বাড়ি থেকে বের হন আর রাত দুপুরের পর কখনো কখনো আরও পরে বাড়িতে ফেরেন। 

একই এলাকার আরেক কৃষিশ্রমিক মো. নজরুল ইসলাম। তিনিও বেকার অনেক দিন। আট সদস্যের পরিবার কীভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে চলছি। কত দিন বেকার?

তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে পুরোপুরি বসে আছি। কোনো কাজ নেই। সংসার চালাতে গিয়ে ইতোমধ্যেই ধার করেছি ১৫ হাজার টাকা। বন্যার পানি পুরোপুরি নামতে সময় লাগবে কমপক্ষে ১৫ দিন। তাতে আমার দেনা বাড়বে আরও অন্তত ১০ হাজার টাকা।’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জুনের শেষ দিকে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের শুরুতে বিপৎসীমা অতিক্রম করে ওই নদ। এখনো ওই নদের পাশাপাশি বিপৎসীমার ওপর আছে ধরলা ও দুধকুমার। বৃষ্টি কম হওয়ায় উজানে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু তারপরেও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি কমতে আরও সময় লাগবে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বন্যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন অন্তত ২ লাখ কৃষিশ্রমিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ হাজার কৃষিনির্ভর পরিবার। দুই দফা বন্যায় মরিচ, পাট, রোপা আমনের বীজতলা ও সবজিসহ নানা ধরনের ফলন নষ্ট হয়েছে অন্তত ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। এতে চাষিদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা। 

সরেজমিন: সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে হাত ধুতেও সিরিয়াল

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:২১ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩০ পিএম
সরেজমিন: সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে হাত ধুতেও সিরিয়াল
মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসা রোগীদের ভীড়। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জ থেকে মাসুম বিল্লাহ এসেছেন কুকুরের কামড়ের টিকা নিতে। গত সপ্তাহে তার পোষা কুকুর টাইগার এলাকার আরেক রাস্তার কুকুরের সঙ্গে মারামারি বাধিয়েছিল। এতে ঘায়েল হয়ে পড়ে টাইগার। টাইগারকে রক্ষা করতে ছুটে যান মাসুম বিল্লাহ। কাছে গেলে নিজেও রেহাই পান না কুকুরের কামড় থেকে। ডান হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর মাঝের ফুলে ওঠা জায়গাটায় কামড়ের জখম এখনো শুকায়নি। জলাতঙ্ক হতে পারে ভেবে টিকা নিতে ছুটে আসেন রাজধানী মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।

টিকা নেওয়া শেষে শুকনো মুখে বের হয়ে আসার সময় সঙ্গে থাকা স্ত্রীকে বলছিলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল। এইহানে সেবা আছে কিন্তু মায়া নাই। রোগীদের এ্যারা মানুষ মনে করে না।’ 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, টিকা নিতে আসা মানুষে গিজগিজ করছে হাসপাতাল। কাউন্টারে লম্বা লাইন পার হয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরায় না সেবা নিতে আসা মানুষের। টিকিট কাটার পর জরুরি বিভাগে পাঠানো হয় টিকা নিতে আসা রোগীদের। রুমের শেষ প্রান্তে ক্ষতস্থান সাবান দিয়ে ধোয়ার জন্য দুটি পানির ট্যাপ। সেখানেও সিরিয়াল ধরে ধুতে হয় আক্রান্ত স্থান। তার পাশে দুটি টয়লেটের দরজা হাট করে খোলা। টয়লেটের পাশেই রাখা ডাস্টবিন। জরুরি বিভাগের বিশাল রুমের ডানদিকে ছোট ছোট রুমে বসে আছেন ডাক্তার-নার্স। এখানেই পাওয়া যাবে জলাতঙ্কের সেই কাঙ্ক্ষিত টিকা। জরুরি বিভাগে ঢুকেই ডান দিকের প্রথম রুম থেকে শোনা যায় ডিউটি ডক্তারের ঝাঁঝালো কণ্ঠ। সেখানেও লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। রোগীদের সমস্যা জানতে চাইছেন ডিউটিরত ডাক্তার। ডাক্তারের কড়া মেজাজ দেখে অনেক রোগীই সমস্যার কথা বলতে খেই হারিয়ে ফেলছেন। এতে আরও বিরক্ত হচ্ছেন ডাক্তার। 

