ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

দোহাজারী-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্প: পরিকল্পনাতেই ব্যাপক গলদ

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পিএম
দোহাজারী-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্প: পরিকল্পনাতেই ব্যাপক গলদ

কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনটি পঞ্চম তলা নির্মাণ করা হলেও পরিকল্পনায় গলদ রয়ে গেছে। দ্বিতীয় তলা থেকে একে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই রামু থেকে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন শেষ পর্যায়ে সংশোধন করে বাদ দেওয়া হয়েছে এই অংশকে। এই হচ্ছে ‘দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ’ মেগা প্রকল্পের বাস্তব চিত্র। 

প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তার পরও ১৭টি অডিট আপত্তি অনিষ্পন্ন রয়েছে। বিভিন্ন স্টেশনের নির্মাণকাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। এসব স্টেশন ও সার্ভিস এরিয়া ভবনে নিম্নমানের টাইলস, কাঠ, গ্রিল, কমোড, বেসিন ব্যবহার করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পরিকল্পনা ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্য ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের মতো দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ বার সংশোধনের মাধ্যমে গত ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হলেও শেষ হয়নি। এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ তৈরি হয়েছে। পরিকল্পনায় আরও ২৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত প্রসারিত করার কথা ছিল। কিন্তু মায়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের এমওইউ করা হয়নি। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এই অংশের কাজ বাতিল করা হয়েছে।

আইএমইডির সচিব মো. আবুল কাশেম মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্রকল্প পরিদর্শন করার সময় সবকিছু তুলে ধরার চেষ্টা করি। এটা আমাদের কাজ। সতর্কতার সঙ্গে টাকা খরচ না করলে প্রকল্পে কিছু ত্রুটি থেকে যায়। এই প্রকল্পে তেমন কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। তবে অনেক অডিট আপত্তি ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনে তা আছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় এসবের জবাব দেবে। লক্ষ্য থাকবে যাতে নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটে।’ 

পরিদর্শনকারী (আইএমইডির) পরিচালক ও উপসচিব মো. মুমিতুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন পঞ্চম তলা নির্মাণ করা হলেও পরিকল্পনায় গলদ রয়ে গেছে। কারণ দ্বিতীয় তলা থেকে একে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। তাই ট্রেন চলাচল করলেও এই স্টেশনের ওপরের ফ্লোরগুলো খালি পড়ে আছে। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই রামু থেকে সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন শেষ পর্যায়ে এই অংশকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যখন এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল, তখনই প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ সেখানে কোনো ব্যবসার উৎস ছিল না। তার পরও ঘুমধুম পর্যন্ত বাড়িয়ে বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে। আমরা অর্থনীতির শ্বেতপত্রে এ ধরনের অর্থ তছরুপের কথা বলেছি। পাঁচতলা কক্সবাজার রেলস্টেশনটি কর্ণফুলী টানেলে বিলাসী হোটেলের মতো অবস্থা। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বিলাসী ভ্রমণের জন্যই এটা করেছেন। এ ধরনের অপরিকল্পিত পরিকল্পনায় যারা জড়িত তাদের ধরা দরকার। কারণ জনগণের করের টাকা ও ঋণ করে এই প্রকল্প করা হয়েছে।’

প্রকল্প পরিচালক সুবক্তগীন বলেন, ‘গত ৩০ জুন প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টুকটাক কিছু কাজ বাকি আছে। বড় কোনো কাজ বাকি নেই। নভেম্বর পর্যন্ত বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যে কাজ বাকি আছে, তা ডিফেক্ট ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে শেষ হবে। এ জন্য এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে।’

দেশের অন্যতম পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেললাইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার জন্য সাবেক সরকার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় তৎকালীন সরকার। খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং বিদেশি ঋণ হিসেবে ধরা হয়েছিল ৮১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেওয়া হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ডুয়েল গেজ লাইন করার জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ হিসেবে ধরা হয়। বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

প্রকল্পের প্রধান কাজ ধরা হয় চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণ। এ জন্য ৩৯টি মেজর ব্রিজ, ২৩০টি মাইনর ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস ও ওভারপাস নির্মাণ এবং দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজারের চকরিয়ার হারবাং, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ, রামু উপজেলাসহ ৯টি স্থানে নতুন করে স্টেশন নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ১ হাজার ৩৯১ একর জমি অধিগ্রহণের কথাও উল্লেখ করা হয় প্রকল্পে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্য ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের মতো এটিকেও এর আওতাভুক্ত করেন এবং গভীরভাবে মনিটর করার নির্দেশ দেন। তার পরও ঠিকমতো কাজে গতি আসেনি। ২০২২ সালের ৬ জুন চতুর্থবারের মতো সংশোধন করে ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। বিভিন্ন প্যাকেজে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজারের ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

