ঢাকা ২৯ মাঘ ১৪৩১, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

বরিশালে প্রভাবশালীদের বাড়ি পরিত্যক্ত

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
বরিশালে প্রভাবশালীদের বাড়ি পরিত্যক্ত
বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহ ভবন বায়েঁ। ঝালকাঠি শহরের রোনালসে রোডে সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর বাড়ি। ছবি : খবরের কাগজ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের কৃষি ও ভূমিমন্ত্রী ছিলেন আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তিনি সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফা। বরিশাল মহানগরীর কালীবাড়ি রোডে ও আগৈলঝাড়া উপজেলার সেরল গ্রামে আবদুর রব সেরনিয়াবাতের দুটি পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে সেরলের বাড়িতে অবস্থান করতেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আর মহানগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কালীবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে থাকতেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ দুই বাড়ি হতে বরিশাল মহানগর ও বরিশাল বিভাগ আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ হতো।
 
তবে সেরনিয়াবাত ভবনটি গত ৫ আগস্ট ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও বাড়ির মালামাল লুট করেন বিক্ষুব্ধরা। অগ্নিসংযোগের পর বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। 

অপরদিকে সেরলের বাড়িটির প্রধান ফটকে গত প্রায় ৮ মাস ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। শুধু বরিশালের সেরনিয়াবাত ভবনই নয়। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে অধিকাংশ নেতার বাড়ির প্রধান ফটক এখন তালাবদ্ধ। আবার কোনো কোনো নেতার পোড়াবাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ গত ১৬ বছর ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে পরিচিত ছিল ওই বাড়িগুলো। ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াঙ্গনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হতো এসব বাড়ি থেকে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন এমনকি পেশাজীবী সংগঠনগুলো চলত এসব বাড়ি থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে। 

হাসানাতের বাড়ির প্রধান ফটকে তালা
আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সেরল গ্রামের বাড়িটির কোনো নাম নেই। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘দরবার শরীফ’ হিসেবে পরিচিত ছিল।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৬ বছর ধরে হাসানাতের বাড়িটি বরিশালের ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্যনসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ হতো এই বাড়ি থেকে। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলো গঠন হতো তার নির্দেশে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন এমনকি পেশাজীবী সংগঠনগুলো চলতো এই বাড়ির নির্দেশনায়। এ ছাড়া সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বরিশালে বদলি হয়ে এসে হাজিরা দিতেন হাসানাতের বাড়িতে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি হাসানাত আবদুল্লাহ এই বাড়ি ত্যাগ করেন। সে থেকে বাড়ির প্রধান ফটকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। 

পোড়াবাড়ি হিসেবে পরিচিত সেরনিয়াবাত ভবন
কালী রোডের বাড়িতে থাকতেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও পরিবারের সদস্যরা। গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেলের দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা এ বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সেই থেকে বাড়িটি পোড়াবাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সেরনিয়াবাত ভবনের সমানের দোকানিরা জানান, ৫ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ বাসায় সাদিক আবদুল্লাহর পরিবারের সদস্যসহ শতাধিক নেতা অবস্থান করছিলেন। বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যান। ওই সময় পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান সাবেক মেয়র সাদিক ও তার পরিবারের সদস্যরা। তবে ওই রাতে সেরনিয়াবাত ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজি নঈমুল ইসলাম লিটুসহ তিনজনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

স্থানীয়রা বলেন, এখান থেকে মহানগরসহ জেলার ১০ উপজেলার রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিয়োগ-বদলি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হতো। সে সময় সাধারণ মানুষ বাড়ির গেটেও ঢুকতে পারত না। অথচ এটি এখন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। 

ঝালকাঠিতে আমুর বাড়ির সামানে ব্যানার-পোস্টার
ঝালকাঠিতে শহরের প্রাণকেন্দ্র রোনালসে রোডে সাবেক এমপি ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাড়ি। গত ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা সেই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় একাধিক মামলার আসামি আমির হোসেন আমুকে ৬ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। 

আমুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ইটের অবকাঠামো ছাড়া তিনতলার বাড়িতে কিছু নেই। আগুন দেওয়ার কারণে দেয়ালের রং কালো হয়ে গেছে। প্রধান ফটক তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। আর বাড়িটির প্রধান ফটকের সীমানা প্রাচীরে ঝালকাঠির বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানার-ফেস্টুনসহ বিভিন্ন প্রচারপত্র লাগানো রয়েছে। 

পটুয়াখালীতে আফজালের বাড়ি 
সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের পটুয়াখালী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি গত ৫ আগস্ট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাসার নিচতলা থেকে ৫ তলা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। এটি এখন পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। 

এ ছাড়া পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল, তার মেঝো ভাই সহসভাপতি পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক, সেজো ভাই সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুজিবর রহমান খালেক, তার স্ত্রী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপী, পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি শ ম রেজাউল করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু, ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউল আহসান গাজী, নাজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ানরম্যান এস এম নুরে আলম সিদ্দিকী শাহিন, ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম ও তার বড় ভাই পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ, বরগুনার সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোতালেব মৃধাসহ প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীর বাড়ি ৫ আগস্ট আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে বেশির ভাগ জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মগোপনে থাকায় বাড়িগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। 

ডিসি সম্মেলন ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি, আলোচনায় থাকবে ৩ শতাধিক প্রস্তাব

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৬ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২৭ এএম
ডিসি সম্মেলন ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি, আলোচনায় থাকবে ৩ শতাধিক প্রস্তাব
জেলা প্রশাসক সম্মেলন

এবারের জেলা প্রশাসক বা ডিসি সম্মেলনে তিন শতাধিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে ডিসিরা তাদের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রধান উপদেষ্টা জুলাই অভ্যুত্থানের আলোকে সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ডিসিদের প্রতি নির্দেশনা দেবেন। সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে মারণাস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা জানতে চাইতে পারেন ডিসিরা। মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন থাকবে, সে বিষয়েও এ সম্মেলনে আলোচনা হতে পারে। কেপিআই স্থাপনা সুস্পষ্টকরণের জন্যও ডিসিরা তাদের মতামত তুলে ধরবেন।

এবার কোনো রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সরকার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিসি সম্মেলনে যে কয়েকটি ইস্যুতে আলোচনা হবে সেগুলো হলো সার্কিট হাউস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের বাসভবনকে কেপিআই স্থাপনা ঘোষণা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন তৈরির ক্ষমতা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে হস্তান্তর, কর্তব্যরত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলক বডি ক্যামেরা ব্যবহার নিশ্চিত করা, ডিসিদের অধীনে বিশেষ ফোর্স গঠন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক আনসার নিয়োগসংক্রান্ত প্রস্তাব।

আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন। ওই দিন সকালে তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

ডিসি সম্মেলনের কার্যপত্র সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও নৈশভোজের কোনো অধিবেশন নেই। 

সম্মেলন উদ্বোধনের পর চা বিরতি শেষে দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের করবী হলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। ওই অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা টাইগার গেটে ডিসিদের সঙ্গে নিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেবেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও এর আওতাধীন সংস্থাগুলোর বিষয়ে ডিসিদের দেওয়া প্রস্তাব ও এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সম্মেলনের প্রথম দিন উন্মুক্ত আলোচনায় ডিসিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের আলোকে সরকারের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেবেন। সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ কথা জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অনুষ্ঠানিকতা শেষে ডিসিরা অধিবেশনের অবশিষ্ট অধিবেশনগুলোর জন্য বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ওসমানী মিলনায়তনে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য উপস্থিত হবেন। এখানে বিকেলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগসংক্রান্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর তৃতীয় পর্বে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ডিসিরা সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত হবেন। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা লিখিতভাবে মাঠ প্রশাসনের সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। অধিবেশনের সময় এগুলো ছাড়াও ডিসিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরবেন। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ কার্য অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করবেন। 