টিকাদান কক্ষের সামনে গেলে দেখা রোগীরা লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন তাদের সুযোগ আসার। লাইনে বৃদ্ধ থেকে শিশু, সবার চোখেই আতঙ্ক। টিকা নিতে আসা রোগীরা আক্রান্ত স্থানে ইনজেকশনের খোঁচা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র ব্যথায় চিৎকার করছেন জোরে জোরে। তাদের চিৎকারে অপেক্ষমাণ রোগীদের অনেকেরই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। শিশুরা ভয়ে কান্না করছে। টিকা নিতে আসা অনেক শিশু ইনজেকশন দেখার সঙ্গে সঙ্গেই রুমে থেকে দৌড়ে ছুটে আসছে বাইরে। এতে হাসপাতালের কর্মচারীরা শিশুদের কাউন্সেলিং না করিয়ে অভিভাবকদের চাপ দিচ্ছেন কান্না থামানোর জন্য। টিকা নিতে আসা রোগীদের ইনজেকশন দেওয়ার সময় নার্সদের ব্যবহারে মনে হচ্ছিল তারা ‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ নীতি অবলম্বন করছিলেন। রোগীদের ব্যথার তোয়াক্কা না করে, মানসিকভাবে স্থির হওয়ার সময় না দিয়ে, যেন টিকা দিয়ে বিদায় করতে পারলেই লাইনে রোগীদের সংখ্যা কমবে। 

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ব্যাপারে জানার জন্য দায়িত্বে থাকা কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিউটিরত এক ডাক্তারকে রোগীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে চোখে-মুখে বিরক্তির অভিব্যক্তি স্পষ্ট ফুটে ওঠে। বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে দায়সারা উত্তর দেন। তবে বহির্বিভাগে টিকা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায় দুর্ব্যবহারের কথা। দুলাল সিকদার নামের একজন রোগী জানান, আগের দিন শেষ সময়ে টিকা নিতে এসে দেখেন প্রচুর ভিড়। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে তিনি টিকা না নিয়ে ফিরে গেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, শেষের দিকে অনেকেই তার পরে টিকা নিতে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে ২০০-৩০০ টাকা নিয়ে তাদের আগে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। যারা আগে এসে টাকা দিতে পারেননি তারা শেষেও টিকা পাননি। 

এ বিষয়ে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. আরিফুল বাশার খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০-৮০০ রোগী টিকা নিতে আসেন। সে তুলনায় আমাদের জনবলে ঘাটতি আছে। কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অবহিত করার পরেও এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আর রোগীদের সাথে খারাপ ব্যাবহার হাসপাতালের সাথে জড়িত সবাই করেন না, হয়তো কোন কোন ডাক্তার বা নার্স করে থাকেন। এটাও তার মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। সীমিত জনবল নিয়ে প্রতিদিন রোগীদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে অনেকেই হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না।’ 

টাকার বিনিময়ে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে আগেও কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। হাসপাতালের আশেপাশে যে বস্তি, এ এলাকা ঘিরে অনেকেই অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত। হাসপাতালের কিছু স্টাফের সাথে তাদের মেলামেশা আছে। তাদের প্রশ্রয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাসপাতালের কর্মরত অনেকেই এই সিন্ডিকেটে জড়িত। এ বিষয়ে আমরা শীঘ্রই আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিব। আর হাসপাতালের ব্যাপারে করা সমস্ত অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।’ 

উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:১২ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রশাসনের শীর্ষ পদে একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগে বিশেষজ্ঞদের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ার নজির থাকলেও এখন ‘ঢালাওভাবে’ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৮৩ সচিবের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ দুই পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ ২০ জনই চুক্তিতে কর্মরত। ফলে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তারা যথাসময়ে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এ ধরনের নিয়োগ নিয়ে খোদ সরকার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। 

তাদের মতে, একজন কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে গেলে সেই পদ খালি হয়। ওই পদে নতুন একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি বা পদায়ন হয়। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে বঞ্চিত হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে সরকার যতটা না উপকৃত হয়, তার চেয়ে বেশি লাভ হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের। 

অতীতে কোনো প্রকল্প বা বিশেষ কারণে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের এক বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হতো। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। ব্যক্তিগত সখ্য ও রাজনৈতিক বিশেষ তদবিরের কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে একাধিক সচিবকে এক বা দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে কারও কারও চুক্তির মেয়াদ আরও বেড়েছে।