গত ১১ ও ১২ অক্টোবর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করার পর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পটি আসলে ৩০ জুনে শেষ হবে কি না তা দেখার জন্য আইএমইডির মহাপরিচালক গত ১৭ মে পর্যবেক্ষণ (মনিটরিং) করেন। তিনি অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করাসহ সার্বিক দিক পরিদর্শন করে এক বছর সময় অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সুপারিশ করেন। সেটা আমলে নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন গত ২৯ সেপ্টেম্বর এক বছর সময় বাড়ানোর সুপারিশ করে। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াল ১২ বছর। তবে বাতিল করা হয়েছে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ। এতে ৩৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং উখিয়া ও ঘুমধুম স্টেশন নির্মাণ, হাতি চলাচলের জন্য আন্ডারপাস-ওভারপাসসহ অন্যান্য কাজও বাতিল করা হয়েছে। এসব কাজের জন্য ৬ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকার বরাদ্দও বাদ গেছে। এসব বাদ দিয়ে প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা এবং সরকারি খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, লট-১-এর আওতায় নতুন করে বৃক্ষরোপণসহ আগে যেসব বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে সেসবের সুষ্ঠুভাবে পরিচর্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগকে লাভজনক করতে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া আইকনিক রেলস্টেশনসহ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নির্মিত স্থাপনা প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয় তলা থেকে একে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় রেলসেতু যমুনা সেতুতে বছরে আয় কমবে কোটি টাকা

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫১ পিএম
যমুনা সেতুতে বছরে আয় কমবে কোটি টাকা
ছবি : খবরের কাগজ

উদ্বোধনের অপেক্ষায় যমুনা রেলসেতু। তারিখ না হলেও চলতি জানুয়ারি শেষের দিকে বা ফেব্রুয়ারিতে সেতুটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়েছে। উদ্বোধন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দিয়ে আর ট্রেন চলবে না। এতে সেতু কর্তৃপক্ষের আয় কমবে বছরে কোটি টাকা।

যমুনা রেলসেতু প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি খুব দ্রুত রেল সেতুটি চালু করতে পারব। সেতুটি চালু হলে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর চাপ অনেকটা কমে যাবে।’
 
বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর ঢাকা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগের একমাত্র সংযোগস্থল টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু। সেতুটি ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে সেতুটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ হাজার যানবাহন এবং ৩০-৩৮টি ট্রেন পারাপার হচ্ছে। সেতুর পূর্ব প্রান্ত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর ও পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জের সংযোগস্থল। 

২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দিলে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
 
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি রেল সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং শুরু হয়। সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের দীর্ঘতম ৪.৮০ মিটার ‘যমুনা রেলসেতু।’

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিস সূত্রে জানা য়ায়, রেলসেতু উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ থাকলেও চলবে না কোনো ট্রেন। এতে করে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের বছরে কোটি টাকা আয় কমবে। তবে সেতুতে স্থাপিত রেল লাইন অপসারণ করে যান চলাচলের রাস্তা প্রশস্ত করা হবে।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। রেল সেতুটি চালু হলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। ফলে বছরে সেতু কর্তৃপক্ষের কোটি টাকা আয় কমবে। ট্রেন চলাচল বন্ধ হলে সেতুর ওপর চাপও কম থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সেতুটির ঢাকা ও উত্তরবঙ্গ লেনের প্রস্থ রয়েছে ৬ মিটার, যেখানে সেতুর প্রস্থ কমপক্ষে ৭.০৩ মিটার থাকা প্রয়োজন। রেল লাইন অপসারণ করা হলে এটি ৮.০৫ মিটার হবে। যান চলাচলে রাস্তা প্রশস্ত (লেন) হবে। সেতু থেকে রেল লাইন অপসারণের জন্য ২০২৩ সালে সেতু মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।’

নবনির্মিত যমুনা রেলসেতু দিয়ে সম্প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে একসঙ্গে একজোড়া লোকোমোটিভ ট্রেন পৃথক লাইনে পরীক্ষামূলক চালানো হয়েছে। 

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময় এর মেয়াদ ২ বছর বাড়ানোর ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থায়ন এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে বলে জানায় যমুনা রেলসেতু প্রকল্প।

বরিশালে প্রভাবশালীদের বাড়ি পরিত্যক্ত

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
বরিশালে প্রভাবশালীদের বাড়ি পরিত্যক্ত
বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহ ভবন বায়েঁ। ঝালকাঠি শহরের রোনালসে রোডে সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর বাড়ি। ছবি : খবরের কাগজ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের কৃষি ও ভূমিমন্ত্রী ছিলেন আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তিনি সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফা। বরিশাল মহানগরীর কালীবাড়ি রোডে ও আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরল গ্রামে আবদুর রব সেরনিয়াবাতের দুটি পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে সেরলের বাড়িতে অবস্থান করতেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আর মহানগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে থাকতেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ দুই বাড়ি হতে বরিশাল মহানগর ও বরিশাল বিভাগ আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ হতো।
 
