ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪

সিলেট নৌ-পুলিশের অঞ্চল আছে, ইউনিট নেই

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০২:২০ পিএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৩:০২ পিএম
নৌ-পুলিশের অঞ্চল আছে, ইউনিট নেই
সিলেটের হরিপুরবাজার এলাকায় এ নৌপথেই চোরাই চিনি পরিবহন করা হয়। ছবি: খবরের কাগজ

সিলেটের পিয়াইন নদ ভারতের মেঘালয়ের ডাউকি চ্যুতিস্থলের সঙ্গে যুক্ত। সীমান্তের ডাউকি-জাফলং হয়ে বেশ কয়েকটি উপজেলার নদ-নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে প্রবাহিত। গত ৩০ জুন ভোরের দিকে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ছৈলাখেল এলাকার পিয়াইন নদের উত্তর পাড়ে ভারতীয় চোরাই চিনি নৌপথে পারাপার চলছিল। কিন্তু সে সময় মামারবাজার পয়েন্টে অবস্থান করছিল একদল পুলিশ। বেলা সাড়ে ৩টায় তারা অভিযান চালায়। কিন্তু সময়ক্ষেপণের ফলে টের পেয়ে পালায় চোরাচালানিরা। একজন চোরাকারবারি আটকসহ ইঞ্জিনচালিত স্টিল বডির নৌকার মধ্য থেকে ভারতীয় ৫০ কেজি ওজনের ১১৫ বস্তা চোরাই চিনি জব্দ করে পুলিশ। 

জাফলংয়ে থানা-পুলিশ ও পাশাপাশি তৎপর পর্যটন পুলিশ। নৌপথে থাকার কথা নৌ-পুলিশের। কিন্তু সেখানে নেই কোনো ফাঁড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ‘সিলেট অঞ্চল’ নামে নৌ-পুলিশের একটি আঞ্চলিক দপ্তর থাকলেও সিলেটের নৌপথ সুবিধার উপজেলাগুলোতে নেই কোনো ইউনিট।

বন্যার সময় সিলেট অঞ্চলের নৌপথগুলো সচল হওয়ায় সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার রুটগুলোতে নৌপথে চিনি, ওষুধ, কসমেটিকসসহ নানা ভারতীয় পণ্য অবৈধভাবে আনা হয়। বর্ষাকালে নদীগুলোতে ভারতের পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ার ফলে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে নৌপথে চোরাচালান বাড়ে। নৌ-পুলিশের কোনো ইউনিট না থাকায় নিশ্চিন্তেই চোরাচালান করে চোরাকারবারিরা।

সরেজমিনে জানা যায়, বিভিন্ন সময় বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাঁড়াশি অভিযান চালান। কিন্তু নৌপথে নজরদারি থাকলেও চোরাকারবারিদের ঠেকানোর জন্য পর্যাপ্ত জলযান বা আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি না থাকায় তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করতে পারে না নৌ-পুলিশ। তাই নৌপথ পাড়ি দিয়ে যখনই সড়কপথে চোরাই পণ্য পরিবহন করা হয়, তখন সেগুলো জব্দ করে পুলিশ। 

আঞ্চলিক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় নৌ-পুলিশের ইউনিট নেই। সুনামগঞ্জে পাঁচটি ফাঁড়ি এবং হবিগঞ্জে তিনটি ফাঁড়ি রয়েছে। এই আটটি ফাঁড়ির মধ্যে জলযান আছে মাত্র চারটিতে; মোট জনবল ৯৯ জন। একেকটি ফাঁড়িতে ৮ থেকে ১০ জন নৌ-পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্য থেকে ছুটি, অসুস্থতা, ট্রেনিং থাকায় গরহাজির থাকে। যারা কর্মরত থাকেন, তাদের নিয়েই বিভিন্ন অভিযান ও টহল পরিচালনা করা হয়।

নৌপথে চাঁদাবাজির ৩৯ পয়েন্ট
নদীপথে পণ্যবোঝাই জলযান চলার জন্য নদীর অগভীর জায়গা চিহ্নিত করে দিতে বাঁশের মাথায় লাল কাপড় বেঁধে নদী চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। এটাকে স্থানীয়ভাবে ‘মার্কার’ বলে। প্রায় ১৫ বছর ধরে স্থানীয়রা নৌযানকে সহযোগিতা করতে এভাবে নদীতে মার্কার দিয়ে আসছেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এই মার্কার-চিহ্নিত স্থানে চাঁদাবাজি চলছে। নৌ-পুলিশের ছাতক ফাঁড়ি চেঙ্গেরখাল ছাড়া সিলেটের আর কোনো নদীতে টহল দিতে পারে না। এই নদীপথ ছাড়া সুনামগঞ্জ দিয়ে প্রবহমান সুরমা নদীসহ শাখা-উপশাখা মিলিয়ে অন্তত শতাধিক পয়েন্টে মার্কার রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি পয়েন্টে চলছে চাঁদাবাজি। এসব চাঁদাবাজির মূল উদ্দেশ্য চোরাকারবারিদের পণ্য নিরাপদে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া।