মাঠ প্রশাসন সরকারের নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তাবায়ন করে থাকেন। এ জন্য প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে সরকার। এ বছর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাই ডিসি সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। মাঠপর্যায়ে সরাসরি সরকারের প্রতিনিধি এবং নীতিনির্ধারক হিসেবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা কাজ করে থাকেন। তাই ডিসি সম্মেলনের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়সহ প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।

রাজনৈতিক সরকার নয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবারের ডিসি সম্মেলনের পরিবেশ কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে রাজনৈতিক সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারে অধীনে ডিসি সম্মেলন ঘিরে আলাদা কিছু মনে হচ্ছে না। তবে এই সরকার দায়িত্ব নিয়ে যেহেতু রাষ্ট্রের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেই হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাবগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনায় বিশেষ কোনো গুরুত্ব থাকতে পারে বলে অনুমান করছি। যেহেতু সংস্কারের দিকে সরকারের বিশেষ কিছু মনোযোগ আছে এবং সরকার গঠিত বিভিন্ন কমিশনের সংস্কারের প্রস্তাবগুলোও আসছে, তাই সেই বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা আসতে পারে। এর বাইরে আর কিছু মনে হচ্ছে না আমার।’

চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলা পাইরেটেড বইয়ের দৌরাত্ম্য, বিপাকে প্রকৃত প্রকাশকরা

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪০ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪৪ এএম
পাইরেটেড বইয়ের দৌরাত্ম্য, বিপাকে প্রকৃত প্রকাশকরা
চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা। ছবি: খবরের কাগজ

একদিকে কাগজের দাম এবং ছাপা খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে মেলায় পাইরেসি বইয়ের আধিপত্য। দুইয়ে মিলে চরম বিপাকে পড়েছেন চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলায় স্টল নেওয়া প্রকৃত প্রকাশকরা। পাইরেসি বই মূল দামের অর্ধেকেরও বেশি কমিশনে বিক্রি হচ্ছে, যা মেলায় অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে। 

মেলায় ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, মেলায় সাধারণত ইংরেজি বই এবং বিদেশি লেখকের বইগুলোর পাইরেসি করে বিক্রি করা হচ্ছে। অনেক নামি-দামি লেখকের বই অনেক কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণ প্রকাশকদের এখানেই আপত্তি। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা এ ধরনের বইয়ের ক্রেতা। তা ছাড়া প্রখ্যাত লেখকদের বইয়ের অনুবাদও পাইরেসি করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রকাশকদের অভিযোগ, মেলায় এসে যখন কেউ কম দামে বড় একটি পাইরেসি বই কেনার সুযোগ পান, তখন অন্য বইগুলো তার কাছে বেশি দামি মনে হয়। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অন্য বই না কিনে ক্রেতারা ফিরে যান।  

‘শিশু প্রকাশ’র স্বত্বাধিকারী আরিফ রায়হান খবরের কাগজকে বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, মেলায় বেশ কিছু পাইরেসি বই আছে। কিছু আছে বই বিক্রেতা। তারা প্রকাশক নন। তারা কোনো বই প্রকাশ করেন না। কিন্তু তারা প্রকাশকদের স্বকীয়তাকে খর্ব করছেন। পাইরেসি বই ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে পারেন। কারণ পাইরেসি বই বিক্রি করে লেখককে কোনো রয়েলিটি দিতে হয় না। এটা একজন প্রকাশকের পক্ষে কোনোভাবেই এত বেশি কমিশন দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ একজন প্রকাশককে বইয়ের ছাপার খরচের পাশাপাশি লেখকের রয়েলিটি দিতে হয়।

অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় বইয়ের ছাপা খরচ প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। বইমেলায় পাইরেসি বই রোধ করা যায়নি।

তিনি জানান, অভিভাবকরা মেলা থেকে কম দামে পাইরেসি বই কিনে দিচ্ছেন। কিন্তু ওই বইয়ের মানটা যাচাই করে দেখছেন না। পাইরেসি বা নকল সংস্করণে অনেক ধরনের ভুলভ্রান্তি থাকে। এটা একজন সচেতন পাঠকই ধরতে পারেন। শিশুদের যদি সেই ধরনের বই কিনে দেওয়া হয়, তাদের কাছে ভুল ভ্রান্তি ধরা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা ভুলটাই শিখবে।’