তবে সেরনিয়াবাত ভবনটি গত ৫ আগস্ট ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও বাড়ির মালামাল লুট করেন বিক্ষুব্ধরা। অগ্নিসংযোগের পর বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। 

অপরদিকে সেরলের বাড়িটির প্রধান ফটকে গত প্রায় ৮ মাস ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। শুধু বরিশালের সেরনিয়াবাত ভবনই নয়। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে অধিকাংশ নেতার বাড়ির প্রধান ফটক এখন তালাবদ্ধ। আবার কোনো কোনো নেতার পোড়াবাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ গত ১৬ বছর ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে পরিচিত ছিল ওই বাড়িগুলো। ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াঙ্গনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হতো এসব বাড়ি থেকে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন এমনকি পেশাজীবী সংগঠনগুলো চলত এসব বাড়ি থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে। 

হাসানাতের বাড়ির প্রধান ফটকে তালা
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সেরল গ্রামের বাড়িটির কোনো নাম নেই। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘দরবার শরীফ’ হিসেবে পরিচিত ছিল।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৬ বছর ধরে হাসানাতের বাড়িটি বরিশালের ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্যনসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ হতো এই বাড়ি থেকে। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো গঠন হতো তার নির্দেশে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন এমনকি পেশাজীবী সংগঠনগুলো চলতো এই বাড়ির নির্দেশনায়। এ ছাড়া সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বরিশালে বদলি হয়ে এসে হাজিরা দিতেন হাসানাতের বাড়িতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি হাসানাত আবদুল্লাহ এই বাড়ি ত্যাগ করেন। সে থেকে বাড়ির প্রধান ফটকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। 

পোড়াবাড়ি হিসেবে পরিচিত সেরনিয়াবাত ভবন
কালী রোডের বাড়িতে থাকতেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও পরিবারের সদস্যরা। গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা এ বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সেই থেকে বাড়িটি পোড়াবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সেরনিয়াবাত ভবনের সমানের দোকানিরা জানান, ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ বাসায় সাদিক আবদুল্লাহর পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক নেতা অবস্থান করছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। ওই সময় পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান সাবেক মেয়র সাদিক ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে ওই রাতে সেরনিয়াবাত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজি নঈমুল ইসলাম লিটুসহ তিনজনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

স্থানীয়রা বলেন, এখান থেকে মহানগরসহ জেলার ১০ উপজেলার রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিয়োগ-বদলি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হতো। সে সময় সাধারণ মানুষ বাড়ির গেটেও ঢুকতে পারত না। অথচ এটি এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। 

ঝালকাঠিতে আমুর বাড়ির সামানে ব্যানার-পোস্টার
ঝালকাঠিতে শহরের প্রাণকেন্দ্র রোনালসে রোডে সাবেক এমপি ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাড়ি। গত ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা সেই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় একাধিক মামলার আসামি আমির হোসেন আমুকে ৬ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। 

আমুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ইটের অবকাঠামো ছাড়া তিনতলার বাড়িতে কিছু নেই। আগুন দেওয়ার কারণে দেয়ালের রং কালো হয়ে গেছে। প্রধান ফটক তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। আর বাড়িটির প্রধান ফটকের সীমানা প্রাচীরে ঝালকাঠির বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানার-ফেস্টুনসহ বিভিন্ন প্রচারপত্র লাগানো রয়েছে। 

পটুয়াখালীতে আফজালের বাড়ি 
সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের পটুয়াখালী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি গত ৫ আগস্ট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাসার নিচতলা থেকে ৫ তলা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। এটি এখন পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। 

এ ছাড়া পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল, তার মেঝো ভাই সহসভাপতি পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, সেজো ভাই সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবর রহমান খালেক, তার স্ত্রী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপী, পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি শ ম রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু, ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল আহসান গাজী, নাজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ানরম্যান এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী শাহিন, ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম ও তার বড় ভাই পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ, বরগুনার সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোতালেব মৃধাসহ প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীর বাড়ি ৫ আগস্ট আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে বেশির ভাগ জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মগোপনে থাকায় বাড়িগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। 

সংকটে জর্জরিত ফেনীর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
সংকটে জর্জরিত ফেনীর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল
ছবি : খবরের কাগজ

জনবল-সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ফেনীর ২৫০ শয্যার হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের অবকাঠামো, চিকিৎসক ও জনবল-সংকট, আইসিইউ, সিসিইউ বিকল অবস্থায় পড়ে থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এ ছাড়া হাসপাতালের দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ আর মশা-মাছির অত্যাচারে অতিষ্ঠ রোগীরা।

আশপাশের জেলাগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসাসেবাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে এই জেলা শহরে আসেন। বিশেষ করে নোয়খালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষ ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যার হলেও এখনো ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতাল।