নৌ-ইজারাদারদের চাঁদাবাজি
সিলেটের নদীগুলোর বিভিন্ন অংশে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ইউনিয়ন থেকে ইজারা দেওয়া হয়। এসব ইজারাদার নির্দিষ্ট শর্ত মেনে ইজারা নিলেও বেশির ভাগ সময় নির্দিষ্ট টোলের বাইরেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। পণ্য পরিবহনকারী নৌযান শ্রমিকদের অভিযোগ, নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ১ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করেন ইজারাদাররা। 

কোথাও কোথাও বিআইডব্লিউটিএর ইজারা, আবার কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের কালেকশন আদায়ের নামে এই জুলুম চলছে। ইজারার শর্ত না মেনে যার যত ইচ্ছা টাকা আদায় করায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাল্কহেড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘নৌ-পুলিশ এখন আরেক যন্ত্রণার নাম। বাল্কহেড বা যেকোনো ইঞ্জিনচালিত নৌযানের কাগজ দেখেন তারা। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও টাকা দিতে হচ্ছে।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নৌ-পুলিশ সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন লোকবল কম ও ফাঁড়ির সংখ্যা অপ্রতুল থাকায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিলম্বিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নৌ-পুলিশের সব জায়গায় ইউনিট নেই; যেখানে যেখানে আছে, সেখানে আমরা নৌ-টহল করি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করি। গত দুই মাসে আমরা দুই দফা চোরাই চিনির চালান এবং অবৈধ মাদক ও কসমেটিকস ধরেছি। আমরা যখনই আমাদের নৌ-টহলে ও রাতে সংবাদ পাই, তখন আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিজেদের অবস্থা গুছিয়ে কনফার্ম হয়ে এরপর অভিযানে যাই। কারণ আমাদের জনবলের স্বল্পতা রয়েছে।’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘একটি জেলা থানায় যেখানে ৬০ থেকে ৭০ জন কাজ করেন, সেখানে আমরা স্বল্প জনবল নিয়ে দুর্গম এলাকায় কাজ চালাচ্ছি। সারা বাংলাদেশেই নৌ-পুলিশের জনবল কম। যেহেতু গোটা দেশে এই সমস্যা, তাই অনেক জায়গায় প্রয়োজন হলেও আমাদের ইউনিট নেই। অবশ্য নৌপথ নিরাপদ রাখতে জনবল বাড়াতে প্রস্তাব দেওয়া আছে।’ 

চোরাচালান ছাড়া নৌপথে ‘মার্কার’ দিয়ে ৩৯ পয়েন্টে চাঁদাবাজির ব্যাপারে নৌ-পুলিশ সুপার বলেন, ‘বর্ষাকালে মালামাল নিয়ে ডুবোচরে নৌযান আটকা পড়লে সহযোগিতার জন্য বাঁশের মধ্যে লাল কাপড় বেঁধে মার্কার দেওয়া হয়। কিন্তু আমার নৌ-পুলিশ থেকে বলেছি, এটাও করা যাবে না। এই মার্কারের খবর পেলেই আমরা অভিযান চালাই। নৌযানগুলোকে সহযোগিতার নাম করে টাকা নিতে চাইলেই অভিযান করে আমরা চাঁদাবাজদের ধরি।’

নিরাপদ নৌপথ দাবি
বর্ষাকালে নৌপথ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকে না সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর ও ধরমপাশা উপজেলার। এই পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি পড়েছে সুনামগঞ্জ-১ নির্বাচনি এলাকায়। সেখানে একটানা ১৫ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তিনি গত ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান। সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের নতুন সংসদ সদস্য হয়েছেন অ্যাডভোকেট রণজিত সরকার। বহুদিন ধরেই এ অঞ্চলের নিরাপদ নৌপথের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এলাকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে একটি চক্র ইজারার নামে চাঁদা আদায়ে সক্রিয় বলে মনে করছে শ্রমিক সংগঠন।

রণজিত সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকা চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে অনেক হাওর আছে। একটানা ১৫ বছর এখানে একধরনের লুটপাটের রাজত্ব ছিল। আমি এখানকার সংসদ সদস্য মাত্র পাঁচ মাস। এই কদিনে অনেক কিছু সামাল দিয়েছি ও দিচ্ছি। লুটপাট-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমি সব সময় সোচ্চার থাকব। কেবল নৌপথ নয়, সব পথ নিরাপদ রাখতে প্রশাসনকে নিয়ে বন্যা পরিস্থিতির পরই আলোচনায় বসব।’ 

কুড়িগ্রামে বন্যা বেকার ২ লাখ, ফসলহানি ১০০ কোটির

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:২৯ পিএম
বেকার ২ লাখ, ফসলহানি ১০০ কোটির
যমুনার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী-কষ্টাপাড়া-ভালুকুটিয়া রাস্তাটি ভেঙে গেছে। ছবি: খবরের কাগজ