বিএনপির আমলেও রেকর্ডসংখ্যক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়। অনেকে মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে রেকর্ড গড়ে, তার জন্য অন্যতম প্রধান দায়ী এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আমলারাই। দুর্নীতি করতে তারা কোনো রকম রাখঢাক করেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় একটি প্রভাবশালী মহল ভুল বুঝিয়ে একের পর এক চুক্তির সুযোগ নিচ্ছে। তবে সরকার যদি কাউকে কোনো মন্ত্রণালয়ে অপরিহার্য মনে করে, সে ক্ষেত্রে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া স্বাভাবিক। তবে ঢালাওভাবে নিয়োগ দেওয়া অনুচিত। সাম্প্রতিক সময়ে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়ায় পদোন্নতিযোগ্য ও সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিগত কয়েক বছর জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমেছিল। বিশেষ করে নিয়মিত পদগুলোতে চুক্তিতে কম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু আগে থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়া শুরু হয়। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সাধারণত কাউকে চুক্তিতে নিয়োগের ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। সে জন্য শীর্ষ পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

অন্যদিকে চুক্তিতে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের বাড়তি ব্যয়ও হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে অবসর নিতে হয় ৫৯ বছর বয়সে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরও এক বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পান। 

বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জনপ্রশাসনে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের অবসরের সময় এগিয়ে আসছে, এখন তাদের অনেকেই চুক্তিতে নিয়োগ পেতে চেষ্টা-তদবির করছেন। জনপ্রশাসনে এখন সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৮৩ জন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সচিব-পদ শূন্য হয়। যেহেতু নির্বাচন ও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেই কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেন। সে ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন, তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষে সেখানে নতুন অনেককে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সব সময় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনও রয়েছে। কারণ একজনকে নিয়োগ দিলে এ ক্ষেত্রে যার সুযোগ ছিল তিনি বঞ্চিত হন। প্রধানমন্ত্রী সব সময় বিষয়টি খেয়াল রাখেন। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, বিশেষ কারণে ওই সময়ে (সংসদ নির্বাচনের আগে) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়েছিল। তার মতে, এটা করা হয়েছিল দেশের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান বলেন, তারা চাকরিতে থাকাকালে যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিতেন। কারণ পদোন্নতিযোগ্যদের বঞ্চিত করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে প্রশাসনে নানামুখী সমস্যা তৈরি হয়। পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৪ সালে কমিশনের সুপারিশ ছিল শুধু কারিগরি কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন, তাকে ছাড়া মন্ত্রণালয়ে গতি আসবে না -এমন অপরিহার্য হলে সেই ধরনের কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ঢালাওভাবে শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে তা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট করে দেয়। তাই যারা পদোন্নতির যোগ্য, তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া উচিত।’

সূত্র বলছে, প্রশাসনে অতীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের লাগাম টেনে ধরতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পরিহার করার জন্য ২০১৪ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের উদ্দেশ্যে একটি আধা সরকারিপত্রও (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন তিনি। 

লিখেছিলেন, ‘অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সরকার কাউকে যদি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, সে ক্ষেত্রে ক্যাডারবহির্ভূত বিশেষ পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এটি কার্যকর হলে নিয়মিত পদোন্নতিপ্রত্যাশী  কর্মকর্তারা শীর্ষ পদে আসীন হতে পারবেন। কোনো পক্ষের আর হতাশা ও ক্ষোভ থাকবে না।’ 

তার প্রস্তাবটিও আমলে নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে দেওয়া পে-কমিশনের সুপারিশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। সেটিও আমলে নেওয়া হয়নি। বরং পরবর্তী সময়ে চুক্তিতে নিয়োগ বেড়েছে।

জনপ্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। এর মধ্যে মো. মাহবুব হোসেন গত বছরের (২০২৩) ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। নিয়ম অনুযায়ী তাকে অবসর দিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ১৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থাকাকালে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ পান তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের (২০২৩) ৪ জুলাই তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছরের (২০২৩) ২৫ জুন অবসরোত্তর ছুটি এবং এ-সংক্রান্ত সুবিধা স্থগিতের শর্তে ৫ জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এদিকে আরও এক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছর মেয়াদে এ পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে গত ২৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির প্রধান পরামর্শক পদে মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আলী হোসেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) মো. আখতার হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার চুক্তিতে কর্মরত আছেন। 

তালিকায় আরও আছেন, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো. ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম। 