ফলে হাসপাতালের গুরুত্ব বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি। জানা গেছে, প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী ভর্তি থাকেন। এসব রোগীর কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার সকালে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিবিভাগ ও জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। বহির্বিভাগে সহস্রাধিক সেবাপ্রত্যাশীকে সাতজন মেডিকেল অফিসার সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেলেও চিকিৎসকরা তখন ওয়ার্ডে রাউন্ডে ছিলেন। এতে রোগীদের অপেক্ষা আরও বাড়তে থাকে।

রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরেও ফেনী জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান বাড়েনি। এমনকি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করা হয়নি। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর চিকিৎসকরা অনিয়মিত, নার্সের সংখ্যাও কম। রয়েছে কর্মচারী-সংকট। দন্ত, চর্ম চিকিৎসাসহ অনেক রোগের পরীক্ষা করানো যায় না। প্রায়ই মেশিন নষ্ট কিংবা অপারেটর নেই শুনে রোগীদের ফিরে যেতে হয়।

সকিনা আক্তার রুনা নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালের পরিবেশ খুব খারাপ। সবখানে অপরিচ্ছন্ন আর দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ। মশা-মাছির জন্য স্বস্তি পাওয়া যায় না। বসে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষ যেখানে সুস্থ হবে, সেখানে এসে বরং উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়ে।

মর্জিনা আক্তার নামে এক রোগী জানান, জরায়ুর সমস্যা নিয়ে তিনি চার দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসক ও নার্সদের সময়মতো পাওয়া যায় না। যে সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, সেই সমস্যার সমাধান হয়নি। 

মুন্নি নামের এক রোগী জানান, তার পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। টাকার অভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশন করাতে পারছেন না। তাই তিনি সদর হাসপাতালে এসেছেন অপারেশন করাতে। কিন্তু তার সিরিয়াল পড়েছে সাত মাস পর। এতদিন দেরি কেন জানতে চাইলে বলেন, চিকিৎসক নেই।

মোস্তফা নামে এক বয়স্ক রোগী বলেন, সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা থাকলেও ফেনী হাসপাতালে কিছুই নেই। ঠিকমতো ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো যায় না। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করলে বলে চিকিৎসক নেই। যন্ত্রপাতি নষ্ট। আমাদের কিছু করার নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৩০৬টি পদের বিপরীতে জনবল আছে ২০৬ জন। ৯ জন সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র পাঁচজন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১২ জনের জায়গায় আছেন ছয়জন। এক বছরের বেশি সময় ধরে মেডিসিন, শিশুরোগ, রেডিওলজি, প্যাথলজি, সার্জারি, দন্ত, চক্ষু, চর্ম ও যৌন রোগের কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। শিশু বিভাগের চিকিৎসক সংকটও প্রকট।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালটি ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। ঘাটতি পূরণের জন্য সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতাল থেকে অ্যাটাচমেন্ট (প্রেষণ) ডাক্তার আনতে হয়। তাদেরও বেশি দিন রাখা যায় না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ে। গত ১০ বছর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও আট মাস ধরে তাদের বেতন বন্ধ হয়ে আছে। তারা মাঝে মাঝে আন্দোলন করে কাজ বন্ধ রাখেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবকাঠামো, জনবল ও চাহিদামাফিক যন্ত্রপাতি পেলে সেবার মান আরও ভালো করা যাবে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফেনীর ছয় উপজেলার মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। গুরুত্ব বিবেচনা করে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

গণপরিবহনে নৈরাজ্য জীর্ণদশায় চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৫ এএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
জীর্ণদশায় চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস
রাজধানীতে দাপটের সঙ্গে চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস। ছবি: সংগৃহীত

দেশে গণপরিবহন চলার ক্ষেত্রে এখনো চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলছে দাপটের সঙ্গে। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগে। ভাড়া নিয়েও রয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাড়াবাড়ি। দূরপাল্লার বাসগুলোর মান কিছুটা ভালো থাকলেও রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে যাত্রীসেবা বা যাত্রী অধিকার এখনো উপেক্ষিত। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায়ও নেই সাধারণ যাত্রীদের কাছে।

এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তাতে পরিস্থিতির উন্নয়নে খুব বেশি কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিন সরেজমিনে বাসযাত্রী হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৪ সালের হিসেবে, সারা দেশে গণপরিবহনের প্রধান বাহন বাসের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৪৪ হাজার ৫০৯টি। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৫টি বড় বাস এবং মিনিবাস ২৮ হাজার ৪৫৪টি। তবে দেশে নিবন্ধিত (রেজিস্ট্রেশন) বাসের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৮৪২টি বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে কেবল রাজধানী ঢাকায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘গণপরিবহন খাতে যাত্রীসেবা, শৃঙ্খলা-নিরাপত্তাসহ সবকিছুই আগের মতো চলছে। কোথাও সেভাবে পরিবর্তন হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেড়েছে। এর মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া পরিবহনকেন্দ্রিক যে চাঁদাবাজি হতো সেগুলোর কেবল হাতবদল হয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার সড়কে যানবাহন চলাচলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। একটি বিআরটিএ, অন্যটি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে বিআরটিএ ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। বত্রিশটি বিষয় পর্যবেক্ষণের পর তাদের ফিটনেস সনদ দেওয়ার কথা থাকলেও জীর্ণদশার ভাঙাচোরা বাসগুলো নিয়মিত সনদ পেয়ে যাচ্ছে ! আবার রাস্তায় নামার পর লক্কড়-ঝক্কড় বা ফিটনেসহীন বাস জব্দ করার কথা থাকলেও ট্রাফিক বিভাগ থেকেও সেটি খুব একটা দেখা যায় না। বরং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই বীরদর্পে চলছে এসব বাস। তবে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত বাস ও মোটরবাইকসহ নানা ধরনের যানবাহনে মামলা ও জরিমানার কাজগুলো করে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন ও নানা অনিয়মে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার ও বাইকসহ এ ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাজধানীর ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিতভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে গত দুই দিনে (১৬ ও ১৭ জানুয়ারি) ৩ হাজার ২৫১টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এ ছাড়াও অভিযানকালে ১০২টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৪৩টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