কৃষিপুঞ্জি অনুযায়ী খরিফ-২ মৌসুমে রোপা আমন, শাকসবজি, মাষকলাইসহ অন্যান্য ফসল চাষের জন্য সাধারণ জমি প্রস্তুত করার কাজ হয় জুলাই মাসের শুরু থেকে। কিন্তু অভিন্ন নদ ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর পানিতে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের অর্ধেকটাই প্লাবিত। ফলে বেকার হয়ে আছেন কমপক্ষে ২ লাখ কৃষিশ্রমিক। সবজি, মরিচ, পাটসহ বিভিন্ন ফসল বন্যায় নষ্ট হওয়ায় অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষিনির্ভর প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আরও জানান, বন্যার পানিতে ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির পাট ও মরিচসহ নানা ধরনের ফসল নষ্ট হয়েছে। বন্যা-উত্তর কৃষি পুনর্বাসনে চাষাবাদে অগ্রাধিকার পাবে রোপা আমন, শাকসবজি, মাষকলাই এবং শীতের আগাম ফসল যেমন সরিষা। 

অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি সহযোগিতা দেওয়া হবে। খরিফ-২ মৌসুমের জন্য চাষিদের জমি তৈরির কাজ এ বছর শুরু হতে দেরি হবে। কারণ বন্যায় ডুবে আছে অনেক জমি।’ 

কুড়িগ্রামে কত পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কৃষি বিভাগের হিসাবে বলা হয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তার মধ্যে অন্তত আড়াই লাখ পরিবারেই আছেন কৃষিশ্রমিক। বন্যায় তাদের অনেকেই এখন বেকার।’

তার দাবি, পানি নেমে গেলেই কাজ পাবেন বেকার কৃষিশ্রমিকদের অনেকেই। কারণ খরিফ-২ মৌসুমের জন্য জমি তৈরির কাজ শুরু করবেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় শতভাগ নষ্ট হয়ে গেছে ৫৫৪ হেক্টর বীজতলার পাশাপাশি ৩৭ হেক্টরের মরিচ, ১ হাজার ১৭০ হেক্টর জমির আউশ আর ৭৩৭ হেক্টর জমির শাকসবজি। তবে কুড়িগ্রামের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাটের তেমন ক্ষতি হয়নি এ পর্যন্ত। পানি নেমে যাওয়ার পরই ৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির পাট কাটা শুরু হবে। 

কথা হয় কৃষিশ্রমিক মো. মহসিন আলীর সঙ্গে। বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ইত্তর নবাবাস গ্রামে। দুই দফা বন্যা তাকে প্রায় নিঃস্ব করে ছেড়েছে। প্রথম দফা বন্যার পর থেকেই তিনি প্রায় বেকার। প্রথম বন্যার আগে তিনি দিনে গড়ে রোজগার করতেন ৫০০ টাকা। বন্যায় তার অবস্থা কী- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘৯ সদস্যের পরিবার চালাতে গিয়ে গত ছয় মাসে দেনা করেছি প্রায় এক লাখ টাকা। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, ধারও কেউ দিতে চায় না।’

তার আফসোস, পানি নেমে যাওয়ার পর আবার কাজ করার সুযোগ হলেও ধারের টাকা শোধ করতেই বড় অঙ্ক চলে যাবে। এ অবস্থায় পরবর্তী দিনগুলো আরও কঠিন হবে। 

যেসব এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলা একটি। কুড়িগ্রামের এ উপজেলার অনেকটা এলাকা এখন ফসলসহ পানিতে ডুবে আছে। ডুবে থাকা জমি দেখতে এসেছিলেন বর্গাচাষি মো. আব্দুস সাত্তার। পূর্ব নাগেশ্বরী বয়লার ডাবা গ্রামের এ চাষি নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতেও শ্রম দেন। জানালেন, দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে এ বছর তিনি যে ফসল চাষ করেছেন, তার পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে বন্যায়। কেমন আছেন?

উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে বেকার বসে আছি। প্রথম বন্যার আগে দিনে আমার রোজগার হতো ৪০০-৫০০ টাকা। আর এখন ধারদেনা করে চলছি।’

তিনি জানান, হাতে কোনো টাকা-পয়সা না থাকায় গত সপ্তাহের বাজার করেননি। পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটার টাকা না থাকায় সকালে বাড়ি থেকে বের হন আর রাত দুপুরের পর কখনো কখনো আরও পরে বাড়িতে ফেরেন। 

একই এলাকার আরেক কৃষিশ্রমিক মো. নজরুল ইসলাম। তিনিও বেকার অনেক দিন। আট সদস্যের পরিবার কীভাবে চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে চলছি। কত দিন বেকার?

তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে পুরোপুরি বসে আছি। কোনো কাজ নেই। সংসার চালাতে গিয়ে ইতোমধ্যেই ধার করেছি ১৫ হাজার টাকা। বন্যার পানি পুরোপুরি নামতে সময় লাগবে কমপক্ষে ১৫ দিন। তাতে আমার দেনা বাড়বে আরও অন্তত ১০ হাজার টাকা।’ 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জুনের শেষ দিকে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের শুরুতে বিপৎসীমা অতিক্রম করে ওই নদ। এখনো ওই নদের পাশাপাশি বিপৎসীমার ওপর আছে ধরলা ও দুধকুমার। বৃষ্টি কম হওয়ায় উজানে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু তারপরেও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি কমতে আরও সময় লাগবে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বন্যার ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন অন্তত ২ লাখ কৃষিশ্রমিক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ৫০ হাজার কৃষিনির্ভর পরিবার। দুই দফা বন্যায় মরিচ, পাট, রোপা আমনের বীজতলা ও সবজিসহ নানা ধরনের ফলন নষ্ট হয়েছে অন্তত ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির। এতে চাষিদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা। 

সরেজমিন: সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে হাত ধুতেও সিরিয়াল

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:২১ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩০ পিএম
সরেজমিন: সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে হাত ধুতেও সিরিয়াল
মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসা রোগীদের ভীড়। ছবি: খবরের কাগজ

নারায়ণগঞ্জ থেকে মাসুম বিল্লাহ এসেছেন কুকুরের কামড়ের টিকা নিতে। গত সপ্তাহে তার পোষা কুকুর টাইগার এলাকার আরেক রাস্তার কুকুরের সঙ্গে মারামারি বাধিয়েছিল। এতে ঘায়েল হয়ে পড়ে টাইগার। টাইগারকে রক্ষা করতে ছুটে যান মাসুম বিল্লাহ। কাছে গেলে নিজেও রেহাই পান না কুকুরের কামড় থেকে। ডান হাতের বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর মাঝের ফুলে ওঠা জায়গাটায় কামড়ের জখম এখনো শুকায়নি। জলাতঙ্ক হতে পারে ভেবে টিকা নিতে ছুটে আসেন রাজধানী মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে।

টিকা নেওয়া শেষে শুকনো মুখে বের হয়ে আসার সময় সঙ্গে থাকা স্ত্রীকে বলছিলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল। এইহানে সেবা আছে কিন্তু মায়া নাই। রোগীদের এ্যারা মানুষ মনে করে না।’ 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, টিকা নিতে আসা মানুষে গিজগিজ করছে হাসপাতাল। কাউন্টারে লম্বা লাইন পার হয়ে টিকিট কাটতে গিয়ে অপেক্ষার প্রহর যেন ফুরায় না সেবা নিতে আসা মানুষের। টিকিট কাটার পর জরুরি বিভাগে পাঠানো হয় টিকা নিতে আসা রোগীদের। রুমের শেষ প্রান্তে ক্ষতস্থান সাবান দিয়ে ধোয়ার জন্য দুটি পানির ট্যাপ। সেখানেও সিরিয়াল ধরে ধুতে হয় আক্রান্ত স্থান। তার পাশে দুটি টয়লেটের দরজা হাট করে খোলা। টয়লেটের পাশেই রাখা ডাস্টবিন। জরুরি বিভাগের বিশাল রুমের ডানদিকে ছোট ছোট রুমে বসে আছেন ডাক্তার-নার্স। এখানেই পাওয়া যাবে জলাতঙ্কের সেই কাঙ্ক্ষিত টিকা। জরুরি বিভাগে ঢুকেই ডান দিকের প্রথম রুম থেকে শোনা যায় ডিউটি ডক্তারের ঝাঁঝালো কণ্ঠ। সেখানেও লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। রোগীদের সমস্যা জানতে চাইছেন ডিউটিরত ডাক্তার। ডাক্তারের কড়া মেজাজ দেখে অনেক রোগীই সমস্যার কথা বলতে খেই হারিয়ে ফেলছেন। এতে আরও বিরক্ত হচ্ছেন ডাক্তার। 

টিকাদান কক্ষের সামনে গেলে দেখা রোগীরা লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন তাদের সুযোগ আসার। লাইনে বৃদ্ধ থেকে শিশু, সবার চোখেই আতঙ্ক। টিকা নিতে আসা রোগীরা আক্রান্ত স্থানে ইনজেকশনের খোঁচা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তীব্র ব্যথায় চিৎকার করছেন জোরে জোরে। তাদের চিৎকারে অপেক্ষমাণ রোগীদের অনেকেরই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। শিশুরা ভয়ে কান্না করছে। টিকা নিতে আসা অনেক শিশু ইনজেকশন দেখার সঙ্গে সঙ্গেই রুমে থেকে দৌড়ে ছুটে আসছে বাইরে। এতে হাসপাতালের কর্মচারীরা শিশুদের কাউন্সেলিং না করিয়ে অভিভাবকদের চাপ দিচ্ছেন কান্না থামানোর জন্য। টিকা নিতে আসা রোগীদের ইনজেকশন দেওয়ার সময় নার্সদের ব্যবহারে মনে হচ্ছিল তারা ‘ধর তক্তা, মার পেরেক’ নীতি অবলম্বন করছিলেন। রোগীদের ব্যথার তোয়াক্কা না করে, মানসিকভাবে স্থির হওয়ার সময় না দিয়ে, যেন টিকা দিয়ে বিদায় করতে পারলেই লাইনে রোগীদের সংখ্যা কমবে। 

হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ব্যাপারে জানার জন্য দায়িত্বে থাকা কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিউটিরত এক ডাক্তারকে রোগীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে চোখে-মুখে বিরক্তির অভিব্যক্তি স্পষ্ট ফুটে ওঠে। বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে দায়সারা উত্তর দেন। তবে বহির্বিভাগে টিকা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বললে জানা যায় দুর্ব্যবহারের কথা। দুলাল সিকদার নামের একজন রোগী জানান, আগের দিন শেষ সময়ে টিকা নিতে এসে দেখেন প্রচুর ভিড়। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে তিনি টিকা না নিয়ে ফিরে গেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, শেষের দিকে অনেকেই তার পরে টিকা নিতে আসেন। কিন্তু হাসপাতালের কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে ২০০-৩০০ টাকা নিয়ে তাদের আগে টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। যারা আগে এসে টাকা দিতে পারেননি তারা শেষেও টিকা পাননি। 

এ বিষয়ে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. আরিফুল বাশার খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০-৮০০ রোগী টিকা নিতে আসেন। সে তুলনায় আমাদের জনবলে ঘাটতি আছে। কর্তৃপক্ষকে অনেকবার অবহিত করার পরেও এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আর রোগীদের সাথে খারাপ ব্যাবহার হাসপাতালের সাথে জড়িত সবাই করেন না, হয়তো কোন কোন ডাক্তার বা নার্স করে থাকেন। এটাও তার মানসিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। সীমিত জনবল নিয়ে প্রতিদিন রোগীদের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে অনেকেই হয়তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না।’ 

টাকার বিনিময়ে টিকা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে আগেও কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। হাসপাতালের আশেপাশে যে বস্তি, এ এলাকা ঘিরে অনেকেই অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত। হাসপাতালের কিছু স্টাফের সাথে তাদের মেলামেশা আছে। তাদের প্রশ্রয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাসপাতালের কর্মরত অনেকেই এই সিন্ডিকেটে জড়িত। এ বিষয়ে আমরা শীঘ্রই আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিব। আর হাসপাতালের ব্যাপারে করা সমস্ত অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।’ 

উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:১২ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
উচ্চ পদে ঢালাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ

প্রশাসনের শীর্ষ পদে একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। আগে বিশেষজ্ঞদের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়ার নজির থাকলেও এখন ‘ঢালাওভাবে’ নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৮৩ সচিবের মধ্যে প্রশাসনের শীর্ষ দুই পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবসহ ২০ জনই চুক্তিতে কর্মরত। ফলে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তারা যথাসময়ে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এ ধরনের নিয়োগ নিয়ে খোদ সরকার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যেই ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। 

তাদের মতে, একজন কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে গেলে সেই পদ খালি হয়। ওই পদে নতুন একজন কর্মকর্তার পদোন্নতি বা পদায়ন হয়। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে বঞ্চিত হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে সরকার যতটা না উপকৃত হয়, তার চেয়ে বেশি লাভ হয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের। 

অতীতে কোনো প্রকল্প বা বিশেষ কারণে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের এক বছর চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হতো। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। ব্যক্তিগত সখ্য ও রাজনৈতিক বিশেষ তদবিরের কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে একাধিক সচিবকে এক বা দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ শেষে কারও কারও চুক্তির মেয়াদ আরও বেড়েছে।

বিএনপির আমলেও রেকর্ডসংখ্যক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়। অনেকে মনে করেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে রেকর্ড গড়ে, তার জন্য অন্যতম প্রধান দায়ী এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত আমলারাই। দুর্নীতি করতে তারা কোনো রকম রাখঢাক করেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় একটি প্রভাবশালী মহল ভুল বুঝিয়ে একের পর এক চুক্তির সুযোগ নিচ্ছে। তবে সরকার যদি কাউকে কোনো মন্ত্রণালয়ে অপরিহার্য মনে করে, সে ক্ষেত্রে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া স্বাভাবিক। তবে ঢালাওভাবে নিয়োগ দেওয়া অনুচিত। সাম্প্রতিক সময়ে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়ায় পদোন্নতিযোগ্য ও সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বিগত কয়েক বছর জনপ্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কমেছিল। বিশেষ করে নিয়মিত পদগুলোতে চুক্তিতে কম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু আগে থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়া শুরু হয়। সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সাধারণত কাউকে চুক্তিতে নিয়োগের ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ কমে যায়। সে জন্য শীর্ষ পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। 

অন্যদিকে চুক্তিতে নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিতে সরকারের বাড়তি ব্যয়ও হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে অবসর নিতে হয় ৫৯ বছর বয়সে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরও এক বছর বেশি চাকরি করার সুযোগ পান। 

বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, জনপ্রশাসনে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের অবসরের সময় এগিয়ে আসছে, এখন তাদের অনেকেই চুক্তিতে নিয়োগ পেতে চেষ্টা-তদবির করছেন। জনপ্রশাসনে এখন সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৮৩ জন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সচিব-পদ শূন্য হয়। যেহেতু নির্বাচন ও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেই কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেন। সে ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন, তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষে সেখানে নতুন অনেককে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সব সময় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনও রয়েছে। কারণ একজনকে নিয়োগ দিলে এ ক্ষেত্রে যার সুযোগ ছিল তিনি বঞ্চিত হন। প্রধানমন্ত্রী সব সময় বিষয়টি খেয়াল রাখেন। 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, বিশেষ কারণে ওই সময়ে (সংসদ নির্বাচনের আগে) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়েছিল। তার মতে, এটা করা হয়েছিল দেশের স্বার্থে ও কল্যাণে কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার জন্য।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান বলেন, তারা চাকরিতে থাকাকালে যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিতেন। কারণ পদোন্নতিযোগ্যদের বঞ্চিত করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে প্রশাসনে নানামুখী সমস্যা তৈরি হয়। পদোন্নতিপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৪ সালে কমিশনের সুপারিশ ছিল শুধু কারিগরি কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন, তাকে ছাড়া মন্ত্রণালয়ে গতি আসবে না -এমন অপরিহার্য হলে সেই ধরনের কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। ঢালাওভাবে শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে তা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট করে দেয়। তাই যারা পদোন্নতির যোগ্য, তাদেরই পদোন্নতি দেওয়া উচিত।’

সূত্র বলছে, প্রশাসনে অতীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের লাগাম টেনে ধরতে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পরিহার করার জন্য ২০১৪ সালে একটি নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের উদ্দেশ্যে একটি আধা সরকারিপত্রও (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন তিনি। 

লিখেছিলেন, ‘অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সরকার কাউকে যদি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে, সে ক্ষেত্রে ক্যাডারবহির্ভূত বিশেষ পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এটি কার্যকর হলে নিয়মিত পদোন্নতিপ্রত্যাশী  কর্মকর্তারা শীর্ষ পদে আসীন হতে পারবেন। কোনো পক্ষের আর হতাশা ও ক্ষোভ থাকবে না।’ 

তার প্রস্তাবটিও আমলে নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে দেওয়া পে-কমিশনের সুপারিশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। সেটিও আমলে নেওয়া হয়নি। বরং পরবর্তী সময়ে চুক্তিতে নিয়োগ বেড়েছে।

জনপ্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। এর মধ্যে মো. মাহবুব হোসেন গত বছরের (২০২৩) ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের ১৩ অক্টোবর থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। নিয়ম অনুযায়ী তাকে অবসর দিয়ে ওই বছরের ৩ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে ১৪ অক্টোবর থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে এ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কথা জানানো হয়। 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থাকাকালে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর মুখ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ পান তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। চাকরির স্বাভাবিক মেয়াদ শেষ করে গত বছরের (২০২৩) ৪ জুলাই তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বছরের (২০২৩) ২৫ জুন অবসরোত্তর ছুটি এবং এ-সংক্রান্ত সুবিধা স্থগিতের শর্তে ৫ জুলাই থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। 

এদিকে আরও এক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব হিসেবে ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী এক বছর মেয়াদে এ পদে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে গত ২৬ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স নির্বাহী কমিটির প্রধান পরামর্শক পদে মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব আলী হোসেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সিনিয়র সচিব) মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) মো. আখতার হোসেন, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার চুক্তিতে কর্মরত আছেন। 

তালিকায় আরও আছেন, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) শাহাবুদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (সচিব) মো. ফজলুল বারী, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (লিয়েনে কর্মরত) বেগম শরিফা খান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী সদস্য (সচিব) মো. খাইরুল ইসলাম। 

বর্তমানে ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের সচিব হিসেবে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এর ফাঁকেও প্রশাসনের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদোন্নতিপ্রত্যাশী  বিসিএস ১৫তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে খবরের কাগজকে বলেন, সচিব পদোন্নতি পাওয়ার সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। একের পর এক চুক্তি দেওয়ায় তারা কবে সচিব পদোন্নতি পাবেন তা নিয়ে হতাশায় রয়েছেন। কারণ একজনকে চুক্তিতে দিলে আরও ৫ জনের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে তারাও পদোন্নতির আগে মনোকষ্ট নিয়ে অবসরে চলে যাবেন। এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। তার পরও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিবেচনায় আনেন না। সুবিধাভোগী আমলারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে প্রভাবিত করছেন। এটি প্রশাসনের জন্য আদৌ কাম্য নয়।