‘হরিৎপত্র’ প্রকাশনার নূর উদ্দিনেরও অভিযোগ প্রায় একই রকম। তিনি বলেন, ‘পাইরেসি রোধ করতে না পারলে প্রকৃত প্রকাশকদের লোকসান গুনতে হবে। এ বিষয়ে আয়োজকদের তৎপর হওয়া উচিত।’

জানতে চাইলে মেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন হাসান বাবু খবরের কাগজকে বলেন, ‘বইমেলায় পাইরেসি বই বিক্রির কোনো অভিযোগ এখনো কমিটি পায়নি। এখন থেকে তারা নিজেরাও কোনো স্টলে পাইরেসি বই আছে কিনা খোঁজ নেবেন উল্লেখ করে জানান, তারাও চান প্রকৃত প্রকাশকরাই টিকে থাকুক।

পিছিয়ে গেছেন বাসমালিকরা

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০০ এএম
আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম
পিছিয়ে গেছেন বাসমালিকরা
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফিকস

ঢাকার বিভিন্ন সড়কে সরকার নির্ধারিত কোনো বাস কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা করতে এই বছরের শুরুতে বেশ আগ্রহ দেখালেও এখন আর তাতে রাজি নয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তাতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) আর দুই সিটি করপোরেশনের বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পটি নিয়ে তাই এখন অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়ন করা যাবে কি না তা নিয়েও নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রকল্পটি ভেস্তে গেলে সরকারের ২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা গচ্চা যাবে।

রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৪২টি রুট পুনর্বিন্যাসের কথা বলা হয়েছিল বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে। ঢাকার ৩৮৮টি রুটকে সমন্বয় করে প্রাথমিকভাবে ৪২টি রুটে পুনর্বিন্যাস করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বাস মালিকদের চরম অসহযোগিতায় এই প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখবে না বলেও মনে করছেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকার সড়ক পরিবহন খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন বা ঢাকা নগর পরিবহন প্রকল্প শুরুতে প্রশংসা কুড়ায় নগরবাসীর। নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে ওঠানামা করার সুবিধার পাশাপাশি বাসে বাসে রেষারেষি বন্ধ, যাত্রী নেওয়ার প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়ায় এ প্রকল্প নিয়ে উচ্চাশা প্রকাশ করেছিলেন বাসযাত্রীরা।

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বাস রুটকে ৯টি ক্লাস্টারে (৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের) বিভক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ২২টি কোম্পানি গঠনের প্রস্তাবও এসেছিল। গোলাপি রঙের গুচ্ছে চারটি, নীল গুচ্ছে চারটি, লাল গুচ্ছে পাঁচটি, কমলা গুচ্ছে ছয়টি, সবুজ গুচ্ছে আটটি, বেগুনি গুচ্ছে ছয়টি, নর্থ গুচ্ছে তিনটি, নর্থ ওয়েস্ট গ্রুপে তিনটি, সাউথ গুচ্ছে দুটি রুট পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

কিন্তু ২০১৯ সালে এসে সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। এই প্রকল্পের মডেল রুটগুলোতে বিভিন্ন কোম্পানির বাস চলাচল করায় ঢাকা নগর পরিবহন ক্রমাগত লোকসানে পড়ে। এখন ঢাকা নগর পরিবহনে খোদ বিআরটিসিই বাস পরিচালনা করছে না।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ’ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের আওতায় গ্রিন ক্লাস্টারের ৯টি রুটে বাস চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন। নগরের পরিবহন খাতকে শৃঙ্খলায় আনতে এ প্রকল্পের গুরুত্বারোপ করেন সড়ক খাত সংশ্লিষ্টরা।

এরপর গত ১২ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন কমিটির ২৮তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ডিটিসিএ ২৪, ২৫, ২৭ এবং ২৮ নং রুটে নতুন করে বাস পরিচালনায় আগ্রহী মালিকদের কাছ থেকে আবেদন নেবে। পাশাপাশি ঢাকার অন্য ৩৮টি রুটেও নির্দিষ্ট বাস কোম্পানির অধীনে বাস পরিচালনা করতে আগ্রহী মালিকদের আবেদনপত্র জমা দিতে নির্দেশনা আসে ওই সভা থেকে।

