![ছায়াবন্দনায় উঠে এলেন নাসির আলী মামুন](uploads/2024/05/11/Shilpakala-1715404943.jpg)
আলোকচিত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি নাসির আলী মামুনকে। ৭১ বছর বয়সী মামুনকে জীবনের ৫০ বছরই যুদ্ধ করতে হয়েছে দারিদ্র্যের সঙ্গে। কখনো দুর্ঘটনা, কখনো বিচ্ছেদ, কখনো বেকারত্ব অমানিশার ঝড় নিয়ে এসেছে তার জীবনে। তবুও দমে যাননি। আলোকচিত্রের সঙ্গে সখ্য তাকে কঠিন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তি-সাহস-প্রেরণা জুগিয়েছে।
শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘নাসির আলী মামুন ইন প্রেইজ অব শ্যাডোজ-ছায়াবন্দনা’ প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা মকবুল চৌধুরী।
প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন করেন প্রথিতযশা প্রাবন্ধিক ও ইতিহাসবিদ বদরুদ্দীন উমর। প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যনির্দেশক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম।
৬২ মিনিট ব্যাপ্তির প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির উন্নয়নে নাসির আলী মামুনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক ছবি তোলার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছেন। তার তোলা মওলানা ভাসানী, কবি জসীম উদ্দীন, শিল্পী এস এম সুলতান, শিল্পী কামরুল হাসান, মাদার তেরেসা, লেচ ওয়ালেসা, মিখাইল গরবাচেভ, ডেসমন্ড টুটু, বিল ক্লিনটনসহ অসংখ্য বিশ্ববরেণ্য মানুষের ছবি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রে নাসির আলী মামুনের বর্ণাঢ্য দিনগুলোর কথা বিস্তারিত উঠে আসে।
বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘নাসির আলী মামুন অন্য কিছুর ছবি না তুলে মানুষের মুখের ছবি তুলেছেন। মানুষের মুখের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। এর গুরুত্ব অনেক। মামুনকে বলি, এখন দেশের মুখের ছবি তুলুন। মানুষের খাদ্য নেই। আশি শতাংশ মানুষের খাদ্যবস্ত্রের কী অবস্থা, তার খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। নদী হয় শুকিয়ে যাচ্ছে, নয়তো দখল করে নিচ্ছে। গাছপালা কেটে ফেলছে, এ দেশটা পাখিদের ছিল, এখন পাখি নেই। আমি নাসির আলী মামুনকে বলব, এখন দেশের মুখের ছবি তুলুন।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘একসময় মনে করা হতো, আলোকচিত্র কখনো শিল্পমাধ্যম হবে না। কিন্তু এর পেছনে থেকে যন্ত্রটিকে যে দক্ষতায় একজন মানুষ চালিত করেন, তা এটিকে শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। প্রতিকৃতিতে মামুন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব তুলে আনতে চান। এ দেশের সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ মানুষের ছবি তুলে তা সংগ্রহ করেছেন মামুন। দেশে এখন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখনকার দুনিয়া মুনাফার পেছনে ছোটে। কিন্তু মামুন মুনাফার জন্য ছবি তোলেন না, তার পকেটে কোনো পয়সা ঢোকেনি। সে স্মারকের ভূমিকা পালন করেছে।’
নাসির আলী মামুন বলেন, এ দেশের মানুষ ছবি কেনে না। তারপরও আমি সব প্রতিকূলতার মধ্যে আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনকে বাঁচিয়ে রেখেছি। নিজের ভেতর প্যাশনকে ধরে রাখুন। পরিবারে যারা শিল্প-সাহিত্যে বসবাস করতে চায় তাদের যত্ন নিন। তবেই এ দেশে গুণী মানুষ জন্ম নেবে এবং দেশের শিল্প-সাহিত্য এগিয়ে যাবে।