![ভূতুড়ে বিলের শঙ্কায় ১২ লাখ গ্রাহক](uploads/2024/01/26/1706243462.ngn-nesco-1111.jpg)
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় আন্দোলন করছেন নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) পিচরেট কর্মচারীরা। এতে চলতি মাসে প্রায় ১২ লাখ বিদ্যুৎ গ্রহকের মিটার থেকে রিডিং সংগ্রহ ও বিল বিতরণ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিল প্রস্তুত না হওয়ায় সংকট ও ভূতুড়ে বিলের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫৫টি অফিস আছে। এসব অফিসের অধীনে পিচরেট কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত শ। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে পিচরেট ঐক্য পরিষদের ব্যানারে নিজ নিজ অফিসের সামনে কর্মবিরতির আন্দোলন শুরু করেন তারা। এখনো তাদের দাবির বিষয়ে কোনো সদুত্তর মেলেনি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এদিকে গত বুধবার নওগাঁর কাঁঠালতলী এলাকায় নেসকোর প্রধান বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন পার্শ্ববর্তী বগুড়া, জয়পুরহাট, নাটোরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় নওগাঁ উত্তর অফিসে কর্মরত মিটার রিডার মতলুবুর রহমান জানান, দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ধরে তিনি বিদ্যুতের মিটার রিডার ও বিল বিতরণের কাজ করে আসছেন।
শুরুতে পিডিবি ও পরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেসকোতে কাজ করছেন। এর আগে উপর মহল থেকে চাকরি স্থায়ীকরণের একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়োগ দেয়নি।
জানা যায়, পিচরেট কর্মচারীরা কাজের বিনিময়ে মজুরি পান। গ্রাহকের রিডিং সংগ্রহের জন্য জেলা পর্যায়ে প্রতি মিটারের জন্য ৫ টাকা ৭০ পয়সা ও বিল বিতরণের জন্য সাড়ে ৩ টাকা হারে দেওয়া হয়। উপজেলা পর্যায়ে মিটারপ্রতি ৬ টাকা ৫০ পয়সা ও বিল বিতরণের জন্য দেওয়া হয় ৪ টাকা।
পিচরেট কর্মচারী ঐক্য পরিষদ নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কর্মকর্তারা সেটা বাস্তবায়ন করেননি। নেসকোর পিচরেট তালিকা অনুযায়ী মৌখিক পরীক্ষা নেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পরে আন্দোলনের মুখে নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম আবারও তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যেই বগুড়াসহ বেশ কয়েক জেলায় নেসকো প্রায় ৩০০ পিচরেট কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। এখন তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। ফলে তাদের পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে। চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন বাকিরা। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় নেসকোর গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক পর্যায়ে প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে। প্রায় ১২ লাখ গ্রহক আগের মিটার ব্যবহার করছেন। কর্মবিরতির ফলে চলতি মাসে এসব মিটারের রিডিং সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিল প্রস্তুত হয়নি। ফলে আগামী মাসে এসব গ্রাহকের কাছে ভূতুড়ে বিল দেওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
মাঠ পর্যায়ে বিল প্রস্তুতকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকোর নওগাঁ দক্ষিণ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিলন মাহমুদ বলেন, ‘প্রতি মাসের ২০ তারিখ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে রিডাররা তথ্য সরবরাহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী বিল প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু রিডাররা কর্মবিরতিতে থাকায় চলতি মাসে সেই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী মাসের বিল প্রস্তুত ও বিতরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে।
আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।