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার ৪২টি রুটে ২৫০টিরও বেশি কোম্পানি থেকে বাস পরিচালনার আবেদন পাওয়া গেছে। সম্মিলিতভাবে এসব বাসের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এরপর গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এসব বাসের মালিকদের সঙ্গে তিন দফায় সভা করেছে ডিটিসিএ। ডিসেম্বর মাসে একটি গণশুনানিরও আয়োজন করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাস মালিকরা বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে বাস চালাতে দারুণ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যায় ১৫ জানুয়ারির পরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যে বাস মালিকরা যেসব বাসের আবেদন করেছিলেন, সেসব বাসের অধিকাংশের ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট নেই। রুট পারমিট ও ফিটনেস সনদবিহীন এই সব বাস নিয়ে যখন আপত্তি উঠে প্রকল্পের সভায়, তখন বাস মালিকরাও বেঁকে বসেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভায় ২০ বছরের বেশি বয়সী বাসগুলো ঢাকার সড়ক থেকে তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাস মালিকরা বলেন, হুট করে বললেই এসব বাস সড়ক থেকে তুলে নিলে সড়কে গণপরিবহন সংকট শুরু হবে। আর ঢাকার সড়কে বাস চলাচলের জন্য তারা ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) অনুমোদন নিয়েছেন।

গত ২১ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সভা শেষে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, ঢাকার বাস মালিকরা কোনো রুটে কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে বাস চালাবেন না। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে। সেই ডিটিসিএর কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতিও জানিয়েছেন বাস মালিকরা।

এরপর বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পটি যেন ভেস্তে না যায়, সেজন্য জোর চেষ্টা করছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একাধিক সভায় আহ্বান জানানোর পরেও বাস মালিকদের কেউ আসেননি। কয়েকজন বাস ব্যবসায়ী ব্যক্তিগতভাবে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বলেন, ‘বাস মালিক সমিতি থেকে আমাদের এখানে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকার বাস রুটকে শৃঙ্খলায় আনতে এলে কোনো প্রকল্প নয়, দরকার একটি সরকারি গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ। ঢাকার সব বাস নির্দিষ্ট রুটে পরিচালনা করা ডিটিসির কাজ নয়। তারা গণপরিবহ5ন চলাচলে যেসব কর্তৃপক্ষ কাজ করে তাদের মধ্যে সমন্বয় ধরে রাখবে। তাদের এত জনবল নেই যে বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকার গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনার কাজটি পুরোপুরি রাজনৈতিক। এখানে একটি নতুন বিজনেস মডেল তৈরি করতে হবে; যেখানে বাস মালিকদের লাভ দেখতে হবে।’

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসির নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ‘বাস মালিকরা ডিটিসির অধীনে বাস রুট পরিচালনা করতে দেবেন না, ভালো কথা। নিজেরা করতে চাইছেন; তো করুক। তাতে সমস্যা নেই। তবে একটা শৃঙ্খলায় তো আসতে হবে তাদের।’

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে বাস চালাতে গেলে ভর্তুকির দাবি জানিয়েছেন বাস মালিকরা। এ বিষয়ে নীলিমা আখতার বলেন, ‘প্রকল্পে আমরা সাবসিডির বিষয়টি উল্লেখ করি নাই। সেখানে ব্যাংক লোনের কথা বলা আছে। তবে বাস মালিকদের সরকারের পক্ষ থেকে কীভাবে সাবসিডি দেওয়া যায়, সেটার জন্য একটা আলাদা পরিকল্পনা নিতে হবে।’

প্রকল্পটি যেন ভেস্তে না যায় সে লক্ষ্যে বেসরকারি বাস মালিকদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক মেয়াদকাল রয়েছে, এমন সব বাস চাওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিটিসির নির্বাহী পরিচালক। তিনি আশা করছেন, বাস মালিকদের পাশাপাশি এখন বৃহৎ কোনো দাতা প্রতিষ্ঠান এ খাতে যুক্ত হবেন।