সরেজমিনে বাসযাত্রায় অভিজ্ঞতা:

গত শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটা। ফার্মগেট স্ট্যান্ডে তখন শহরের বিভিন্ন রুটের পাঁচটি যাত্রীবাহী বাস অপেক্ষমাণ। হেলপাররা ডেকে ডেকে যাত্রীদের উঠাচ্ছিলেন। এ প্রতিবেদকের গন্তব্য ফার্মগেট থেকে বাংলামোটর। এ সময় মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে আসা ‘আয়াত’ পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩৩৭২) উঠতেই ভেতরে বিশ্রি অবস্থা দেখা যায়। সিটগুলোতে নরম কোনো গদি হয়তো কোনোকালে ছিল, কিন্তু এখন প্রায় সবই কঙ্কালসার বডি নিয়ে আছে। সিটের ওপরে লালচে বর্ণের মোটা কাপড়ের কাভারে দেওয়া। কিন্তু সেই কাভারের ওপরে যেন ইঞ্চি পরিমাণ কালচে ধুলাবালির আবরণ ছিল। প্রায় সব সিটেই যাত্রী বসা, তবুও দাঁড়ানো যাত্রীর জন্য বাইরে চলছিল হাঁকডাক। প্রায় ৮ মিনিট পর বাস ছাড়লেও চাকা মাত্র ২০০-৩০০ গজ ঘুরতেই রাস্তার ওপর হঠাৎ থামিয়ে দেওয়া হয়। দেখা গেল- সেখানে দুজন যাত্রী বাসে উঠলেন। একইভাবে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত যেতে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার সড়কে অন্তত চার স্থানে বাসটি যাত্রীর জন্য দাঁড়ায়। কেবল তাই নয়, কারওয়ান বাজারের মোড়ে যখন সব গাড়ি সিগন্যাল ছাড়ার পর মোড় অতিক্রমে ব্যস্ত, তখন এই বাসটি সিগন্যাল পড়ার অপেক্ষায় থেমে থাকে। যথারীতি সিগন্যালে আটকে গেলে তখন যাত্রীরা ভেতর থেকে হইচই শুরু করেন। চালকের তখন সাফ কথা- ‘কারও এত তাড়া থাকলে নেমে অন্য গাড়িতে যান, আমার আরও যাত্রী লাগব।’ এর আগে ফার্মগেটে অবস্থানকালেই এয়ারপোর্ট রোডের আরেকটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-১২২৮) কিছু সময়ের জন্য উঠলে ভেতরে সেই আয়াতের বাসের মতোই নোংরা ও জীর্ণ অবস্থা দেখা যায়। কেবল আয়াত বা এয়ারপোর্ট রোডের বাস নয়, বেশ কিছু সময় অবস্থানকালে অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাসে করুণ দশা দেখা গেছে। এ ছাড়া ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের অধিকাংশের সারা শরীরে (বডি) যেন ধাক্কাধাক্কির ক্ষত চিহ্ন।

এদিকে রাজধানীতে চলাচল করা প্রজাপতি ও পরিস্থান পরিবহন দুটি একই রুটে চলে। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর মিরপুর হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যায় এই দুটি পরিবহনের অন্তত ১২০টি বাস। সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাসেরই রং চটে গেছে, কিছু বাস ভাঙাচোরা। এ ছাড়া বেশির ভাগ বাসের ভেতরটা নোংরা ধুলাবালিতে ঠাঁসা, ফ্যান নষ্ট। নিয়মের তোয়াক্কা না করে বেশি সংখ্যক সিট বসানো হয়েছে। আবার অনেক সিট ছিড়ে লোহা বের হয়েছে। এমনকি বসার স্থানেও ফোম বের হয়ে গেছে।