বর্তমানে ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সচিব হিসেবে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এর ফাঁকেও প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদোন্নতিপ্রত্যাশী  বিসিএস ১৫তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে খবরের কাগজকে বলেন, সচিব পদোন্নতি পাওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একের পর এক চুক্তি দেওয়ায় তারা কবে সচিব পদোন্নতি পাবেন তা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন। কারণ একজনকে চুক্তিতে দিলে আরও ৫ জনের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে তারাও পদোন্নতির আগে মনোকষ্ট নিয়ে অবসরে চলে যাবেন। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। তার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিবেচনায় আনেন না। সুবিধাভোগী আমলারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে প্রভাবিত করছেন। এটি প্রশাসনের জন্য আদৌ কাম্য নয়।

তাদের অভিমত, নিয়মানুযায়ী সচিবের পদ শূন্য হওয়ার পর যোগ্য কর্মকর্তারাই ওই পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু তা যেন অধরাই থাকছে। উল্টো ওই পদে থাকা সেই কর্মকর্তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় সচিব পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

কোটাবিরোধী আন্দোলন নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে পুলিশ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে পুলিশ
ছবি: খবরের কাগজ

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে ঢাকার কোনো সড়কে যাতে কোটা নিয়ে কেউ অরাজকতা করতে না পারে সেই দিকে বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশের শাখাগুলোকে। শুরু থেকে যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের গতিবিধি নজরদারি এবং তারা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে কোটা আন্দোলনের মূল স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে। এই ইস্যুতে গণ অধিকার পরিষদের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখছে পুলিশ।  

এই আন্দোলনে নুর ও তার দলের কোনো উসকানি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের মাঠে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় মাঠের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগ বাড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঘটনাস্থলের আপডেট তথ্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেসব পরামর্শ দেবেন সেসব পরামর্শ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। 

সাম্প্রতিক এই ইস্যুতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় সভা করেছেন। এই সভাগুলোতে সভাপতিত্বে করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান। এই সভায় ডিএমপির পক্ষ থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ৭টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

সেগুলো হলো, আন্দোলনের নামে কেউ সড়কে অরাজকতা সৃষ্টি করে ও আইন হাতে তুলে নিলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে, এই আন্দোলনে যাতে কেউ সরকারবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পারে সেই বিষয়টি কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে না করতে পারে সেই দিকে খেলাল রাখা ও মনিটরিং বাড়ানো, ২০১৮ সালে যারা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের অবস্থান নির্ণয় করা, মোবাইল ট্র্যাকিং বাড়ানো ও আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন গতকাল বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘অতীতের দিকে নজর দিয়ে চলমান কোটা আন্দোলনের বিষয়ে আমরা পরিস্থিতি নজরে রেখেছি। আইন ভঙ্গ করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়েছিল। অতীতের বিষয়টি মাথায় রেখেছে পুলিশ। গত এক সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আবারও মাঠে নেমেছেন। 

গতকাল শনিবারও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন যে, তাদের দাবি মেনে কোটার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপন না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এতে পরিবেশ পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে। যদি হঠাৎ এই আন্দোলনে অরাজকতা হয় সেই ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা আগেই নির্ধারণ করে রেখেছে পুলিশ। 

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা এই কোটার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এই সব তরুণ নেতৃত্বের গ্রামের বাড়িতেও তার পরিবারের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত সেই বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে গোয়েন্দারা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে। এই বিষয়টি আমলে নিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই নেতা আন্দোলনকারীদের অর্থ সরবরাহ করছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে মাঠপর্যায়ের তদন্তকারীরা।

 সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিষয়ে নজরদারি রেখেছে পুলিশ। এই আন্দোলন নিয়ে তার সাম্প্রতিক গতিবিধি খুব একটা ইতিবাচক দেখছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েক দিনে তিনি একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এই আন্দোলনে তার উসকানি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  

সার্টিফিকেট ছাড়াই ৬ বছর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের!

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম
সার্টিফিকেট ছাড়াই ৬ বছর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের!
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স

২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল বিমানবন্দরগুলোতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস পরিচালনা করতে এয়ার নেভিগেশন অর্ডার (এএনও) সার্টিফিকেট নেওয়ার নিয়ম করে গেজেট প্রকাশিত হয়। গেজেট প্রকাশের  ছয় বছরের বেশি সময় পর গত দুই সপ্তাহ আগে কেবল শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও ২-এর জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ  (বেবিচক) থেকে এ সার্টিফিকেট নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। 

সার্টিফিকেট ছাড়াই ছয় বছরের বেশি সময় ধরে বিমানের মতো সংস্থা দেশের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিচালনা করে। এ ছাড়া এবার যে সার্টিফিকেট পেয়েছে বিমান বাংলাদেশ, তা কেবল ঢাকার জন্য, দেশের অন্যান্য পোর্টের ক্ষেত্রে এখনো সার্টিফিকেট ছাড়াই বিমান হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে। 