কমতে পারে বিমান ভাড়া

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
কমতে পারে বিমান ভাড়া
প্রতীকী ছবি

যাত্রীর পাসপোর্ট ও বিস্তারিত তথ্য ছাড়া আর কোনোভাবেই বিমান বা যেকোনো ফ্লাইটের টিকিট বুক করা সম্ভব হবে না। এমনকি গ্রুপ টিকিটের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য হতে যাচ্ছে। এর আওতায় এজেন্সি কিংবা এয়ারলাইনসও আর বিনা পাসপোর্টসহ অন্যান্য তথ্য ছাড়া বিমানের টিকিট নিজ কবজায় রাখতে পারবে না। এর ফলে ফ্লাইটের টিকিটে কৃত্রিম সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। পাশাপাশি বিমানবন্দরের হ্যাঙারের (যেখানে উড়োজাহাজ রাখা হয়) ভাড়া কমানোরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই দুটি পদক্ষেপের ফলে অচিরেই বিমানের তথা উড়োজাহাজের যাত্রী ভাড়া কমে আসবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত দুই মাসে এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বিমান ভাড়া যেন কিছুটা কমে আসে সে বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়। দ্রুতই এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও ভ্রমণবিবরণী ছাড়া টিকিট বুকিং করে উড়োজাহাজের টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরির পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেখানে পাসপোর্ট বা যাত্রীর বিস্তারিত তথ্য ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে একশ্রেণির এজেন্সি ও এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে টিকিট বুক করে আটকে রেখে দাম বাড়িয়ে চড়া মূল্যে বিক্রি করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ বিমানের টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হিসেবে ওই সিন্ডিকেটকরণকে মনে করা হয়। এ বিষয়ে ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর পক্ষ থেকে নানা সময় সরকারের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে। 

এ বিষয়ে আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে এ আবেদন জানিয়ে আসছি। যেন যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর ও ভ্রমণবিবরণী ছাড়া এয়ারলাইনস বা এজেন্সি কোনো টিকিট বুকিং দিতে না পারে। এটি কার্যকর হলে টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা আর সম্ভব হবে না। বিমান টিকিটের দাম বৃদ্ধির এটি একটি বড় কারণ। এই পদ্ধতিতে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে টিকিটের দাম বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশ ভ্রমণের বিভিন্ন পর্যায়ে বিমান টিকিটের উচ্চমূল্য পর্যালোচনাসহ যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয় গত বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট কপি ছাড়া যেন টিকিট বুকিং করা না যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে বুকিং করা টিকিট-পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইস্যু না করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এয়ারলাইনস সেই টিকিট বাতিল নিশ্চিত করবে।

আর ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এয়ারলাইনস বা ট্রাভেল এজেন্সিকে গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে ব্লক করা টিকিট আগামী সাত দিনের মধ্যে ভ্রমণকারী যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ (পাসপোর্টের কপিসহ) টিকিট ইস্যু নিশ্চিত করতে হবে। না হলে তিন দিনের মধ্যে এয়ারলাইনস তা বাতিল নিশ্চিত করবে।

ওই বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ছয় মাসে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র সচিবকে সভাপতি করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে গত ছয় মাসে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে যাবতীয় বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সংস্থা/ব্যক্তিকে শাস্তির জন্য সুপারিশ করতে বলা হয়েছে এবং টিকিটের উচ্চমূল্যের বিষয়টি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ১৩ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। 

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এসব সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে মঞ্জুরের অপেক্ষায় আছে এখন। সেখান থেকে ইতিবাচক উত্তর এলেই এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা আসবে এয়ারলাইনস ও এজেন্সিগুলোর ওপর।