এদিকে গাবতলি থেকে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচল করা গাবতলি লিংক (প্রাঃ) লিঃ (সাবেক ৮ নম্বর বাস) বাসের বেশির ভাগই বহু পুরোনো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে এই বাস চলে ১০০টির বেশি। এই ব্যানারের বেশির ভাগ বাসেরই জরাজীর্ণ অবস্থা। আবার ধাক্কা বা ঘষায় ঘষায় রঙ উঠে গেছে। অনেক সময় রঙ করে রাস্তায় নামানো হয়। দেওয়া হয় জোড়াতালি।

গত বুধবার দুপুরে গাবতলি লিংক (প্রাঃ) লিমিটেডের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব ১২-০০৩৬) উঠে দেখা যায়, বাসের সামনে অংশের সব মিটার থেকে শুরু করে সব বক্স নষ্ট। বিভিন্ন ধরনের তার ঝুলে আছে। বাসের সিটগুলো নোংরা-হাড্ডিসার।

মিরপুর-১২ থেকে যাত্রাবাড়ী চলাচল করা বিকল্প পরিবহনের বেশির ভাগ বাসেরও জরাজীর্ণ অবস্থা। বাসের বডির রঙ উঠে গেছে। এই পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭৪০৪) পেছনটা ভেঙে গেছে। ভেতরের পরিবেশ নোংরা, সিটগুলো জরাজীর্ণ নোংরা তেলচিটচিটে। একই চিত্র দেখা গেছে সাভার থেকে সাইনবোর্ড রুটে চলাচল করা এমএম লাভলী পরিবহনের। এই পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-০১৩৮) পেছনের অংশ ভেঙে ঝুলে ছিল। বাসটি পুরোনো হওয়ায় পেছনের অংশের ঝালাইও ফেটে গেছে। বাসের ভেতরের অবস্থাও করুণ। একই পরিবহনের আরেকটি বাসেও (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৩৬৭২) প্রায় একই অবস্থা দেখা গেছে।

যাত্রী ও বাসসংশ্লিষ্টরা যা বললেন:

গত শুক্রবার বিকেলে ফার্মগেট এলাকার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সুবীর বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘অফিস থেকে বাসসহ ঢাকা শহরে আমাকে সবসময় বাসেই চলাচল করতে হয়। এমনিতেও যানজটের ভোগান্তি থাকে, তার মাঝে আবার বাসের যে করুণ অবস্থা, চিন্তা করা যায় না। ময়লাযুক্ত বা নোংরা সিট, অধিকাংশ জানালা ভাঙা, লক্কড়-ঝক্কড় অবস্থাসহ অধিকাংশ বাসই ব্যবহারের অযোগ্য। এর মধ্যে হেলপার ও চালকদের আচরণও থাকে অনেক সময় মাস্তানের মতো। যাত্রীরা কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করলে অনেক সময় গাড়ির লোকজনও সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করে থাকে। সাধারণ যাত্রীরা যে কতটা অসহায় বোধ করেন, সেটা যারা এসব বাসে চলাচল করেন তারাই ভালো বুঝবেন।’

পরিস্থান পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-০৪০৫) কন্ডাক্টর মো. কালু মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাস নোংরা বা সিটের সমস্যার বড় কারণ হচ্ছে বাস মালিকেরা ঠিকঠাকভাবে এটা তদারকি করেন না। আবার কোম্পানির ব্যানারে বা সংগঠনের মালিকানায় খুব অল্পসংখ্যক বাস চললেও বেশির ভাগই কোম্পানির ব্যানারে ব্যক্তি মালিকানার বাস চলে। কোম্পানির ব্যানার ভাড়া নিয়ে বা বাস ভাড়া দিয়ে এসব রাস্তায় নামানো হচ্ছে। বাস মালিকরা ওই কোম্পানিকে একটা নির্দিষ্ট টাকা বাস ভাড়া হিসেবে দেন। এই বাস থাকে ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরদের হাতে। তারাও বাস পরিষ্কার রাখেন না।

বাসে নিয়মের বেশি সিট থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা বাস মালিকদের কাজ। এ ছাড়া ভাড়ার প্রশ্নে কালু মিয়া বলেন, সরকারের নির্ধারিত মূল্যেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়।

গাবতলী লিংক পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. আমিনুর বলেন, ‘সাধ্যমতো বাস পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। সব সময় করা হয় না।’ তবে বাসের অন্যান্য ফিটনেসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আর কোনো উত্তর দেননি।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে একটি বাস থেকে নামা যাত্রী ফজলুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, মোহাম্মদপুর থেকে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে কর্মসূত্রে বাসেই নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু এসব বাসের কথা বলে কী লাভ ? কে দেখে এসব ? কেউ তো ব্যবস্থা নেয় না। ভাড়া ঠিকই নিচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশি নিচ্ছে, কিন্তু যাত্রীসেবা কোথায়? এত নোংরা-অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও উপায় না থেকে চলতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাজী মো. জুবায়ের মাসুদ খবরের কাগজকে বলেন, পরিবহন মালিকদের ব্যবসা সংরক্ষণ ও যাত্রীদের স্বার্থে আমরা বেশ কিছু দায়িত্ব নিয়েছি। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গেও একাধিবার বসেছি। উচ্চস্বরে হর্ন বাজানো বন্ধ করা ও দুর্ঘটনা রোধে চালকের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছি আমরা। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করছি। বাস ভাড়া ভাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জুবায়ের মাসুদ আরও বলেন, ‘বর্তমানে ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে তেলের দামের সঙ্গে আমাদের ভাড়ার বৈষম্য আছে। এ জন্য নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধির কথা আমরা বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। ইতোমধ্যে একটি সুপারিশও জমা দেওয়া হয়েছে।’