তাদের অভিমত, নিয়মানুযায়ী সচিবের পদ শূন্য হওয়ার পর যোগ্য কর্মকর্তারাই ওই পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু তা যেন অধরাই থাকছে। উল্টো ওই পদে থাকা সেই কর্মকর্তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনায় সচিব পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, নতুন ঋণ ও সুদহার কমানোর প্রস্তাব দেবে ঢাকা

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:২৬ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, নতুন ঋণ ও সুদহার কমানোর প্রস্তাব দেবে ঢাকা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিন পিং

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বেইজিং সফরকালে শীর্ষ বৈঠকে বেইজিংয়ের কাছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা, নতুন ঋণ ও ঋণের সুদহার কমানোর মতো প্রস্তাব দিতে পারে ঢাকা। অন্যদিকে বেইজিং চায় ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে ঢাকার সমর্থন। এ ছাড়া তিস্তা প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে হলেও থাকতে চায় চীন। বেইজিং এ অবস্থায় ঢাকার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর কথা বলছে।  

আগামী ৮-১১ জুন বেইজিং সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরকে চীন ও ভারতের মধ্যে ভারাসাম্য রক্ষার সফরও বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর হবে উন্নয়নমূলক। এই সফরে ভারতের আপত্তি নেই। 

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতকে যেমন খুশি রাখা জরুরি, তেমনি চীনকেও খুশি রাখা জরুরি। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। দেশটির কাছ থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ পায় বাংলাদেশ। কাজেই বাংলাদেশ চাইলে চীন ও ভারত উভয়কেই তিস্তা প্রকল্পে যুক্ত করতে পারে।’

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা নিতে চীনকে অনুরোধ করবে ঢাকা

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গ উঠলে নয়াদিল্লি ঢাকাকে বেইজিংয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তখন ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরকালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরাও মনে করেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অফিশিয়ালি চীন বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যস্থতা করছে এবং দেশটির মধ্যস্থতায় তিনটি বৈঠকও হয়েছে ঢাকা-নেপিদোর মধ্যে। 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রী লি জিয়ান চাও সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট বেইজিং। কিন্তু রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এ ক্ষেত্রে চীন যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করছে, যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনও শুরু করা যায়।’ 

এ প্রসঙ্গে বেইজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘চীনের সঙ্গে মায়ানমারের সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। কাজেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ চাইবে ঢাকা 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণ চাইবে ঢাকা। এটা দুই দেশের সম্পর্কে ‘গেম চেঞ্জারে’র ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে বেইজিং। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এবং ৫ বিলিয়ন ডলার চীনা মুদ্রা ইউয়ানে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে, যেটা আমদানিসহ বাণিজ্যে ব্যবহৃত হবে। এ ছাড়া সফরকালে ৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তাও চাওয়া হতে পারে। 

প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সফরকালে যৌথ বিবৃতির বিষয় চূড়ান্ত করা হয়। 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ৭ প্রকল্পে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে ঢাকা। এ ছাড়া গাবতলী থেকে সদরঘাট হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রোরেলে (মেট্রোরেল-২) ঋণ দিতে আগ্রহী চীন। এই প্রকল্পে ৬০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এ ছাড়া বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন বিস্তৃত করা হবে। এ জন্য দরকার ৪১ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণেরও প্রস্তাব দেবে ঢাকা। 

এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘চীনের সুবিধা হচ্ছে তাদের অনেক উদ্বৃত্ত টাকা আছে। ভারতও কিন্তু চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়। কিন্তু অন্যরা চীনের কাছ থেকে ঋণ নিলে তাদের গায়ে জ্বালা করে।’ 

সুদহার কমানোর প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে ঋণের সুদহার কমানোর প্রস্তাব দিতে পারে ঢাকা। গতবার যখন প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গিয়েছিলেন, তখনই বিষয়টি নিয়ে বেইজিংকে অনুরোধ করেছিল ঢাকা। সূত্র জানায়, এবারও একই অনুরোধ করা হতে পারে। 

এই অনুরোধের বিষয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তখন চীন সরকারকে অনুরোধ করে বলা হয়েছিল যে আমরা গরিব দেশ। তখন বেইজিং একটা ক্যাপ দিয়েছিল যে কোনোভাবেই সেটি ২ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু ঢাকা এটাকে ১ শতাংশ করতে বলেছিল। এবারও হয়তো এমন প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।’ 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রও বলছে, ২০১৬ সালে যেসব ঋণচুক্তি হয়েছিল, এবার তার চেয়ে ভিন্ন মডেলে ঋণচুক্তি সই হবে  বলে আশা করা হচ্ছে। 

ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে হলেও তিস্তা প্রকল্পে থাকতে চায় বেইজিং

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, চীন আশা করেছিল ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর চীনকে তিস্তা প্রকল্পের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা ঢাকা সফরকালে তিস্তা প্রকল্পে বিনিয়োগে নয়াদিল্লির আগ্রহের কথা জানান। 