এদিকে বিমানের টিকিট মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ হিসেবে বরাবরই বিমানবন্দরগুলোর বিভিন্ন চার্জকে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের বিকাশ এবং সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য ইজারামূল্য নির্ধারণের সময় ১৫ বছর পে-ব্যাক পিরিয়ড ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে হ্যাঙারের নির্মাণব্যয় এবং উচ্চতা বেশি হওয়ায় ইজারার হার তুলনামূলক বেশি ছিল। হ্যাঙারের অবস্থান এবং অন্যান্য কারণে এয়ারলাইনসগুলোর অতিরিক্ত খরচ বৃদ্ধি পায়, যা তাদের পরিচালন ব্যয় বাড়ায়। আর এর প্রভাব পড়ে বিমানের টিকিটের দামের ওপর। 

এ বিষয়ে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক কামরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ অনেক বেশি। এটি কমানোর জন্য আমরা রেগুলেটরি অথরিটির কাছে অনেক আগে থেকেই আবেদন জানিয়ে আসছি। এবার যখন টিকিটমূল্য যৌক্তিক করতে সরকার আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছে, তখনো আমাদের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। তাই আমরা আশাবাদী, দেশের এভিয়েশন খাতকে এগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ শিগগিরই একটি ইতিবাচক উদ্যোগ নেবে। কারণ হ্যাঙারের ইজারামূল্য কমালে আমাদের পরিচালন ব্যয় কমবে। তখন ভাড়া কিছুটা হলেও কমে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব চার্জের পাশাপাশি ডলার প্রাইস বৃদ্ধিতে আমাদের বিমানগুলোর তেল খরচসহ সার্বিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এতে করেও বিমানের টিকিটের দাম আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বেবিচকের এক বোর্ডসভায় হ্যাঙার ভাড়া কমানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় পুনর্নির্ধারণ কমিটি ভাড়া কমিয়ে নতুন ইজারামূল্য প্রস্তাব করেছে, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অনুমোদন হলে ইজারামূল্য কমবে।

হ্যাঙারের ইজারামূল্য পুনর্নির্ধারণে গঠিত কমিটির নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি বর্গফুট ইজারার ভিত্তিমূল্য হবে ৪০ টাকা এবং ২০২৪ জুলাই থেকে ২০২৫ জুন পর্যন্ত ইজারামূল্য হবে প্রতি বর্গফুট ৪১ টাকা। প্রতিবছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক বৃদ্ধির পর ২০২৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত ইজারামূল্য ৪৬ টাকা ৩৯ পয়সা দাঁড়াবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর এটি বাস্তবায়ন করা হবে। 

এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘হ্যাঙারের ইজারামূল্য পুনর্নির্ধারণ প্রস্তাব আমরা বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেখানে অনুমোদনের পর এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবে, সেখানে অনুমোদন হলে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।’

সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড শাস্তি না হলেও খুনিকে একবার দেখতে চাই

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
শাস্তি না হলেও খুনিকে একবার দেখতে চাই
ছেলে সাগরের ছবি দেখে এখনো সময় কাটে মা সালেহা মনিরের। ছবি: খবরের কাগজ

‘এক যুগেরও বেশি আগের কথা (২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি)। শীত প্রায় শেষের দিকে, ফাল্গুন এল বলে। কিন্তু রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস বইছিল। সে রাতে ঘুম আসছিল না। মনে হচ্ছিল- সাগর গাড়ি নিয়ে বাড়িতে আসছে। মনে হচ্ছিল ফোনের রিং বাজছে। বাড়িতে ঢুকছে। মা বলে ডাকছে। এভাবে মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ভোর হয়। কিন্তু আমি বুঝতেই পারছিলাম না যে, আমার ছেলে-বউমা লাশ হয়ে গেছে। সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ ফোন আসে। ফোনের অপর পাশ থেকে একজন বলতে থাকেন সাগর ও রুনী আত্মহত্যা করেছেন। এমন কথা শোনার পর আমি ‘ও সাগররে’ বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আর কিছু মনে নেই।’

অশ্রুসিক্ত নয়নে কান্নাজড়িত কণ্ঠে খবরের কাগজকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির। একই সঙ্গে নির্মম হত্যার শিকার হন সাগরের স্ত্রী সাংবাদিক মেহেরুন রুনী। এই সাংবাদিক দম্পতিকে হত্যার ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ১১ ফেব্রুয়ারি। 

