![আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে](uploads/2024/06/15/Borsa-Utsob-1718445919.jpg)
আষাঢ়ের ভোরে আকাশে কালো মেঘের আনাগোণা; তপ্ত নগরীতে বৃষ্টি নামার প্রতীক্ষায় নগরবাসী। ক্ষণিকের তরে আকাশ কালো হলো বটে, কিন্তু বৃষ্টি আর এলো না। তাই নগরের নবীন শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গাইলেন বৃষ্টির নামার গান ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দেব মেপে’। এ বঙ্গের বর্ষায় মুগ্ধ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলে বর্ষা আহ্বান ‘এসো শ্যামল সুন্দর’, বহুল প্রতীক্ষিত বর্ষার আগমনে উচ্ছ্বসিত কবি লিখেছিলেন ‘বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এলো’। শিল্পীরা একক বা সম্মেলক কণ্ঠে গাইলে সেই গানগুলো।
প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার শপথে শনিবার (১৫ জুন) ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষা উৎসব।
বাংলার পঞ্চকবির গান, কবিতার পাশাপাশি সম্মেলক নৃত্যে সাজানো হয় এই উৎসব।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় বকুলতলার মঞ্চে মো. হাসান আলীর বাঁশিতে লোকজ সুর পরিবেশনায় শুরু হয় বর্ষা উৎসব।
বর্ষা উৎসবে শিল্পী সাজেদ আকবর পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল’; সালমা আকবর পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি শোনান নজরুল সংগীত ‘বরষা ঐ এল বরষা’; অনিমা রায় শোনান রবীন্দ্রসংগীত ‘নীল অম্বর ঘন কুঞ্জ ছায়ায়’; নবনীতা জাইদ চৌধুরী শোনান আধুনিক গান ‘এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে’।
এদিন একক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন আবিদা রহমান সেতু, শ্রাবণী গুহ রায়, স্নিগ্ধা অধিকারী, রত্না সরকার, ফেরদৌসী কাকলী।
দলীয় সংগীত পর্বে বৃষ্টি নামার গানের সঙ্গে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশন করে লোকসংগীত ‘গাঙ্গে যাইতাছে দেখো ভাই’। বহ্নিশিখা পরিবেশন করে নজরুল সংগীত ‘রুমুঝুম রুমুঝুম কে বাজায়’; সুরবিহার পরিবেশন করে লোকসংগীত ‘এসো শ্যামল সুন্দর’।
এদিন পঞ্চভাস্বর, সীমান্ত খেলাঘর আসর, সুরনন্দনের শিল্পীরা সম্মেলন কণ্ঠে বর্ষার গান শোনান।
আবৃত্তি পর্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’।
ত্রপা মজুমদার পাঠ করেন ইন্দ্রানী সমাদ্দারের কবিতা ‘বৃষ্টি’; তিনি শোনান প্রদীপ বালার কবিতা ‘যে বৃষ্টির অপেক্ষায় বসে’। নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি শোনান জয় গোস্বামীর কবিতা ‘মেঘ বালিকা’।
বর্ষা উৎসবে সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করে ধৃতি নর্তনালয়, স্পন্দন, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি অব ফাইন আর্টস, কথক নৃত্য সম্প্রদায়।
বর্ষা উৎসবের কথন পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নগরে বসন্ত উৎসব, শরৎ উৎসব, নবান্ন উৎসব আর বর্ষা উৎসব পালন করি আমরা। এই বর্ষার এক আলাদা ব্যাপার আছে। তীব্র বৈশাখের পরে যখন বর্ষা আসে, তখন সবাই শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আমাদের শষ্য, গাছপালা আর ফলন যেটির কথা বলি না কেন, তার সবটাই বর্ষার ওপর নির্ভরশীল। বর্ষার আকাশ যেমন কবিমনে প্রভাব ফেলে তেমনিভাবে আমাদের চিত্রশিল্পীদের ক্যানভাসেও বর্ষা প্রকাশিত হয়েছে আলাদা অনুভবে।’
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী নগরে বৃক্ষায়নে গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যারা বাড়িঘর বানাতে গিয়ে গাছ কেটে ফেলেছেন তারা আরও বেশি করে গাছ লাগান। আমরা প্রকৃতির বন্ধু হতে চাই।’
পরে এই উৎসবের রীতি অনুযায়ী শিশুদের হাতে বনদ, ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষের চারা বিতরণ করেন অতিথিরা।
জয়ন্ত সাহা/অমিয়/