এ অবস্থায় বেইজিং ঢাকাকে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে যে দিল্লির সঙ্গে যৌথভাবে হলেও তারা তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়ন করতে চায়। যদিও ঢাকা এখন পর্যন্ত বেইজিংয়ের এই নতুন প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। 

চীন যে এমন প্রস্তাব ঢাকাকে দিয়েছে, সেটি প্রথম ইউরেশিয়ান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়। তারপর সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। পাশাপাশি তিনি এটাও জানান যে বেইজিং ঢাকার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে এবং ঢাকার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো হবে। 

ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে ঢাকার সমর্থন চাইতে পারে বেইজিং  

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূ-রাজনৈতিকভাবে চীন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও চীনের এই ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থেই ভূ-রাজনৈতিকভাবে বেইজিংকে সমর্থন করতে হচ্ছে ঢাকাকে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ছাড়া ভূ-রাজনৈতিক কিছু ইস্যুতে বেইজিংও ঢাকাকে পাশে চায়। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে সম্প্রতি চীন কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ফিলিপাইনের জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি নিয়ে চীন চিন্তিত। এই ইস্যুতে তারা হয়তো বাংলাদেশকে তাদের পাশে চাইবে। এদিকে কোয়াডে যেকোনোভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চাপ রয়েছে। এই ইস্যুতে বেইজিং বরাবরই তাদের বিরোধিতার কথা ঢাকাকে জানিয়েছে। 

বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন করিব খবরের কাগজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখনকার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে চীনারা হয়তো চাইবে বাংলাদেশ তাদের অবস্থানকে সমর্থন করুক। যেমনটা আমরা সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় দেখেছি। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে যে দ্বিপক্ষীয় গভীর সম্পর্ক আছে, সেটাকে পুঁজি করেই আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক জটিলতাগুলোর সমাধান করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক ক্রমাগত আরও বলিষ্ঠ হবে এবং সফরটি সফল হবে বলে আমি আশাবাদী।’

কোটাবিরোধী আন্দোলন নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে পুলিশ

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৩ এএম
আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে পুলিশ
ছবি: খবরের কাগজ

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে ঢাকার কোনো সড়কে যাতে কোটা নিয়ে কেউ অরাজকতা করতে না পারে সেই দিকে বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশের শাখাগুলোকে। শুরু থেকে যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের গতিবিধি নজরদারি এবং তারা কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখতে বলা হয়েছে কোটা আন্দোলনের মূল স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে। এই ইস্যুতে গণ অধিকার পরিষদের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখছে পুলিশ।  

এই আন্দোলনে নুর ও তার দলের কোনো উসকানি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের মাঠে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় মাঠের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগ বাড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ঘটনাস্থলের আপডেট তথ্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেসব পরামর্শ দেবেন সেসব পরামর্শ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। 

সাম্প্রতিক এই ইস্যুতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় সভা করেছেন। এই সভাগুলোতে সভাপতিত্বে করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান। এই সভায় ডিএমপির পক্ষ থেকে পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ৭টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

সেগুলো হলো, আন্দোলনের নামে কেউ সড়কে অরাজকতা সৃষ্টি করে ও আইন হাতে তুলে নিলে তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে, এই আন্দোলনে যাতে কেউ সরকারবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে না পারে সেই বিষয়টি কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে না করতে পারে সেই দিকে খেলাল রাখা ও মনিটরিং বাড়ানো, ২০১৮ সালে যারা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের অবস্থান নির্ণয় করা, মোবাইল ট্র্যাকিং বাড়ানো ও আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন গতকাল বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘অতীতের দিকে নজর দিয়ে চলমান কোটা আন্দোলনের বিষয়ে আমরা পরিস্থিতি নজরে রেখেছি। আইন ভঙ্গ করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ 

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় আন্দোলন হয়েছিল। সেই সময় ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও হয়েছিল। অতীতের বিষয়টি মাথায় রেখেছে পুলিশ। গত এক সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আবারও মাঠে নেমেছেন। 

গতকাল শনিবারও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন যে, তাদের দাবি মেনে কোটার বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপন না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এতে পরিবেশ পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে। যদি হঠাৎ এই আন্দোলনে অরাজকতা হয় সেই ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা আগেই নির্ধারণ করে রেখেছে পুলিশ। 

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা এই কোটার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এই সব তরুণ নেতৃত্বের গ্রামের বাড়িতেও তার পরিবারের সদস্যরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত সেই বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে গোয়েন্দারা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে। এই বিষয়টি আমলে নিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই নেতা আন্দোলনকারীদের অর্থ সরবরাহ করছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে মাঠপর্যায়ের তদন্তকারীরা।

 সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিষয়ে নজরদারি রেখেছে পুলিশ। এই আন্দোলন নিয়ে তার সাম্প্রতিক গতিবিধি খুব একটা ইতিবাচক দেখছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েক দিনে তিনি একাধিক ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এই আন্দোলনে তার উসকানি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।