গণপরিবহনে শৃঙ্খলার বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার অনেক খাতেই সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ, কিন্তু গণপরিবহনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেভাবে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। গণপরিবহনের শৃঙ্খলা, যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষা ও আধুনিকায়নের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

মে মাস থেকে পুরোনো-ফিটসেনবিহীন বাস অপসারণ: এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকায় লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো তথা ২০ বছরের পুরোনো ও ফিটসেনবিহীন বাস আগামী মে মাসের মধ্যে সড়ক থেকে অপসারণ করা হবে। নতুন বাস প্রতিস্থাপনের জন্য মালিকদের অনেকবার বলা হয়েছে বিআরটিএর পক্ষ থেকে। কিন্তু তারা কালক্ষেপণ করছেন। এটি আর মেনে নেওয়া হবে না। মে মাসের মধ্যে কোনো মালিক সড়ক থেকে বাস না তুললে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাস প্রতিস্থাপনে কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণের সহায়তার প্রয়োজন হলে সে ক্ষেত্রেও সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’

১০ মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত, ভবন নির্মাণে চরম অনিয়ম

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২১ এএম
আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২২ এএম
১০ মাসেও শেষ হয়নি তদন্ত, ভবন নির্মাণে চরম অনিয়ম
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের করুণ মৃত্যুর ঘটনায় এখনো শেষ হয়নি তদন্ত। এতগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়ার পরও টনক নড়েনি ঘটনার জন্য দায়ী থাকা সংশ্লিষ্টদের। ভয়ানক এ ট্র্যাজেডির পর জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ প্রিয়জন হারানো স্বজনেরা।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বেইলি রোডের ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার জন্য ভবনের কাঠামোগত ত্রুটিকে দায়ী করেছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ভবন নির্মাণে অগ্নিনিরাপত্তার প্রশ্নে প্রচলিত নিয়মনীতির ৯৫ শতাংশই ব্যত্যয় ঘটানো হয়। 

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ প্রসঙ্গে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ) মো. আনিচুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘৪৬ জন মানুষের জীবন গেছে, এটি একটি বড় ঘটনা। আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনায় আগে কোনো মামলা হয়নি। এ ধরনের মামলা আমাদের জন্য নতুন। যেমন- পুরান ঢাকার নিমতলীর ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তাই আমরা চাচ্ছি না কোনো ভুলত্রুটি নিয়ে সামনে এগোই। তদন্তে তাড়াহুড়ো করছি না, আবার যাতে কোনো গাফিলতি না হয় যেদিকেও সতর্ক রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা হওয়ায় বেশ কয়েকটি সংস্থা এ বিষয়ে তদন্ত করছে। সবার রিপোর্ট এখনো আমরা হাতে পাইনি। তবে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ হবে। আমরা একটি বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ ও নির্ভুল তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারব।’

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে অগ্নিনিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়ে নানা তথ্য উঠে এসেছে। বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য রাজউক ভবনের নকশা অনুমোদন করলেও এতে রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমতি ছিল না। কিন্তু ভবনের বেজমেন্ট (গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান) ছাড়া সব কয়টি ফ্লোরে ছিল রেস্তোরাঁ। এ কারণে ভবনে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, সে অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়নি। পুরো ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে, সিঁড়িতে একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছিল। ভবনে সিঁড়িও ছিল মাত্র একটি। এমনকি বিভিন্ন রেস্তোরাঁর ক্যাশ কাউন্টারের পাশেও রাখা ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। ভবনের নিচতলার ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকানের ইলেকট্রিক চুলায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ (শর্টসার্কিট) থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখানে গ্যাস সিলিন্ডারের লাইনের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি না থাকায় মানুষ চেষ্টা করেও বের হতে পারেননি।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান ও সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেবা সংস্থাগুলোর গাফিলতি রয়েছে। ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো অনুমোদিত নকশা যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি। ভবন ব্যবহারের সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণসংক্রান্ত নির্দেশনাও মানেননি সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বহুতল ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার জন্য ফায়ার সার্ভিসের সনদও ছিল না। এই ভবনে অগ্নিনিরাপত্তামূলক ৯৫ শতাংশ নিয়ম মানা হয়নি। 

