![ময়মনসিংহে চুরি-ছিনতাই আতঙ্কে ঈদের কেনাকাটা](uploads/2024/04/07/1712463539.Mymensing-Eid-Special.jpg)
বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। প্রত্যেকটি নামকরা বিপণি-বিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতেও দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তবে ঈদের কেনাকাটাকে টার্গেট করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোর ও ছিনতাইচক্র। কখনো চুরি করে, আবার কখনো সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে আতঙ্ক নিয়ে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা।
গুটি কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করতে পারলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে বেশিরভাগ চোর-ছিনতাইচক্রের সদস্য। নগরবাসী মনে করেন, গোয়েন্দা তৎপরতা যথেষ্ট বৃদ্ধি করা না হলে চুরি-ছিনতাই কমবে না। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের সময় ধস্তাধস্তি হলে ছুরি কিংবা চাকুর আঘাতে ঘটতে পারে মৃত্যুর মতো ঘটনা।
গত ২ এপ্রিল শহরে এক নারীর চুরি হওয়া স্বর্ণের চেইন ও কানের দুলসহ বনি মনিক ও রুমান মিয়া নামে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ফোল্ডিং চাকু। শহরে ওই নারী কেনাকাটা করতে এলে ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় র্যাবের হাতে আটক হয়। এ ছাড়া গত কয়েক দিন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৫ জন চোর-ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যকে আটক করেছে।
নগরীর নাসিরাবাদ কলেজের অধ্যাপক মাসুম বিল্লাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার স্ত্রী ঈদের কেনাকাটা করতে যান। শহরের স্টেশন রোড এলাকায় হেরা মার্কেটের সামনে যাওয়ার পর দুজন বোরকা পরা নারী ভিড়ের মধ্যে ক্রেতা সেজে গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রীর হাতে থাকা ব্যাগ নিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। তখন ব্যাগের মধ্যে একটি স্বর্ণের চেইন, ২২ হাজার টাকা, একটি এটিএম কার্ড ও ভোটার আইডি কার্ড ছিল।’
সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের পুটামারা গ্রামের নুসতার জাহান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ঈদের কেনাকাটা করতে মেয়েকে নিয়ে শহরের গাঙ্গিনারপাড়ে এসেছিলাম। কেনাকাটা শেষ করে বাবার বাড়ি নগরীর চর কালীবাড়ি যাচ্ছিলাম। থানাঘাট এলাকায় আসতেই এক চোর আমার গলা থেকে স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ না পেয়ে হাতে থাকা স্মার্টফোনটি আচমকা নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমার মনে হয়, কেনাকাটার সময়ই আমাকে টার্গেট করা হয়েছিল।’
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ময়মনসিংহের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার ঘোষ বলেন, রমজানের কিছুদিন আগেও শহরের বাসাবাড়ি রোড, ট্রাঙ্কপট্টি ও এসএস কমপ্লেক্সের কিরণ জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা ঘটে। দোকানের শাটারের সামনে চাদর ও ছাতা ধরে রেখে চারটি তালা ভেঙে এক নারীকে ভেতরে ঢুকিয়ে ৩২ লাখ টাকা মূল্যের ৩০ ভরি সোনা চুরি করা হয়। এখন ঈদের পোশাক কেনাকাটার পাশাপাশি ঈদের পর অনেকের বিয়ে থাকায় স্বর্ণ বিক্রি বেড়েছে। হঠাৎ করে অনেক ক্রেতা একসঙ্গে দোকানে প্রবেশ করছে। অনেক মহিলা বোরকা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখায় কে চোর আর কে ক্রেতা বোঝা মুশকিল। তাই আমরা আতঙ্কে থাকি। স্বর্ণ দেখার কথা বলে দৌড় দিলেই আমাদের সর্বনাশ। তাই আমাদের দোকানগুলোর দিকে প্রশাসনের গোয়েন্দা নজরদারি প্রয়োজন।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম খবরের কাগজকে বলেন, বিভাগীয় এই শহরে দিন দিনই মানুষের বসবাস বাড়ছে। তবে ঈদের আগমুহূর্তে সদর উপজেলার এলাকাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ লোকজন শহরে কেনাকাটা করতে আসেন। এতে প্রত্যেকটি বিপণি-বিতানসহ ফুটপাতেও ভিড় বাড়ে। এই সুযোগ হাতছাড়া করে না চোর ও ছিনতাইকারীরা। তারা আগে থেকেই ক্রেতাদের টার্গেট করে পিছু পিছু ছুটতে থাকে। পরে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন কৌশলে চুরি কিংবা ছিনতাই করছে। তাদের চিহ্নিত করে আটক করলে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন ক্রেতারা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুম আহমেদ ভূঞা বলেন, কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশসহ গোয়েন্দা পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু চোর-ছিনতাইকারীকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নামিদামি বিপণি-বিতানের আশপাশসহ স্বর্ণের দোকানগুলো বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদের কেনাকাটা নিশ্চিত করতে আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। আশা করছি, আনন্দের সঙ্গেই ঈদের কেনাকাটা শেষ হয়ে ঈদ উদযাপন হবে।