![এমপি আনার হত্যাকাণ্ড: ঝিনাইদহের ১৩ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও গ্রেপ্তারে নানা হিসাব-নিকাশ](uploads/2024/07/04/anar-1720074531.jpg)
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে জেলার ১৩ জন নেতাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এর মধ্যে ৯ জনকে ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। বাকি ৪ জনকে ঝিনাইদহ জেলায় গিয়ে ডিবির টিম জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান তদন্তকারীরা। তাদের তথ্যের সূত্র ধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়।
এই ১৩ নেতা ঝিনাইদহ জেলার খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। কেউ যুবলীগ, কেউ ছাত্রলীগ আবার কেউ স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা। এদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো নিয়ে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কারণ এমপি আনার হত্যায় জড়িত সন্দেহে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করীম মিন্টুকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর ডিবির অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না। তাকে গ্রেপ্তার করার পর বড় চাপে পড়ে পুলিশ। তাকে ছাড়াতে নানা পর্যায় থেকে তদবির আসে। এতে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। এ জন্য এ মামলায় যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে নানা হিসাব-নিকাশ করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্র জানায়, ডিবির ছায়া তদন্তে আনার হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। এরপরই আস্তে আস্তে উপরের নামগুলো বের হয়ে আসে।
এদিকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সীতাকুণ্ডু থেকে গ্রেপ্তার আসামি ফয়সাল আলী সাহাজী।
৬ দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার (৩ জুলাই) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান এ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার এই মামলার আরেক আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ফকির আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসামি ফয়সাল এর আগে ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যে, আনারকে হত্যার সময় শাহীন মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
এ সময় তিনি মদ্যপ অবস্থায় চিৎকার করে বলছিলেন যে, তাকে (আনার) দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। তখন খুনিরা আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার আসামি ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর চিকিৎসা ভিসার মাধ্যমে ভারতে গিয়েছিলেন। ডিবি পুলিশ তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে চেয়েছিল যে, তাদের শরীরে কোনো রোগ আছে কিনা? তারা ডিবিকে জানিয়েছেন যে, তাদের কোনো রোগ নেই। একটা অজুহাত দেখিয়ে তারা ভারতে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের দুজনের মোবাইল জব্দ করেছে ডিবি। এসব মোবাইলে তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তার রেকর্ড পরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিকে খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহীনকে সহসাই দেশে ফেরানো যাচ্ছে না। এর জন্য বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এমপি আনার। ২২ মে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
অন্যদিকে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ দুটি মামলায় ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭ জন।
তারা হলেন শিলাস্তি রহমান, আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ওরফে ফয়সাল সাজি, ঝিনাইদহ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল সাহাজী।