তিনি বলেন, ‘চুমুক’ নামের চা-কফির দোকানের পুরোনো কেতলি বিস্ফোরণ হয়ে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। রেস্তোরাঁগুলোতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে ৫ মিনিটের মধ্যে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ভবনের ছাদ বন্ধ থাকায় প্রাণহানি হয়েছে বেশি। তিনি আরও বলেন, দেশে তিন লাখেরও বেশি রেস্তোরাঁ ব্যবসা রয়েছে। এই খাতকে নিরাপদ রাখতে অবশ্যই নিয়ম মানতে হবে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে দুর্ঘটনা বাড়বে। নিয়ম মানলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে।

সম্প্রতি বেইলি রোডের সেই ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটি অনেকটা কঙ্কালসার অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, আগুনের লেলিহান শিখায় প্রতিটি দোকানের আসবাবপত্র পুড়ে কয়লা অবস্থায় পড়ে আছে। পুড়ে যাওয়া কাচ ও আসবাবের টুকরো পুড়ে কয়লা হয়ে পড়ে ছিল মেঝেতে। এখনো পুলিশি ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে ভবনটিকে। শুরু হয়নি ভবনটির সংস্কারকাজ। তবে বেইলি রোডে কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায় আগের মতোই। খোলা ছিল বেশির ভাগ শপিংমল ও শোরুম। এমনকি পিঠাঘর ও নানা রেস্তোরাঁয় রান্না ও খাবারের পসরা ছিল জমকালো। ফুটপাতেও বসেছিল ফুচকা, চটপটি, মুড়ি মাখানোর দোকান। 

সরেজমিন সেখানে গেলে কথা হয় পুড়ে যাওয়া ভবনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মোশাররফের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে তদন্তের কাজে ভবন দেখতে পুলিশ আসে। তারা জানিয়েছে, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। শুনেছি শিগগিরই ভবনের সংস্কারকাজ শুরু হবে।’ তিনি বলেন, অনেক দিন হয়ে গেল, এটার কোনো সুরাহা হয়নি। 

অন্যদিকে নিহতের স্বজনরা এবং প্রাণে বেঁচে ফেরা অনেকেই দাবি করছেন এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং একধরনের হত্যাকাণ্ড। ঘটনার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের স্পষ্ট কারণ ও দায়ী কারা সেসব জানতে পারেননি নিহতদের স্বজনরা। ঘটনার জন্য দোষীদের বিরুদ্ধেও তেমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও তদন্তসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে বিষয়টিকে সাধারণ দুর্ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ করে তদন্ত প্রতিবেদন নিজেদের সুবিধামতো করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে বলেও একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করে।

এ প্রসঙ্গে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত বৃষ্টি খাতুনের (অভিশ্রুতি শাস্ত্রী) বাবা শাবলুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বৃষ্টি আমার প্রথম সন্তান। রাতে ঘুমাতে পারি না, সারাক্ষণ সন্তানের মুখটা চোখে ভাসে। সন্তান হারানোর ব্যথা কজন বোঝে। চোখের জলে বুক ভেসে যায়। কেউ খবর নেয় না। প্রায় এক বছর হয়ে গেল, আগুন লাগার কারণ জানা গেল না। এটি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এটি হত্যাকাণ্ডও হতে পারে। ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তদন্ত পিছিয়ে যাচ্ছে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে শাবলুল আলম বলেন, ‘আমার মেয়ের লাশ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছাড়ানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল আমার মেয়ের নাম অভিশ্রুতি, সে হিন্দু। আমি নাকি তার বাবা না। টাকা পাওয়ার জন্য বাবা সেজেছি। যাহোক, এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ 

বেইলি রোডে এই বহুতল ভবনে সন্তানসহ আটকে পড়েছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘১০ মাস শেষ হয়েছে, এখনো তদন্ত প্রতিবেদন হয়নি। এত বড় ঘটনা, এত মানুষের জীবন গেলেও এখন মনে হচ্ছে এটি সামান্য ছিল। এটাকে আমি গাফিলতিই বলব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি সমস্যা হচ্ছে কোনো কিছু ঘটলে ঘটনার পর পরই দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। পরে আমরা তা ভুলে যাই। আমার সন্তানরা এখনো ওই ভবনের সামনে দিয়ে গেলে তাদের গা শিউরে ওঠে, আতঙ্কিত হয়।’ তিনি বলেন, নিয়ম না মেনে যারা ভবন করেছে, অগ্নিনিরাপত্তার সার্টিফিকেট নেয়নি, রেস্তোরাঁ চালিয়েছে, জরুরি নির্গমন পথ বন্ধ করে করে যারা সিঁড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার রেখেছে তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। এ ছাড়া সরকারি যেসব সংস্থার এসব দেখভালের দায়িত্ব ছিল তারাও তা করেননি, এদেরও বিচার হওয়া উচিত।’ 

প্রসঙ্গত, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে রমনা থানায় মামলা করা হয়। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ২৭ মার্চ প্রতিবেদন জমা দেয়। তা ছাড়া প্রতিবেদন দিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং তিতাসের কমিটিও।