২০১২ সালের এই দিন ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের তৎকালীন বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী। রাতে ঘটে এ ঘটনা। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। এই হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও খুনিরা এখনো অধরা।

দীর্ঘ এক যুগেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মনির। তিনি বলেন, ‘এক যুগ পার হয়ে গেছে সাগর-রুনীর হত্যার। এখন পর্যন্ত আমার ছেলের হত্যাকারী কে সেটাই জানতে পারলাম না। আমারও বয়স হয়েছে, বেশি দিন আর বাঁচব না। ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তি দেখে যেতে হয়তো পারব না। তবে এত নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একবার দেখতে চাই। কেমন তাদের চেহারা। এক মায়ের সন্তান হয়ে আরেক মায়ের বুক কীভাবে তারা খালি করে।’ 

সাগর-রুনীর খুনির হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে টেলিফোনে খবর পেয়ে প্রথমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর পাগলের মতো ছেলের বাসায় ছুটে যাই। সে দিনের সব কথা মনে আছে। ডাইনিং টেবিলে চারটি প্লেটে খাবার ছিল। মেঝেতে পড়ে ছিল সাগর-রুনীর নিথর দেহ। এটা ডাকাতি বা চুরির ঘটনা না। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকারীরা সাগর-রুনীর পরিচিত ও কাছের মানুষ ছিল’ বলতে বলতে চোখ মোছেন তিনি। 

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরার কথা বলেছিলেন। ওই ৪৮ ঘণ্টায় ধরার বদলে খুনিদের আড়াল করা হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ছেলের কবর জিয়ারত করতে যাইনি। প্রতিজ্ঞা করেছি, যেদিন আমার ছেলের হত্যাকারীদের দেখব, ওই দিন কবর জিয়ারত করব। 

তিনি বলেন, ‘একযুগ পার হয়েছে সাগর-রুনীর হত্যার। এখন পর্যন্ত হত্যাকারী কে সেটাই জানতে পারলাম না। আমার একটাই কথা, ছেলের হত্যাকারীদের দেখতে চাই।’ 

পুরান ঢাকার নবাবপুরের ৬ নম্বর রোডে একটি দোতলা বাড়িতে ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন সাহেলা মনির। এই বাড়িতে স্বামী মনির হোসেন মণ্ডল ও ছেলে সাগরের অনেকে স্মৃতি। সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের শৈশব, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেটেছে এই এলাকায়। পুরোনো অ্যালবামে ছেলের ছবি দেখে নীরবে চোখের জল ফেলেন সালেহা মনির। 

তিনি বলেন, ‘সাগর খুব মেধাবী ছিল, স্কুলে অনেক পুরস্কার পেয়েছে সে। সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়ার শখ ছিল, কিন্তু আমাদের সামর্থ্য ছিল না, পড়াতে পারিনি’- বলতেই দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে এই মায়ের। তিনি বলেন, ‘সাগর ও আমার স্বামীর অনেক স্মৃতি আছে এই বাড়িতে। এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। স্মৃতি নিয়ে এই বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।’ 

সালেহা মনির বলেন, ‘আমার চার মেয়ে। একমাত্র ছেলে সাগর। ছেলের অনেক স্মৃতি। এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারি না।’ যুদ্ধের বছরে বর্ষা ঋতুতে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নানাবাড়ি জন্মেছিল সাগর সরওয়ার। বর্ষার দিনে জন্মেছিলেন বলে নাম রাখা হয়েছিলো সাগর বলতেই দুচোখ ভিজে আসে এই মায়ের। 

সাংবাদিক সাগর-রুনী যখন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তখন তাদের একমাত্র ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘের বয়স মাত্র সাড়ে ৫ বছর। বাবা-মা নিহত হওয়ার পর থেকে মেঘের দেখভাল করছে মামা নওশের আলম রোমান। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘মেঘ ভালো আছে। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ও-লেভেল শেষ করে এখন এ- লেভেল পড়ছে। আগে ক্রিকেট খেলায় বেশ মনোযোগ বাড়ালেও এখন পড়াশোনায় সময় বেশি দিচ্ছে।’