দেশের বিমানবন্দরগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব গেজেট প্রকাশের অনেক আগে থেকেই পালন করে আসছিল বিমান। তবে গেজেট আকারে প্রকাশের পরও বিমানের এভাবে কাজ করার বিষয়ে নিশ্চুপ ছিল বেবিচক। কিন্তু নবনির্মিত থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদানকারীদের বেলায় এই নিয়ম যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে চায় বেবিচক। 

গত বছরের আগস্টে এক গণমাধ্যমে বেবিচকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেছিলেন, ‘লাইসেন্স নেওয়ার গেজেট ২০১৮ সালে হয়েছে। কেউ এখনো লাইসেন্স নেয়নি। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কাজ পাবে না।’ 

মূলত এরপর থেকেই থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পেতে শেষ সময়ে এই সার্টিফিকেট নিতে দৌড়ঝাঁপ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। 

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং লাইসেন্স প্রদান করতে বেবিচকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিমানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে দ্রুত একটি সভা করার নির্দেশও দেওয়া হয়। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং লাইসেন্স পেতে পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্ট এ বছরের ১৮ এপ্রিল বেবিচককে দেয় বিমান। যা একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পর সরেজমিন পরিদর্শন করে বেবিচক। 

বেবিচকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, আইকাও নিয়ম অনুযায়ী সব কাজ শেষ করে দুই সপ্তাহ আগে অর্থাৎ গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনেকটা তোড়জোড় করেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এএনও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে বিমানকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এবং টার্মিনাল-২-এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বেবিচক হেডকোয়ার্টার থেকে বিমানের লাইসেন্স রয়েছে। 

বিমানবন্দরে যাত্রীর বোর্ডিং পাস, ব্যাগেজ আনা-নেওয়া, কার্গো মালামাল ওঠানো-নামানো, এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সার্ভিসকে মূলত বলা হয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। যে কাজ সংস্থাটি ১৯৭২ সাল অর্থাৎ তার জন্মলগ্ণ থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে প্রায় এককভাবে করে আসছে। সে হিসেবে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব রয়েছে বিমানের হাতে। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি ৩৬টি ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে তারা। তবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ আরও বেসরকারি বেশির ভাগ এয়ারলাইনস নিজস্বভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে আসছে।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং কার্গো পরিষেবা দিয়ে বিমান প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আয় করে থাকে। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশ বিমানের সদ্য নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জাহিদুল ইসলাম ভূঞা জানান, কার্গো থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি আয়ের আশা করছেন তারা। 

সংস্থাটি বলছে, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এবং কার্গো পরিষেবাও যদি তাদের হাতে আসে, তবে এ আয় দাঁড়াবে চার হাজার কোটি টাকা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আল মাসুদ খান খবরের কাগজকে বলেন, এএনও সার্টিফিকেট একটি বিমানবন্দরের নামেই নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী বেবিচক থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এএনও সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছে। কবে নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তার উত্তর পাওয়া যায়নি। 

এ ছাড়া যদি বিমানবন্দরের নামেই যদি এএনও নেওয়া হয়, তবে দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোর এএনও বিমানের আছে কি না, জানতে চাইলে গত দুই দিনেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবার জন্য বিমান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে নিবন্ধন এবং স্বীকৃতির প্রশংসাপত্র পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরেক তথ্য সূত্র অনুসারে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই ঢাকা এয়ারপোর্টে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে নিয়োজিত। ২০০৯ সালে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা পরিচালনার অনুমোদন পায়। এরপরে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-সংক্রান্ত এএনওর আলোকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমান বাংলাদেশ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ফি পরিশোধ করেছে। 

এ বিষয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার মনে হয় সার্টিফিকেট ছাড়া বিমানের এ কাজ করার দায় যতটা না বিমানের, তার থেকেও বেশি বেবিচকের। কারণ তারাই এটার রেগুলেটরি বডি। তারা কীভাবে বিমানকে সার্টিফিকেট ছাড়া কাজটি করতে দিচ্ছে? আর বিমান যে এভাবে সার্টিফিকেট ছাড়া কাজ করেছে, এটা গুরুতর অপরাধ। অন্যদিকে বেবিচক কেন এতদিনেও এ সার্টিফিকেট দেয়নি বা এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা উচিত।’